নারায়ণ দেবনাথ
না, ঠিক ঠিক বলতে গেলে...এ বাড়ির পিছনে যে বাড়ি আছে, টিনের চালার বাড়ি - আগে আমরা ওই বাড়িতেই থাকতাম।
- আচ্ছা...
এই বাড়িতে ভাড়া থাকতাম - আমি জানিনা তবে শুনেছি এই বাড়িতে ভাড়া থাকতাম। তখন একতলা একটা বাড়ি ছিল এটা। পাশে ছিল ফাঁকা একটা জায়গা - তখন তো অজস্র জায়গা ফাঁকা ছিল। তখন আমার বাবা আর কাকা ওই জমিটা লিজ নিয়ে টিনের চালা দিয়ে বাড়ি করেছিলেন। -
জ্ঞান হবার পর থেকে আমি ওই বাড়িটাই দেখছি। তারপর ওই বাড়ি থেকে এই বাড়িতে চলে এলাম, আর আমার জ্যাঠামশাই ওই বাড়িতে থাকতেন। -
- আচ্ছা...
হ্যাঁ, আমাদের বাংলাদেশেও বাড়ি ছিল। -
বাংলাদেশের বিক্রমপুর বলে - ঢাকা বিক্রমপুর - মুনশিগঞ্জ সাবডিভিশন... ওই ওর ভেতরেই একটা গ্রাম ছিল - "বেতকা"। সেই সেখানে আমাদের বাড়ি ছিল। -
গেছি। বেড়াতে গেছি। -
হ্যাঁ। সেখানে থাকতেন আমার জ্যাঠামশাই। তা বছরে একবার বেড়াতে যেতাম। সেখানে থাকতাম ১৫ দিন কি ১ মাস। তারপর চলে আসতাম। -
স্বাধীনতার আগে। তখন তো ব্রিটিশ আমল (হাসি)... এইখান থেকে, ফেয়ারলি প্লেস থেকে টিকিট কাটা হত। হ্যারিসন রোড ধরে যেতে চিৎপুর রোড ক্রশ করেছে তার মুখে যে রেলওয়ে ভবন - ওইখান থেকে টিকিট পাওয়া যেত। আমি একবার ওখান থেকে টিকিট কেটে ছিলাম। -
- আচ্ছা...
তার আগে যখন বয়স কম ছিল বাড়ির বড়রা টিকিট কাটতেন। বাবা অথবা কাকা গিয়ে... শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে গোয়ালন্দ (হাসি)
হ্যাঁ, ওখান থেকে স্টিমার। ট্রেন টাইমের সাথে থাকত - মানে যে যেখানে যাবে। কতগুলো জায়গার নাম এখনো মনে আছে। ভাগ্যকুল(?)... তালপাশা... (একটু ভেবে) বিভিন্ন জায়গা - মানে যে যেখানে যাবে আর কি... আমরাও হয়তো কোনও সময় ভাগ্যকুল পর্যন্ত আবার হয়তো তালপাশা বলে একটা জায়গা, সেখানে গিয়ে তারপর ঐখান থেকে আবার নৌকা। কারণ আর তো কোনও যাতায়াত ব্যবস্থা নেই। -
- আচ্ছা...
নৌকা গিয়ে একেবারে বাড়ির ঘাটে ভিড়ত।
দারুণ...
এখান থেকে ৯টায় ট্রেন ছাড়ত, পরদিন এই ৪টে-৫টার সময় বাড়ি পৌঁছে যেতাম। -
আর ঐ যে বললাম বর্ষার সময় নৌকা - মানে বাড়ি পৌঁছিয়ে কোথাও যেতে হলে বর্ষাকালে নৌকা নইলে হাঁটা পথ। উঁচু আলের ওপর দিয়ে হাঁটা।
স্বাধীনতার পরে(একটু ভেবে)... নাঃ, স্বাধীনতার পর আর যাইনি (হাসি)
হ্যাঁ তা করেছি। মানে ওইসব গুলো আমার খুব ছিল। এখনকার যে গঙ্গা, তা তো পলি পড়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে... চড়া পড়ে গেছে। তখন তো গঙ্গা অনেক চওড়া ছিল।
বাংলা কমিকসের শুরু বলা
চলে নারায়ণ দেবনাথের হাত দিয়ে। নব্বই ছোঁয়া প্রাণখোলা মানুষটির সাথে মনখোলা আলাপ আলোচনা হয়েছিল দীর্ঘ সময় ধরে। আজ সেই আলোচনার ১ম পর্ব।
- আচ্ছা, আপনার কাজের শুরু থেকে এই যে দীর্ঘ দিন কাজ করে চলেছেন সেটা কি এই টেবিলে বসেই?
না, ঠিক ঠিক বলতে গেলে...এ বাড়ির পিছনে যে বাড়ি আছে, টিনের চালার বাড়ি - আগে আমরা ওই বাড়িতেই থাকতাম।
- আচ্ছা...
এই বাড়িতে ভাড়া থাকতাম - আমি জানিনা তবে শুনেছি এই বাড়িতে ভাড়া থাকতাম। তখন একতলা একটা বাড়ি ছিল এটা। পাশে ছিল ফাঁকা একটা জায়গা - তখন তো অজস্র জায়গা ফাঁকা ছিল। তখন আমার বাবা আর কাকা ওই জমিটা লিজ নিয়ে টিনের চালা দিয়ে বাড়ি করেছিলেন। -
- জ্ঞান হবার পর থেকে আপনি ওই বাড়িটাই দেখছেন?
জ্ঞান হবার পর থেকে আমি ওই বাড়িটাই দেখছি। তারপর ওই বাড়ি থেকে এই বাড়িতে চলে এলাম, আর আমার জ্যাঠামশাই ওই বাড়িতে থাকতেন। -
- আচ্ছা...
হ্যাঁ, আমাদের বাংলাদেশেও বাড়ি ছিল। -
- বাংলাদেশের কোন জায়গায়?
বাংলাদেশের বিক্রমপুর বলে - ঢাকা বিক্রমপুর - মুনশিগঞ্জ সাবডিভিশন... ওই ওর ভেতরেই একটা গ্রাম ছিল - "বেতকা"। সেই সেখানে আমাদের বাড়ি ছিল। -
-আচ্ছা। কিন্তু সেখানে আপনি...
গেছি। বেড়াতে গেছি। -
- বেড়াতে গেছেন... কিন্তু আজন্ম আপনি এই বাড়িতেই?
হ্যাঁ। সেখানে থাকতেন আমার জ্যাঠামশাই। তা বছরে একবার বেড়াতে যেতাম। সেখানে থাকতাম ১৫ দিন কি ১ মাস। তারপর চলে আসতাম। -
- স্বাধীনতার আগে না পরের কথা বলছেন?
স্বাধীনতার আগে। তখন তো ব্রিটিশ আমল (হাসি)... এইখান থেকে, ফেয়ারলি প্লেস থেকে টিকিট কাটা হত। হ্যারিসন রোড ধরে যেতে চিৎপুর রোড ক্রশ করেছে তার মুখে যে রেলওয়ে ভবন - ওইখান থেকে টিকিট পাওয়া যেত। আমি একবার ওখান থেকে টিকিট কেটে ছিলাম। -
- আচ্ছা...
তার আগে যখন বয়স কম ছিল বাড়ির বড়রা টিকিট কাটতেন। বাবা অথবা কাকা গিয়ে... শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে গোয়ালন্দ (হাসি)
- স্টিমার সেখান থেকে?
হ্যাঁ, ওখান থেকে স্টিমার। ট্রেন টাইমের সাথে থাকত - মানে যে যেখানে যাবে। কতগুলো জায়গার নাম এখনো মনে আছে। ভাগ্যকুল(?)... তালপাশা... (একটু ভেবে) বিভিন্ন জায়গা - মানে যে যেখানে যাবে আর কি... আমরাও হয়তো কোনও সময় ভাগ্যকুল পর্যন্ত আবার হয়তো তালপাশা বলে একটা জায়গা, সেখানে গিয়ে তারপর ঐখান থেকে আবার নৌকা। কারণ আর তো কোনও যাতায়াত ব্যবস্থা নেই। -
- আচ্ছা...
নৌকা গিয়ে একেবারে বাড়ির ঘাটে ভিড়ত।
দারুণ...
এখান থেকে ৯টায় ট্রেন ছাড়ত, পরদিন এই ৪টে-৫টার সময় বাড়ি পৌঁছে যেতাম। -
আর ঐ যে বললাম বর্ষার সময় নৌকা - মানে বাড়ি পৌঁছিয়ে কোথাও যেতে হলে বর্ষাকালে নৌকা নইলে হাঁটা পথ। উঁচু আলের ওপর দিয়ে হাঁটা।
- পার্টিশনের পরে যখন পাকিস্তান হয়ে গেল আর গেছেন... মানে স্বাধীনতার পরে?
স্বাধীনতার পরে(একটু ভেবে)... নাঃ, স্বাধীনতার পর আর যাইনি (হাসি)
- আচ্ছা, আপনি তো ছোটবেলায় খেলাধুলা করেছেন নিশ্চয়ই? গঙ্গায় সাঁতার কাটতেন শুনেছি...
- হ্যাঁ
আমি আমার দু তিনজন বন্ধুর সাথে স্নান করতে যেতাম। গঙ্গাস্নান রোজের ব্যাপার হয়ে গিয়েছিল একরকম। যেতাম আর সাঁতার কাটতে কাটতে - মানে প্রায় ঐ প্রান্তের কাছাকাছি বয়ার মধ্যে গিয়ে উঠে পড়তাম। আর কিছুটা গেলেই ওপারে চলে যাব এমন... এই রকম কেটেছে আর কি সেই সময়।
- আমরা তো ছোটবেলায় আপনার ছবি আঁকা বই, আপনার কমিকস দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। আপনি ছোটবেলায় যে পত্র পত্রিকাগুলো হাতে পেতেন তাতে কারা ছবি আঁকতেন? - বা কি ধরণের পত্রিকা তখন পাওয়া যেত?
আগে যে পত্রিকা ছিল - মৌচাক... মৌচাক ছিল - আর একটা পত্রিকা সেই সময় ছোটদের খুব নামী পত্রিকা ছিল, শিশু-সাথি
- হ্যাঁ শিশু-সাথি
দু’একটা সংখ্যা হয়তো হাতে আসত। তখন দেখতাম বা পড়তাম - শিশু-সাথি। তারপর আস্তে আস্তে বয়স একটু বাড়ল - তখন পঞ্চাশের দশক...
- আচ্ছা।
তখন শুনলাম যে একটা পত্রিকা বেরিয়েছে ছোটদের - সেটা হচ্ছে শুকতারা। -
-আচ্ছা আচ্ছা
কানে এলো শুকতারা বলে একটা পত্রিকা বেরিয়েছে। তখনও চোখে দেখিনি। সেই সময় আমি আর্ট
প্রতুল চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় |
- আচ্ছা।
তখনকার দিনের ওঁদের প্রধান ছিলেন সুবোধ চন্দ্র মজুমদার। তিনিই তখন দেব সাহিত্য কুটিরের প্রধান। ওঁরা চার ভাই ছিলেন। বড় ভাইয়ের নাম ছিল... (একটু ভেবে)... প্রবোধ চন্দ্র মজুমদার। দৃষ্টিহীন বলে একজন লেখক ছিলেন...
- মধুসূদন মজুমদার...
হ্যাঁ হ্যাঁ! মধুসূদন মজুমদার হচ্ছেন বড় ভাইয়ের ছেলে
- আচ্ছা উনি কি জন্ম থেকেই চোখে দেখতে পেতেন না?
আমার যতদূর মনে হয়, বসন্ত হয়েছিল ওনার। ওই রোগেই ওঁর চোখ নষ্ট হয়ে যায়... আর সেই রোগেই নাকি ওঁর বাবাও মারা যান। -
- আচ্ছা।
ওনার পরের ভাই হলেন সুবোধ চন্দ্র মজুমদার। ওনাদের ব্যবসা অনেক আগেই ছিল, কিন্তু ব্যবসা খুব বড় হয়ে উঠেছিল ওই সুবোধবাবুর আমলে। নানা রকমের বই, ছোটদের পত্রিকা, তারপর পূজাবার্ষিকী...
- হ্যাঁ পূজাবার্ষিকী, মনে হয় মহালয়ার দিন একটা করে বার হত
হ্যাঁ মহালয়ার আগে বের হত। তখন শুকতারা মাসিক পত্রিকা হিসাবে বের হত। শুকতারার কোনও পুজো সংখ্যা বের হত না। সেই তখন পরিচয় হল সুবোধবাবুর সঙ্গে - কাজ শুরু হল, ছবি আঁকার কাজ। আগে যিনি সম্পাদক ছিলেন, মানে সুবোধবাবু যখন আমাকে পাঠালেন শুকতারা সম্পাদকের কাছে - তিনি আমাকে একটা ছবি আঁকতে দিলেন। মানে একটা স্ক্রিপ্ট বার করে নিজে পড়ে আমাকে খালি লিখে দিলেন - এই এই আপনি আঁকবেন। -
- আচ্ছা।
তাই করলাম। বেশ কিছুদিন ওই ভাবে করবার পর, তারপর যিনি সম্পাদক হলেন - আগে যিনি ছিলেন একজন শিশু সাহিত্যিক তিনি অবসর নিলেন, তখন ওনাদের ছোট ভাই ক্ষীরোদবাবু দেখাশোনা করতে লাগলেন সম্পাদনার কাজকর্ম। তিনি আমাকে স্ক্রিপ্ট দিয়ে দিতেন... বলতেন পড়ে নিয়ে যেখানে যেখানে আপনার মনে হবে, ছবি করে দেবেন।
*এই সাক্ষাৎকার আগে লেখকের নিজের ব্লগ 'বই আর কমিকস'-এ প্রকাশিত। এখানে আবার লেখকের অনুমতিক্রমে প্রকাশ করা হল। পুরনো বই আর কমিকস নিয়ে তৈরি এই ব্লগ আমাদের খুব প্রিয়। আপনারাও পড়ে দেখুন।
(পরের পর্ব আগামীকাল)...