Monday, September 5, 2011

Students' Day -- দিদিমণি

ছবির উৎস: লিঙ্ক

আজ তো আমার দিন। শিক্ষকদিবস কিনা। নারীদিবস, শিশুদিবস, পিতৃদিবস, মাতৃদিবস, গোলাপদিবস, বন্ধুত্বদিবস, প্রেমদিবস,
আজকাল কোন দিবস পালনেই তো আয়োজনের ত্রুটি হয়না, শিক্ষকদিবসই বা কেন বাদ থাকে? ওদিকে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শিক্ষকরা পুরস্কৃত হন আর এদিকে স্কুলে-কোচিং এ (স্কুলের মত কোচিংও এখন স্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) শিক্ষক-শিক্ষিকারা সম্মানিত হন। আমার তো পুরো ব্যাপারটা ভালই লাগে। বেশ দিগ্বিজয় করার
মত আনন্দ হয়।
সারা বছর স্যার ও দিদিমণিদের বিভিন্ন নামে ডাকা, তাঁদের নিয়ে খিল্লি করা, নকল করা, বাপ-বাপান্ত করা- ছাত্রছাত্রীদের এ আর নতুন কথা কি? ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক তো অহি-নকুল সম্পর্কেরই আরেক নাম। জনপ্রিয় শিক্ষক-শিক্ষিকা হাতে গোনা। এবং জনপ্রিয়তার শীর্ষে ওঠার প্রধান শর্ত ছাত্রছাত্রীদের বকুনি না দেওয়া। আর যাঁরা বকুনি দেওয়া ও শাসন করাটাকে শিক্ষকতার অঙ্গ রূপে গ্রহণ করেছেন, তাঁরা পুরোপুরি Black-listedক্লাসে টিচার ঢুকে বোর্ডে নিজের কার্টুন দেখতে পেলেন, চেয়ারে বসতে গিয়ে পড়ে গেলেন, হঠাৎ করে কিছু ভুল উচ্চারণ করে হাসির রোল ওঠালেন- আরো কত কি! ছেলেদের স্কুলে এর থেকে অনেক বেশি কেরামতির গল্প শোনা যায়। আমাদের ছেলে বন্ধুদের মুখে আংশিক গর্বের সঙ্গেই সেইসব গল্প শুনেছি। জানিনা পরে তাদের কেউ কেউ শিক্ষক হয়ে নিজেদের কীর্তিকলাপ নিয়ে কি ভাবেন এখন। রাস্কিন বন্ডের লেখায় পড়েছি, “None can be more cruel than a gang of school-boys.” – কথাটা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায়। ছাত্রদের শিক্ষকদের প্রতি এই আচরণ চিরন্তন ধ্রুব-সত্য। এই অবস্থার পরিবর্তন কোনদিন সম্ভব নয়- একমাত্র শিক্ষক দিবস ছাড়া। কি জানি স্টুডেন্টদের এদিন কিসের বাই ওঠে। হঠাৎ করে শিক্ষক শিক্ষিকারা কেমন করে অসুর থেকে দেব-দেবী হয়ে যান তাদের কাছে। ভেবে পাই না এটা কি শুধু হুজুগ, না সত্যি সত্যি ভালবাসা। নাকি একদিন পড়া ফাঁকি দেওয়ার গোপন ষড়যন্ত্র।

ছবির উৎস: লিঙ্ক

তবে ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার আয়োজন অনেকদিন আগেই শুরু হয়ে যায়। ক্লাসের সবচেয়ে বিচ্ছুগুলোরই সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দেখা যায় ক্লাস না করে শিক্ষক দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়ায় ব্যস্ত থাকতে। সকলের থেকে চাঁদা তোলা, ক্লাসরুম পরিষ্কার করা, সাজানো- ওহ্‌! সে কি মাতামাতি! দেখতে মজাই লাগে। অপটু হাতে রঙিন কাগজ দিয়ে চেন বানিয়ে দরজায় টাঙানো, বোর্ডে সেদিন আর কার্টুন নয়- অনেক ভাল ভাল কথা (পড়ে মনে মনে বলি-ইয়ে বাত কুছ হজম নেহি হুই!’), দেওয়ালে বা টেবিলে কাগজ বা ফুল দিয়ে লেখা ‘Happy Teachers’ Day’ (যদিও নিচু ক্লাসগুলোতে এই লেখাতেও বানান ভুল থাকে)। ক্লাসে ঢুকে সেদিন আর বকাবকি নয়, পড়া ধরা তো নয়ই, সকলে বেশ গুড বয়/গার্ল এর মতো আচরণ করে। নিজের ক্লাসকেই অচেনা লাগে। মনে হয় এরা কি আমারই স্টুডেন্ট? সারা বছর এরা এমন শান্ত-শিষ্ট, সভ্য-ভদ্র থাকলেই তো পারে। না, তা হওয়ার নয়, কারণ তা হলে তো আমাদেরকেও বছরের প্রত্যেকদিন লেখাপড়াটা এই দিনের মতো কর্মসূচী থেকে ঝেড়ে ফেলতে হয়। এখন তা কি করে সম্ভব? এত uncanny লাগে যখন টিচারদের প্রণাম করার ঘটা পড়ে যায় এই দিন। অন্যদিন যেখানে ধাক্কা মেরে চলে গেলেও ওরা দাঁড়ায় না, বা খুব বেশি হলে বলে সরি ম্যাম’, সেখানে এই দিন ওদের প্রণাম করা ঠেকানো যায় না। যেখানে টিচারদের বিদায়-সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চাঁদা তুলতে শ্রেণি-শিক্ষিকা দের কালঘাম ছুটে যায়, সেখানে শিক্ষকদিবসে নিজেরা নিজেদের উদ্যোগে চাঁদা তুলে ওরা দামি দামি উপহার কেনে আর গদগদ মুখ করে সেগুলো আমাদের হাতে তুলে দেয়। উপহার দেওয়ার মৌলিকত্ব ও অভিনবত্ব নিয়ে আবার প্রতিটি ক্লাসের মধ্যে প্রচ্ছন্ন প্রতিযোগিতা চলে। এই দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য বা দিদিমণিদের reliever নিচু ক্লাস নেওয়ার ধুম পড়ে যায়। সত্যি সত্যি নিজেদের এই দিনটায় খুব ‘special’ মনে হয়।
ছবির উৎস: লিঙ্ক

যে উদ্দেশ্যেই হোক, ওরা বছরের এই একটা দিন সত্যিই খুব উপভোগ্য করে তোলে। উৎসবের একটা চেহারা নিয়ে বিদ্যালয়ের একঘেয়ে দৈনন্দিন জীবনে প্রাণের যে বাণটা আসে সেটা খুব আনন্দের। আমাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনটা মেকি না আসল তা বিচার করে কি লাভ? বছরের একটা দিন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ইচ্ছেতে না চলে স্কুলটা যদি ওই খুদেদের ইচ্ছেতে চলে চলুক না। বছরের এই একটা দিন আমাদের আনন্দ দেওয়ার উপলক্ষ্যে নিজেদের আনন্দ করাটা যদি ওদের লক্ষ্য হয় তো হোক না। আমরা আপত্তি করার কে? স্কুলটা তো ওদেরও।



About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই