Monday, August 20, 2012

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর মা... -- সীমা

মম, মাম্মি, মাম্মা... এদের মধ্যেই কি মা আছেন? প্রশ্ন-টা জটিল মোটেই না, তাই না?
আচ্ছা আজকাল তো সব নাম-ই এক অক্ষরের হয়, তাহলে মা এক অক্ষর থেকে বেড়ে গিয়ে মাম্মা, মাম্মি, মম কেন হল? জানি না আজকাল এইসব উদ্ভট সব প্রশ্ন জাগে, পড়াশুনার তো বালাই মিটে গেছে কাজেই যত সব হাবিজাবি প্রশ্ন ভিড় করে।
নিজেও তো থাকি পরদেশে, এত গাল ফুলিয়ে বলার কি আছে? এই জন্যেই তো ভয়ে ভয়ে বলছি...জানি দেওয়ালেরও কান আছে তাও
ফুসমন্তরে জানিয়ে রাখছি। 
জানো শন, আজ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। ওকে মাম। বাট হোয়াই রাভিন্দনাদ টাকুর মাম, আই হার্ড রাভিন্দনাদ টেগর।
আমরা বাংলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলি কিন্তু ইংলিশ -এ বলা হয় রবীন্দ্রনাথ টেগোর।
মাম, আই কান্ট আন্ডারস্ট্যান্ড। প্লিজ...ডোন্ট কনফিউজ মি...মাম্মা
ডোন্ট আরগিউ শন...রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা টেগোর যাই হোক না কেন। তোমার জানার দরকার নেই...গো এন্ড স্টাডি...ও খে এ এ ...
মা! রবীন্দ্রনাথ বড় আক্ষেপ করে বাঙালি জাতিকে একবার বলেছিলেন, “একবার তোরা মা বলিয়া ডাক।” আজ বাঙালি সন্তানকে বলবার সময় এসেছে 'একবার তোরা মা বলে ডাক , মা বলে ডাক- মা বলে ডাক -মা-কে।” ইংলিশ মিডিয়াম -এর দৌলতে মা-মাম্মি, মামি, মাম -এ পরিণত হয়েছে। সেই শাড়ি পরিহিতা মাথায় আঁচল। কপালে সিঁদুরের টিপ, শান্ত চোখ, স্নিগ্ধ দৃষ্টি, সমস্ত শরীরকে ঘিরে যেন এক কল্যাণ রূপ বিরাজ করছে। এ তো কালীঘাটের পট কিংবা যামিনী রায়ের ছবি। পুরাকালের বাংলার মা, বাংলামায়ের মাতৃত্ব।
আজ বাঙালি মায়ের মাতৃত্ব ছাই চাপা পরেছে জিনস আর টপের আড়ালে। বাংলা বুলি মা বলবে তবে তো শিশু শিখবে? বাংলা খাবার মা খাবে তবে তো বাচ্চা খাবে।
বেবি, তোমার মায়ের কোল হারিয়ে গেছে। তুমি তো জন্মেই- মা বলেই প্রথম ডাকো। কিন্তু মা চায় না বেবি তাকে “মা'' বলুক। আমেরিকার শিশুরা মা ডাকে? তাই বাঙালি শিশুও মা ডাকবে কেন? তুমি কি শীতের ওমে মায়ের আঁচলের সন্ধান পাও? তুমি তো বেবি কট এ শোও। তুমি তো মা থেকেও মাতৃহারা । কারণ এখনকার মা- রা তো “মা” নাম নেবার পরেই বিউটি সেলুনে যায়। বেবি থাকে আয়ার কাছে। এই শিশুরাই বাল্য- কৈশোর থেকে যৌবনে।
তারপর একদিন উড়ে যাও আমেরিকা কিংবা লন্ডনে। মা দেখে দেন মেয়ে, সেই মেয়েকে নিয়ে গিয়ে আগে তার চুল কেটে দাও, শাড়ি না পরার জন্য কড়া নির্দেশ দাও অথবা এত ঝামেলায় না গিয়ে নতুবা নিজেরাই ঠিক করে নাও নিজেদের বিয়ে...
মা পড়ে থাকে সল্টলেকের ফ্ল্যাটে বা রাজারহাটের ফ্ল্যাটে। বাতের ব্যথায় কষ্ট পায় আর ভাবে সে মাম্মি নামক মা -''ছেলেটা কবে আসবে কে জানে।” বড় একা লাগে। কিন্তু সেই সন্তান যখন একা থাকত...। সে যখন মা-এর কোলে খেলতে চাইত?
এ যেন বাঙালি মায়ের আর্তনাদ। বিদেশে যাওয়া মানেই এখন হয়েছে সন্তানকে হারানো।
শেষে প্রবাসী সন্তান মাকে নিয়ে যায় বেবিসিটিং-এর জন্য, নিয়ে যায় তারা সুস্থ জীবন পাবে মায়ের অফুরন্ত পরিশ্রমে। তারপর? কাজ শেষ হলে আর মায়ের কর্মক্ষমতা লোপ পেলে তাকে বৃ্দ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়। 
আমেরিকা থেকে টাকা আসে বৃ্দ্ধাশ্রমে, সন্তান আসে না। মা বলে ডাকার লোক নেই। এই মা-হারা বাঙালি তৈরি হচ্ছে ঘরে ঘরে।
হায় বাঙালি তোমার ঘরেও মা নেই, বাইরেও নেই। তুমি মাতৃহারা। তুমি পরদেশের আগাছা। নিজের মা-এর দেশ তো আবর্জনা, শ্যাবি, সেখানে গিয়ে সমালোচনা করা যায়, কিন্তু নিজে করে দেখাবার সময় একেবারে পেছন ফিরে চোঁ চাঁ দৌড়...।
চাণক্য বলেছিলেন: যার ঘরে মা নেই, তার কাছে ঘর ও বন এক। 
নেতারা বলেন- আমরা মানুষের পাশে আছি। সত্যি কি তাই? তাহলে মা-এর চোখের জল শোকায় না কেন? 
দেশ থাকলে তবে তো মানুষ, মা থাকলে তবে তো গৃহ।
ভবানন্দের মতো বলতে পারবেন- আমরা অন্য মা মানি না-জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরিয়সী।


About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই