Friday, August 19, 2011

এক ছটাক সোডার জলে... -- সুমিত


ছবি: সুনন্দ
আচ্ছা, ‘Sportsman Spirit’ কাহাকে বলে? যতদূর বুঝিয়াছি যে ‘spirit’ খেলার মাঠে উবিয়া না গিয়া জুড়িয়া বসে, তাহাকে। তাহাতে কি

হয়? নাকি, তাহাতে বুঝা যায় আপনি কত বড় মনের খেলোয়াড়। ঠিক আছে,  বুঝিবার ভান করিলাম। ও হ্যাঁ, বলা হয় নাই, আমি প্রধানত ক্রিকেট খেলার দর্শক। তাই আলোচ্য বিষয় সম্বন্ধে আমার যাবতীয় ধারণা ওই খেলা দেখিয়াই হইয়াছে। আপনারা জানেন, এই খেলার এত জটিল নিয়মাবলী ও সুবৃহৎ ইতিহাস লইয়া আলমারি ভরা লেখা হইয়াছে (এবং হইয়া চলিতেছে)। তৎ সত্ত্বেও? তাহার বাহিরে বিষয় নির্বাচনের কারণ নিশ্চয় অনেকেই আন্দাজ করিতে পারিতেছেন। হ্যাঁ, ঠিকই

ধরিয়াছেন। অবশ্য, যাহারা ও খেলায় আকর্ষণ অনুভব করেন না, তাহাদের জ্ঞাতার্থে ঘটনাটা অস্পষ্ট করিয়া বলি (লেখনীর অক্ষমতা মার্জনা করিবেন, পিতৃদেব আমার নাম গৌতম ভট্টাচার্য রাখেন নাই)। চলতি ভারত-ইংলন্ড সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনে চা-পানের বিরতির ঠিক আগের ঘটনা। ওভারের শেষ বলে তিন রান লইবার পর ইংরাজ ব্যাটসম্যান ইয়ান বেল চতুর্থ রানের নাকি চা- পানের নিমিত্ত অপরপ্রান্তের দিকে ছুটিয়া যান (ওপ্রান্ত বরাবর সোজা হাঁটিলে প্যাভেলিয়ন)। ইতিমধ্যে ভারতীয়গণ উপস্থিত চাতুর্যে উইকেট ভাঙ্গিয়া আবেদন জানান। নিয়মমাফিক আম্পায়ার ভারতীয় দলের পক্ষে রায় দেন। আর এখানেই আলোচ্য ‘spirit’-র নাটকীয় আবির্ভাব। বিরতির সময় ইংলন্ড দলের প্রশিক্ষক ও অধিনায়ক ভারতীয় দরবারে আবেদন প্রত্যাহারের দাবী জানান, কারণ তাহাতে নাকি মহামান্য ‘spirit’ উবিয়া যাইতেছে। বিরতির পর ভারতীয় দল মাঠে নামিবার সময় পাইল দর্শককুলের সমবেত ধিক্কার। পরমুহূর্তেই, ইয়ান বেল-র প্রবেশে তাহা করতালিতে রূপান্তরিত হইল। সে এক বিরল দৃশ্য। ম্যাচের পরিণতিতে যদিও আমরা রহিলাম “নিষ্ফলের হতাশের দলে”, তবু কয়েকমুহূর্তের দৃঢ়তায় মহেন্দ্র ধোনি খেলার ইতিহাসে ‘HERO’ হইয়া গেল।

ছবির উৎস: লিঙ্ক

পানীয়র গ্লাসে চুমুক সঙ্গে হাততালি পার করিয়া আমরা যখন বোতল ছুড়িয়া মাঠে গোল বাধানোর অধ্যায়ে আসিয়া পড়িয়াছি, তখন ভারতীয় দলের এই উদারতা নিঃসন্দেহে উক্ত ‘spirit’বাবুর একটি ভালো বিজ্ঞাপন। বিশ্বের একনম্বর দল হিসেবে আমরা যে উদাহরণ রাখিলাম, তাহা প্রকৃতই প্রথম শ্রেণীর। কিন্তু, এই গুরুদায়িত্ব পালনের দায় কেবলই আমাদিগের, বৃহৎ অর্থে কৃষ্ণাঙ্গদিগেরই (যাহারা শ্বেতাঙ্গ নহে)? মাফ করিবেন, এ বান্দা ক্রিকেট ইতিহাসে বিশেষ অজ্ঞ। কিন্তু যাহারা খেলা বানাইয়াছেন, তাহার মধ্যে spirit সংযোজনের গর্বে এতদিন ধরিয়া বুক ফুলাইতেছেন, গত দু’দশক তো তাহাদের উল্লেখ্য কোন নিদর্শন পাইলাম না। শুনিয়াছি অস্ট্রেলিয়াবাসীরা পরিচয় পর্বে নামঠিকানার পর  প্রিয় খেলাও জিজ্ঞাসা করিতে ভুলেন না, খেলাধুলার জগতে তাহাদের পারদর্শিতাও তাহার সাক্ষ্যবহ। ক্রিকেট মাঠও তাহার ব্যতিক্রম নহে। কিন্তু ‘sportsmanship’-র নিরিখে তাহাদের প্রদর্শন .... তাহার বর্ণনা আর নাই বা করিলাম। বারংবার কলুষিত করিয়া তাহারা মহামান্য ‘spirit’ হইতে aggression, professionalism.... ইত্যাদি বর্ম মন্থন করিয়াছেন, আর তাহার আড়াল হইতে ওই “.... সূচ্যগ্র মেদিনী” সুলভ হুঙ্কার ছাড়িয়া আসিতেছেন। বাকি দলগুলির উল্লেখ্য পারদর্শিতার অভাবে তাহাদের “spirit vanish show” বিশেষ HIT করে নাই, তাই মনে রাখি নাই। পাশাপাশি, পশ্চিম-ভারত ও ভারতীয় উপমহাদেশ, শত ব্যর্থতা স্বত্বেও ব্যাট-বলের বাহিরের ক্রিকেটকে মহিমান্বিত করিয়াছে বারংবার। লেখনীর জোর থাকিলে সেসব লইয়া কাব্য রচিতাম।
আমি আর যাহাই হই না কেন, racist নহি। কিন্তু sportsmanship-এর অভাব যেসকল দলের মধ্যে বেশী করিয়া বিদ্যমান, তাহারা কাকতালীয়ভাবে শ্বেতাঙ্গ। পাঠককুল, কিছু মনে করিবেন না, সমস্তটাই আমি একচোখে দেখিয়াই লিখিলাম। কারণ অপর চোখে দেখিবার কিছু পাই নাই, আপনাদের চোখে দেখিবার অপেক্ষায় রহিলাম। ‘খেলা’ তো শুরু হইয়া গিয়াছে। বল এখন আপনার কোর্টে।

About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই