Wednesday, August 8, 2012

পুরনো কথা (৩)

খেলার মরসুমে সকল অলিম্পিয়ানের উদ্দেশ্যে আজকের পুরনো 'কথা': 'নয় নয় এ মধুর খেলা -- বিনয়'... (১২/৮/২০১১, সকাল ১০:৩০)
ছবি: সুনন্দ

খেলা কাকে বলে? মানে সংজ্ঞা কী খেলা কথাটার? অনেক দিন নিজে ভেবে, এমন কী একে তাকে জিজ্ঞেস করেও ঠিকঠাক উত্তর খুঁজে পাইনি। সহজে ভাবলে, খেলা হল অবসর যাপনের এমন একটা উপায় যেখানে উপযুক্ত কৌশল মিশিয়ে অন্যের সাথে দৈহিক সক্ষমতার বা বুদ্ধির প্রতিযোগিতা করে জেতা হারার ফয়সালা করা হয়। কৌশল মানে প্রায় প্রতিক্ষেত্রেই প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঠকাবার কুশলতা। যেমন ফুটবলে ড্রিবলিং, ক্রিকেটে বোলিং এর দুসরা বা তাসের ব্রিজ খেলায় কল দেওয়া।

খেলা শব্দটাকে খেলাচ্ছলে হাল্কা ভাবে নেবার কোনো কারণ নেই। সামান্য জুয়াখেলা থেকে অতবড় কুরুক্ষেত্র যুদ্ধটার সূত্রপাত হয়েছিল।

পেশাদারী খেলায় কিন্তু আদৌ অবসর যাপনের  কোনো ব্যাপার নেই। খেলা আর প্রতিযোগিতাটা সেখানে স্রেফ জীবিকানির্বাহের উপায় মানে নিছক কাজই, অবসর যাপন নয়। তাহলে সংজ্ঞা থেকে অবসর শব্দটা বাদ গেল। পড়ে রইল খালি প্রতিযোগিতা।
তাহলে কি জয়েন্ট এন্ট্রান্স, কিম্বা কর্পোরেটের ক্যাম্পাসিং যেখানে প্রতিযোগিতা আছে জীবিকানির্বাহের সমস্যাটাও আছে সেগুলো খেলার ডেফিনিশনে আসবে?

আবার তাস নিয়ে একা একা পেশেন্স খেলে অনেকেই। সেখানে অবসর যাপন হয় ঠিকই, কৌশলও আছে হয়তো। কিন্তু প্রতিযোগিতা কোথায়? কার সাথে? যদি ধরে নিই নিজের সাথে নিজেরই, তাহলে হেরে যাওয়ার জেদ না জিতে যাওয়ার আনন্দ- কোনটা ঘণ্টার পর ঘণ্টা খেলে যাওয়া পেশেন্স খেলোয়াড়কে পরবর্তী গেম শুরু করতে উদ্বুদ্ধ করে? জানে না স্বয়ং খেলোয়াড়ও।

ছবির উৎস: লিঙ্ক
খেলা আর খেলাধুলোর মধ্যে কিন্তু তফাৎ আছে। দাবা কিম্বা তাস পাশা জাতীয় সর্বনাশা শব্দগুলো খেলাধুলোর মধ্যে ইনক্লুডেড হবেনা। নেহাত ধুলোভরা রাস্তায় বসে না খেললে ধুলো লাগার কোনো সম্ভাবনাই নেই খেলোয়াড়দের গায়ে। এগুলো কেবলই খেলা। হালফিলের ভিডিও বা কম্পিউটার গেম বোধহয় এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন।
রেসের মাঠে ছুটোছুটি করে ঘোড়ারা। আর কৌশল যা কিছু তা প্রয়োগ করে বেচারা জকিরা। তবু আমরা দুঃখ করে বলি রেস খেলে উচ্ছন্নে গেছে লোকটা!  রেস খেলে যারা, তারা কিন্তু আসলে খেলে না। বাজি ধরে মাত্র। তবু কেন যে খেলোয়াড়ের শিরোপা পেয়ে যায় তারা!


