Wednesday, September 14, 2011

আজ আমি কোথাও যাব না -- কূপমণ্ডূক


শামসুদ্দিন সাহেব সংসার করেননি। শেষ জীবনে একবার আমেরিকা যেতে চান। গড়পড়তা মধ্যবিত্তর মত দু’চোখে
স্বপ্ন নিয়ে নয়। কোন এক অজানা অস্বস্তিকে চোখের সামনে পরখ করতে হয়তো। বীথিকে তাঁর কোন জিজ্ঞাসা নেই, অথবা কোন সুপ্ত অভিমান, ঠিক তাও নয়। পরিণতি না পাওয়া একটা সম্পর্কের স্মৃতি ধরে অবাক একজোড়া চোখের সামনে দাঁড়াতে চান তিনি... একবার। কিন্তু কেন?
জয়নালও আমেরিকা যেতে চায়। আর পাঁচটা সাধারণ ছেলের মতই আমেরিকা তার কাছে স্বপ্নের দেশ। সব ব্যর্থতা মুছে এক নতুন জীবন শুরু করার সরল বিশ্বাসে বুক বেঁধে ওদেশের মাটিতে পা রাখতে চায় সে। কিন্তু কিভাবে?

হ্যাঁ, কথা বলছিলাম হুমায়ূন আহমেদ-র একটি উপন্যাসের। নাম শুনেই নিশ্চয় চিনতে পারছেন। লেখক পরিচিতিতে শুধু একটি কথাই বলব, উনি বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী বাঙালি লেখক, বাংলাদেশের কম করে দশটা প্রকাশককে রুজি-রুটি জুগিয়ে চলেছেন। ওঁর জনপ্রিয়তার এতটা বাড়াবাড়ির কারণ আমি ঠিক
বলতে পারব না। তবে একদম জলের মত লেখেন...... পুষ্টিগুণ নেই, কিন্তু ঢকঢক করে গেলা যায়। ‘আজ আমি কোথাও যাব না’- তার ব্যতিক্রম নয়।
একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের (শামসুদ্দিন) সঙ্গে দেখা হয় এক বাউণ্ডুলের (জয়নাল), আমেরিকা যাওয়ার ভিসার লাইনে। ধরে নিন কতকটা গল্পের স্বার্থেই, তক্ষুনি ভাব হয়ে যায় তাদের। দুজনেরই ভিসা পেতে কোন সমস্যা হয় না। আর এখানেই দু’জনের জীবনটা এক রাস্তায় এসে পড়ে। জয়নাল পথ দেখায়। সে রাস্তার দু’পাশে কোথাও সস্তার ওভারকোট, গোলাপি মাফলার ...আবার কোথাও উজবেক্‌ এয়ারলাইন্সের জঘন্য পরিষেবা, মাঝপথে মস্কো তে ফেলে রেখে বিখ্যাত ঘণ্টা দেখার স্বপ্নের হাতছানি। শামসুদ্দিন অবাক চোখে দেখে পাগলটাকে। দু’বছর ইন্টারমিডিয়েটে চোথা করে ফেল করা একটা ছেলের দীর্ঘ ন’বছর ধরে লালন করে আসা স্বপ্নে বিভোর চোখ দুটোতে হারিয়ে যান তিনি। কখন বা নিজের অজান্তেই সে চোখের পাতা ভারি হয়ে আসে, ভিড় করে আসে সেইসব দুঃস্বপ্ন, যার সামনে দাঁড়াতেই তার আমেরিকা যাওয়া। সম্বিৎ ফেরে, তিনি আবার দেখতে চান জয়নালের চোখ দিয়ে। জয়নালের মতো করে সাজাতে চান তার শেষজীবনের ইচ্ছেগুলোকে।
জয়নালের একা মেসজীবন। আমেরিকার স্বপ্নই তার বাঁচার অক্সিজেন। রুজি-রোজগারের বালাই নেই, সম্বল বলতে ‘সাদা’ মিথ্যাচারিতা। আর তার মধ্যেই কখন যে এসে পড়ে ইতি-র মত একটা মিষ্টি মেয়ে। প্রেমটা ভালোভাবে বুঝে ওঠার আগেই রাতারাতি তাদের বিয়েও হয়ে যায়। ইতিমধ্যে জয়নালের সব অভাব-অনটন লেখক পুষিয়ে যান তার ‘ভালত্ব’ দিয়ে। এরপর...... এরপরের গল্প না হয় আপনাদের অপেক্ষায় থাকুক...... বইয়ের পাতায়।
মুখ্য এই দুই চরিত্রর পাশাপাশি রয়েছে রফিক-পৃথু-রাহেলা-র একটি ছোট্ট পরিবার, তাদের ছোট ছোট দুঃখ-সুখ। সেগুলো দিনের পর দিন যোগ হতে হতে কিভাবে যেন আমার-আপনার জীবনের কাছাকাছি চলে আসতে চায়। শ্রীজাত-র কথা ধরে বলি, সে সংসারে বৃষ্টির রাতে আধকেজি চালের খিচুড়ি ফোটে, কিন্তু তার মধ্যে আটকে থাকা এককেজি ওজনের ‘ঝগড়া’টা মাপতে লেখক কার্পণ্য করেননি একটুও।

শেষে সমালোচনাই বলব, লেখক এখানে পাঠককে খুব সহজে চরিত্রে ঢুকতে দেননি। এ গল্পের চরিত্ররা অনেক তুচ্ছ কারণে হাসে, খুশি হয়... মায়া জড়ানো চোখগুলো ভরে আসে আরও অনেক সহজে। কি, চড়া দাগের মনে হচ্ছে? তা শুধু কি এই কারণে যে তারা আমার-আপনার মত নয়? এককথায় ‘আজ আমি কোথাও যাব না’- কিছু মানুষের স্বপ্ন আর স্বপ্নভঙ্গের কাহিনী। আঁতেলদের সাবধান করছি, এ উপন্যাসের সাহিত্যমূল্য কিন্তু শূন্যের কাছাকাছি। আর যারা ‘কথা’-র পাতায় এখনও আঁচড় কাটেননি, কি লেখা উচিৎ আর কি নয় – এই ভেবে লড়ে যাচ্ছেন, তাদের বলব, বইটা পড়ুন, নিচে link দেওয়া থাকলো। আপনাদের দ্বিধা খানিকটা কাটাতে পারলে এই আলোচনা সার্থক মনে করব।
লিঙ্ক:


About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই