-“অ্যাই কে আছিস, শিগগির ওকে এখান থেকে নিয়ে যা!”
এরকম আরও অসংখ্য চেঁচামেচি, স্টেজের
চড়া আলো, উইংসের দু’পাশ থেকে তটস্থ লোকজনের ধেয়ে আসা- এ সব কিছুই ছেলেটাকে দমাতে
পারেনি। আপন মনের আনন্দে উদ্দাম নেচে চলেছিল একটানা। বি.দে. হলের বিরাট, পুরনো
স্টেজ। সামনের দিকে একটু উঁচু প্ল্যাটফর্মের ওপর পাতা শতরঞ্চির ওপরে বসে গায়িকা
গান গাইছেন। হলভর্তি লোক। একটু পরেই গীতিনাট্য শুরু হবে। সেখানেও এক মুখ্য
চরিত্রের হয়ে অন্তরাল-শিল্পী হয়ে গাওয়ার কথা তাঁর। অনেকক্ষণের অনুষ্ঠান- ছেলেকে
বাড়িতে একা রেখে আসা সম্ভব হয়নি, তাই সঙ্গে এনে স্টেজের পাশে সহশিল্পীদের
তত্ত্বাবধানে রেখে একক অনুষ্ঠানে গাইতে উঠেছেন। ছেলের আকার, প্রবৃত্তি আর কৌতূহল
সবই বাঁদরের মত। স্বভাবত কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁদের পক্ষে আসন্ন মুখ্য অনুষ্ঠানের
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি, নিজেদের মানসিক প্রস্তুতি সামলে ওই অতিপক্ক পিচ্চি
বাচ্চাকে চোখে চোখে রাখা সম্ভব হয়নি। কিছু একটা হাতে দিয়ে মন ভুলিয়ে এক জায়গায়
বসিয়ে রেখে তাঁরা গেছেন নিজের কাজে। এমন সময় মায়ের অতি-চেনা গলায় প্রিয় গান শুনে
ওই ছেলে-ভুলোনো খেলনার প্রতি সম্পূর্ণ কৌতূহল উবে গেল ছেলেটার। প্রথমে উইংয়ের পাশ
দিয়ে লুকিয়ে উঁকি দিয়ে শুরু, তারপর আরেকটু এগিয়ে উজ্জ্বল আলো আর অসংখ্য শ্রোতার
কালো কালো মাথা দেখে বেজায় উৎসাহ পেয়ে ছোকরা একেবারে ঢুকেই পড়লো স্টেজের ভিতর। সামনের
যে প্ল্যাটফর্মের ওপর বসে মা গান গাইছেন, তার পিছনে বিশাল ফাঁকা জায়গা দেখে ছেলের
বোধহয় মনে হল- এই তো আদর্শ জায়গা নিজের অপার প্রতিভা জগৎকে জানার সুযোগ করে
দেওয়ার! শুরু হয়ে গেল নাচ।