Saturday, September 17, 2011

বন্ধুর সাথ আমি পেয়েছি... -- সৌম্য

ছবির উৎস: লিঙ্ক

বন্ধু এই শব্দটার সংজ্ঞা পরিবর্তিত হয়ে চলেছে জীবন এর বিভিন্ন ধাপ এর উপর ভিত্তি করে। একদম
ছোটবেলায়, যখন আমরা শিশু- এক শিশু আর এক শিশুকে দেখলেই মুখেএকগাল হাসি, বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়ে গেল। তারপর আর একটু বড় হলাম, ভালবাসা কি তা বুঝতে শিখলাম। তখন বন্ধুত্ব নির্ভর করে ভালবাসার জনের ওপর- অবশ্য বন্ধুত্ব তখন একটা চকোলেট বা একটা খেলনার ওপরও নির্ভরশীল। তারপর এলো স্কুল-primary স্কুল। classmate-রা সবাই তখন বন্ধু। এলো হাই স্কুল এর পালা। ততক্ষণ নিজের মতামত তৈরি হয়েছে। আর সেই মতের সাথে মিল হওয়া  জনেরাই  বন্ধু

তখন। এরপর college, বন্ধুর জেন্ডার পরিবর্তন হলো. বান্ধবী ও এসে জুড়ল জীবনে। অবশ্য আজকাল স্কুল পর্যায়ে টিউশন পড়ার সময়েই বান্ধবীদের আনাগোণা হয়  শুরুযদি না আগে থেকে কোনো পাড়া প্রতিবেশী বা বাল্যবন্ধু থেকেই মেল শুরু  হয়ে থাকে। মনে পড়ে , " বন্ধু তোমার পথের সাথী কে চিনে নিও, মনের মাঝেতে চিরদিন তারে ডেকে  নিও। এই পর্যায়ে এসে এটা বন্ধু বা বান্ধবী দুজনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এরপর আসে কর্মজীবন, নতুন এক অধ্যায়। নতুন এক প্রকার মানুষ -সহকর্মী। এই সহকর্মীরাও বন্ধু। সামনাসামনি দেখা হলে একগাল শুষ্ক কাষ্ঠ মার্কা হাসি, নিতান্ত প্রয়োজনীয় অভিবাদন  বিনিময় - যেটা না হলে চলে না আর কি....মাফ করবেন যারা এর ব্যতিক্রমী - আসলে তারা তো বিরল প্রজাতিরমধ্যে গণ্য হবেন !
এখানে আর এক কাণ্ড, কর্মজীবনে এসে যখন চোখ ফেরানো হয়  পুরোন, অনেক আগে  শুরু  হওয়া বন্ধুত্বের দিকে, তখন ছবিটা কেমন যেন অস্পষ্ট লাগে। প্রশ্ন জাগে, অস্পষ্ট কেন ? হয়ত বন্ধুত্ব - এই মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্কটায় ততদিনে পরিবর্তিত হয়ে গেছে - বড় হওয়ার পদ্ধতির অসাম্যতা, যা হতে পারে দুটি কারণে - এক, উচ্চতর স্থানে থাকা বন্ধুটির আত্মগরিমা, বা দুই, দ্বিতীয় স্থানে থাকা বন্ধুটির আত্মগ্লান। যদিও এই আত্মগরিমা বা আত্মগ্লানি - এই দুটি ভাবই অর্থহীন। ক্ষতি হয় মাঝে থাকা একটি সুস্থ সবল বন্ধুত্বের। এখানে মনে পড়ে সত্যজিৎ রায় এর ' ক্লাস ফ্রেন্ড ' - এর কথা। মাধ্যম তখন পরিবর্তিত হয়ে বন্ধুত্বের পবিত্র বিনিময় থেকে সাইফনমুখী অর্থসঞ্চার  এর দিকে ঢলে পড়ে। কত ভালো লাগত যদি সুমন এর বলা এমনটা হত ," হঠাৎ রাস্তায় অফিস অঞ্চলে, হারিয়ে যাওয়া মুখ চমকে দিয়ে বলে, 'বন্ধু - কি খবর বল, কতদিন দেখা হয়নি'।" সব পদ্ধতিই ব্যতিক্রমধর্মী। তাই বন্ধুত্ব - এই সম্পর্কটিতেও ব্যতিক্রান্ত উদাহরণও আছে। অনেক পুরনো বন্ধুত্ব এমনও থাকে যা যত দিন যায় তত মধুরতর হতে থাকে .....vintage  wine  আর কি - যত পুরনো তত বেশি  তার দাম। আবার অনেক বন্ধু জীবনে অনেক পরে এসেও চিরকালের মত আপন হয়ে যায় - হ্যাঁ, সে আমার বা তোমার সহকর্মীও হতে পারে।
বেশ কিছুদিন ধরে এগ্রিকালচার, হর্টিকালচার বা ফিশকালচার এর মত এক নতুন কালচার শুরু হয়েছে - মেস কালচার, এতে বন্ধুত্ব ব্রীড হয়। মেস কালচারএ হোস্টেল এর মত কোনো সীমানা নেই। সহপাঠী, সহকর্মী, সমবয়স্ক বা এদের সব ভিন্ন রূপ নির্বিচারে মেস কালচারের মাধ্যমে বন্ধু বৃদ্ধি করে...unity in diversityযুগ যুগ জিও মেস কালচার- তুমিই প্রকৃত ভারতীয়।
ছবির উৎস: লিঙ্ক

এতক্ষণ যা সব বন্ধু আমরা পেলাম তা তথাকথিত, চিরাচরিত। আধুনিক ইন্টারনেটের যুগে বন্ধুর সংজ্ঞা আবার গেছে বদলে। প্রথমে এলো ই-মেল। নাম ঠিক থাক বা না থাক, আমার তোমার পরিচিত একটি identification phrase - যার দুটি ভাগ - একটি তোমার মনগড়া বা নিজ নামের বিকৃত বা সঠিক  অংশ, আর একটি মেল মাধ্যম - যারা জুড়ে থাকবে একটি @ এর দ্বারা আর শেষে থাকবে ডট-কম, ডট-নেট বা এমনই আরো কিছু। তো লিখতে থাক মনের কথা, দেশের কথা, দশের কথা বা ব্যবসার কথা, আর আদান প্রদান হোক ই-মেল বন্ধুত্বের। এরপর এলো social networking এর জমানা। এরা বানায় তোমার আমার মুখের বই বা বই-এর মুখ - যদিও জরুরি নয় যে, নাম তোমার হলে মুখও তোমারই হতে হবে বা নাম আর মুখ দুটিই নাও হতে পারে নিজস্ব। বন্ধুর এক নতুন সংজ্ঞা - কিছু জানা, কিছু একেবারেই অজানা, কিছু gender বিভ্রান্তি, কিছু দূরের হয়েও কাছের, কিছু কাছের হয়েও দূরের- এই নিয়ে social networking site রা বানালো বন্ধু।
এরই মাঝে আছে chat লিখিত বার্তালাপ। এখানেও বিভ্রান্তি অনেক, কিন্তু এরাও তৈরি করলো এক নতুন বন্ধুত্বের অধ্যায়। কিন্তু অবাক হই যখন ভাবি ফোন একটা মৌখিক বার্তালাপ মাধ্যম হয়েও কেন আম জনতার বন্ধু মাধ্যম হলো না। তাহলে কি যা ভয় করছিলাম তাই ? বন্ধুত্বেও 'money does matter!!!'
গড়পড়তা ব্যাপারটা দাঁড়ালো এমন... আগে, অর্থাৎ ইন্টারনেট মাধ্যম ভিন্ন স্থাপিত হওয়া বন্ধুত্বে, যাদের সামনে থেকে বন্ধু বলে জানতাম, তারা পিছনে অন্যরকম হলে আলাদা কথা, নাহলে বিভ্রান্তির অবকাশ ছিল না। এখন উন্নত প্রযুক্তির দৌলতে ধরা কে ঘর-এর জ্ঞান বলাই যায়। আর একটু adventure প্রিয় না হলে যেটুকু বিভ্রান্তির অবকাশ ইন্টারনেট বন্ধুত্বে আছে, তা মুছে ফেলাই যায়।
ছবির উৎস: লিঙ্ক

এত কলম পিষে সিদ্ধান্ত দাঁড়ায় যে শুধু মাধ্যমই ত্বরান্বিত ও আধুনিক হয়েছে, চিরাচরিত প্রকৃত বন্ধুত্ব এখনো সেই তাই- প্রকৃত বন্ধু বল সেই জনে / পাশে আছে যে জন - সুখে ও বিপদ ক্ষণে!
বোঝো ...................... এত কিছুর শেষে ," কলকাতা আছে কলকাতাতেই"!  

About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই