Monday, February 13, 2012

আসা যাওয়ার পথের ধারে -- গঞ্জিলা

ঘটনা : এক
বাস ধরবো বলে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছি। আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন আরও কয়েকজন। বেশিরভাগ মানুষেরই মুখ চেনা। বাস আসতে দেরি হচ্ছিল। হঠাৎ একজন ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন আমার দিকে।
নমস্কার জানিয়ে নিজের পরিচয় দিলেন। তিনি হাওড়ার কোন স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক। এখন বি.এড পড়ছেন। জানালেন, উনি প্রতিদিনই আমায় লক্ষ্য করেন ও কথা বলবেন ভাবেন কারণ আমাকে নাকি তাঁর কোন এক পরিচিতার মত দেখতে। উনি আমার ঠিকানা জানতে চাইলেন। বাড়িতে কে কে আছে জিজ্ঞাসা করলেন। আমি স্মিত হেসে যত সংক্ষেপে পারা যায় উত্তর দিচ্ছিলাম কারণ অপরিচিত কারোর সঙ্গে কথা বলতে সহজে স্বচ্ছন্দ বোধ করি না। উনি এরপর নিজের ঠিকানা দিলেন ও তাঁর বাড়িতে কে কে আছেন জানালেন। তাঁর উৎসাহ দেখে মনে কেমন খটকা লাগছিল। এমনি এমনি একটা লোক অপরিচিত কাউকে এত প্রশ্ন করে স্বাভাবিকভাবে? এবার লোকটি আমার ফোন নম্বর চাইলেন। ব্যাপারটা এবার আমার একদম পছন্দ হল না। তাঁকে কাটানোর জন্য বললাম আমি সেলফোন ব্যবহার করি না। উনি বললেন ল্যান্ড ফোনের নম্বর হলেও চলবে। আমি বললাম আমার বাড়িতে ল্যান্ডফোন নেই। উলটে প্রশ্ন করলেন তাহলে আমি ফোন করার প্রয়োজন হলে কি করি। বললাম, বুথ থেকে ফোন করি। তখন উনি একটা কাগজে লিখে নিজের ফোন নম্বর আমাকে দিলেন ও বললেন যোগাযোগ করতে। আমার মনে বদ্ধমূল ধারণা হল যে নেহাত পরিচিতার মত দেখতে বলে নয় ওনার আমার সঙ্গে আলাপ করার উৎসাহের কারণটা অন্যকিছু। নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন সেটা কি হতে পারে? হয়তো পারছেন কারণ আমিও একই কথা সন্দেহ করেছিলাম।  
ঘটনা : দুই   
ওই একই জায়গা থেকে বাস ধরেছি। সঙ্গে ছিলেন একজন স্কুলের শিক্ষিকা। যাতায়াতের পথেই তাঁর সাথে আলাপ। বাসে উঠেই তিনি পেয়ে গেলেন তাঁর এক বান্ধবীকে। বান্ধবীর পাশে বান্ধবীর স্বামী। দুই বান্ধবী গল্প জুড়ে দিলেন। স্বামীর সাথে বান্ধবীর পরিচয় করিয়ে দিলেন আমি বাসে সিট খুঁজতে ব্যস্ত। কারোর দিকেই তখনো তাকাই নি। বাস পৌঁছলো গন্তব্যে। বাস থেকে নামার সময় একবার চোখ গেল ওই স্বামী-স্ত্রীর দিকে। দেখে চমকে উঠলাম ভদ্রলোককে। এই ভদ্রলোক ও ‘ঘটনা : এক’ –এর ভদ্রলোক অভিন্ন। তবে কি আমার সেদিনের অনুমান ভুল ছিল? নাকি এখন যা ভাবছি আর সেদিন যা ভেবেছিলাম দুটোই ঠিক?
ঘটনা : তিন
চাকরির জায়গায় পৌঁছবো বলে অটোতে উঠেছি। পিছনের সিটে তিনটি মেয়ে। কথাবার্তা শুনে মনে হয় কলেজ পড়ুয়া। নিজেদের মধ্যে বেশ জোরে জোরে কথা বলছে। ওদের মধ্যে একজন নিজের বর্তমান প্রেমিকের সাথে তার বর্তমান টানাপড়েন নিয়ে কথা বলছে, “জানিস তো, গত সপ্তাহে আমি ভীষণ upset ছিলাম, কারণ নীলের ওর আগের girl friend –এর সাথে দেখা হয়েছিল। আমি ভাবলাম ওদের দুজনের মধ্যে তো break-up হওয়ার মত কিছুই হয় নি। অথচ break-up হয়েছে। তাই যখন আবার ওদের দেখা হয়েছে জানতে পারলাম আমি ভাবলাম নীল এবার আমার সাথে break-up করে দেবে। আমি সারারাত কাঁদলাম। দুদিন নীলের সাথে কথা বললাম না। তারপর নীল আমাকে ফোন করে বলল ওর একটা দরকারি কথা আছে আমার সাথে। আমি তখন sure হলাম যে এবার সত্যিসত্যি ও আমার সাথে break-up করে দেবে। তখন আমি আরো কাঁদলাম। তারপর নীল আমার সাথে দেখা করে জানতে চাইল আমি কেন upset আমি তখন ওকে সব বললাম। নীল আমার হাত ধরে বলল যে আমি তো এখনো আমার পুরনো boy friend –এর সাথে কথা বলি, তার মানে কি আমি ওর সাথে break-up করবো? তা যখন নয়, তাহলে আমার ভয় পাওয়া অনর্থক। তখন আমি শান্ত হলাম। কিন্তু ওকে বুঝিয়ে বললাম যে আমার আগের boy friend –এর সাথে আমার break-up –এর একটা valid reason আছে। কিন্তু ওর তো তা নেই। তাই আমার আগের সম্পর্কটা তৈরি হওয়া আর সম্ভব নয় আমরা যতই কথা বলি না কেন। কিন্তু যেহেতু নীলের আগের relation টা ভাঙ্গার কোন কারণ নেই তাই আমি এখনো কিছুটা insecure তাই আমি নীলকে স্পষ্ট বলে দিলাম যে নীল আর কখনো যদি ওর আগের girl friend –এর সাথে দেখা করে বা কথা বলে তাহলে আমি ওর সাথে break-up  করে দেবো।” আমার ভাগ্য ভালো যে ওর বক্তব্যটা আমি অটো থেকে নামার আগে শেষ হয়েছিল।
ঘটনা : চার
যাদবপুর থেকে অটোতে করে টালিগঞ্জ যাচ্ছি। অটো যখন বিক্রমগড়ের কাছে পাশের ভদ্রলোকের মোবাইলে একটা ফোন এল। ভদ্রলোক ফোন ধরলেন, -“হ্যালো। না না, আমি এখন কিছুতেই যেতে পারবো না, আমি এখন হাসপাতালে।” কথাটা শুনেই আঁতকে উঠে কান খাড়া করলাম। উনি বলে চললেন, “আরে গতরাতে শ্বশুরমশাই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অসম্ভব পেট খারাপ। স্যালাইন চলছে। কাল রাত সাড়ে এগারোটায় বাড়ি ফিরেছি। আবার সকালে উঠে hospital চলে এসেছি। শ্বশুরমশাই সুস্থ হলে আপনার সঙ্গে অবশ্যই দেখা করব।
আমায় দোষ দেবেন না- এঁদের গোপন কথা জনসমক্ষে প্রচার করছি না। শুধু অবয়বহীন কিছু মানুষের মুখে এই কথোপকথন আর ঘটনাগুলোয় নিজেদের বসিয়ে দেখুন তো- নিজেদের সঙ্গে মিল পাচ্ছেন না? 

About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই