Sunday, August 28, 2011

মান + হুঁশ -- ছেঁড়া পাতা

ছবির উৎসঃ লিঙ্ক

একটি বিশেষ সচেতনতা বোধ থেকে এই প্রতিবেদন। আপনার ও আপনার পরিবারের সদস্যদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের
ও সুরক্ষার ব্যাপারে আপনি ঠিক কতটা সচেতন? বলতেই পারেন, নিজের চরকায় তেল দাও না বাপু। আপনাকে বিব্রত করবার কোনও ইচ্ছেই আমার নেই। কিন্তু প্রশ্নটা যথেষ্ট সমীচীন।

একটি ঘটনা -- ১৬ আগস্ট,২০১১। সময়-সকাল ১১ টা ২০ মিনিট। স্থান-আচার্য জগদীশ চন্দ্র বোস উড়ালপুল। একটি বাইক দুর্ঘটনা। অবশ্য এই
জাতীয় দুর্ঘটনা বর্তমানে প্রায়শই দেখা যায়। তবু এটি অন্য সব এই জাতীয় ঘটনার (বা দুর্ঘটনার) থেকে আলাদা। দুটি বাইক নিজেদের মধ্যে পাল্লা দিয়ে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলছিল। একটি বাইকে শুধু চালক ছিল, অপরটিতে চালকের সাথে তার পিছনে বসা একজন আরোহী (নাম সুপ্রিয়)। শুধু সুপ্রিয় বাদে বাকী দুজনেই হেলমেট পরেছিল। এই তিনজন প্রত্যেকে স্কুল পড়ুয়া। একসময় দ্বিতীয় বাইকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে সোজা উড়ালপুলের দেওয়ালে। প্রায় ২০ মিটার বাইকটি রাস্তায় ঘষা খেতে খেতে অবশেষে গিয়ে থামে। চালকের হেলমেট থাকায় সে বড়সড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু সুপ্রিয়র অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। তার ডান ঊরু ও তলপেটের সংযোগস্থলে বড়সড় গর্ত হয়ে যায়। একটু শ্বাস নেবার জন্য তখন থেকে শুরু হয় তার নিজের সাথে নিজের সংগ্রাম। অপর বাইকের চালক বন্ধুটিসবকিছু দেখেও না দাঁড়িয়ে সোজা সামনের দিকে চলে যায়। ব্যস্ত উড়ালপুলে সুপ্রিয় শুধু একজনকেই পায় (আশিস চৌধুরী) যে সাহায্য করবার জন্য এগিয়ে আসে। আর্ত আবেদন নিবেদনের পরও যখন কেউ সাহায্য করবার জন্য থামে না তখন আশিস তার নিজের বাইককে রাস্তার মাঝে রেখে ট্রাফিক রোখার মরিয়া চেষ্টা করে। ট্রাফিক পুলিশ, লালবাজার, অ্যাম্বুলেন্স সর্বোপরি কলকাতার মরমী মানুষ সবাই একে একে আশিস ও সুপ্রিয়কে হতাশ করে। সুপ্রিয় প্রায় ঘণ্টা খানেক নিজের রক্তেই হোলি খেলতে খেলতে জীবনযুদ্ধ চালায়। এক 'দরদী' অ্যাম্বুলেন্স চালকের সাহায্যে সুপ্রিয়র নাকে অবশেষে হাসপাতালের গন্ধ লাগলেও তা বেশীক্ষণ স্থায়ী হয়নি। চিকিৎসকদের বক্তব্য, আর একটু আগে আনা গেলে হয়তো প্রাণটা বাঁচানো যেত। আশিসের চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে।

ছবির উৎসঃ লিঙ্ক


একটি সমালোচনা-- নিজেদের সমাজে আমরা ঠিক কতটা বিপন্ন? বাঁচার তাগিদে আমরা ঠিক কতটা নীচে নামতে পারিএইসব কৌতূহলের নির্দিষ্ট উত্তর কোনোদিন পাওয়া সম্ভব নয়। কৌতূহল কৌতুকে রূপান্তরিত হয়ে আক্ষরিক অর্থেই এদের অপমৃত্যু ঘটবে, সিদ্ধান্তকৌমুদীর রূপ কখনো নেবে না।

এক কিশোর নিজের রক্তের স্বাদ নিতে নিতে ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে। তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টায় আরেকজন প্রাণপণ ছোটাছুটি করছে। এই দুয়ের ভিতর একটা সম্পর্ক তৈরি হয়- মানবিক সম্পর্ক। নিঃসন্দেহে ঐ কিশোরদের বেশ কয়েকটি ভুল ছিল। কিন্তু ঐ ভুলের সমালোচনা তো অন্যভাবেও করা যেতে পারতো। সমাজের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী উচ্চবিত্ত-রা ঘটনার সাক্ষী থেকেও এড়িয়ে গিয়ে, তাকে মহাকালের গর্তে ধাক্কা দিয়ে ফেলে কি 'উপযুক্ত শিক্ষা' দেবার চেষ্টা করলেন? যারা সব দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেলেন, তাদের জন্য কোনও বিশেষণ আমি খরচা করবো না।
একটি ছোট্ট জিজ্ঞাসা-- একটা ঢিলকে উপরের দিকে ছুঁড়ে দিলে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছে সেটি কিছুক্ষণ স্থির থাকে। তারপর মাটির দিকে ধেয়ে আসে। আমাদের সহ্যের বাঁধ একদিন ঐ ঢিলের মতো ধেয়ে এসে সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাবে না তো? এটা মাথায় রাখতে হবে যে, 'সুপ্রিয়' আমরা সবাই যেকোনো দিন হতে পারি। ঐ জায়গায় আমাদের কোনো প্রিয়জন থাকতে পারে। তখন যদি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়, সহ্য করতে পারব তো? মান ও হুঁশ এর জলাঞ্জলি দেওয়া ভেকধারী ঐ মেরুদণ্ডী স্তন্যপায়ীদের দেখলে তখন রেগে যাব না তো?

About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই