Thursday, September 29, 2011

মা আসছেন P P P মডেলে -- হরিদাস পাল


পুজো মানে কী?
বাঙালিদের কাছে পুজো মানেই দুর্গা পুজো।
কেন?
কারণ দুর্গা পুজোর মতো এমনই একটা মেগা ইভেন্ট আর আছে নাকি? গোটা ভূ-ভারতে আছে কিনা সন্দেহ। এ এক আলাদা মজা। ওই সব ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট পড়ে টড়ে কিসসু হয় না। এক এক পাড়ায়, লাল্টু, ঝন্টু, পল্টুদা যা সামলে দেয় না, বলার কথা না।
কেন?
দূর মশাই। খালি কেন, কেন করেন কেন? এখানে দুদশ বছর থাকুন, তখন বুঝবেন। ব্যাপারখান কী। আর যদি নিতান্তই শুনতে চান, তা হলে বলব। কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত শুনতে হবে বলে দিলাম।
কি বললেন, তা শুনব? আচ্ছা বিপদে পড়া গেল রে ভাই। কত করে কাটাতে চাই, কিছুতেই কথা শোনে না। কী বলি এখন? ছোটো বেলায় রচনা আসলে লিখতাম। এখন কি আর সে সব মনে আছে? শালা, পিছন ছাড়ে না...কেন, কেন, কেন আর কেন...। উফ্‌ জ্বালিয়ে খেলে।
আরে মশাই বলছি বলছি। বিড়িটা ধরাতে দিন। কত কী যে বলতে হবে, একটু দম লাগবে না?
দুর্গা পুজো আমাদের সবচেয়ে বড় ফেস্টিভাল। ফেস্টিভাল বোঝেন? সারা বছর ধরে ভাবনা চিন্তা করে তবে মাঠে নামতে হয়। এ বার আমাদের পুজোর বাজেট ৪০ ছাড়াবে। দূর মশাই। গান্ডু নাকি? হাজার টাজারে কিছু হয় না। লাখ। লাখ।
এ বারের থিম মাস্টার মিন্টোর। মিন্টো এখন কলকাতায় এক নম্বর। প্রথমে কিছুতেই রাজি হয়নি। তখন তো আর জানতো না, কোথা থেকে হুলো টা আসবে। শালা পার্থদার পাড়ার পুজো বলে কথা। রাজি হবে না...ওর বাবা রাজি হবে। হলও তাই। ওই সব কত মিন্টো ফিন্টো কত দেখলাম। সব শেয়ালের এক রা।
আবার কী হবে? অত এখন থেকে বলা যাবে না। ৬০ কেজি পিতলের মূর্তি হচ্ছে এইটুকু বলে দিলাম। বাকি লাইট থাকবে। ফুকুশিমা-দাইচি হবে বলে পল্টুদা বলছিল। কিন্তু লাল্টুদা আর বাঁকাদা বলল ও সব পাবলিক খাবে না। যত সব আঁতেল মার্কা থিম। ওদের দাবি, ওয়ার্ল্ড কাপের দলের সঙ্গে দাদাকেও রাখতে হবে।
কেন?
কারণ এই দল গড়ার পিছনে নাকি দাদার-ই হাত আছে। এখন খেলে না তো কী হয়েছে? সবার কথা শুনে আমাদের দাদা এ বার যা বলবেন তাই হবে। দাদার-ই তো পুজো। দাদা জিতেই বলেছিল, এ বার ৪০ চড়াব, দেখে নিস। পাবলিক, প্রাইজ আর প্রেসটিজ-এই নিয়ে আমাদের পুজো। তবে থিম যা-ই হোক না কেন, পুজো উদ্বোধন করতে কে আসবে, তা নিয়ে কিন্তু সকলেই এক মত।
কে বলুন তো?
ছেড়ে দিন। আপনি আর জানবেন কি করে? আমি-ই বলে দিচ্ছি। পাউলি ছাড়া আর কেউ এই পুজো উদ্বোধন করলে চলবে না। ও পাউলির কেসটাও আপনি জানেন না? ও জেনে আর কী হবে?
ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে যা দেখার দেখে-শুনে নিতে পারবেন। এই পুজোর বাজার-ও একাই মাত করে দিয়েছে। একটা কাগজে একটা ছোট্ট খবর। ব্যাস। সশব্দে ফেটে গেল। জলে-জঙ্গলে, মাঠে-অপিসে, ব্লগে-গ্রুপে সকলেরই এক কথা। বলছে, আরে হাটা পুজো, আগে একবার দেখে নিই। ও ছাড়া আর কে-ই বা আসবে বলুনতো?
কিন্তু, আমাদের পাশে রাতুলদের পাড়ায় এ বার থিমটা আমার ততটা পছন্দ হয়নি। পরিবেশ। ব্যাপারটা এখন ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। ওরা কি সব বলছে, ‘জল ধর, জল ভর’-কী জানি। এই সব করলে নাকি দিদি হেব্বি খুশি হবে। টাকা উঠবে ভাল। তবে পাবলিককে খাওয়াতে হবে। না হলে কিচ্ছু হবে না।
কী বললেন, পাবলিক? আরে দূর মশাই। এতো ক্ষণ ধরে ভাল করে বোঝাচ্ছি, তা-ও থিম-থিম করছেন কেন? ওই পাবলিক-ই তো সব। পাবলিকের জন্যই থিম। ওর জন্যই পাউলি, প্রাইজ সব কিছু। পিপিপি। কাজেই, মা এ বার আসছে পিপিপি মডেলে।
বুঝলেন?

About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই