Friday, November 30, 2012

চল ফিরি... -- নীল


ফালতু পথ স্বপ্নহীন
একটা গান বেসুরে
আসছে কাল শুধবো ঋণ
কাজ পেলে, সুদ সমেত।

কথার দাম,কমছে কই
বাজারদর যাচ্ছেতাই
নীল আলো নিভছে ঐ
ঠিক যেন রূপকথাই।

তারচে' চল গা ভাসাই,
জুটবে ঠিক পেটের ভাত।
স্বপ্ন পথ, তরল ছাই
তোর সাথে একটা রাত...

রাত পোহালে আবার সেই ব্যস্ত দিন
এধার ওধার গন্ধ শুঁকে গোয়েন্দা,
মাইক্রো-ফিনান্স, ধান্দাবাজির সুযোগ নিন,
বুক পকেটে লুকোনো সুখ বারান্দা।

সুখের ভ্রমর, বুক আর কোমর, লাবণ্যে
আটকে যাওয়া চটচটে ঘাম, ঠোঁটের দাগ
শরীর জুড়ে অসময়ের ভৈরবী রাগ---
তুই আর আমি চল ফিরি সেই অরণ্যে...

কালীঘাটের পট -- সুশোভন


পটচিত্র ঐতিহ্যানুসারী শিল্প। এই চিত্রধারা বংশপরম্পরায় একটা স্রোতের মতো এক শিল্পী থেকে অন্য শিল্পীর কাছে যায়। তাই বলা হয় পটচিত্র অনভিজাত এবং শিক্ষা নিরপেক্ষ সংহত এক সমাজের ঐতিহ্যানুসারি শিল্পী মনের প্রকাশ। চিত্র অঙ্কনের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, রঙের বিন্যাস, অঙ্কন শৈলী, অলংকরণ, প্রতীক ভাবনা সবই একটি সংহত গোষ্ঠীর মধ্যে সংরক্ষিত থাকে। আবার পরীক্ষা নিরীক্ষার দ্বারা বিকশিত হয় গোষ্ঠীর ফসল হিসেবে। পটচিত্রে কোনও কোনও লোকাচার ও লোকবিশ্বাস জড়িয়ে থাকে। কিছু বিখ্যাত পটের নাম করলে শুরুতেই আসে পুরুলিয়ার চক্ষু দান পট, কালীঘাটের ঘট পট, মনসার পট ইত্যাদি। পটচিত্রকে formalized folklore এর মধ্যে ফেলা যায়। বাকআশ্রয়ী এবং শিল্পাশ্রয়ী বিষয় নিয়েই formalized folklore শিল্পাশ্রয়ীর মধ্যে নকশিকাঁথা, নকশি পিঠা, নকশি বিছা, নকশি পুতুল, নকশি পাখা, আলপনা, দেওয়াল চিত্র, কুলোচিত্র, পাটা চিত্র, পটচিত্র, মুখোশ চিত্র, অঙ্গচিত্র, শোলার কাজ, কেশ বিন্যাস, শাঁখের অলংকার, দশাবতার তাস ইত্যাদি।

পট শব্দটি ব্যাঞ্জনাময়।
পট শব্দটির গঠনগত অর্থ পটি + অ (অচ)-ণ-বস্ত্র।

লেখা বা চিত্র আঁকার জন্য বস্ত্র খণ্ডকেও পট বলা হয়। চিত্র আঁকার কাঠাদিকেও পট্ট বলা হত। চিত্রপট বা ছবিও পট নামে চিহ্নিত হত। সংস্কৃত পট্ট শব্দের অর্থ কাপড়। পরবর্তীকালে বস্ত্রখণ্ডের ওপর অঙ্কিত চিত্রই পট নামে চিহ্নিত হয়। কাপড়ের ওপর যাঁরা ছবি আঁকতেন, অতীতে তাঁরাই পট্টিদার>পট্টিকার>পটকার>পটুয়া।

এরা কোথাও পোটো, চিত্রকর বা পাইক্কা নামেও চিহ্নিত। পরবর্তীকালে কাগজ আবিষ্কৃত হওয়ার ফলে কাপড়ের ওপর চিত্র অঙ্কন ধারাই কাগজের ওপর এসে পড়েছে। ভারতবর্ষের প্রাচীন পুঁথিগুলোতে পটের উল্লেখ দেখা যায়। পাণিনির অস্থাধ্যায়ী বর্ণিত গ্রামশিল্পীকেই পটিদার বা পটুয়া বলা হত। গ্রন্থটির সময়কাল গবেষকদের মতে খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতক। পতঞ্জলির মহভাষ্য’, ‘অভিজ্ঞানম শকুন্তলম’, কিংবা অষ্টম শতকে রচিত বিশাখাদত্তের মুদ্রারাক্ষস নাটকে পটুয়াগণ গুপ্তচর বৃত্তিতে নিযুক্ত। এইসব গ্রন্থে পটুয়া প্রসঙ্গ থাকায় বোঝা যায় চিত্রকর বৃত্তি এক প্রাচীন বৃত্তি। শাস্ত্রের বিধান মেনে কাপড়ের ওপর যাঁরা ছবি আঁকতেন তাঁরা অধিকাংশই ছিলেন বৈশ্য বা শূদ্র সমাজের অন্তর্ভুক্ত। ক্ষত্রিয়দের চিত্র অঙ্কন নিষিদ্ধ না হলেও পেশা হিসেবে ক্ষত্রিয়রা একাজ করতেন না। ব্রাহ্মণের পক্ষে চিত্র অঙ্কন নিষিদ্ধ। এমনকি নট নর্তক এবং শিল্পীদের ঘরে অন্ন গ্রহণ ব্রাহ্মণদের পক্ষে অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবে ছিল। তৎকালীন সমাজকে পরিচালনা করত শাস্ত্র। চিত্র অঙ্কনের ক্ষেত্রেও শাস্ত্রের নির্দেশ ছিল। পট বিশ্বকোষ বলছে 

Monday, November 26, 2012

3.1415926... -- সুনন্দ


মলের দরজা দিয়ে নাচতে নাচতে বেরোচ্ছি, এমন সময় শুনি- “এই, শোনো, এরা বলছে, ‘লাইফ অব পি’ বইটা নাকি ভাল হয়েছে। টিকিট কেটে নিই?”

কুল্যে দেড়খানা বাক্য, তাতেই আমায় কুপোকাত করে দেওয়ার মতো যথেষ্ট আগুন ভরা। প্রথম কথা, সিনেমাটা সবে আমি দেখে বেরোলাম- ওর সাথে প্রস্রাবের সম্পর্ক দূর-দূরান্তে নেই। ওটা পি (Pee) নয়, পাই (Pi)তা ভদ্রলোককে না হয় ক্ষমাঘেন্না করে দেওয়া গেলো, হতে পারে অঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ নেই, বা ওই নম্বরটির ‘জীবন’ নিয়ে সিনেমা হতে পারে, সেটা কল্পনাতেও আনতে পারেননি। আমি চাইলেই, “সেকি, পাই শোনেননি?” বলে নাক উঁচু করতেই পারি, কিন্তু তাতে নাকের ডগা চিলে খেয়ে যাবে।

কিন্তু ওই যে, ‘বই’! ওটিতো অত সহজে হজম হওয়ার নয় চাঁদ! যে কোন সিনেমাই বঙ্গ-লেহনে ‘বই’ হয়ে গেলে তা আমার পেটে তোতার পেটের মতোই গজগজ করে, হজম হয়না। তার জন্যে সত্যবাবু দায়ী। ‘বিষয় চলচ্চিত্র’ বইটিতে পোস্কার করে কয়েচেন, বাঙালি সিনেমা বলতে বুঝতো শরৎবাবুর গপ্পো- তাই সিনেমা আর বই চিরকালের মতো গুলিয়ে চুরমুর হয়ে গেছে। কিন্তু সত্যি বলতে, এই ওব্যেসটা যে কতটা ক্ষতিকর, তা ভদ্রলোকের কথা শুনে বুঝলাম। Life of Piসত্যিই ভাল বই হয়েছে। বছর দশেক আগেই সেটা গোটা দুনিয়ার লোকে জানতে পেরেছে, বুকার পুরস্কারটি বগলদাবা করার সঙ্গে সঙ্গে। তাই, “বইটা দেখলাম, বেশ হয়েছে...” বললে, ঘরপোড়া, থুড়ি, বিদগ্ধ পাঠক ভাববেন, অ, বুজি থান-ইট বইডার কতা কয়েসে। ভাবুন তো, কি বিচ্ছিরি ভুল বোঝাবুঝি!
সে যাকগে। অনেকক্ষণ তবলা বাঁধলাম, এবার বোল তোলা যাক। প্রথমে ছোট করে বলি। বইটা, থুড়ি, থুত্থুড়ি, সিনেমাটা (কি ছোঁয়াচে রোগ বলুন তো!) দেখে বহু, বহুদিন পরে আবার সিনেমাহলের মজা বুঝলাম।

ভাল স্পেশাল এফেক্ট বিশেষ দেখিনা ভেবে নাক সিটকোবেন না। আমি ঘাগু মাল।

মৃত্যু সুখের উল্লাসে -- নির্মাল্য


বাপরে কি ডানপিটে ছেলে-কোনদিন ফাঁসি যাবে, নয় যাবে জেলে। শিশুপাঠ্য ছড়া যতক্ষণ, ততক্ষণ চলতে পারে। কিন্তু ব্যাপারটা সত্যি হলেও কি একইরকম হাস্যকর? অস্বস্তির সূচনা কাসভের ফাঁসি নয় মোটেই। সেটার প্রতিক্রিয়ার ধরণ। অপরাধীকে আড়াল করতে কলম ধরা এই বান্দার কাজ নয়। কিন্তু শাস্তি উপলক্ষে সমারোহের আবহ তৈরি হলে চিন্তার বিষয় বৈকি।
মৃত্যুদণ্ড মানবতা বিরোধী কিনা তা নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে। ফিডিং বোতলে করে যে রাষ্ট্র অন্যান্য অবাধ্য রাষ্ট্রকে মানবতা খাইয়ে থাকে, সেই আমেরিকা কিন্তু বহু বিতর্কের পরও মৃত্যুদণ্ড রোধ করেনি। দ্য “গ্রেট” ব্রিটেন সুদীর্ঘকাল ধরে উপনিবেশগুলিতে এই শাস্তি প্রয়োগ করার পর সাম্প্রতিককালে মৃত্যুদণ্ড রদ করেছে। বাকী রইল আরব ইত্যাদি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি। ওসব জায়গায় খুব কম অপরাধের জন্যই মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই। তুলনায় ভারত মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা রাখলেও এর প্রয়োগের ব্যাপারে অনেক বেশি সহনশীল এবং প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মতই দায়িত্বশীলও বটে। খুব সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় আন্তর্জাতিক ভাবে মৃত্যুদণ্ড রদ করে দেওয়ার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে।

২৬ শে নভেম্বর ২০০৮ এর মুম্বাই সন্ত্রাসের জঙ্গি ক্ষোভকে বহুদিন দীর্ঘ একটি বিচার প্রক্রিয়ার পর ফাঁসি দেওয়া হল। সে প্রসঙ্গে আসার আগে অনুরূপ আরেকটি ফাঁসির ঘটনা মনে পড়ছে। পশ্চিমবঙ্গে হেতাল পারেখের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ধনঞ্জয়ের ফাঁসি। আইন তার নিজের পথে চলেছে। জনতা নিজের। যেমন “ধনঞ্জয়ের ফাঁসি চাই” এই ব্যানার নিয়ে মিছিল হয়েছে রাজপথে। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী

Tuesday, November 20, 2012

কিস্তিমাত -- তপোব্রত


“কিস্তিমাত!”
কথাটা শুনে দাবার বোর্ড থেকে মুখটা তুলে একবার প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখের দিকে তাকালেন আর্থার। চশমার আড়ালে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর চোখগুলো তখন খুশিতে জ্বলজ্বল করছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বোর্ডের দিকেই চোখ ফেরালেন তিনি। কোনো রাস্তা আছে কি কিস্তি বাঁচানোর?
বোর্ডের ওপর গুটি বেশি নেই। অনেকক্ষণ ধরে খেলা হচ্ছে তাই বেশিরভাগ গুটিই বোর্ডের বাইরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর্থারের সাদা রাজার সঙ্গে তিনটে বোড়ে, একটা গজ আর একটা নৌকো আছে। উল্টোদিকে রাজার সঙ্গে গজ, নৌকো তো আছেই আর আছে একটা ঘোড়া আর সেটা দিয়েই জব্বর কিস্তিটা খেয়েছেন তিনি, রাজাকে সরানোর কোনো রাস্তাই তাঁর কাছে নেই, সরালেও সেটা পড়ে যাবে গজ বা নৌকোর সামনে। অনেকক্ষণ ভেবেও কোনো রাস্তা না পেয়ে বোর্ড ছেড়ে উঠে পড়লেন তিনি। তাঁর প্রতিপক্ষ এতক্ষণ মুচকি মুচকি হাসছিলেন। এবার তাঁকে উঠতে দেখে বললেন, “কি হলো হে ডাক্তার? Dark Knight-এর চালটায় রণে ভঙ্গ দিলে আজকের মতো? আচ্ছা হিসেবটা লিখে রাখি! কত হলো বলো তো? ২৩৮৭-২৩৪২?”

Monday, November 12, 2012

রান্নাবান্না -- অভীক

আমার বউ মাঝে মধ্যেই অনেক রকম রান্না করে, রকমারি সব নাম, এইরকম নানা ধরনের অদ্ভুত সব রান্না কোথা থেকে যে পায় কে জানে। খেতে কেমন হয় জিজ্ঞেস করলে বলব যে আপনিও একদিন এসে চেখে যান। খেয়ে খারাপ বলার সাহস আমার তো দূরে থাক, স্বয়ং শিবেরও হবে না যদি পার্বতী রান্না করে নিয়ে আসে। মিরাক্কেলে শুনেছিলাম স্বামী দুই প্রকার হয়,
এক) যারা বউকে ভয় পায়, দুই) যারা বউকে খুব ভয় পায়।
নিশ্চয় বুঝতেই পারছেন আমি প্রথম দলে, এই লেখা যে লিখতে পারছি, সেটাই তার প্রমাণ। প্রথমে ভেবেছিলাম ছদ্মনামে লিখবো, কিন্তু পাছে নিন্দুকে আমায় দ্বিতীয় দলের বলে সন্দেহ করে, তাই স্বনামেই লিখে ফেললাম।

আমার বউ যা-ই রান্না করুক, সেগুলো আমি মহানন্দে খেয়ে নিই, রান্নায় ভালবাসা মেশানো থাকলে সব রান্নাই ভালো লাগে। অবশ্য খেয়ে তখনই খারাপ না বললেও পরে বলি ঠিকই, যখন বউ বলে যে – "সেই রান্নাটা আবার করবো, যেটা খেয়ে তোমার খুব ভালো লেগেছিল"। আমি তখন আঁতকে উঠে সেই রান্নাটা না করতে দিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে নতুন কিছু একটা করতে পাঠিয়ে দিই।

অভিযোগ -- সুনন্দ


-      সর্বক্ষণ অন্যের কথা ভাবতে, শুনতে, বলতে আর ভাল লাগেনা। কে কোথায় কার স্বাধীনতা কেড়ে নিলো, কে কবে কার ওপর অত্যাচার করলো, কোথায় কোন নক্ষত্রে ক’টা টিকটিকি দেখা গেছে, সেই নিয়ে আলাপ, প্রলাপ, বিলাপ, আলোচনা, প্রস্তাবনা, সমালোচনা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, দুর্গন্ধ – আর ভাল লাগেনা। আর ভাল লাগেনা এত শব্দ। শব্দ-কল্পদ্রুম মানে অনেক পরে বুঝেছি। ওর মানে কেউ বাজে শব্দ করলে কল্পনা করা যে তার মাথায় দুড়ুম করে হাতুড়ি বসিয়ে দিলাম। Anger Management এর দরকার হবে না, ওই দুড়ুম শব্দেই বেজায় হাসি পাবে। আমারও এখন তেমন ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে, কেউ একটু আমার কথা বলুক। কেউ না বললে অন্তত আমিই একটু নিজের কথা বলি। একটু নিজের পিঠ চাপড়ে দিই, নিজের কাঁধে মাথা রেখে একটু ঘুমোই। অন্য সক্কলের মতো আমিও নিজেকে ভালবাসি, কথাটা একবার অন্তত বলার মতো করে বলি। “প্রতিটি বলের সমান ও বিপরীতধর্মী বল দোকানে পাওয়া যায়” এর মতো করে নয়। কিছু নিখাদ সত্যি কথা আছে, যা জনসমক্ষে বলতে গেলেই আর মেরুদণ্ডে জোর পাওয়া যায় না।

-      যাহা শিরশির করে, তারে শিরদাঁড়া কয়।

-      নিজের কথাও ঠিক তাই। একদম বাচ্চারা ছাড়া সবাই বোঝে ‘আমি, আমি’ করা মানে কি। ‘আত্মসর্বস্ব’ হয়ে যাওয়া। ‘স্বার্থপর’ হওয়া। ‘খারাপ’ হয়ে যাওয়া। কেন?

Wednesday, November 7, 2012

অসূর্যম্পশ্যা (৩) -- অনির্বাণ

<<আগের সংখ্যা 

অসূর্যম্পশ্যা – ঘ

অনেকদিন আপনাদের সাথে কথা হয় নি। ১৯২৮, আমার জন্মদিনে আমি ফিরে এসেছি। না বম্বের দিনশ পেতি বাংলোটায় নয়। তাজ হোটেলে। জের ব্যস্ততা বেড়েছে। আমার সাথে এই নিয়ে বিস্তর কথা কাটাকাটি মনোমালিন্য হয়েছে। এপ্রিল মাস এসে গেল। ডাক্তার বলেছেন, শরীর ভাল করতে ফের পশ্চিমে ঘুরে আসতে।
আমি তাই প্যারিস এলাম। জে সি-অফ করতে আসেন নি। কাঞ্জি দ্বারকাদাস, এখন ওই আমার খবর রাখে। ও একটা গোলাপের বোকে পাঠিয়েছে।
প্যারিসে গিয়ে লোকমুখে খবর পেলাম, জেও ভারত ছেড়ে ইওরোপে এসেছেন। আয়ারল্যান্ডে। প্যারিসে আমার খুব শরীর খারাপ হলো, জে খবর পেলেন।
রীতিমত যোগাড়যন্ত্র করে এসেও পড়লেন। এসেই জেসুলভ কাণ্ড।
তড়িঘড়ি আমার চিকিৎসক পাল্টানো হলো। অবাক ব্যাপার, কাজও দিলো। শরীরে একটু হলেও বল ফিরে পেলাম। যদিও শরীর খুবই দুর্বল, প্রদীপে দুফোঁটা তেল পড়লো, আগুনের তেজ একটু বাড়লো। সম্পর্ক একটু নরম হলো।

কিন্তু সুতো একবার ছিঁড়ে গেলে, সে কি আর গিঁট দিয়ে লাগালে আগের মত হয়ে যায়। একটা দাগ তো থেকেই যায়, তাই না? জে আর আমার মধ্যে দূরত্ব বেড়েই যাচ্ছে। আজ থেকে নয়, প্রায় পাঁচ বছর হলো, জে আর আমায় সেরকম সময় দিতে পারেন না। ওঁর নাকি প্রচুর কাজ। আমাকে এই বিশাল বাড়িটায় দিনা আর একটা কুকুর নিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে হবে। দুঃখের স্মৃতি তো, একটু হাত চালিয়ে লিখে দিই। ফাঁকি দিচ্ছি ভাববেন না যেন।
প্রথম প্রথম আমি সব জায়গায় সাথে যেতাম। সেই তো ১৯২০ তে কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনে গেলাম। গান্ধীপন্থীরা সবাই মিলে জেকে চূড়ান্ত অপমান করলেন। ১৯২২ এর মাঝামাঝি নাগাদ তো কংগ্রেসের সাথে ওঁর সব সম্পর্কই বলতে গেলে শেষ হয়ে গেল। তখন শুধু নতুন দলের কাজ, মিটিং আর ভ্রমণ। দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত অবিশ্রাম ছুটে বেড়াচ্ছেন। সেপ্টেম্বর ১৯২২, আমি বিরক্ত হয়ে দিনাকে নিয়ে লন্ডন চলে গেলাম। কাঞ্জিকে বলে গেলাম জেকে একটু দেখতে। দেশে ফিরে চেষ্টা করলাম জেকে নিয়ে সময় কাটাতে, কিন্তু ব্যস্ততা বেড়েই চললো।

Tuesday, November 6, 2012

অসূর্যম্পশ্যা (২) -- অনির্বাণ

<< আগের সংখ্যা

অসূর্যম্পশ্যা

ফেব্রুয়ারি ২০, ১৯১৮। সেদিন সকাল থেকেই বুকটা দুরুদুরু কাঁপছে। আজ আমার ১৮ বছরের জন্মদিন। সকাল থেকে গোলাপের তোড়া আর হরেক কিসিমের কেকে ভেসে যাচ্ছে বোম্বের বাড়িটা। বাবা-মা দুজনেই মহা-ব্যস্ত, একমাত্র মেয়ের জন্মদিন বলে কথা। বাবুর্চি-খানসামায় ঘর ছয়লাপ। আমাদের বোম্বের বাড়িটায় তো সব অতিথিকে বসানোই যাবে না। সামনের লনটায় প্রচুর আয়োজন করা হয়েছে। খাবার-দাবার, আলো-ফুলে ছয়লাপ কাণ্ড। কিন্তু একটা মজার ব্যাপার আছে। সকাল থেকে আমি খুব খুশি। সেই জে বাবার সাথে কথা বলে যাওয়ার পর থেকে এরম খুশির দিন আমার জীবনে আর আসে নি। আজ আমায় একজন মস্ত বড়ো একটা উপহার দেবেন। নিশ্চিত দেবেন। কিন্তু মজাটা কি জানেন, আমি ছাড়া আর কেউ জানে না আমায় সব থেকে বড়ো গিফ্‌টটা কে দিচ্ছে? আপনি জানেন কে?
একটু ভাবুন তো। না না দুর। বাবা-মা নন, অন্য কেউ।
না, হলো না। জেও নন। জে কি করে আমায় উপহার দেবেন? তিনি তো আজকে নিমন্ত্রিতই নন।
বাবা বোম্বে হাইকোর্ট থেকে একটা রিস্ট্রেইনিং অর্ডার বার করেছেন। রুট্‌ঠি নাবালিকা, তাই তার বিষয়ে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তার পরিবারের। মহামান্য আদালত আদেশ দিয়েছেন রুট্‌ঠি আর জে দেখা করতে পারবে না। কোনো প্রকাশ্য স্থানে জেকে যেন রুট্‌ঠির সাথে দেখা না যায়।

হ্যাঁ, যা বলছিলাম। বলুন দেখি সেরা উপহারটা কে দিলো? আগের প্যারাগ্রাফে আপনাকে কিন্তু একটা ক্লু দিয়েছি, ভাবুন দেখি। বুঝতেই পারছেন কোনো রাজা-মহারাজা-নবাবের দেয়া উপহার এটা নয়। এ উপহার যার দেয়া, তার কাছে কোনো রাজা-মহারাজা পাত্তা পায় না। সারা পৃথিবীর মানুষ এর কাছে মাথা নিচু করে কুর্নিশ করে। ভাবুন ভাবুন, না পারলে এই একটু পরেই বলে দেবোখন।

Monday, November 5, 2012

অসূর্যম্পশ্যা (১) -- অনির্বাণ

উৎসর্গ

অবধূতের মতো আমার কিছু গুরু আছে। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই, বিশেষতঃ সাহিত্যের জন্য রয়েছেন একাধিক সাহিত্য-গুরু। অবধূত না বলে একলব্যও বলতে পারেন। এঁদের একজন বাদে কারোর সাথে আমার কোনোদিন মোলাকাত হয় নি। তাঁরা সব্বাই যে প্রচণ্ড জনপ্রিয় তা কিন্তু নয়। কিন্তু তারা আমার প্রিয়।
হুমায়ুন আহমেদ তাদের মধ্যে একজন। বাংলাদেশে প্রবল জনপ্রিয়, পশ্চিমবঙ্গে নন। জনপ্রিয়তা না পাওয়ার কারণ খুব সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের পাঠকের সঙ্কীর্ণতা। চাচা-খালু-জনাব-পানি-বুয়া এসব শব্দ বোধহয় আমরা খোলা মনে নিতে পারি নি।
সেসব আলাদা প্রসঙ্গ। ভক্ত হিসেবে তাঁর লেখা প্রতিটি প্রকাশিত শব্দ (হ্যাঁ, লেখা নয়, শব্দ) আমি পড়েছি। সবই দারুণ ভালো লাগে নি। কিন্তু ট্রিপ্‌ল সেঞ্চুরির ইনিংসে মিস-টাইম্‌ড বাউন্ডারির মতোই সেগুলি সহজে এড়িয়ে যাওয়া যায়। মনে মনে বা লিখে লিখে তাঁর স্টাইলের নকল করার চেষ্টা করেছি।
গুরুচণ্ডালীতে একজন লিখেছিলেন হুমায়ুন আহমেদ মৃদু মানুষের ঈশ্বর। উপযুক্ত বিশেষণ।

নারায়ণ সান্যালের অবশ্য সেরকম কোনো বিশেষণ নেই। ইনি হুমায়ুনের তুলনায় বেশ খানিকটা কম জনপ্রিয়। সম্ভবতঃ একটি বিশেষ প্রকাশনা গোষ্ঠীর কাছে মাথা নত না করতে পারায় তাঁর লেখার প্রাপ্য প্রচারে অনেকটা খামতি থেকে গেছে। বিশ্বাসঘাতকএখনও প্রচুর বিক্রি হয়। কিন্তু আনন্দেনা থাকতে পারলে টপ টেনেটিকে থাকা বড়োই মুশকিল।
নারায়ণ সান্যালের অনেকগুলো স্টাইলের মধ্যে একটি অনবদ্য স্টাইল ছিল - যেটা কিছুটা ইতিহাস, কিছুটা কল্পনা। এই স্টাইলটাকে সঠিকভাবে ভাষায় বর্ণনা করা মুশকিল। চেষ্টা করছি।
এককথায় বলতে পারেন ইতিহাসের শূন্যস্থান পূরণ। ইতিহাসের বিকৃতি বলবেন না, প্রেম আর যুদ্ধের থেকেও সাহিত্যে গণ্ডি বেঁধে দেয়া আরো বেশি কষ্টকর। এবারের লেখা নারায়ণ সান্যালের সেই স্টাইলে। স্টাইলের নাম? – ওই যে বললাম 'ইতিহাসের শূন্যস্থান পূরণ'।
বিশ্বাসঘাতকের দোহাই, পড়লে লাইন বাদ দিয়ে পড়বেন না। বিশ্বাসঘাতক যারা পড়েছেন, তাঁরা বুঝতে পারবেন, ধরতে পারবেন এই নকলনবিশি। এমনকি, ‘লাইন বাদ দিয়ে পড়বেন নাশব্দবন্ধটাও বিশ্বাসঘাতকথেকে টোকা। আর হ্যাঁ, পারলে গল্পের মাঝখানে গুগল উইকি না ঘেঁটে গল্পটা শেষ করে ফেলুন।
বিশ্বাসঘাতকের প্রথম সংস্করণে, গল্পের সাঙ্ঘাতিক নাটকীয় স্থানে এরকম ধরনের একটা বাক্য ছিল সেই বিজ্ঞানী হয়তো এখন কবরে শুয়ে আপসোস করছেন। পরের কোনো একটা সংস্করণে স্টার দিয়ে নিচে ফুটনোট দেয়া ছিল। সরি, উনি বেঁচে আছেন। সে বছরের নোবেল প্রাপকদের তালিকায় তাঁর নাম দেখা গেছে। তাই আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি, কল্পনা আছে, বাস্তব থেকে বিচ্যুতি আছে। কিন্তু একটা গল্পও আছে।
আসুন, শুরু করা যাক। গল্পের নাম 'অসূর্যম্পশ্যা'।


Thursday, November 1, 2012

খবর এবার 'PDF' - এ


লম্বা ছুটি কাটানোর পর আজ থেকে আবার খুলছে ‘কথা’-র দপ্তর। না আজ আর নতুন কোনো পোস্ট নয়, শুধু ‘স্পেশালএডিশন’-এর তিনখানা PDF থাকছে আপনাদের জন্য। প্রতিবারের মতো এবারেও PDF সাজিয়েছে নির্মাল্য। বিস্তারিত খবর রয়েছে এইপাতায় ...

আগামী সোমবার থেকে আবার আমরা নতুন নতুন চমক নিয়ে নিয়মিত হাজিরা দেবো। ততক্ষণ অনলাইনে বা ডাউলনোড করে অফলাইনে PDF গুলো পড়তে থাকুন।

# সবশেষে আরো একবার স্পেশালএডিশনের সকল contributors কে আমাদের তরফ থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ J।


About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই