পর্ব-১
তা বেশ কয়েকমাস আগের কথা, সবে রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন
করা হয়েছে
পাড়ায়-পাড়ায়, মোড়ে-মোড়ে, ট্রাফিক সিগন্যাল-এ। কবিগুরুর সৃষ্টির শতবিভক্ত রূপ ক্রমশঃ বিকৃতির আকার ধারণ করেছে। ভাগ্যিস আমার বাড়িতে টেলিভিশন নেই,
তাই অত্যাচারটা অন্তত সহ্য করতে হয়নি। তবে শুনেছি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী এবারে শাহরুখ খানকে রবীন্দ্রনাথ সাজিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন!!! তা আমি যে রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে বড় ফ্যান এরকম দাবী আমি কখনই করবো না
(অত লেখা সব এখনো পড়ে ওঠার সুযোগই হয়নি)। তবে আমার মা-এর অতিরিক্ত রবীন্দ্র-ভক্তির জন্য ছোটবেলা থেকে ওঁর অনেক প্রচলিত-অপ্রচলিত সৃষ্টির সাথেই মোটামুটি পরিচিত আছি।
তা হয়েছে কি,
পাশের ক্লাবের মাইকে “ক্লান্তি আমার ক্ষমা কারো প্রভু” শুনতে শুনতে আর প্রায় আট-দশ হাজার (সঠিক জানা নেই)
গান, কবিতা, ছোট গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস ইত্যাদি ইত্যাদি লেখার সময় বাদ দিলে খাওয়া-দাওয়া-ঘুমের জন্য ওঁর ঠিক কতটা সময় বাঁচতো সেই হিসেব করতে করতে নিজেই ক্লান্ত হয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেই বুঝতে পারিনি... ঘুম ভাঙ্গতে দেখি চতুর্দিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, বুঝলাম নিশ্চয় লোডশেডিং হয়েছে। হাতড়ে হাতড়ে বারান্দায় পৌঁছে যা দেখি তাতে নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছিল না!!!
অনেক দিন থেকেই আমার বাড়িতে ঝুলবারান্দার খুব শখ;
কিন্তু ভাড়ার ফ্ল্যাটে থেকে সে শখ মিটল কই। চোখ কচলে ভালো করে দেখলাম সত্যিই এক লম্বা ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি,
শুধু তাই নয় সেটা আমাদের 'আপন-নীড়' ফ্ল্যাট বাড়িও নয়-পুরনো জমিদার আমলের কোনো বাড়ি। চাঁদের আলোয় এটুকু বোঝা যাচ্ছিল যে কোনো বনেদী পরিবারের বাসস্থল হবে সেটা। পূবদিকের একটা ঘর থেকে যেন ক্ষীণ একটা আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে মনে হলো। আমিও গুটি গুটি পায়ে সেদিকে পাড়ি দিলাম এই আশা নিয়ে যে আমার হঠাৎ এই জমিদার বাড়িতে হাজির হবার কোন না কোন কারণ ঠিক জানতে পারব।
ঘরের বাইরে থেকে দেখে মনে হলো ওটা কারো পড়ার ঘর। বই-এ ঠাসা আলমারি ও তাক পেরিয়ে চোখ থমকালো- একটা লন্ঠন আর তার সামনে বসে থাকা এক বৃদ্ধকে দেখে। খোলা খাতা কলম সামনে রেখে নিবিষ্টমনে ভাবছেন আর সুদীর্ঘ দাড়িতে হাত বোলাচ্ছেন। আমি একটু এগিয়ে যেতে উনি মুখ তুলে তাকালেন আমার দিকে- এ কি? এ যে দাড়িদাদু!!!
এই অভূতপূর্ব আকস্মিক ঘটনায় আমার যতটা হতভম্ব হবার কথা তার কণামাত্র না হয়ে আমি খুবই স্মার্টলি এগিয়ে ওঁকে জিজ্ঞেস করলাম- ‘আপনাকে খুব চিন্তিত দেখছি, কোনো সমস্যা থাকলে আমাকে বলতে পারেন আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করব’। শুনে ওঁর চোখ দুটো হেসে উঠলো, বললেন- 'সে তো বলতেই পারি, কিন্তু সেই সমাধান কি তুমি দিতে পারবে!!! সমস্যা তৈরি হয়েছে এইখানে'- বলে আঙ্গুল রাখলেন সামনের খাতার ওপর। আমি ঝুঁকে পরে দেখলাম প্রায় একপাতা ধরে একটা কবিতা লেখার পর উনি আটকে গেছেন শেষের দিকে, প্রচুর কাটাকাটি সেখানে (সেখান থেকে আরো কিছু মুখের আদল!)। কবিতাটা পড়তে পড়তে আমার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল; মনে পড়ে গেল ছোটবেলায় মা-বাবার কোনো বন্ধু বাড়িতে এলেই মা আমাকে বলতেন আবৃত্তি করে শোনাতে- আমার শেখা প্রথম কবিতা চোখের সামনে,
এই অভূতপূর্ব আকস্মিক ঘটনায় আমার যতটা হতভম্ব হবার কথা তার কণামাত্র না হয়ে আমি খুবই স্মার্টলি এগিয়ে ওঁকে জিজ্ঞেস করলাম- ‘আপনাকে খুব চিন্তিত দেখছি, কোনো সমস্যা থাকলে আমাকে বলতে পারেন আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করব’। শুনে ওঁর চোখ দুটো হেসে উঠলো, বললেন- 'সে তো বলতেই পারি, কিন্তু সেই সমাধান কি তুমি দিতে পারবে!!! সমস্যা তৈরি হয়েছে এইখানে'- বলে আঙ্গুল রাখলেন সামনের খাতার ওপর। আমি ঝুঁকে পরে দেখলাম প্রায় একপাতা ধরে একটা কবিতা লেখার পর উনি আটকে গেছেন শেষের দিকে, প্রচুর কাটাকাটি সেখানে (সেখান থেকে আরো কিছু মুখের আদল!)। কবিতাটা পড়তে পড়তে আমার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল; মনে পড়ে গেল ছোটবেলায় মা-বাবার কোনো বন্ধু বাড়িতে এলেই মা আমাকে বলতেন আবৃত্তি করে শোনাতে- আমার শেখা প্রথম কবিতা চোখের সামনে,
"আজি এ প্রভাতে রবির কর
/কেমনে
পশিল প্রাণের পর,/............"
তারপরে আর কি! আমি আওড়ে গেলাম-
"থর থর করি কাঁপিছে ভূধর, / শিলা রাশি রাশি পড়িছে খসে," থেকে "ওরে আজ কী গান গেয়েছে পাখি,
এসেছে রবির কর।।"
বাকিটা ইতিহাস - বলাই বাহুল্য লাইন গুলো ওঁর ভালোই মনে ধরেছিল।
তাই যারা এই গল্পটা পড়ছেন এবং অবশ্যই আগে
'নির্ঝরের
স্বপ্নভঙ্গ' পড়েছেন, তাদের মনে যদি এই প্রশ্ন জেগে থাকে যে কবিতাটির আসল সৃষ্টিকর্তা কে-
তবে আপনাদের স্বাগত জানাই আমার স্বপ্ন সিরিজে। আপনারা এতক্ষণ পড়ছিলেন পর্ব-১: 'রবীন্দ্রনাথ'।
পর্ব-২
দুর্গাপূজা আসতে আর ৭ দিন,
কাল মহালয়া। আমাদের জীবনে এখন খুশির সময়-আনন্দের সময় প্রতীক্ষার সময়। মনমেজাজ ফুরফুরে হয়ে ওঠার কথা-
নতুন জামার গন্ধ, কাশফুল, বর্ষাশেষের মেঘলা দুপুর ছাড়িয়ে রোদ্দুরের লুকোচুরি। কিন্তু আমার সময় বড্ড কঠিন যাচ্ছে। লোকজন কে যে বন্ধু আর কে যে শত্রু ঠিক বুঝতে পারছি না! কে যে কখন কার মুখোশ পরে অন্য ভেক ধরে আক্রমণ চালাবে বুঝতে পারছিনা। ফলে চেনা পরিচিত লোকজনকেও সহজে বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার আত্মরক্ষার অস্ত্র বলতে আমার প্রিয় হাতুড়িটা (থর-এর মতো বিশাল না হলেও মোটামুটি ভালই শক্তিশালী )।
বাইরে প্রচুর চেঁচামেচি হচ্ছে, চারপাশের দেওয়াল, আসবাবপত্র দেখে মনে হচ্ছে বাড়িতেই আছি,
তবু মনের সংশয় কাটে না... জানালার বাইরে থেকে পরিচিত গলায় যে আমার নাম ধরে ডাকছে সে কি সত্যি নাকি আরো একটা ফাঁদ? যাচাই করতে আমি এগিয়ে গিয়ে জানালা খুলি, মুহূর্তের মধ্যে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুটে আসে;
ভাগ্যিস শেষ মুহূর্তে জানালার সামনে থেকে খাটের কোণে সেঁধিয়ে গেছিলাম তাই এ যাত্রায় বেঁচে গেছি। তারপর সাবধানে হাতুড়িটা বের করে জানালার এপার থেকে লোকটার খুলিতে ঠিক জায়গায় মারি যাতে চিড় ধরার আওয়াজ ওঠে, সে নিস্তেজ হয়ে লুটিয়ে পরার আগেই আর একবার হাতুড়ির আলতো টোকা। এবার দু-ফাঁক হয়ে যাওয়া মাথার ভিতরটা আমি উঁকি মেরে দেখে নিই। অতঃপর প্রশান্তিতে ভরে ওঠে মন-
আরেকটি শত্রু নিকেশ।
যদিও আমার এই কাণ্ডকারখানায় অতিষ্ঠ বাড়ির লোকজন (যারা X-men দেখেনি বলে এরকম হতে পারে বলে বিশ্বাস করে না!!!)
আমার ও আমার হাতুড়ির ভয়ে তটস্থ হয়ে আছেন, কারণ আমি যখন তখন যার তার খুলিতে হাতুড়ি মেরে দেখে নিচ্ছি ভিতরটা- আসল না নকল?
পুনশ্চঃ খুলি ফাটার পর আবার জোড়াও লাগছে, তারা বোধহয় ঠিক মরে যাচ্ছে না। স্বপ্ন তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাওয়া এবং এ-সম্বন্ধে ডিটেল না থাকার জন্য দুঃখিত।