সে খেলায় কোনও দৈহিক বা বুদ্ধির প্রতিযোগিতাই হয় না। তবু লটারিকে খেলা বলা হয়। কাছাকাছি মনে হলেও ফাটকা খেলা কিন্তু তা না। বুদ্ধি লাগে। এবং  বেশ বেশিই লাগে। ঠকাবার কৌশল জানলে তবেই অন্যকে সর্বস্বান্ত করার এই খেলায় জেতা যায়। একে খেলা কেন বলা হয় কে জানে! তবে তো পকেটমারা বা কেপমারিও খেলা বলে গণ্য হতে পারে। এবং এই পেশাগুলির সাথে যুক্ত মানুষেরা দাবী করতে পারে অর্জুন পুরস্কার।

ছবির উৎস: লিঙ্ক
বৃন্দাবনের দেবসুলভ লীলাখেলাকে খেলা অভিধায় ভূষিত করার কারণ বোঝা দুষ্কর। "আমরা করলে বিলা, তিনি করলে লীলা"য় কৌশল হয়তো  লাগে। প্রতিযোগিতা কোথায়ভক্তজন বলবেন তাও আছে। কৃষ্ণ আর রাধার সম্পর্কের মধ্যে ভালোবাসার প্রতিযোগিতা আছে, প্রতারণারও। কিন্তু জয়পরাজয় নেই। আছে বিরহের মত আধা অ্যাবস্ট্রাক্ট বা মিলনের মত চূড়ান্ত বস্তুবাদী কিছু এন্ড-প্রোডাক্ট। এ লাইনে বাঁকা পথে একটু এগোলেই পাওয়া যাবে কাব্যিক পরিভাষার জলকেলি মানে জলক্রীড়া। সেই অ্যাডাল্ট আলোচনা এখানে সমীচীন হবে না।


শুদ্ধমাত্র পারদর্শিতা দেখানোকেও খেলা নামে চালানো হয় কখনও কখনও। যেমন ভালুক খেলা কী সাপখেলা। সেখানে প্রতিযোগিতা কি সাপের সাথে ওঝার? বোঝা দুষ্কর। ভানুমতীর খেলাও তাইই। সেই ব্যক্তিগত পারদর্শিতা। সেখানেও প্রতিযোগিতা নেই।

খেলা কথাটার কোনও সংজ্ঞাতেই  জীবনের খেলাঘর আঁটে না। কে খেলে? কার সাথে? কিছুটা শিশুসুলভ ব্যাপক অনিশ্চয় ব্যাপারস্যাপারকেই হয়তো খেলা বলা হয়েছে সেখানে। কচি বাচ্চা হাত পা ছুঁড়ে খেলে যখন, সেখানেই বা খেলা বলতে কি বোঝানো হয় জানি না। তার সময়ের তো পুরোটাই প্রতিযোগিতাহীন অবসর।

যদি খেলার অন্তর্নিহিত অর্থ থেকে প্রতিযোগিতা কথাটা বাদ দেওয়া যায়? এমন যে কোনো কিছু যা অবসর সময়কে আনন্দমণ্ডিত করে তোলে। তাহলে কি খেলার পরিধিতে ঢোকার চেষ্টা করবে গল্পের বই পড়া, ছবি আঁকা, বা অন্য যে কোনও হবি? কিন্তু আমরা ওগুলোকে খেলা বলিনা।

অঙ্কে যার মাথা খেলে না, সে কি অকূল রাশিমালার সাথে কোনো প্রতিযোগিতায় নেমে হেরে গেছে না কী সেই রাশিমালা তাকে সে'ভাবে কাছে ডাকেই নি কোনোদিন, কে বলে দেবে?

খেলার বহুমাত্রিক সংজ্ঞা বোঝা কাজেকাজেই সোজা নয়। খেলতে আগ্রহী না হলেও কখনও কখনও তবু মানুষকে খেলায় জড়িয়ে পড়তে হয়। এ আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক অভিজ্ঞতা। তখন শ্রমিককে খেলিয়ে দেয় মালিকপক্ষ আর ইউনিয়ন একে অন্যের বিরুদ্ধে। আর সেই খবরের মনোমতন কপির জন্য কনিষ্ঠ সাব এডিটরকে লেজে খেলায় ঝানু চিফ রিপোর্টার।

About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই