কথায় বলে, ‘চাচা, আপন প্রাণ বাঁচা’। আমার কিন্তু কথাটা খুব নিম্নমানের মনে হতো। কোনো বিপদে পড়ে শুধু আপন প্রাণ বাঁচিয়ে পরিস্থিতি থেকে পেছন ফিরে পালাবো এরকমটা কখনো ভাবিনি। কিন্তু আজ যে ঘটনার কথা বলবো, তা আমার এই আদর্শের মাথায় প্রকাণ্ড ঘা মেরেছিলো। টিভি-সংবাদপত্রে আজকাল আমরা প্রায় রোজই mob-fury দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। হয়তো অনেকেরই জীবনে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাও হয়েছে। তাঁরা জানেন, যে উত্তেজিত জনতার নির্দিষ্ট কোনো চেহারা থাকেনা বলে, মানুষের ভিড়ে অনেকেরই অন্তর্গত পশুত্বটা সহজে প্রকাশ হয়ে পড়ে। যখন দেখেছি স্কুল-কলেজ-অফিসে স্টাফদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্দী করে রেখে বিক্ষোভ প্রদর্শনের নামে নারকীয় অত্যাচার-মারধোর-প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ধ্বংস-অপমানজনক গালিগালাজ-অঙ্গভঙ্গি - তখন ভেতরটা শিউরে উঠেছে। জনতার সমবেত আক্রমণে কর্তৃপক্ষ অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন আর বাকিরা টেবিল বা ডেস্কের তলায় লুকিয়ে রেহাই পেয়েছেন বা যে কোনো উপায়ে পালিয়ে সে যাত্রা কোনওমতে বেঁচেছেন।
কল্পনায় ভাবার চেষ্টা করেছি এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে আমি কি করবো। ভেবেছি, যা হবে দেখা যাবে। যেভাবে হোক, বিপদ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমার এই ভাবনাটা সেদিন আর কল্পনার পর্যায়ে থাকলো না। কয়েকবছর আগের ঘটনা, যখন পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কার্যালয় থেকে একটি পেশাগত মিটিং সেরে বেরোচ্ছিলাম। অনেকক্ষণ ধরেই বাইরে থেকে একটা সম্মিলিত কোলাহল কানে আসছিলো। কনফারেন্স-রুমে থাকায় কিছুই বুঝিনি। মিটিং-শেষে বেরিয়ে দেখলাম, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বিল্ডিং এর সামনে প্রায় হাজার খানেক ছেলেমেয়ে। কান পাততে জানা গেলো - এঁরা বেসিক-ট্রেনিং-প্রাপ্ত বেকার ছেলেমেয়ে, যাঁরা প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন, কিন্তু প্রাইমারি-টিচার্স-ট্রেনিং-ইন্সটিটিউট উত্তীর্ণ। সে কারণে এঁদের দাবি ছিলো এঁদেরকে চাকরির নিয়োগপত্র দিতে হবে। অনেকের এমনও দাবি, যে অনেক নেতা-মন্ত্রীই নাকি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে এঁদের থেকে লাখ-লাখ টাকাও নিয়েছেন। এখন তাই তাঁরা বিক্ষোভে ‘মজা’ দেখাতে সম্মিলিত হয়েছেন আর প্রাথমিক শিক্ষা-পর্ষদের ভবন ঘেরাও করেছেন। এখন আর ভবন থেকে কাউকে বেরোতে দেওয়া হবেনা এবং ‘পজিটিভ রেসপন্স’ না পেলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলন (অর্থাৎ ভাঙচুর, মারধোর, অগ্নিসংযোগ) শুরু করবেন।
Click On pics for full-screen view.
1.“The Yell” 2015
Acrylic and spray paint on craft paper.
Collage on newspaper.
Dimensions: 27 X 43 in
পিতামহ,
তোমার ক্রোধাগ্নি ছড়িয়ে পড়ুক
নক্ষত্রের শিরা উপশিরায়।
মহাকাশের নাভিমূলে ফুটে উঠুক
একান্নটি একান্নবর্তী সংসারের পৃথিবী।
প্রথম পঞ্চাশটিতে থাক শান্ত শ্বেত শুভ্র মনুষ্যকুল।
আর একান্নতম গ্রহটি হোক কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধস্থল।
কুরু বা পাণ্ডব বুঝিনা, আমি শুধু
সেই জীবন যুদ্ধের সৈনিক হতে চাই।
শিলুমাসির গল্প এখনও মনে পড়ে যখন ঘরে থাকতে ইচ্ছে করেনা, তখন।
আমার যখন বছর পাঁচেক বয়স তখন শিলুমাসি খুব আসত আমাদের বাসায়। আমাকে তেল মাখিয়ে চান করিয়ে, খাইয়ে দাইয়ে তারপর যেত। আর এর ফাঁকে ঝুড়ি ঝুড়ি গপ্পো শুনতাম আমি, মাসির মুখে। মাসি আমাদের কেমন একটা দুঃসম্পর্কের আত্মীয় হয়। নানান গপ্পের মধ্যে একটি দু’টি আমার আজও মনে পড়লে গা কেমন শিউরে ওঠে...
যাযাবর এসেছিলো সেবার শীতে শিলুমাসিদের গ্রামে।
"যাযাবর কি মাসি?"
"ঘুরে বেড়ায় তারা দেশে বিদেশে, কখনো এক জায়গায় থাকে না, অনেক রকম জাদুটোনা জানে তারা..."
অল্পে আমার কৌতূহল ক্ষান্ত হয় না, মাসিও আমার সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে থাকে।
সন্ধ্যে বেলা তারা নানা রকম খেলা দেখাতো, পয়সাও পেত গ্রামের লোকদের কাছ থেকে। কামু খেলা দেখতে যেত প্রায়ই, দিনের বেলাতেও মাঝে মধ্যেই চলে যেত, ওই দলের লোকেদের সাথে গিয়ে ভিড়তো।
ঘুম তখন ভাঙতে যাবে। খুব অল্প সময়ের জন্যে, তখনও আমি ঘুমের মধ্যে, মনে হলো কেউ খাটটা খুব জোরে নাড়াচ্ছে; আমি একটা খুব অদ্ভুত গোঙানির মত শব্দ করে জেগে উঠি, ধড়মড় করে। আচমকা খুব নড়ছে ঘরটা। প্রথম কয়েক মুহূর্তের জন্যে কিছু বুঝে উঠতে পারিনা যে কি হচ্ছে। অসময়ে ঘুম ভাঙলে আমার চোখ খুব জ্বলে আর জল বের হয়, দেখতে অসুবিধা হয়। বিছানা থেকে উঠে মেঝেতে পা দিয়ে যখন দাঁড়াতে যাই তখন জোরালো ধাক্কার মতো পড়ে যাই। যখন প্রথম সাঁতার শিখেছিলাম, তখনো পায়ের তলায় যেরকম একটা অনুভূতি হয়েছিলো, যেটা ঠিক মাটির মতো নয়, সেরকম একটা ভূমিহীন অনুভূতি হলো। আমি কখনও ভুত দেখিনি, তবে মাঝেমাঝে যখন চেনা অন্ধকার কোনাটায় একটা অচেনা বস্তুর অবয়ব কয়েক মুহূর্তের জন্যে দেখি, তখন এক ধাক্কায় একটা ভয় আসে; মাথার ভিতর এক ধাক্কায় রক্ত আসে, গরম করে দেয়, বুকের ভিতর ধাক্কাটা খুব জোর শুরু হয়, হাত-পা বেশ অকেজো অসাড় হয়ে আসে। সেটাও কেটে যায়, যখন দেখি অচেনা বস্তুটা আসলে একটা চাদর বা অন্যকিছু। অল্প সময়ের জন্যে ওরকম একটা হঠাৎ ভয় এলো। কিছুক্ষণ মেঝেতে ওইভাবেই পড়ে রইলাম। আমি যে শহরে থাকি, সেখানে খুব বৃষ্টি হয়, আর দূষণটাও বেশি, তাই