১) আকাশের দিকে চেয়ে হাসতে দেখেছিলাম ছেলেটাকে
ওর ইচ্ছে ছিলো রোদ হয়ে লুকোচুরি খেলবে মেঘের সাথে।
ঝিরঝির বৃষ্টির মাঝে তার মাটিমাখা চুলে
স্নেহ চুম্বন দিয়েছিলো আলতো বাতাস।
স্কুল ছুটির পর বন্ধুর সাথে বানিয়েছিলো মাটির ঢিবি
ওখানে পোঁতা হবে স্বাধীনতার পতাকা।
ওর বাবা কিনে দিয়েছিলো সান্ধ্য-চা কে ফাঁকি দিয়ে।
সকাল থেকে অঝোর বৃষ্টিতে ডুবে ছিলো চারিদিক
ফেরার পথে চঞ্চল পা ফসকে এক্কেবারে ডোবায়।
হঠাৎ রাস্তায় সগর্জনে রাজার গাড়ি
একরাশ কালো ধোঁয়া ছেড়ে প্রশ্ন করে
কি নাম তোর? রাম, না রহিম?
কালো ধোঁয়া ততক্ষণে গ্রাস করেছে কণ্ঠনালী,
ছেলেটির কাছে ছিলো না একটুকরো গেরুয়া কাপড়।
দু’হাতে চেপে ধরেছিলো নিজের নাক-মুখ।
জেদি রাজার রক্ত চক্ষুতে থমকে ছিলো দমকা বাতাস।
সকলে দেখেছিলো ছেলেটির ভেসে থাকা লাশ
সেই স্বাধীনতার পতাকাটা আর পোঁতা হয়নি।
২) তুমি ফিরে এসো
আগুনের হাত ধরে, লৌহবর্ম পরে,
পিঠে ত্রিশূল আর বুকে যীশু নিয়ে।
গেরুয়া কুর্তায় সবুজ আবির মেখে তুমি ফিরে এসো। কোমরে কৃপাণ আর ডানহাতে বরাভয় নিয়ে খড়ম আর নাগরার ছাপ পাশাপাশি ফেলে তুমি ফিরে এসো। তুমি ফিরে যেও বোরখার নীচে মালকোঁচা মেরে কাচের চুড়িতে সিঁদুর মাখিয়ে গীতার শ্লোকের ফাঁকে আয়াত শুনিয়ে।
Sankha is a teacher by profession, but an artist at heart. Photography is only one of his talents. He likes to cage and showcase, not birds, but their freedom. Let's perch on his lens and enjoy his field of view. BTW, here's his facebook page. Click on the photos for full-screen viewing.
এটা কি হয়েছে?
কতকগুলি নির্বুদ্ধি নিষ্কর্মা অবসরের অপ্রয়োজনীয় সময়ে যা ইচ্ছে হয়েছে বানিয়েছে।
অনভিজ্ঞতা ছাড়া সকলের মধ্যে মিল বলতে আই. আই. টি গুয়াহাটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে গবেষণার
নামে পেটের ভাত জোগানো। টাকা নেই, তাও গালভরা ‘প্রযোজক’ আছে এদের। গল্প নেই,
কিন্তু সিনেমা আছে। অভিজ্ঞ কলাকুশলী নেই, উৎসাহ আছে। অভিনেতা নেই, কিন্তু চেনাজানা
লোকজন প্রচুর।
ক্ষমতা নেই। সাহস? সাঙ্ঘাতিক রকম। তাই এই আগডুম নির্দ্বিধায় প্রকাশ করছে বাজারে।
দেখুন - গালি, সহানুভূতি, ভালবাসা – যা ইচ্ছে দিন। শুধু দেখবেন পুরোটা।
সকাল হয়েছে। নিঃস্পন্দন শেষ তিমিরের পর নির্জন ভিজে মাটি জুড়ে কম্পন শুরু হয়। হিমেল সুন্দর এক হাওয়ায়, পাতলা দুধেল সরের মতো অবসন্নতা কেটে যাওয়ায় নবীন ঘাসফড়িঙের দল মৃত অবয়বের খবর নিতে ছোটে। থকথকে নীলের নীচে, প্রবীণ ছাতিমগাছে ছাতিম ফুলের যৌন গন্ধ লেগে থাকে। নিঃসঙ্গ জড়দের ঘুম ভাঙে ওই গন্ধে। পারস্পরিক আড়মোড়া ভেঙে তারা প্রত্যক্ষ করে একটা ডেডবডি পড়ে আছে। আশেপাশে ডেঁয়োপিঁপড়ে ভিড় করছে। চোখমুখে প্রশান্তি। লোকটার শরীর ভেসে যাচ্ছে রক্তে। অদূর থেকে একটা লোক উঠে আসছে- ছেঁড়া খাটো ধুতি, ভিজে গা। মুখে পোড়া বিড়ি, হাতে নিভিয়ে দেওয়া হ্যারিকেন। লোকটা মৃতদেহের কাছে আসে- বিড়িটা পায়ে ফেলে চেপে দেয়। খানিক চুপচাপ দাঁড়ায়। তারপর খ্যাঁকখ্যাঁক করে হাসতে থাকে। আচমকা যাবতীয় কূজন পেরিয়ে জমাট বিদ্রূপ ছড়িয়ে পড়ে আকাশে। হাসি শেষে লোকটা, নিজের হ্যারিকেনটা একবার তুলে ধরে, তারপর সজোরে সেটা মাটিতে আঘাত করে। ডেঁয়োপিঁপড়ের দল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া ঝনঝন কাচের শব্দের সাথে শোনা যায়- 'ঈশ্বর, ঈশ্বর-মৃত, মৃত'। প্রতিধ্বনি হয় কয়েকবার। তারপর সযত্নে কাচগুলো তুলে লোকটা ফিরে যায় যেখান থেকে সে এসেছিলো।
(২)
নির্মাল্য হালদারের বয়স ত্রিশ। পেশায় সরকারী চাকুরে, একটি দু'কামরার ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। ত্রিশ বছর বয়সে, বা এই বয়সে উত্তরণের পর্যায়কালে তাঁর যা যা করা উচিত ছিলো, নির্মাল্য তার কিছুই করেননি। নির্মাল্য নেশা করেননি, জীবনে ক্লাবে যাননি, হই-হুল্লোড় অথবা পার্টি করেননি, লুকিয়ে চুমু খাননি এবং ত্রিশ বছর অবধি নিজের কৌমার্য অক্ষত রেখেছেন। জীবনের স্তরবিন্যাসে তাঁর সঙ্গী বলতে ছিলো- ছাঁচে ঢালা, নিপুণভাবে ঢালাই করা মধ্যবিত্ত নির্লিপ্তি। যেভাবে
আমি মফঃস্বলের মেয়ে। কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা
হয়েছি তিনবছর হল। এখন থাকি দক্ষিণ কলকাতায়। উত্তর কলকাতায় যাতায়াত খুব কম।
কালে-ভদ্রে দাদুর-বাড়ি বেলগাছিয়া আর প্রয়োজন হলে কলেজ-স্ট্রীট ছাড়া উত্তর কলকাতায়
আমার যাওয়ার আর কোনও জায়গা নেই। আজকে সহকর্মী বন্ধুর সাথে বইপাড়া রওনা হলাম হাতে
বেশ কয়েকটা কাজ ও অকাজ নিয়ে--এই যেমন দু-চারটে বই কেনা, কলেজ-স্কোয়ারে কিছুক্ষণ বসে
থাকা, প্যারা-মাউন্টে সরবত ও পুঁটিরামে মিষ্টি খাওয়া। সময় হাতে যা ছিল, তাতে কফি
হাউসটা আজকের রুটিন থেকে বাদ দিতে হয়েছিল। আরেকটা বিশেষ কাজ ছিল হাতে, যেটা আসলে
নেহাতই অকাজ। বাংলা-পঞ্জিকা প্রকাশক গুপ্ত-প্রেস খুঁজে বের করা। না তিথি-নক্ষত্র-কাল কিছুই আমি পালন করি না। তবে আমার ভাই আগামী বাংলা বছরে
বিয়ে করবে পাঁজি-পুথি মেনে পাত্রীপক্ষের অনুরোধে। তাই কলকাতাবাসী একমাত্র দিদির
কাছে তার আবদার, গুপ্ত-প্রেস থেকে আগামী বাংলা বছরের অপ্রকাশিত পঞ্জিকা এনে দিতে
হবে যাতে মহারাজ নির্ঝঞ্ঝাটে বেস্ট লজটা এখুনি বুক করে ফেলতে পারেন। দেরি করলে নাকি
এই একই উপায়ে অন্য কেউ সেটা দখল করে নিতে পারে। নেহাত হাতে অপচয় করার মত সময় না থাকলে হয়তো আমি এ কাজ করার চেষ্টাই করতাম না।
কিন্তু কাজটা না করলে আজকের এই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাটা কোনদিন হতোনা নিঃসন্দেহে।