Thursday, April 19, 2012

দশম্পূর্ণ -- আগন্তুক


বাঙালি জানত যে পড়তে হয় নইলে পিছিয়ে পড়তে হয়, তার এও জানা ছিল যে ভগবান ছাড়া আর
কাউকে ভয় করার নেই। মেহনতি মানুষের মুখপাত্র বলে গর্ব করত নিজেকে নিয়ে। নতুন সংযোজন-“যদি হাঁকে সরকার- সাড়া দেওয়া দরকার।” অতএব নিরানন্দের এই বাজারে গ্রন্থাগারগুলিতে তে বর্তমান-ভবিষ্যৎ সব অন্ধকার। শুধু “জেগে আছে বাংলা”। মূর্খ লোকে বলে বটে- লজ্জা-ঘৃণা-ভয়, তিন থাকতে নয়।
বাঙালি আবার ভারতসভায়। দাদামশাই পেলেন ফালকে। ফেলুদা এবার পাস করলেন। চিনেছিলেন মাণিকদা, জনতার দরবার। চেনেনিকো আমলারা, চেনেনি সরকার। এতো নয় শুধু অভিনয়। লবি আছে, আছে উমেদারি, ঘুষও আছে, প্রচারও তো দরকারি। পক্ককেশ বৃদ্ধবেশ- যাক তবু শেষমেশ- আসিল স্বীকৃতি। দিল্লিপ্রসাদপুটে ঐ এলো আহ্বান- অপেক্ষার দিন শেষে পেলেন সম্মান।
বাম আমলে কর্মহীনতা নিয়ে গলা ফাটিয়েছেন দীর্ঘ ৩৪ বছর, তাই মাটির মা মানুষের স্বার্থে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে নিত্যনতুন প্রয়াস। সরকারী গেজেটে নতুন পদের বিজ্ঞাপন। মাসিক বেতন: আড়াই হাজার। সম্ভাব্য শূন্য পদের সংখ্যা: ত্রিশ হাজার। শিক্ষাগত যোগ্যতা: সর্বাধিক মাদ্রাসা পাস। অভিজ্ঞতা: ইমাম পদে ন্যূনতম তিন বছর ধর্মপ্রচার। দায়িত্বভোটের প্রাক্কালে প্রকাশ করা হইবে।
দাদা? নাকি ডন? কারে চাও তুমি মন? ইডেন মাঠে বঙ্গভঙ্গ। অফিস টেবিলে নতুন রঙ্গ। শাহরুখ আবার হারুক বলছে মহারাজের প্রজা। কেউ বা ক্রিকেট কাঁচকলা বোঝে, ‘বাদশা’ই তার রাজা। পুনের খেলাটা দেখতেই হবে- আপিস নিয়েছি ছুটি, সেন্ট্রাল পার্ক ফাঁকা পড়ে থাক-গ্যালারীতে গিয়ে জুটি। রাজকার্য শিকেয় তুলে দর্শক হল দিদি-সত্যি বলছি জোড়া পাঁঠা দোব বাই চান্স জিতি যদি।
কোঝিকোড়ে হট্টগোল। উপলক্ষ্য বিংশতিতম বামবৈঠক। প্রাচীন দুর্গের অনুকরণে মণ্ডপ। অনুকরণই ভরসা, কারণ প্রকৃত দুর্গটি ঘাসফুলের জঙ্গলে উধাও। নানাপ্রকারের অনুশোচনা আর গালভরা সংকল্পে শেষ হল মোচ্ছব। আলোচনায় স্পষ্ট হল- ‘দিল্লি বহুত দূর’। আপাততঃ তাই জনসংযোগ আর শুদ্ধিকরণ ব্রত। কিন্তু তথা ন আগত বুদ্ধ থাকলেন অন্তরালেই। দুর্জনে বলছে- পরাজয়ের কাণ্ডারির স্বেচ্ছাবকাশ!
বাংলা সিনেমা আবার তার গৌরবের পথে। বাংলা ‘বই’ আর ‘সিনেমা’র মাঝে বিভেদ মুছে দিয়ে গোঁসাইবাগানে সদর্পে ঘুরে বেরালো ভূত। সেই ভূতের ভবিষ্যৎও বেশ সুরক্ষিতই মনে হচ্ছে। নন্দনে গিয়ে দাড়ি চুলকনো বাঙালি নোবেল চোরকে সমর্থন করছে নির্দ্বিধায়। এমনকি রবিঠাকুরও আশীর্বাদ করছেন দেখা যাচ্ছে, এটা-সেটা ফোঁড়ন দিয়ে ওনার গান এখনো সবকটায়- এবং প্রত্যাশা মতোই, সবচেয়ে ওপরে।
শোনা যাচ্ছে দারিদ্রের হার নাকি হ্রাস পেয়েছে অবিশ্বাস্যভাবে! ইন্দ্রজাল কি তবে? না না, ওসব গল্পকথা- সুখী মানুষের স্বপ্নগাথা। ষাট বচ্ছর বাজেট নাটকে ক্ষান্ত দিয়ে শেষে- দিল্লিবাবুরা ফন্দি আঁটেন গোলটেবিলে বসে। সংজ্ঞাটুকুই বদলে ফেলো-‘গরীব’ কাহারে কয়। সে কি শুধুই নিরন্নয়? দিনে যার আয় হবে দশ টাকা- দরিদ্র তারে কেন হবে ডাকা? টাটা-বিড়লার সমান আসন তার জন্যই রাখা।
গুজরাটের দাঙ্গা অতীত হয়েছে। না না, ইতিহাসে ঠাই পায়নি মোটেই। প্রমাণাভাবে তামাদি হয়ে গেছে। আমুদে মোদীর আমেদাবাদ ইসলাম শূন্য হয়েছে নির্বিঘ্নে। অসন্তোষের রেশটুকুও মুছে গেল সম্প্রতি। মুখ্যমন্ত্রী নিষ্কলঙ্ক জানিয়ে দিয়েছে সিবিআই। প্রধানমন্ত্রী পদের দাবীও তাই নিষ্কণ্টক। তিনি আছেন, চলছে ন্যানো, উঠছে গড়ে শিল্প, দাঙ্গা-টাঙ্গা মিথ্যে কথা-মন্দ লোকের গল্প।
কুলীন বামুন বহুদিন হল এক বউ নিয়ে তুষ্ট। শরিয়ত তবু বলেনি কখনো বহুবিবাহ যে দুষ্ট। দিব্যি ছিলেন রমরমিয়ে বেশ খানকত ইস্তিরি নিয়ে। বাদ সাধল দার-উল-উলুম। বন্ধ কর এসব জুলুম। ‘খান’ নয় তারা ‘জন’ মনে রেখো। সব বউদের এক চোখে দ্যাখো? ভারত সমাজে শান্তিতে থাকা সবার জন্য দরকার। তাইতো বোধহয় আদেশনামায় – নিকাহ্‌ ওনলি একবার।
১০
কথায় বলে ‘শব্দব্রহ্ম’। নতুন ব্রহ্মাস্ত্র হল ‘হাই সেক্সি’। আচ্ছা, এটি প্রশংসাসূচক? নাকি অপমানের? জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বলছেন- সম্মানের। তুলসী ইরানি বলেছেন শাস-বহু সবার পক্ষেই নাকি অপমান। রাখি-ঢাকি না করে রাখি সাবন্ত বলেছেন It’s OK. পাকিস্তান তনয়া বীণা মালিকও পক্ষে। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে যারা ঐ সম্বোধনটি পেয়েছেন, তারাই কেবল পক্ষে, আর প্রতিবাদিনীরা.........যাক্‌গে।

About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই