Monday, November 12, 2012

রান্নাবান্না -- অভীক

আমার বউ মাঝে মধ্যেই অনেক রকম রান্না করে, রকমারি সব নাম, এইরকম নানা ধরনের অদ্ভুত সব রান্না কোথা থেকে যে পায় কে জানে। খেতে কেমন হয় জিজ্ঞেস করলে বলব যে আপনিও একদিন এসে চেখে যান। খেয়ে খারাপ বলার সাহস আমার তো দূরে থাক, স্বয়ং শিবেরও হবে না যদি পার্বতী রান্না করে নিয়ে আসে। মিরাক্কেলে শুনেছিলাম স্বামী দুই প্রকার হয়,
এক) যারা বউকে ভয় পায়, দুই) যারা বউকে খুব ভয় পায়।
নিশ্চয় বুঝতেই পারছেন আমি প্রথম দলে, এই লেখা যে লিখতে পারছি, সেটাই তার প্রমাণ। প্রথমে ভেবেছিলাম ছদ্মনামে লিখবো, কিন্তু পাছে নিন্দুকে আমায় দ্বিতীয় দলের বলে সন্দেহ করে, তাই স্বনামেই লিখে ফেললাম।

আমার বউ যা-ই রান্না করুক, সেগুলো আমি মহানন্দে খেয়ে নিই, রান্নায় ভালবাসা মেশানো থাকলে সব রান্নাই ভালো লাগে। অবশ্য খেয়ে তখনই খারাপ না বললেও পরে বলি ঠিকই, যখন বউ বলে যে – "সেই রান্নাটা আবার করবো, যেটা খেয়ে তোমার খুব ভালো লেগেছিল"। আমি তখন আঁতকে উঠে সেই রান্নাটা না করতে দিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে নতুন কিছু একটা করতে পাঠিয়ে দিই।
সেদিন টিভিতে দেখছিলাম অদ্ভুত কিছু রান্না। ড্রাগন ফ্রুটের সঙ্গে আপ্রিকট দিয়ে কি একটা অদ্ভুত নামের তেল দিয়ে (নাম ভুলে গেছি) কি একটা অদ্ভুত রান্না। ওইসব উপকরণগুলো যে কোথায় পাওয়া যায় আমি জানি না, নামও শুনিনি জীবনে। বউ মন দিয়ে দেখছে দেখে তাড়াতাড়ি টিভির  চ্যানেলটা পালটে দিলাম।

শুনেছিলাম তারাপদ রায় একসময় রান্নার বইও লিখেছিলেন ছদ্মনামে। লেখার জন্য
বাজার থেকে ৩-৪ টে রান্নার বই এনে একটা রান্নার প্রথম লাইন, দ্বিতীয় রান্নার দ্বিতীয় লাইন, তৃতীয় রান্নার তৃতীয় লাইন... এই ভাবে নতুন একটা রান্না বানিয়ে ফেলতেন। আমার বউও তাই করে থাকে। যেমন ধরুন মালপোয়ার প্রথম লাইন – "ময়দা, নারকোল ও দুধ দেড় কাপ জলে মিশিয়ে পাতলা গোলা তৈরি করুন"। এর পরে ধরুন শুক্তোর দ্বিতীয় লাইন – "উচ্ছে আর ডাঁটা গুলো কেটে ছাড়িয়ে পাত্রে ফেলুন", এরপরে মাংসের তৃতীয় লাইন – "দই দিয়ে ম্যারিনেড করে ফ্রিজে এক ঘণ্টা রাখুন, এর পরে গ্রিলারে ২০ মিনিট ধরে গ্রিল করুন", শেষে গজার রেসিপি থেকে "ভাজা হয়ে গেলে গরম রসে ফেলে পরিবেশন করুন"। ব্যস, আপনার নতুন রান্না তৈরি। এটা শুনতে কেমন লাগছে জানি না, কিন্তু খেতে যে কি রকম হয় সে যে না খেয়েছে কখনই বুঝবে না। আপনারাও রান্নার এই নতুন ফর্মুলা পরখ করে দেখতে পারেন। শুধু আমি একাই বা কেন বলির পাঁঠা হব?

অবশ্য মাঝে মাঝে এমন হয়, যে বানাতে গেলো গ্রিল্ড চিকেন, কিন্তু শেষে দেখা গেলো সেটা হয়েছে একটা সুন্দর চিকেন সুপ, আবার চিংড়ির মালাইকারী করতে গিয়ে হয়ে গেল রোস্টেড ফ্রায়েড প্রন।  সেই রবীন্দ্রনাথ আঁকতে গিয়ে স্যান্টাক্লস হয়ে যাওয়ার মত। পঁচিশে বৈশাখ না পঁচিশে ডিসেম্বর সেটা নিয়ে অত মাথা না ঘামালেই হলো, পঁচিশে পঁচিশে মিলে গেলেই চলবে।

আমার পরামর্শ মত আমার বউ একটা রান্নার বই লেখা শুরু করেছে, সেখানে সজনে ডাঁটার বিরিয়ানি থেকে শুরু করে তিব্বতি মুড়িঘণ্ট সবই পাবেন। সেটা ছাপা হয়ে বেরলে নিজের দায়িত্বে কিনে রান্নাগুলো করে দেখবেন, যাই করুন, আমায় কিন্তু গালিগালাজ করবেন না।

বি:দ্র: সমস্ত বিষয়ই লেখকের মস্তিষ্কপ্রসূত এবং কাল্পনিক, বাস্তবের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।

About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই