Wednesday, August 16, 2017

গোরখপুর -- জেদি

১)
আকাশের দিকে চেয়ে হাসতে দেখেছিলাম ছেলেটাকে
ওর ইচ্ছে ছিলো রোদ হয়ে লুকোচুরি খেলবে মেঘের সাথে।
ঝিরঝির বৃষ্টির মাঝে তার মাটিমাখা চুলে
স্নেহ চুম্বন দিয়েছিলো আলতো বাতাস।
স্কুল ছুটির পর বন্ধুর সাথে বানিয়েছিলো মাটির ঢিবি
ওখানে পোঁতা হবে স্বাধীনতার পতাকা।
ওর বাবা কিনে দিয়েছিলো সান্ধ্য-চা কে ফাঁকি দিয়ে।

সকাল থেকে অঝোর বৃষ্টিতে ডুবে ছিলো চারিদিক
ফেরার পথে চঞ্চল পা ফসকে এক্কেবারে ডোবায়।
হঠাৎ রাস্তায় সগর্জনে রাজার গাড়ি
একরাশ কালো ধোঁয়া ছেড়ে প্রশ্ন করে
কি নাম তোর? রাম, না রহিম?


কালো ধোঁয়া ততক্ষণে গ্রাস করেছে কণ্ঠনালী,
ছেলেটির কাছে ছিলো না একটুকরো গেরুয়া কাপড়।
দু’হাতে চেপে ধরেছিলো নিজের নাক-মুখ।
জেদি রাজার রক্ত চক্ষুতে থমকে ছিলো দমকা বাতাস।
সকলে দেখেছিলো ছেলেটির ভেসে থাকা লাশ

সেই স্বাধীনতার পতাকাটা আর পোঁতা হয়নি।

২)

তুমি ফিরে এসো
আগুনের হাত ধরে, লৌহবর্ম পরে,
পিঠে ত্রিশূল আর বুকে যীশু নিয়ে।
গেরুয়া কুর্তায় সবুজ আবির মেখে

 তুমি ফিরে এসো। 
কোমরে কৃপাণ আর ডানহাতে বরাভয় নিয়ে
খড়ম আর নাগরার ছাপ পাশাপাশি ফেলে
 তুমি ফিরে এসো।
 তুমি ফিরে যেও 
বোরখার নীচে মালকোঁচা মেরে 
কাচের চুড়িতে সিঁদুর মাখিয়ে 

গীতার শ্লোকের ফাঁকে আয়াত শুনিয়ে।

Wingardium Leviosa 1 -- Sankha

Sankha is a teacher by profession, but an artist at heart. Photography is only one of his talents. He likes to cage and showcase, not birds, but their freedom.
Let's perch on his lens and enjoy his field of view.
BTW, here's his facebook page.


Click on the photos for full-screen viewing.
Paradise Flycatcher


Ruddy Shelduck

Spotted Owl



Monday, August 7, 2017

Footsteps -- Cinephile


এটা কি হয়েছে?

কতকগুলি নির্বুদ্ধি নিষ্কর্মা অবসরের অপ্রয়োজনীয় সময়ে যা ইচ্ছে হয়েছে বানিয়েছে। অনভিজ্ঞতা ছাড়া সকলের মধ্যে মিল বলতে আই. আই. টি গুয়াহাটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে গবেষণার নামে পেটের ভাত জোগানো। টাকা নেই, তাও গালভরা ‘প্রযোজক’ আছে এদের। গল্প নেই, কিন্তু সিনেমা আছে। অভিজ্ঞ কলাকুশলী নেই, উৎসাহ আছে। অভিনেতা নেই, কিন্তু চেনাজানা লোকজন প্রচুর।
ক্ষমতা নেই। সাহস? সাঙ্ঘাতিক রকম। তাই এই আগডুম নির্দ্বিধায় প্রকাশ করছে বাজারে।


দেখুন - গালি, সহানুভূতি, ভালবাসা – যা ইচ্ছে দিন। শুধু দেখবেন পুরোটা।






সিনেফাইলের ফেসবুক পাতা: এখানে

Wednesday, August 2, 2017

ডেডবডি -- আকাশ

সকাল হয়েছে। নিঃস্পন্দন শেষ তিমিরের পর নির্জন ভিজে মাটি জুড়ে কম্পন শুরু হয়। হিমেল সুন্দর এক হাওয়ায়, পাতলা দুধেল সরের মতো অবসন্নতা কেটে যাওয়ায় নবীন ঘাসফড়িঙের দল মৃত অবয়বের খবর নিতে ছোটে। থকথকে নীলের নীচে, প্রবীণ ছাতিমগাছে ছাতিম ফুলের যৌন গন্ধ লেগে থাকে। নিঃসঙ্গ জড়দের ঘুম ভাঙে ওই গন্ধে। পারস্পরিক আড়মোড়া ভেঙে তারা প্রত্যক্ষ করে একটা ডেডবডি পড়ে আছে। আশেপাশে ডেঁয়োপিঁপড়ে ভিড় করছে। চোখমুখে প্রশান্তি। লোকটার শরীর ভেসে যাচ্ছে রক্তে। অদূর থেকে একটা লোক উঠে আসছে- ছেঁড়া খাটো ধুতি, ভিজে গা। মুখে পোড়া বিড়ি, হাতে নিভিয়ে দেওয়া হ্যারিকেন। লোকটা মৃতদেহের কাছে আসে- বিড়িটা পায়ে ফেলে চেপে দেয়। খানিক চুপচাপ দাঁড়ায়। তারপর খ্যাঁকখ্যাঁক করে হাসতে থাকে। আচমকা যাবতীয় কূজন পেরিয়ে জমাট বিদ্রূপ ছড়িয়ে পড়ে আকাশে। হাসি শেষে লোকটা, নিজের হ্যারিকেনটা একবার তুলে ধরে, তারপর সজোরে সেটা মাটিতে আঘাত করে। ডেঁয়োপিঁপড়ের দল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া ঝনঝন কাচের শব্দের সাথে শোনা যায়- 'ঈশ্বর, ঈশ্বর-মৃত, মৃত'। প্রতিধ্বনি হয় কয়েকবার। তারপর সযত্নে কাচগুলো তুলে লোকটা ফিরে যায় যেখান থেকে সে এসেছিলো।

(২)
নির্মাল্য হালদারের বয়স ত্রিশ। পেশায় সরকারী চাকুরে, একটি দু'কামরার ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। ত্রিশ বছর বয়সে, বা এই বয়সে উত্তরণের পর্যায়কালে তাঁর যা যা করা উচিত ছিলো, নির্মাল্য তার কিছুই করেননি। নির্মাল্য নেশা করেননি, জীবনে ক্লাবে যাননি, হই-হুল্লোড় অথবা পার্টি করেননি, লুকিয়ে চুমু খাননি এবং ত্রিশ বছর অবধি নিজের কৌমার্য অক্ষত রেখেছেন। জীবনের স্তরবিন্যাসে তাঁর সঙ্গী বলতে ছিলো- ছাঁচে ঢালা, নিপুণভাবে ঢালাই করা মধ্যবিত্ত নির্লিপ্তি। যেভাবে

Wednesday, July 19, 2017

পঞ্জিকা -- দিদিমণি

উৎস
আমি মফঃস্বলের মেয়ে। কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছি তিনবছর হল। এখন থাকি দক্ষিণ কলকাতায়। উত্তর কলকাতায় যাতায়াত খুব কম। কালে-ভদ্রে দাদুর-বাড়ি বেলগাছিয়া আর প্রয়োজন হলে কলেজ-স্ট্রীট ছাড়া উত্তর কলকাতায় আমার যাওয়ার আর কোনও জায়গা নেই। আজকে সহকর্মী বন্ধুর সাথে বইপাড়া রওনা হলাম হাতে বেশ কয়েকটা কাজ ও অকাজ নিয়ে--এই যেমন দু-চারটে বই কেনা, কলেজ-স্কোয়ারে কিছুক্ষণ বসে থাকা, প্যারা-মাউন্টে সরবত ও পুঁটিরামে মিষ্টি খাওয়া। সময় হাতে যা ছিল, তাতে কফি হাউসটা আজকের রুটিন থেকে বাদ দিতে হয়েছিল। আরেকটা বিশেষ কাজ ছিল হাতে, যেটা আসলে নেহাতই অকাজ। বাংলা-পঞ্জিকা প্রকাশক গুপ্ত-প্রেস খুঁজে বের করা। না তিথি-নক্ষত্র-কাল কিছুই আমি পালন করি না। তবে আমার ভাই আগামী বাংলা বছরে বিয়ে করবে পাঁজি-পুথি মেনে পাত্রীপক্ষের অনুরোধে। তাই কলকাতাবাসী একমাত্র দিদির কাছে তার আবদার, গুপ্ত-প্রেস থেকে আগামী বাংলা বছরের অপ্রকাশিত পঞ্জিকা এনে দিতে হবে যাতে মহারাজ নির্ঝঞ্ঝাটে বেস্ট লজটা এখুনি বুক করে ফেলতে পারেন। দেরি করলে নাকি এই একই উপায়ে অন্য কেউ সেটা দখল করে নিতে পারে।
নেহাত হাতে অপচয় করার মত সময় না থাকলে হয়তো আমি এ কাজ করার চেষ্টাই করতাম না। কিন্তু কাজটা না করলে আজকের এই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাটা কোনদিন হতোনা নিঃসন্দেহে।

হেমন্তের কবিতা -- রাজীব

উৎস
আমার ব্যালকনিতে কুয়াশা এলে
আমি তার দাস হয়ে উঠি
জলের প্রতিটি বিন্দু শাসনের
আঙ্গুল দেখায়।
ধ্রুপদী ছন্দ তবু
কিছু কথা বলে যায় কানে।
একফালি হেমন্তের রোদ
উঁকি মারে ভালবাসা হয়ে।
ঋতুচক্রের মতো
লুকোচুরি খেলে যায় মন।
ফাঁদ পাতা হিসেব
ফিরে আসে গ্রীষ্মের দহন বেলায়।
তৃষ্ণার্ত কন্ঠে তখন চেয়ে থাকি
আকাশের নীলে।
আমার ব্যালকনিতে কুয়াশা এলে
তুমি তার দেবী হয়ে ওঠো।

Thursday, July 13, 2017

Qualia vs. Noumena 2 -- Sambita

Click On pics for full-screen view.


1.Series: “Control-Fear Conditioning” 2013
Charcoal and tinted charcoal on sketchbook.
Dimensions: 8.25 X 11 in

2.Series: “Control-Revelation” 2015
Mixed media on paper.
8.25 X 11.75 in


Thursday, July 6, 2017

অরাজনৈতিক -- শ্রীময়

উৎস
হ্যাঁ দাদা, আমি হিসি করে দেয়াল ভেজাই,
সঙ্গে লোক জুটলে কাটাকুটিও খেলি
কানে জল ঢুকলে এক পা তুলে লাফাই
পকেটে পয়সা এলে ফুত্তি কত্তে মদ খাই

হ্যাঁ দাদা, আমি আম বেচতে উঠি বসিরহাট লোকালে
পিঠে রবারের ফিতে মেরে বগলে শব্দ করি
দেখতে কালো খেতে ভালো লজেন বেচি
রাত্তি বেলা ঘরে ঢোকার আগে
কেলাবের টিভিতে সারূপ খানকে দেখে চুল আঁচড়াই

হ্যাঁ দাদা, দেখাসোনা ফিরি, যত দেখবেন তত লাভ
কেনাকাটা আপনার বেক্তিগত চাপ, ওসব আমি বুঝি

কিন্তু এই যে দাদারা, আপনাদের এই ছোট ভাইটিকে
এট্টা  কথা বোঝান দেখি ?
কেন আমার দাদা, বাবার বডি নিয়ে সসান যাওয়ার সময় মার খাবে?
কেন আমার মাসির বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেবে অন্য পাড়ার লোক ?
কেন কালকে সকালে ঠাকুর পোনাম করে লোকগুলো খুন কত্তে বেরোবে?
কেন সোন্ধে বেলা নামাজ পড়ে লোকগুলো মোসাল নিয়ে ঘর জ্বালাতে নামবে?
কেন পোস্সু আমি বাদাম বেচতে বেরোতে পারবোনা ?

কেন তস্সু আমার মাথা, হাত, কাঁধের ঝোলা, দুটো পা

খুঁজতে গেরামের লোক পাসের গেরামে  যাবে?

কি সুর বাজে আমার প্রাণে -- রম্যাণী

উৎস
"আহ! চুপ করো। ফোন-টোন কিচ্ছু করতে হবে না।", বলেই গাড়ির জানালায় মুখ সেঁটে বসে গেলো। আমিও তত সময়ে বদ্ধ কালা, বাইরে আকাশ, সামনে পাহাড়, প্রাণে তখন বর্ষাকালে বসন্ত-বাহার। ব্যাগে সাত দিনের ছুটি-হঠাৎ পাওয়া। তিন দিন রাস্তায়- হাতে রইল চার, তাই "পথে এবার নামো সখা"; ভাগ্যি ভালো, অফ সিজ্যন, তাই মাফলার জড়ানো-ফ্লাক্স বগলে জনস্রোতে ভাঁটা। রাস্তার দু’পাশে 'ফুডিং এভেলেবেল' ধাবায় ফাঁকা চেয়ার টেবিল, যেন মেলা খুলেছে, কিন্তু জমে উঠতে এখনো দেরি। রাস্তায় পাহাড়ি পোশাকে ঝলমলে বাচ্চা, আপেল টুকটুকে গাল, গাছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাহাড়ি বুলবুল।

গাড়ি পাহাড় বেয়ে চলেছে কুমায়ন এর দিকে। আমি তাল গুনি, চৌদ্দ মাত্রা- আমির খান গেয়ে যান "পরান কোয়েলিয়া কুকো রহি"; ধিন-নাউকুচিয়া তাল, ধা-ভীম তাল। সারথি বাবু বলে ওঠেন, "বাকি লৌটনে কে টাইম"। আমরা নামি একটা ছোট্ট কাঠের ঘরের সামনে, বাইরে টেবিল পাতা, গাছের গুঁড়ির তৈরি। খিদেয় পেট চুঁই-চুঁই। ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখি গরম পরোটা ভাজা হচ্ছে। খদ্দের আমরা ছাড়া আরেক দল। 'ফরেনোর', বলে উঠলেন আনন্দ জী। ঘুরে দেখি ঢাউস ক্যামেরা নিয়ে গাছে জড়ানো কুমড়ো লতার ছবি তুলছে। ফুলে ভর্তি। দিম্মা পোস্ত-বাটা মাখিয়ে মুচমুচে করে ভেজে দিতেন, সাথে ঘি-ভাত। মাখন দেয়া পরোটা চিবোতে চিবোতে পোস্ত-বাটার কথা ভাবি। ধোঁয়া ওঠা ঘি-ভাত, কাঁচা লঙ্কা আর গর্মা-গ্রম দহি-পরোটা-তুলনাটা গুছিয়ে তোলার আগেই দেখি পাশের ভদ্দরলোক শেষ টুকরো মুখে পুরছে। তেল জবজবে হাতটা পাঞ্জাবি তে মুছে ফেলেই এক গাল হাসি-
-ছুটি চলছে কিন্তু
-জাহান্নামে যাও। আমি মনোযোগ দিয়ে পরোটা চিবোই। পাশে কমলা-হলুদ কুমড়ো ফুল। আনন্দ জী শুনি তখনও বলছেন, "অর এক লাও", মুখে স্বর্গীয় আনন্দ। পোস্ত-মাখা কুমড়ো ফুলের স্বাদ যদি জানতো!
"অর দো ঘণ্টে মে মুক্তেশ্বর পৌঁছ জায়েঙ্গে"। রাষ্ট্র-ভাষায় আমাদের অভয় দান করে আবার যাত্রা শুরু হলো।
গান চলছে, পুরোনো হিন্দি গান, কাশ্মীর কি কলি। গুনগুনিয়ে উঠতে গিয়ে থেমে যাই। যেন এক যুগ আগের কথা। মায়ের হাত ধরে, বাড়ির পাশেই দিদির বাড়ি - গানের দিদিমণি। শখ মায়ের, উৎসাহ আমার।

রবিবার সকাল... দিদি রান্নাঘরে শাক কাটেন, আমি হারমোনিয়ামে সা রে গা রে সা সাধি। তেলে ফোড়ন পড়ে, দিদি ভূপালি শেখান - মা নি বর্জিত। খাতা দেখে সাদা কালো রিডে সুর খোঁজার চেষ্টা করি। আরোহে দিদি হাত ধরে নিয়ে যান। অবরোহে একাই নামি, পা ফস্কে যায়। দিদি এসে পাশে বসেন। সাদা চুল, সাদা শাড়ি, হাতে হলুদের ছোপ। ভুল করি বারবার, দিদি হাসেন, বলেন, "বাড়ি গিয়ে রেওয়াজ করবি"। আমি বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ি। কোনো কোনো রবিবার দিদির ছেলে রাজু দাদা নেমে আসে, "মায়ের রান্না হতে হতে আমার সাথে চল"। ভয়ে ভয়ে সিঁড়ি ভাঙি, কাঠের পুরোনো সিঁড়ি, বড্ডো উঁচু। ওপারে অন্য জগত। সেতার, তানপুরা, "ওটা কি?", রাজু দাদা চিনিয়ে দেয়, 'সুর মণ্ডল।' 



Wednesday, June 28, 2017

সান্দাক্‌ফু-র পথে: দ্বিতীয় কিস্তি -- তিতাস

<<আগের পর্ব
২৮শে জানুয়ারি: টুমলিং থেকে কালাপোখরি
সূর্যোদয় - টুমলিং
সকালবেলা উঠে দেখি আগের দিনের মতো মেঘ নেই আকাশে, বেশ পরিষ্কার। কাঞ্চনজঙ্ঘা সমেত ঘুমন্ত বুদ্ধকেও বেশ দেখা যাচ্ছে, ঝলমল পরিবেশ। রাস্তার ধারে কালকের তুষারপাতের চিহ্নও স্পষ্ট। আজ আমাদের যেতে হবে গৈরিবাস, কায়াকাট্টা পার করে কালাপোখরি, সব মিলিয়ে প্রায় বারো কিমি। ঠিক হলো, দুপুরের খাওয়া হবে হয় গৈরিবাসে, না হয় কায়াকাট্টায়, সুবিধে মতো। টুমলিং থেকে বেরোনোর প্রায় এক ঘণ্টা পরে আমরা সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্ক এর চেক পোস্ট পার করলাম, এখানে আমাদের সবার পারমিট করাতে হলো। এই পথে অনেক নাম-না-জানা পাখির দেখা পেলাম, আর রাস্তার ধারে প্রচুর রডোডেন্ড্রন গাছ। ফুল ফুটে নেই, তবে কুঁড়ি ধরে আছে অনেক। এগারোটার মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম গৈরিবাস নামক লোকালয়ে। খাওয়ার সময় হয়নি, তাই শুধু চা বলা হলো। এখানেই আমাদের আলাপ হয় সুদাসবাবুর সাথে। অনবদ্য মানুষ একজন! পঞ্চাশের ওপর বয়স, কিন্তু উদ্যমের কোনো খামতি নেই। পাহাড় ভালোবাসেন খুব। একাই বেরিয়ে পড়েছেন সান্দাক্‌ফুর পথে, এই নিয়ে তাঁর ছ’বার। সুদাসবাবুকে সাথে নিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম গৈরিবাস থেকে। গৈরিবাসের পর রাস্তা বেশ খাড়া। প্রায় দেড়’ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছলাম কায়াকাট্টাতে, আরেকটা ছোট্ট লোকালয়। সুদাসবাবু একটু গল্প করে, দুপুরের খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে পড়লেন। খাওয়া শেষ করে বেরোতে আমাদের একটু সময় লাগলো। প্রায় দেড়’ঘণ্টা পরে আমরা রওনা দিলাম কালাপোখরির উদ্দেশ্যে। রাস্তায় তখনও অনেক জায়গাতেই জল জমে বরফ হয়ে আছে। কালাপোখরি পৌঁছতে বিকেল সাড়ে চারটে বেজে যায়। গ্রামে ঢোকার আগেই একটা ছোট্ট পুকুর, নাম কালাপোখরি। এই পুকুরকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষজনের মধ্যে অনেক জনশ্রুতি রয়েছে। গ্রামের নামকরণ এই পুকুরের নাম থেকেই। এই গ্রাম থেকে পাহাড়ের মাথায় সান্দাক্‌ফু চোখে পড়ে।
ঘুমন্ত বুদ্ধ - টুমলিং থেকে


Wednesday, June 21, 2017

সান্দাক্‌ফু-র পথে: প্রথম কিস্তি -- তিতাস

আশ্বিনের শেষে ফুরিল বাজনা-বাজি। মন খারাপ। পুজোর ছুটি শেষ, তবুও কোথাও ঘুরতে যাওয়া হলো না। অনেকদিনই হয়নি। শীতের ছুটিতে না হয় কোথাও একটা যাওয়া যাবে! খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম আমার কিছু বন্ধুরা মিলে যাচ্ছে বরফের দেশে, জানুয়ারি মাসে। গন্তব্য দোদিতাল, গাড়োয়াল রেঞ্জ, উদ্দেশ্য ট্রেকিং। সুযোগ পেয়ে আমিও জুড়ে গেলাম। এই দলের সাথে আগেও একবার ট্রেকিং এ গিয়েছিলাম, Vally of Flowers এ। এবার এলাহাবাদ থেকে যাত্রা শুরু ছয়'ই জানুয়ারি। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই আমার দিন গোনা শুরু। কিন্তু ভাগ্যদেবতা ঠিক প্রসন্ন ছিলেন না। নতুন বছরের প্রথম দিনেই শীতলাদেবী দিলেন আশীর্বাদ। শীতের আমেজের মধ্যে বসন্তের উপদ্রব! আমার ঘুরতে যাওয়া বাতিল, বাকি বন্ধুরা যথা সময়ে রওনা দিলো। বসন্তের প্রকোপে সাময়িক ভাবে কাবু হয়ে ঠিক করলাম, সুস্থ হলেই বেরিয়ে পড়বো, কোথাও একটা। সপ্তর্ষিদা’র (Himalaya Trekkers এর কর্ণধার) সাথে কথা বলে ঠিক হলো, সান্দাক্‌ফু যাবো। ব্যবস্থা পুরোটাই করবে Himalaya Trekkers। ভালোই হবে, এই সুযোগে একটু বাড়িও (শিলিগুড়ি) ঘুরে আসা যাবে। ঘরের কাছেই, তবুও কোনোদিন আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। ঘুরতে যাবার আনন্দে শরীরও সুস্থ হয়ে উঠল খুব তাড়াতাড়ি। চব্বিশে জানুয়ারি ট্রেন ধরলাম শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে। সব ঠিক, পঁচিশে বাড়ি, আর ছাব্বিশে সকাল-সকাল হিমালয়ের পথে। সপ্তর্ষিদা’র থেকে জানতে পারলাম, সঙ্গে আরো তিনজন সহযাত্রী। অজিত আর এইমার আসছে ব্যাঙ্গালোর থেকে, আর মধুরা মুম্বাই থেকে। অচেনা সহযাত্রীদের সাথে, আপাত-একাকী এই আমার প্রথম “অ্যাডভেঞ্চার”! বেশ রোমাঞ্চকর!

২৬শে জানুয়ারি: শিলিগুড়ি থেকে চিত্রে

একা একা ভ্রমণের তৃপ্তি যে কতোটা, সেটা আগে কখনো অনুভব করিনি। আজকে সারাদিনই মনের মধ্যে একটা অচেনা শিহরণ খেলা করে গিয়েছে। সকালবেলা বাড়ি থেকে বেরোতে বেরোতে আটটা। যাবো মানে-ভঞ্জন হয়ে চিত্রে। আজকে ওখানেই থাকতে হবে, বাকিদের সাথে ওখানেই দেখা হবে। শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে বাসস্ট্যান্ড থেকে ভাড়ার জিপ নিলাম পশুপতির উদ্দেশ্যে। ভারত-নেপালের সীমান্ত পশুপতি, মিরিক পার করে আর পনেরো কিমি। পশুপতি পৌঁছতে দুপুর বারোটা বেজে গেলো। আকাশ বেশ পরিষ্কার, মিরিকের পথে গাড়ি থেকেই ‘ঘুমন্ত বুদ্ধ’র (Sleeping Buddha) দেখা মিলেছে। এই সৌন্দর্য ভাষায় বলা যায় না, পর্যটক মাত্রই জানেন। সফর বেশ ভালোই হবে মনে হচ্ছে, অন্তত পূর্বাভাস তাই বলছে। পাহাড়ের মায়াময় ফুরফুরে বাতাসে মন বেশ আহ্লাদিত, দৈনন্দিন জীবনের চিন্তা-ভাবনা ততক্ষণে মনের গভীরে লুকিয়ে পড়েছে। পশুপতি থেকে ভাড়ার মারুতি ভ্যান পেয়ে গেলাম, নামলাম সুখিয়াপোখরি। সেখান থেকে স্থানীয় ভাড়া গাড়িতে পনেরো মিনিটের মাথায় পৌঁছে গেলাম মানে-ভঞ্জন। পাহাড়ের গায়ে ছোট্ট একটা গ্রাম, একদিক ভারতে আর অন্যদিকটা নেপালে। আমাদের গাইডের সাথে এখানেই দেখা হওয়ার কথা। ঘড়িতে তখন দুপুর দেড়টা। একটু এদিক-সেদিক খোঁজ নিয়ে পরিচয় হলো তেন্‌জির সাথে, ইনিই আমাদের গাইড। মানে-ভঞ্জন থেকে চিত্রে তিন কিমি পথ। স্থানীয় ভাড়া গাড়ি পাওয়া যায়, আবার হেঁটেও যাওয়া যায়। ঠিক করলাম ট্রেকিং এ যখন এসেছি, তখন হেঁটেই যাবো। বাকি ট্রেকারদের সাথে বেশ গল্প করতে করতে বেরিয়ে পড়লাম। তেন্‌জি থেকে গেলো মানে-ভঞ্জনেই। মধুরা আজ দার্জিলিং থেকে আসছে, ওকে নিয়ে তেন্‌জি গাড়িতে চলে আসবে চিত্রে। অজিত আর এইমার আসবে বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে, ওদের পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল হয়ে যাবে। আজকের পথ মাত্র তিন কিমি হলেও বেশ চড়াই, প্রথমে একটু অসুবিধাই হচ্ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় বুঁদ হয়ে শরীরে নতুন বল পেলাম। পথে কিছু স্থানীয় মানুষজনের সাথে আলাপও হলো। তারাও আজ সবাই মিলে যাচ্ছে চিত্রে, ছাব্বিশে জানুয়ারির পিকনিক আছে কিনা! এইভাবে গল্প-গুজবে দু’ঘণ্টা লেগে গেলো চিত্রে পৌঁছতে। চিত্রেকে লোকালয় না বলে লোকালয়ের প্রেতচ্ছায়া বলা ভালো। থাকার মধ্যে পাহাড়ের কোলে দু-তিনটে বাড়িঘর আর একটি প্রাচীন বৌদ্ধমঠ। তেন্‌জি আর মধুরা আগেই চলে এসেছে গাড়ি নিয়ে। এখানে আমাদের থাকা Hawk’s Nest নামের এক হোমস্টে তে। থাকার ব্যবস্থা বেশ ভালো, মানুষজনও খুব অতিথি পরায়ণ। হোমস্টের সামনের ফাঁকা মাঠে তখন ছাব্বিশে জানুয়ারির পিকনিক বসেছে, বেশ হইচই। এক কাপ চা খেয়ে, একটু জিরিয়ে নিয়ে, তেন্‌জি আমাদের নিয়ে গেলো বৌদ্ধমঠ দেখাতে। চিত্রের এই বৌদ্ধমঠটি বাকি মঠগুলোর মতোই, তবে আয়তনে বেশ বড়। একটু বেলা পড়ে আসতে, আমরা তিনজনে মিলে সামনের একটা ছোট পাহাড়ের মাথায় উঠলাম, সূর্যাস্ত দেখবো বলে।

সূর্যাস্ত১ - চিত্রে
ততক্ষণে দিনের তাপমাত্রা অনেক কমে গিয়েছে, মাঝেমাঝেই হাড় কাঁপানো একটা বাতাসের ঝটকা কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। এই পাহাড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে দূরে কোনো এক শহরের সান্ধ্যকালীন রোশনাই চোখে পড়লো, দার্জিলিং হবে হয়তো।

Wednesday, June 14, 2017

ক্র্যাকপট বা পাগলা জগাই -- অনির্বাণ কুণ্ডু

    
   ক্র্যাকপটের বাংলা করা মুশকিল। আমার নিজের পছন্দ পাগলা জগাই। অর্থাৎ সোজা কথায়, কিঞ্চিৎ ছিটেল। এঁদের দেখা সর্বত্র পাওয়া যায়। আমার কাছে বেশি আসেন বৈজ্ঞানিক ক্র্যাকপটরা, নিজেদের তত্ত্ব শোনাবার জন্যে। এটা ইউনিভার্সিটিতে পড়ানোর অকুপেশনাল হ্যাজার্ড। এঁদের কথা বিশ্বাস করলে, কয়েক শতাব্দীতে যত জিনিয়াসের আবির্ভাব হবার কথা, আমি এই কয়েক বছরে তার চেয়ে বেশি জিনিয়াস দেখে ফেলেছি।

       পাগলা জগাই বিভিন্ন রকমের আছেন। কেউ খুব গোবেচারা নিরীহ টাইপ, কেউ জেদি, কেউ কিঞ্চিৎ উগ্র, কেউ বিশ্বসংসারের ওপর বেজায় খাপ্পা। এঁদের একমাত্র মিল হলো এঁরা সকলেই কিছু নতুন তত্ত্ব বা যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন, যার ফলে বিজ্ঞানের বাজারচলতি ধ্যানধারণা সব বদলে যাওয়া উচিত। মুশকিল হলো কেউ এঁদের পাত্তা দিচ্ছে না, ভাগ্য ভালো হলে বাড়িতে বউ ছেলেমেয়ে একটু মন দিয়ে শোনে আর ভাবে, আহা ইনি কি প্রতিভাবান, আর ভাগ্য ভালো না হলে পাড়ার চায়ের দোকানদার বা বাজারের মাছওয়ালাকে শোনাতে হয়, কেউ কেউ সামনে বা পেছনে আওয়াজও খান। তাই এঁরা আরেকটু পড়াশোনা করা লোকজনের কাছ থেকে স্বীকৃতির আশায় ঘোরেন।

       বাঙালির স্বাভাবিক দুর্বলতা নিষ্ফলের এবং হতাশের দলে থাকাদের দিকে, তাই এই পর্যন্ত পড়েই কেউ কেউ বলে উঠবেন, তার মানে কি প্রচলিত তত্ত্বকে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না, গুরুবাক্য বলে মেনে নিতে হবে? আর মেনে নিলে কি বিজ্ঞান এগোবে?


Sunday, June 4, 2017

ভোম্বলের বিশ্বদর্শন (১ম কিস্তি) - প্যালারাম

উৎস
নতুন সিনেমা আসছে – ‘Justice League’দেবতারা আর দেবপ্রতিম মানুষেরা দল বেঁধে যেখানে ‘দুষ্টু লোক’ পেটায়। সেই সিনেমার বিজ্ঞাপনী ক্লিপে দেখা যায় যে কেউ একজন ব্রুস ওয়েনকে, যিনি আসলে ব্যাটম্যান, জিজ্ঞেস করছেন – “তা, আপনার সুপার-পাওয়ারটা ঠিক কি যেন?” পাথুরে মুখে উত্তর আসে – “আমি বেজায় ধনী।” তীব্র, তুখোড়, ন্যাকামিবর্জিত ঔদ্ধত্য। সিনেমার বাইরে হ’লে গা কড়কড় করতো না? আজ্ঞে, সম্প্রতি, প্রায় একই ঔদ্ধত্যের সঙ্গে গোটা বিশ্বকে ঠিক এই কথাটাই বুঝিয়ে দিয়েছে দুনিয়ার সবচেয়ে বিত্তবান দেশ আমেরিকা। কিভাবে? একবাক্যে বলতে পারবো না। খুব ছোট করে বললে –

২০১৫ সালে প্যারিসে গোটা পৃথিবীর ১৯৫টি দেশের প্রধান ও প্রতিনিধিরা একত্রিত হয়ে, ইতিহাসে প্রথম চুক্তিবদ্ধ হয়, যে মানুষের কীর্তিকলাপের ফলে এই গ্রহের গড় তাপমাত্রা এমনভাবে বাড়তে চলেছে, যে এখুনি ব্যবস্থা না নিলে ব্যাপার বিচ্ছিরি দিকে (পড়ুন পৃথিবীব্যাপী বন্যা, খরা, খাদ্যসঙ্কটে মানবজাতির অবলুপ্তি) যাবে। এই ‘ব্যবস্থা’ প্রতিটি দেশ নিজে নেবে এবং কি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বা সম্ভব, তা তারা নিজেরাই নিজেদের বিচারবুদ্ধি মতে ঠিক করবে। মাত্র দু’টি দেশ – সিরিয়া এবং নিকারাগুয়া এই চুক্তিতে সই করেনি। প্রথম দেশটির এখন ‘আপনি বাঁচলে বাপের নাম’ (দেশটা আগে নিজে টিকুক, তারপর না হয় পরিবেশ নিয়ে ভাববে’খন)। দ্বিতীয় দেশটির সই না করার কারণ – চুক্তির বয়ান আরও কড়া এবং পরিবেশ-বান্ধব হওয়া উচিত ছিল (একদম ঠিক পড়েছেন – নিকারাগুয়া পরিবেশ বিষয়ে দেশেদের মধ্যে নকশাল)। তা, এমতাবস্থায়, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (মনশ্চক্ষে যাকে দেখতে পেয়ে নজরুল “খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে” লিখে ফেলেছিলেন) সদ্য ইউরোপ ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে দেখলেন গোটা পৃথিবীর রাষ্ট্রনেতারা তাঁকে নিয়ে ডিপ্লোম্যাটিক খিল্লি করছেন। এতে বেজায় খচে গিয়ে ওঁর মনে কি হলো জানা যায়না, তবে পরের দিনই ঘোষণা করলেন -–আমেরিকা ওইসব চুক্তি-ফুক্তি পাত্তা দেয় না। স্বপ্নে পেয়েছেন, যে ওইসব মানতে গেলে আমেরিকার নাকি বিশ্‌শ্‌শ্‌শাল ক্ষতি হবে, আর তাই আমেরিকা ওতে আর নেই। মানে, আমি তোদের সঙ্গে নেকুপুশু খেলায় আর নেই - নেকাপড়ায় গোল্লা পেলেও আমার পকেট ভারী। যা, ভাগ্‌!


Velas Turtle Festival - Celebrating Conservation -- Soumyajit

Number of People Gathered ~ 200; 
Number of Turtle hatchling(s): 1; 
The Ocean: Limitless; 
Chance of Survival: 1 in 1000

It is this sense of hope, this very small and yet powerful dose of probability that

makes me feel wonderful about every conservation project in the country. It helps you find courage; and gives you confidence, that for everything wrong in the world, there is someone, in some corner of the earth, doing his bit to make this a better place.

The year is 2015 and the olive ridleys have long back been declared ‘Vulnerable. We are in Velas, a sleepy little fishing village nestled away in a remote corner of Maharashtra. Velas has come a long way from the days in the 1980s when turtles topped the list of delicacies; adults and hatchlings hunted for meat and eggs collected as a routine. Since then a small number of people from the community have set in motion a conservation effort that would go a long way and put Velas on the map for being a village that helps in and also benefits from conservation efforts. Every year, especially during February and March, the village plays host to a large number of conservation experts and enthusiasts who gather to witness the conservation effort in action.


Wednesday, May 31, 2017

আফ্রোদিতি রিভিজিটেড -- সায়ন্তন

উৎস
আফ্রোদিতি রিভিজিটেড (১)
-------------------------
এখন সকাল শেষ হওয়ার আগে
দু'চারটে পাখি আসে খুদকুঁড়ো লোভে
ফ্যানের বাতাসে ঘরে ঢুকে পড়ে
সেসব পাখির ছায়া দেওয়ালে ভাসে
তারা গান শোনে গল্প করে হাতের আঙুলে
লেখার টেবিলে ছটফট করে
জেনে নিতে চায়--
শেষ কবে আফ্রোদিতির সঙ্গে আমার
দেখা হয়েছিলো।

আফ্রোদিতি রিভিজিটেড (২)
--------------------------
জল জমে আছে। গর্ত আর কাদা পার হয়ে হেঁটে চলা। কতদিন আগে এসব পথে রোদ্দুর উঠতো। হাওয়া ঝলমলে দিন ছিলো সব। বব মার্লের গীটার শোনা যেত সন্ধেবেলা। কয়ামৎপুরের বাড়ির উঠোনে আহির ভৈরবী। ট্যাটু থেকে উঠে আসতো টগবগে এক ঘোড়া। জ্যৈষ্ঠ দিনে দেখি নাই ফিরে আর লাল ধুলো। সেসব এক দিন ছিলো। যখন চারপাশে মায়া আর মায়া। রাতট্যাক্সির আলোয় উৎসব। বাইরে তুমুল মৌসুমি হাওয়া। অবুঝমাড়ের জঙ্গল আর শ্বাপদ আড়বাঁশি।

এখন রাস্তা পার হয়ে ফিরে যাওয়া। অন্য বাতাসে এখন ফুলের গন্ধ।

পরিত্যক্ত অক্ষর কলোনি ছেড়ে আফ্রোদিতি চলে গেছে অনেকক্ষণ।


অমিয়র আত্মহত্যা -- স্বর্ভানু

উৎস
কাল সন্ধে থেকেই অমিয়র মেজাজটা খিঁচড়ে আছে। সন্ধেবেলা পাশের বাড়ির পরাশর কাকু এসেছিলো। সাথে মিনিও। পরাশর কাকু বললো ওরা কালই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ওনার নাকি দিল্লি ট্রান্সফার হয়ে গেছে। একমাত্র মিনির সঙ্গই এ পাড়ায় ভালো লাগত অমিয়র। বেশ সুশ্রী আর ছিপছিপে। একটু শান্তশিষ্ট লাজুক মতন। ওদের দু’জনের মধ্যে কত কথা হয়। লোকাল পলিটিক্স থেকে বলিউড পর্যন্ত। মিনির ওপর কেমন একটা অধিকার বোধ জন্মে গেছিলো অমিয়র। এই তো সেদিন সে একটা পার্টিতে গেছিলো। মিনিরাও ছিলো সেখানে। অরিত্র বলে একটা হুমদো ছেলে খুব ঢলে ঢলে কথা বলছিলো মিনির সাথে। একদম সহ্য হয়নি অমিয়র। পরে মিনিকে ও ওই সব আটভাট ছেলেদের সাথে মিশতে বারণও করে দিয়েছিলো। সেই মিনিরাই কিনা চলে যাবে আজ! আর কোন যোগাযোগ থাকবে না! ভেবে কাল রাতেও লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদেছে অমিয়।

Wednesday, May 24, 2017

জয়-স্টিক -- শ্রীময়

উৎস
গোলাগুলি পরবর্তী ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে
সাদা ধপধপে বরফ ঢাকা রাস্তাই সিলেক্ট করা ভালো

যে রাস্তায় নতুন করে রক্ত খেলার জায়গা নেই
সেখানে টাটকা রক্ত ছড়িয়ে কি লাভ?
তার চেয়ে বরং সাদার ওপরই লাল ভালো মানায়
বেশ একটা ফটফটে, ঝাঁ-চকচকে ব্যাপার,
তার মাঝখানে কটকটে উজ্জ্বল লাল
দেখেই চোখ ধাঁধিয়ে যাবে


বসন্ত পঞ্চম -- শ্রীমন্তী


তুমি বলেছিলে, তোমার সবচেয়ে প্রিয় রাগ বসন্ত পঞ্চম। পরে জেনেছিলাম তোমার সব আসরে প্রিয়তম রাগ বলে সরোদে বাজাও ইমনকল্যাণ। বলেছিলে, প্রিয় কবি শক্তি চাটুজ্যে। অথচ তোমার বাড়িতে বইয়ের তাক দখল করে আছে সার সার সুনীল গাঙ্গুলির কবিতাগুচ্ছ। বলেছিলে, আমার গান শুনে নাকি প্রথম পছন্দ হয়েছিলো আমায় – বিয়ের পর একদিনও এক কলি শুনতে চাওনি। একদিন তুমুল ঝগড়ার শেষে মিটমাট হয়ে গেলে আদর করে তোমার নাম দিয়েছিলাম 'উলটপুরাণ'।

Monday, May 15, 2017

Water and life -- Sudarshan

Have you also learned that secret from the river; that there is no such thing as time? -- Hermann Hesse 
It's everywhere. It's in the calm at the source and at the mouth, in the trepidations of rapids, in the desperation of horse-show lakes, in the placid homecoming of ferries. It's the prima donna of elements. Crystalline in its purity, fluid in its deviousness, vacuous in its promises, torrential in keeping them.
Water is life. We present the photo-series ‘Water and life’ by the brilliant and extremely talented photographer Sudarshan Mondal.


Click on the photos for full-screen viewing...




Monday, May 8, 2017

অবসেশন -- বাসবেন্দু

উৎস

"...এটাকে আমি নিছকই 'হত্যা' মানতে পারি না, কারণ 'হত্যা' শব্দটার মধ্যে একটা ডেরোগেটরি সেন্স কাজ করে, প্রাথমিকভাবে। আমার ধারণা এটা ঠিক সেই অর্থে হত্যা নয়। হ্যাঁ, অনস্বীকার্য যে এটা হত্যা। কিন্তু একটা ব্যাপার আপনাকে বুঝতেই হবে যে এই হত্যার একটা লক্ষ্য আছে, একটা সিদ্ধান্তে সে উপনীত হতে চাইছে, দু'জনেই, অর্থাৎ হত্যা মানে দা এক্ট ইটসেল্ফ এবং হত্যাকারী অর্থাৎ আমি, আমরা দু'জনেই চাইছি একটা সার্বিক মুক্তি। কার? না শিল্পীর। আপনি বলবেন সাহিত্যিক, কিন্তু সেটাও তো একটা শিল্পই, নয় কি? মানে কিভাবে আপনি এই ডিমার্কেশন লাইনটা টানলেন? যার হাতে তুলি সে শিল্পী, যার হাতে কলম সে সাহিত্যিক, কে বলেছে আপনাকে? আপনি অমিয়ভূষণ পড়েছেন? পড়েননি সে আপনাকে দেখলেই বোঝা যায়, নামই শোনেনি তো? আপনি পড়েছেন রবীন্দ্রনাথ, আপনি শুনেছেনও তাই, আপনাকে সবাই বলেছে রবিঠাকুর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবি - শুধু বলেইনি, আপনাকে ইস্কুলে, কলেজে, টিভিতে সর্বত্র ধরে ধরে ব্রেনওয়াশ করে বোঝানো হয়েছে রবিঠাকুরই শেষ কথা। গদ্য, পদ্য, গান, ছোটগপ্পো, ছবি, নাটক মানে ইউ জাস্ট নেম ইট! অদ্ভুত ব্যাপার, আপনার কখনো মনে হয়নি, ক্যানো? এর'ম ক্যানো? ক্যানো একজনই সব পারে আর যদি ধরেও নিই সে পারে, তাহলে আর কারুর পক্ষে কি এর'ম হওয়া সম্ভব না? পুরোপুরি না হলেও, এর শতকরা ষাট ভাগ? বা অন্তত চল্লিশ ভাগ? ভেবেছেন কখনো? ভাবেননি, আপনাকে ভাবতে দেওয়াই হয়নি, আর আপনিও স্বেচ্ছায় ভাবতে চাননি। একটু আগে অমিয়ভূষণের কথা বলছিলাম মনে আছে? উনি শব্দ দিয়ে ছবি আঁকতেন। আপনি হয়তো পড়ছেন অমিয়ভূষণ, পড়তে পড়তে ভাবছেন এনাকে কি বলবো, শিল্পী না সাহিত্যিক? অবশ্য আপনি পড়বেন ক্যানো? আপনি তো জানেনই রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আর কেউ লিখতে পারেনা, পারেনি, পারবেও না। সুতরাং আপনি চাইবেন আমি ফার্স্ট বয়ের খাতাটাই দেখবো এবং মন দিয়ে দেখবো, আর বাকিরা লিখলেও সেটা ওপর ওপর পড়ে 'হ্যাঁ ভালোই কিন্তু ওর মতন তো না' বলে সব ভুলেটুলে যাবো। আমার দাদু একবার একটা গপ্পো বলেছিলো, দাদু ক্লাসে সেকেন্ড হতো আর ফার্স্টের সাথে তার ওই দু'এক নম্বরের ফারাক থাকতো। তো একবার কি হলো, কোনো একটা পরীক্ষায় আমার দাদু আর ওই জনৈক ফার্স্ট বয় একই ভুল করেছে, অথচ মাস্টার দাদুকে দিয়েছে গোল্লা আর ফার্স্ট বয়কে দুই না তিন নম্বর। তা দাদু উঠে গিয়ে বলেছে যে ওর আর আমার তো একই ভুল, ও নম্বর পেলো কিন্তু আমি পেলামনা ক্যানো? শুনে মাস্টার রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে বলেছিলো, 'ওরে তুই ভুল করেছিস না বুঝে আর ও করেছে বুঝে!' বলুন দেখি, এটা একটা যুক্তি হলো? ঠিক এই অন্ধযুক্তিটাই আমরা দিয়ে আসছি এখানেও। আমরা মানে আমরা মাইনাস আমি। আপনারা রবীন্দ্রনাথকে মাথায় তুলে ধেই ধেই করতে গিয়ে দুটো অকল্পনীয় অপরাধ করেছেন। কি কি? এক, আপনারা বহু লেখককে তাদের প্রাপ্য লাইমলাইট থেকে নির্মমভাবে বঞ্চিত করেছেন এবং এখনো করছেন আর দুই, আপনারা রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি চটকে একগাদা আবর্জনা পয়দা করেছেন যেটা কোনোমতেই মেনে নেওয়া যায় না। হেন্স আই চোজ্ টু কিল রবিঠাকুর অল বাই মাইসেল্ফ। আমি চাইনি ভদ্রলোক আমার হাতে খুন হোক, রাদার বেঁচে থাকলে উনি আরও দু'হাজার লেখা দিয়ে যেতে পারতেন কিন্তু একইসাথে ওনাকে নিজের সৃষ্টির নির্মম পতনও দেখতে হতো। সেদিক থেকে আমার এই হত্যা বা বারংবার হত্যার কাজ মার্সি কিলিং এর আওতায় পড়ে। কারণ এই হত্যার মধ্যে দিয়ে আমি শিল্পী ও শিল্প দু'জনকেই বাঁচানোর চেষ্টা করেছি। শিল্পী তো তুচ্ছ! সে তো এক্সপ্লোরার! তার কাজ তো শিল্পসমুদ্রে ডুব মেরে গভীরে প্রোথিত মণিমাণিক্য কুড়িয়ে আনা! শিল্প তো বয়ে যাওয়া নদী, আর শিল্পী তাতে বিরামহীন অবগাহনে মত্ত! দেখলেন এখানে কিন্তু আমি 'স্নান' বললাম না। 'অবগাহন' বললাম। খেয়াল করলেন? স্নান একটি অতি ছেদো শব্দ। 'কোথায় চল্লি রে? এইত্তো চানে।' কিন্তু অবগাহন? শব্দটা উচ্চারণ করুন। আহা করুনই না একবার! অ ব গা হ ন। আত্মার শুদ্ধি হলো না কির'ম একটা? বাদ্দিন আপনি বুঝবেন না, আপনি ক্যানো আপনারা কেউ বুঝবেন না, যদি বুঝতেন তাহলে রবীন্দ্রনাথের 'নিভে' আর 'নিবে' ব্যবহারের ফারাক বুঝতেন আর দু'টোকেই ওইতো একই হলো বলে কামিনী প্রকাশনার 'সেরা পঞ্চাশটি রবীন্দ্রগান' বলে পেপারব্যাকে ছেপে বের করতেন না। বের করলে রেগে যেতেন, পুড়িয়ে ফেলতেন ওর'ম বই। যাগ্গে, যা বলছিলাম, আমার এই হত্যা বেসিকালি শিল্পের বাস্তিল দুর্গকে পতনের হাত থেকে বাঁচানোর একটা একক প্রচেষ্টা। এবং এতে আমার কোনো অহংবোধ নেই। আমার মনে হয়েছে একজন সাহিত্যপ্রেমী হিসেবে রবীন্দ্রনাথকে হত্যা করা জরুরি, এবং আমি তা সফলভাবে করতে পেরে যারপরনাই উৎফুল্ল। আপনাদের ভার্ডিক্ট আমাকে কোনোভাবেই মর্মাহত করবে না কারণ আমি জানি আমি না থাকলে আপনারা সবাই মিলে প্রথমে রবিঠাকুরকে আর তারপর ধীরে ধীরে সাহিত্যকে সামগ্রিকভাবে কবর দিতেন। এবং সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাপার হলো এই কাজটা আপনারা করতেন অজ্ঞানতার বশবর্তী হয়ে। অতএব, মহাশয়, এ বরমাল্য আমি সাদরে গ্রহণ করবো...

Monday, May 1, 2017

নবরত্ন -- সুস্মিতা

পর্ব (১) অতঃপর রাজামশাই কহিলেন- "আমারও নবরত্ন চাই"।
উৎস
মন্ত্রীমশাই সবেগে ঊর্ধ্বে-নিম্নে গ্রীবাচালনা করিলেন এবং বলিলেন- "বটেই তো বটেই তো। কিন্তু রাজামশাই, এই গেলো হপ্তাতেই তো রাজজ্যোতিষীমশায়ের কথামতো অতোগুলো টাকা গচ্চা দিয়ে নবরত্নের আংটি ধারণ করলেন, সীমান্তে ওই ন'টা বজ্জাত প্রতিবেশী রাজার অনুপ্রবেশ আটকাতে।" রাজামশাই রোষকষায়িত দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া পুনরায় বলিলেন- " না রে বাবা! সে পাথুরে নবরত্নের কথা বলছি না রে বাপু। আমি বলছি..." মন্ত্রী মধ্যপথেই রাজার বাক্যি হরণ করিয়া বলিয়া উঠিলেন- "ও হো হো এবার বুঝেছি! তবে কিনা কাল রাতেই তো বড় রাণীমার সন্তোষী মায়ের শুক্রবারের ব্রত বলে নিরিমিষ্যি নবরত্ন কোর্মা খেয়ে এই আজ সকালেও 'হেউ হেউ' করে চোঁয়া ঢেকুর মারছিলেন সিংহাসনে বসে। তাই বলছিলুম কি আজ হাল্কা করে চিকেন বিরিয়ানী আর চিকেন চাপের ওপরেই রইলেন নাহয়। নিরিমিষ্যিটা তো আপনার আবার... হেঁ হেঁ।" রাজামশাই স্বগতোক্তি করিলেন- "এ কোন আবোদাগুলোকে নিয়ে দরবার খুলেছি রে ভাই! এই ধম্মের ষাঁড়গুলো শুধু মাস গেলে বসে বসে মোটা মাইনে আর ভুঁড়ি বাগাতেই সিদ্ধহস্ত। অ্যাকে তো কী বলি বোঝে না তায় আবার লম্বা লম্বা বক্তিমে ঝাড়ছে দ্যাখো ঘাটের মড়া বুড়োটা। অবশ্য মাটন ছাড়া বিরিয়ানী যে ভাবতে পারে তার দৌড় আর কদ্দুরই বা হবে!" প্রকাশ্যে বলিলেন- " জ্বালাতন তো! ওইসব বলছি না মন্ত্রী। আমি নবরত্ন সভার কথা বলছি। যেমনটি আকবরের ছিলো, বিক্রমাদিত্যের ছিলো। ইতিহাসের বই হাতে ধরেননি নাকি। পরের দিন নাতির বইটা একটু উল্টে পাল্টে দেখে আসবেন। বলি একটা জ্ঞানীগুণী রত্নখচিত রাজসভা না হলে কি জাতে ওঠা যায় হে?"

Monday, April 24, 2017

ছায়াচ্ছন্ন -- কৃষ্ণাঞ্জন


শিয়ালদহ থেকে লক্ষ্মীকান্তপুর লোকালে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক। স্টেশনের নাম মথুরাপুর। সেখান থেকে অটো ধরে খটিরবাজার। তারপর ভ্যান-রিকশোতে সাতঘড়া গ্রামের তালপুকুর। আমার ছোট পিসির বাড়ি। গত পুজোয় একাদশীর দিন গিয়েছিলাম, প্রায় অনেক বছর পরে। না, আমাকে শিয়ালদহ থেকে ট্রেন ধরতে হয় না। আমার বাড়ি মথুরাপুরের তিনটি স্টেশন আগে। দক্ষিণ বারাশত। কিন্তু এই তালপুকুর গ্রামের অনেকে সেটাকেই শহর ভাবে।

দুপুর নাগাদ খটিরবাজারে পৌঁছে ভ্যানে চেপেছি। ইট বিছানো রাস্তা। রাস্তার পাশে ঘন বাঁশবন, ‘সবুজ হলুদ সর পড়া পুকুর’ ঝিম মেরে আছে। ছোটবেলায় মা-বাবার সাথে বেশ ঘটা করে আসতাম, রাস্তাগুলো সব আবছা মনে পড়ছে। অনেকদিন পর নিজের বাড়িতে ফেরার মতো লাগছে। যেতে যেতে একটা কুমোর-পাড়া পড়ে, রোদে দেওয়া মাটির কলসি, মিষ্টির ভাঁড়। খুব মনোযোগ দিয়ে ছোটবেলায় এগুলো বানানো দেখতাম - বন বন করে চাকা ঘুরছে আর এক বুড়ো নিপুণ হাতে একটা কলসি বানিয়ে ফেলছে। একটা বড় মুসলিম-পাড়ার পরেই রাস্তার বাঁক, বাঁক পেরিয়ে ভ্যানটাকে দাঁড়াতে বললাম। পিসি দাঁড়িয়ে, পিসির ছেলেরা দাঁড়িয়ে, প্রতিবেশী আরও কয়েকজন দাঁড়িয়ে। ভ্যান থেকে নামতেই অর্ধেক-চেনা মুখে হাসি এক মহিলার- “কতো বড়ো হয়ে গেছিস বাবা... আমায় চিনতে পারিস?” কিছু বলার আগেই পিসির ছেলেরা এসে পড়লো। ওরাও বড়ো হয়ে গেছে। প্রায় হাত ধরে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে গেলো। আগে মাটির বাড়ি ছিলো। দাদা চাকরি পেয়ে পাকা বানিয়ে নিয়েছে, ইলেক্ট্রিসিটিও এসেছে। প্লেট-ভর্তি খাবার সাজিয়ে নিয়ে এলো বৌদি, পিসি মাটির উনুনে রান্নায় ব্যস্ত, দেশি মোরগের ঝোল খাব আগেই বলে রেখেছিলাম।

কোনওমতে লুচিগুলো খেয়ে হাঁটতে বেরলাম সেজো ছেলেটির সাথে। অদ্ভুত ভাবে এই ভেতরের রাস্তাগুলোও মনে আছে আমার। মাটির রাস্তা, চারদিকে ঘন সবুজ গাছপালা, নিশ্চিন্দিপুরের থেকে একেবারেই আলাদা করা যায়না। হঠাৎ রাস্তা শেষ, বিশাল ধান-জমি। দাঁড়িয়ে পড়লাম ওখানেই। এটা-ওটা গল্পের মধ্যেই পাশের মুসলিম-পাড়ার কথা উঠলো, কারণ বাইরে তখন যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। মুসলিম-পাড়ার সবাই নাকি আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সমর্থক।


আবহাওয়ার খবর -- সৌভিক

উৎস

আজ সারাদিন প্রধানত মেঘলা আকাশ
বিকেলের দিকে আপনার ঘর ও বারান্দায়
মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা।
বাসন্তী রঙের ওড়না জড়ানো মেয়েটা
নীল রঙের গাড়ীতে চেপে অফিসে চলে যাবে,
জানলা দিয়ে তার গম্ভীর মুখটা দেখে
মেঘ জমবে আপনার বাড়ির গলিতে;
মনে হবে ওই ওড়নাটা জড়িয়ে
মেয়েটা সাইকেল চালালে বা দুপুরবেলা
লোকাল ট্রেনের জানলার ধারে বসলে
বেশি মানাত।
বিকেলের বিমানে মেয়েটা পাড়ি দেবে পশ্চিমে
অনির্দিষ্টকালের জন্য, শহরের আকাশে
ভিড় করবে কিউমুলোনিম্বাসরা;
রাতে যখন বিমান আবু ধাবির মাটি ছোঁবে
আপনার ঘরে তখন ঝোড়ো হাওয়ার সাথে
বজ্র-বিদ্যুৎসহ ভারী বর্ষণের সতর্কতা।
খবর আপাতত এই পর্যন্তই।

Monday, April 17, 2017

The Lens Connection 1 -- Pubarun

Click on the photos for full-screen viewing...





Monday, April 10, 2017

নায়িকা-সংবাদ -- সৃজিতা


উৎস
বাসকসজ্জা

ফসলের কণা ঘিরে আয়োজন কৃষকের তূণে।
লোধ্ররেণু, লিপস্টিক, পূর্ণ হয়েছে প্রসাধন...

অচিরেই দেবদূত ভেঙে দেবে শস্যের ঘর

বিপ্রলব্ধা

‘বঞ্চনা’ শব্দ জুড়ে বেড়ে ওঠে শিকড় বাকড়

স্থানকালপাত্ররা পৃথিবীর পরিধি মাপেনি।
মোহনবাঁশির স্নেহে ভেসে এসেছিলো আশ্বাস...

সিম-কার্ড বুঝে নিক খোলস ছাড়ার কথকতা,
ফেলে আসা ফোন রাখে মৃত শহরের দিনলিপি

উৎকণ্ঠিতা

‘পন্থ নেহারি’ রাই, নিভে আসে দ্রুত চরাচর।
প্রলয়ের কাল বুঝি ছুঁয়েছিলো এত ব্যাকুলতা।
সংকেত ভুলে গেলে.. রিংটোন থাকবে তো মনে?


বিবর্তন -- ঊর্মি

উৎস


আমার আদরের ভাইপো গুল্লুবাবু সবে দু’বছরে পা দিলো। আমি তাকে ডাকি ‘গুল্লাই’ বলে আর সে তার আধো আধো স্বরে আমায় বলে ‘পিপি’ - আসলে বলে “হ্যালো পিপি!!”। ওরা থাকে মুম্বাইতে, আর যবে থেকে গুল্লাই এর মোটামুটি জ্ঞান হয়েছে, আমি এই সুদূর বিদেশে। আমার দুঃখ ছিলো যে ও হয়তো আমাকে চিনবেই না - কিন্তু মোবাইল ফোন এর দাক্ষিণ্যে সে চিন্তা আর নেই। যদিও কিছুদিন অন্তত মোবাইল আর পিপি হয়তো ওর কাছে সমার্থক হয়ে থাকবে - সে থাক, ক্ষতি নেই। আমরা যখন গুল্লুর বয়সী ছিলাম তখন তো বাড়িতে ফোন বলে কিছুর অস্তিত্বই ছিলো না। একটু বড় হতে সামনের বাড়িতে ফোন এলো, পুরো পাড়ায় সাকুল্যে ওইটিই। সুতরাং বাকিদেরও জরুরী ফোন ওখানেই আসতো আর হাঁক পেড়ে ডাকলে তাঁরা পড়িমরি দৌড়ে আসতেন। আস্তে আস্তে ব্যাপারটা সড়গড় হলো, তখন ফোন-বাড়ির লোকের সুবিধে অনুযায়ী দিনক্ষণ আগে থেকে ঠিক করে ফোন আসতো। কিন্তু আমাদের ছোটদের এত ধৈর্য ছিলো না তাই ফোন নিয়ে মাথাব্যথাও ছিলো না।

আর কিছু বছর যেতে মোটামুটি সব বাড়িতে ফোন এসে গেলো - আমরাও ফোনে কথা বলার মতো বড় হলাম। কিন্তু বিশ্বাস করুন, তৎসত্ত্বেও ব্যাপারটা ঠিক ততটা মজার হলো না যতটা ভেবেছিলাম!


Monday, April 3, 2017

খট্‌ -- বাসবেন্দু

উৎস

পুরো ব্যাপারটার শুরুয়াৎ শুক্রবার সন্ধে নাগাদ। মানে গত পরশু। সময়টাও মনে আছে কমলেশের বিলক্ষণ - আটটা পনেরো। সাতটা পঁচিশের আপ কাটোয়াটার ফার্স্ট স্টপেজ চন্দননগর, পরেরটাই কমলেশের। ট্রেন থেকে নেমে, একটা চা খেয়ে, ভাঁড়টা লাইন পার করে ফেলে, “এই নামলাম... কিছু আনতে টানতে হবে?” গোছের কথা অনুপমাকে ফোনে জিজ্ঞেস করতে করতে প্ল্যাটফর্মটা পার করে অটোয় উঠতে খুব বেশি হলে মিনিট বারো সময় নেয় বিয়াল্লিশের কমলেশ সরকার। এর অবশ্য হেরফের হয়। হয়, যেদিন উৎপলরাও একই ট্রেনে ফেরে। সেদিন দু’রাউন্ড চা চলে সিগারেট সমেত (বেশিরভাগ দিন দামও মেটায় কমলেশ, আক্ষেপহীন), তারপর নিরুপমদা আর উৎপল এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে হাঁটা দেয়, যেদিকটা সাইকেল গ্যারেজ। কমলেশ দু’নম্বর বরাবর সোজা হাঁটে, “এই নামলাম... কিছু আনতে টানতে হবে?” বলতে বলতে, স্বাভাবিক। গত পরশুও এর’মই একটা দিন ছিলো। তফাতের মধ্যে, কমলেশের খেয়াল ছিলোনা অটোর জন্য আগলে রাখা খুচরো পাঁচ টাকা কমলেশ বাছাই করা সল্টেড বাদামে খরচ করে ফেলেছিলো এবং চায়ের তিন টাকা দিয়ে, “এই নামলাম... কিছু আনতে টানতে হবে?” বলবার সময়ও কমলেশের ঘুণাক্ষরেও মনে পড়েনি পকেটে সর্বনিম্ন টাকার পরিমাণ একশ’, আর স্টেশন থেকে কমলেশের টু বি এইচ কে ফ্ল্যাটের দূরত্বমূল্য সাত। সাতটাকা মাত্র। অতএব, গলির মুখে নেমে, অটোর শেষ যাত্রী কমলেশ, বুকপকেটে হাত দিয়েই উপলব্ধি করে সল্টেড বাদামের কিছুটা দাঁতের গভীর ফাঁকে আটকে আছে যেখানে জিভ পৌঁছোয় না। সুতরাং কমলেশ, রাদার সল্টেড বাদামের অবশিষ্টাংশ উদ্ধাররত কমলেশ, অটোচালকের সাথে নিম্নলিখিত কথোপকথনে লিপ্ত হয়:

অ: “কি হোলো দাদা কি খুঁজ্জেন?”


Monday, March 27, 2017

হোক পলায়ন -- দিদিমণি

উৎস
কথায় বলে, ‘চাচা, আপন প্রাণ বাঁচা’। আমার কিন্তু কথাটা খুব নিম্নমানের মনে হতো। কোনো বিপদে পড়ে শুধু আপন প্রাণ বাঁচিয়ে পরিস্থিতি থেকে পেছন ফিরে পালাবো এরকমটা কখনো ভাবিনি। কিন্তু আজ যে ঘটনার কথা বলবো, তা আমার এই আদর্শের মাথায় প্রকাণ্ড ঘা মেরেছিলো। টিভি-সংবাদপত্রে আজকাল আমরা প্রায় রোজই mob-fury দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। হয়তো অনেকেরই জীবনে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাও হয়েছে। তাঁরা জানেন, যে উত্তেজিত জনতার নির্দিষ্ট কোনো চেহারা থাকেনা বলে, মানুষের ভিড়ে অনেকেরই অন্তর্গত পশুত্বটা সহজে প্রকাশ হয়ে পড়ে। যখন দেখেছি স্কুল-কলেজ-অফিসে স্টাফদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্দী করে রেখে বিক্ষোভ প্রদর্শনের নামে নারকীয় অত্যাচার-মারধোর-প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ধ্বংস-অপমানজনক গালিগালাজ-অঙ্গভঙ্গি - তখন ভেতরটা শিউরে উঠেছে। জনতার সমবেত আক্রমণে কর্তৃপক্ষ অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন আর বাকিরা টেবিল বা ডেস্কের তলায় লুকিয়ে রেহাই পেয়েছেন বা যে কোনো উপায়ে পালিয়ে সে যাত্রা কোনওমতে বেঁচেছেন।

কল্পনায় ভাবার চেষ্টা করেছি এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে আমি কি করবো। ভেবেছি, যা হবে দেখা যাবে। যেভাবে হোক, বিপদ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমার এই ভাবনাটা সেদিন আর কল্পনার পর্যায়ে থাকলো না। কয়েকবছর আগের ঘটনা, যখন পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কার্যালয় থেকে একটি পেশাগত মিটিং সেরে বেরোচ্ছিলাম। অনেকক্ষণ ধরেই বাইরে থেকে একটা সম্মিলিত কোলাহল কানে আসছিলো। কনফারেন্স-রুমে থাকায় কিছুই বুঝিনি। মিটিং-শেষে বেরিয়ে দেখলাম, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বিল্ডিং এর সামনে প্রায় হাজার খানেক ছেলেমেয়ে। কান পাততে জানা গেলো - এঁরা বেসিক-ট্রেনিং-প্রাপ্ত বেকার ছেলেমেয়ে, যাঁরা প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন, কিন্তু প্রাইমারি-টিচার্স-ট্রেনিং-ইন্সটিটিউট উত্তীর্ণ। সে কারণে এঁদের দাবি ছিলো এঁদেরকে চাকরির নিয়োগপত্র দিতে হবে। অনেকের এমনও দাবি, যে অনেক নেতা-মন্ত্রীই নাকি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে এঁদের থেকে লাখ-লাখ টাকাও নিয়েছেন। এখন তাই তাঁরা বিক্ষোভে ‘মজা’ দেখাতে সম্মিলিত হয়েছেন আর প্রাথমিক শিক্ষা-পর্ষদের ভবন ঘেরাও করেছেন। এখন আর ভবন থেকে কাউকে বেরোতে দেওয়া হবেনা এবং ‘পজিটিভ রেসপন্স’ না পেলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলন (অর্থাৎ ভাঙচুর, মারধোর, অগ্নিসংযোগ) শুরু করবেন।


Sunday, March 26, 2017

Qualia vs. Noumena 1 -- Sambita

Click On pics for full-screen view.


1.“The Yell” 2015
Acrylic and spray paint on craft paper.
Collage on newspaper.
Dimensions: 27 X 43 in

Monday, March 13, 2017

পিতামহের প্রতি -- রাজীব


উৎস


পিতামহ,
তোমার ক্রোধাগ্নি ছড়িয়ে পড়ুক
নক্ষত্রের শিরা উপশিরায়।
মহাকাশের নাভিমূলে ফুটে উঠুক
একান্নটি একান্নবর্তী সংসারের পৃথিবী।
প্রথম পঞ্চাশটিতে থাক শান্ত শ্বেত শুভ্র মনুষ্যকুল।
আর একান্নতম গ্রহটি হোক কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধস্থল।
কুরু বা পাণ্ডব বুঝিনা, আমি শুধু
সেই জীবন যুদ্ধের সৈনিক হতে চাই।

শিলুমাসি -- গঙ্গোত্রী

উৎস
শিলুমাসির গল্প এখনও মনে পড়ে যখন ঘরে থাকতে ইচ্ছে করেনা, তখন।
আমার যখন বছর পাঁচেক বয়স তখন শিলুমাসি খুব আসত আমাদের বাসায়। আমাকে তেল মাখিয়ে চান করিয়ে, খাইয়ে দাইয়ে তারপর যেত। আর এর ফাঁকে ঝুড়ি ঝুড়ি গপ্পো শুনতাম আমি, মাসির মুখে। মাসি আমাদের কেমন একটা দুঃসম্পর্কের আত্মীয় হয়। নানান গপ্পের মধ্যে একটি দু’টি আমার আজও মনে পড়লে গা কেমন শিউরে ওঠে...

যাযাবর এসেছিলো সেবার শীতে শিলুমাসিদের গ্রামে।

"যাযাবর কি মাসি?"
"ঘুরে বেড়ায় তারা দেশে বিদেশে, কখনো এক জায়গায় থাকে না, অনেক রকম জাদুটোনা জানে তারা..."

অল্পে আমার কৌতূহল ক্ষান্ত হয় না, মাসিও আমার সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে থাকে।

সন্ধ্যে বেলা তারা নানা রকম খেলা দেখাতো, পয়সাও পেত গ্রামের লোকদের কাছ থেকে। কামু খেলা দেখতে যেত প্রায়ই, দিনের বেলাতেও মাঝে মধ্যেই চলে যেত, ওই দলের লোকেদের সাথে গিয়ে ভিড়তো।


Monday, March 6, 2017

মাশরুম -- তনুজিৎ

উৎস

ঘুম তখন ভাঙতে যাবে। খুব অল্প সময়ের জন্যে, তখনও আমি ঘুমের মধ্যে, মনে হলো কেউ খাটটা খুব জোরে নাড়াচ্ছে; আমি একটা খুব অদ্ভুত গোঙানির মত শব্দ করে জেগে উঠি, ধড়মড় করে। আচমকা খুব নড়ছে ঘরটা। প্রথম কয়েক মুহূর্তের জন্যে কিছু বুঝে উঠতে পারিনা যে কি হচ্ছে। অসময়ে ঘুম ভাঙলে আমার চোখ খুব জ্বলে আর জল বের হয়, দেখতে অসুবিধা হয়। বিছানা থেকে উঠে মেঝেতে পা দিয়ে যখন দাঁড়াতে যাই তখন জোরালো ধাক্কার মতো পড়ে যাই। যখন প্রথম সাঁতার শিখেছিলাম, তখনো পায়ের তলায় যেরকম একটা অনুভূতি হয়েছিলো, যেটা ঠিক মাটির মতো নয়, সেরকম একটা ভূমিহীন অনুভূতি হলো। আমি কখনও ভুত দেখিনি, তবে মাঝেমাঝে যখন চেনা অন্ধকার কোনাটায় একটা অচেনা বস্তুর অবয়ব কয়েক মুহূর্তের জন্যে দেখি, তখন এক ধাক্কায় একটা ভয় আসে; মাথার ভিতর এক ধাক্কায় রক্ত আসে, গরম করে দেয়, বুকের ভিতর ধাক্কাটা খুব জোর শুরু হয়, হাত-পা বেশ অকেজো অসাড় হয়ে আসে। সেটাও কেটে যায়, যখন দেখি অচেনা বস্তুটা আসলে একটা চাদর বা অন্যকিছু। অল্প সময়ের জন্যে ওরকম একটা হঠাৎ ভয় এলো। কিছুক্ষণ মেঝেতে ওইভাবেই পড়ে রইলাম। আমি যে শহরে থাকি, সেখানে খুব বৃষ্টি হয়, আর দূষণটাও বেশি, তাই

Monday, February 27, 2017

মূল কথা -- সুনন্দ

উৎস
গ্রামের পশ্চিম দিকে, খালপাড়ের পরের জমিটার ঠিক মাঝখানে, একটা বিশাল বটগাছ আছে। এককালে ওখানে ফিস্ট হতো, বাগালের দল জিরতো দুপুরের রোদে পিঠ রেখে। এখন আর ওসব হয় না অনেকদিন। ছেলে-ছোকরারা খেলতে যায়, ঝুরিতে তক্তা বেঁধে দোল খায়, আর মাঝেমাঝে ঝিমিয়ে পড়লে গাছের একদিকে এক বড় গর্তের মধ্যে বসে থাকা ধীরু পাগলের চুলে ঢিল বেঁধে আর গায়ে মাটি চাপিয়ে মজা দেখে। পাগল কিছু বলে না। খুব বেশি জ্বালালে, রক্তচক্ষু করে চীৎকার করে ওঠে, “কই শেকড়টা?”

যারা জানে না, তারা খুব ভয় পেতে পারে, গ্রামের ছেলেরা কিন্তু একটুও ভয় পায় না ধীরুকে।  প্রতিদিন কোন না কোন বাড়ি থেকে ধীরু পাগলের খাবার যায়। কোনদিন ভুলে গেলেও ধীরু কিছু বলে না, আওয়াজও করে না। তবু সবাই মনে রাখার চেষ্টা করে।
আজ আমার পালা। দশ কিলোমিটার দূরের দোকান থেকে দুপুরে বাড়িতে ভাত খেতে এসেও শান্তি নেই। বেরনোর সময় বউ হাতে ভাতের টিফিন বাক্স ধরিয়ে দিলো। ফেরার পথে দিয়ে যেতে হবে পাগলের সামনেগজগজ করতে করতে এই এখন ওই দিকেই হাঁটছি।
ধীরু পাগলা চিরকাল পাগল ছিল না

Monday, February 20, 2017

লগবুকে শেষ এন্ট্রি -- অরুণাচল


উৎস

বন্দরে পৌঁছে গেছে মায়াবী জাহাজ
বাতিল কামানে আজ তোপ দাগো। একশ’টা নীরব আওয়াজ
ছিঁড়েখুঁড়ে দিয়ে যাক নাবিকের লুকোনো বাসনা
সবাই জানুক তবে, আমরা যে আর ভাসবো না।
তার পরে বৃষ্টি শুরু হোক
ধুয়ে যাক তমসুক ... মুছে যাক সমস্ত কুহক
নষ্ট এই সময়ের সমস্ত স্মৃতি গায়ে মেখে
বাতাসেরা নতমুখে জাহাজের ভিজে যাওয়া ডেকএ
এখুনি উড়িয়ে দেবে যাবতীয় শোকগাথাগুলি
ছায়া শুধু রয়ে যাবে। থেকে যাবে অনন্ত গোধূলি।


মধ্যম পুরুষ -- শ্রীময়


ল্যাঙ্গুয়েজ ডে! খায় না মাথায় দেয়? হোয়াট হ্যাপেন্ড এই দিনটাতে? এই তো এতো গুলো 'ডে' গেলো হুড়মুড় করে, সেই লিস্টে তো এটা ছিল না! সত্যি মাইরি! গোটা ফেব্রুয়ারি মাসটাই এই সব আলবাল ডে'তে চলে গেলো! হুজুগে পাবলিক সব!

যাকগে ছাড়ুন। এসব নিয়ে ফালতু টাইম ওয়েস্ট করে লাভ নেই। আপনারও অনেক কাজ আছে, আমার তো আছেই... তারচেয়ে বরং আসুন একটু আড্ডা মারা যাক। তবে হ্যাঁ, আগেই বলে রাখছি আমি কিন্তু ওই পেজ-থ্রি গসিপ টসিপ-এ নেই। ওসব আমি একদম টলারেট করতে পারিনা। কি বলছেন? টপিক? ধুউউউরর... আড্ডা দিতে বসে টপিক নিয়ে ভাবলে চলে!! যা মনে আসছে, তাই দিয়েই স্টার্ট করুন। কিচ্ছু মনে আসছে না? কিস্সু না! কে রে ভাই! আচ্ছা দাঁড়ান, আমি এট্টু ভেবে দেখি...

মিল গিয়া! আচ্ছা আপনি ছোটবেলায় কোন স্কুলে পড়তেন? না, মানে হোয়াট আই'ম ট্রাইং টু নো ইজ- ইংলিশ মিডিয়াম না বেঙ্গলি মিডিয়াম? আমি কিন্তু পাতি বেঙ্গলি মিডিয়াম। সিক্স-এ প্রথম ক্লাসে এ, বি, সি, ডি পড়ানো হয়েছিল। লার্নিং ইংলিশ, পাতলা করে বইটা ছিল... একদিনেই সব পড়ে ফেলেছিলাম। আসলে আমি বরাবরই ইংলিশে স্ট্রং। সব সময় হায়েস্ট না পেলেও বেস্ট ফাইভে থাকতাম। এখনো ক্লিয়ারলি মনে আছে, ইংরেজির জন্য একটা আলাদা কপি করেছিলাম। দ্যাট ওয়াজ মাই সিঙ্গেল কপি, যেটা ব্রাউন পেপারে মলাট দেওয়া ছিল। মলাটের ওপরে সাদা কাগজ হাফ সার্কেল করে কেটে, তার পেরিফেরি বরাবর লেখা ছিল "ইংলিশ ফেয়ার কপি ফর মিস্টার এস.এস.রে"। হাফ সার্কেল থেকে তিন আঙ্গুল নিচে আবার একটা কাগজ স্কোয়ার করে কেটে, তার ভেতরে লিখেছিলাম নেম, রোল নাম্বার, ক্লাস।

About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই