<< আগের পর্ব
-- ঠিক...
যাই হোক, এইভাবে চলতে চলতে তারপরে আমার হাতে একটা দুটো করে বার্ষিকীর ছবি করতে দেওয়া আরম্ভ হল। তারপর আঁকতে আঁকতে ওই যে ক্ষীরোদদার নাম করলাম, ক্ষীরোদদাই একসময় আমাকে অফারটা দিলেন যে, আপনি কি ওই ছবিতে গল্প আঁকবেন? ছোটদের জন্যে?
- বেশির ভাগ কাজই মনে হয়
সূর্য রায় করতেন তখন...
-- হ্যাঁ বেশির ভাগ কাজটাই উনিই করতেন... তা দীনেশবাবু তখন বললেন, ‘গল্পটা তো বেরবে, এদিকে সময়ও নেই। বই বেরোবে হয়তো কুড়ি-বাইশ দিন বাকি। কি করে কি হবে? সেই জন্যে আমি আপনাকে বলছি- এটা আপনিই করুন।’
বাংলা কমিকসের শুরু বলা
চলে নারায়ণ দেবনাথের হাত দিয়ে। নব্বই ছোঁয়া প্রাণখোলা মানুষটির সাথে মনখোলা আলাপ আলোচনা হয়েছিল দীর্ঘ সময় ধরে। আজ সেই আলোচনার ২য় পর্ব।
নারায়ণ: ...তখন শুকতারা মাসিক
পত্রিকা হিসাবে বের হত। কোনও পুজো সংখ্যা বের হত না। সেই তখন পরিচয় হল সুবোধবাবুর সঙ্গে - কাজ শুরু হল, ছবি আঁকার কাজ। আগে যিনি সম্পাদক ছিলেন, মানে সুবোধবাবু যখন আমাকে পাঠালেন
শুকতারা সম্পাদকের কাছে, তিনি আমাকে একটা ছবি আঁকতে দিলেন - মানে একটা স্ক্রিপ্ট
বার করে নিজে পড়ে আমাকে খালি লিখে দিলেন এই এই আপনি আঁকবেন।
- আচ্ছা।
- আচ্ছা।
-- তাই করলাম। বেশ কিছুদিন ওই ভাবে করবার পর, তারপর যিনি সম্পাদক হলেন আগে
যিনি
ছিলেন একজন শিশু সাহিত্যিক তিনি অবসর নিলেন, তখন ওনাদের ছোট ভাই ক্ষীরোদবাবু দেখাশোনা করতে লাগলেন সম্পাদনার কাজকর্ম। তিনি
আমাকে স্ক্রিপ্ট দিয়ে দিতেন বলতেন পড়ে নিয়ে যেখানে যেখানে আপনার মনে হবে, ছবি করে দেবেন।
৫০-র দশকের পূজাবার্ষিকীর শিল্পী তালিকা। |
- পড়ে নিয়ে ছবি করতে
বললেন...
-- হ্যাঁ, এই ভাবে চলতে চলতে তারপরে (একটু ভেবে)... আগে, কখনও পূজাবার্ষিকীর ছবি আঁকতে দিতেন না।
-- হ্যাঁ, এই ভাবে চলতে চলতে তারপরে (একটু ভেবে)... আগে, কখনও পূজাবার্ষিকীর ছবি আঁকতে দিতেন না।
- আচ্ছা?
-- হ্যাঁ, ওগুলো আঁকতেন সব
প্রতুলবাবু আর...
- প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়?
- প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়?
-- হ্যাঁ। তখনকার নাম করা
যাঁরা...
- বলাই বন্ধু রায় বলে
একজন ছিলেন...
-- হ্যাঁ। তারপর শৈল চক্রবর্তী...
-- হ্যাঁ। তারপর শৈল চক্রবর্তী...
- হ্যাঁ হ্যাঁ! শিবরাম
চক্রবর্তীর গল্পের কার্টুনিস্ট... শিবরামের
গল্প হলেই ওই শৈল চক্রবর্তীর ছবি।
শৈল চক্রবর্তীর ছবি
|
যাই হোক, এইভাবে চলতে চলতে তারপরে আমার হাতে একটা দুটো করে বার্ষিকীর ছবি করতে দেওয়া আরম্ভ হল। তারপর আঁকতে আঁকতে ওই যে ক্ষীরোদদার নাম করলাম, ক্ষীরোদদাই একসময় আমাকে অফারটা দিলেন যে, আপনি কি ওই ছবিতে গল্প আঁকবেন? ছোটদের জন্যে?
তখন আমি বললাম যে,
হ্যাঁ... (হাসি) তার কারণ হচ্ছে সেই সময় মানে যখন আমার কৈশোর ছেলেবেলায়
এখানে আমাদের একটা গয়নার দোকান ছিল।
ওইখানে একটা রক ছিল, সেখানে আমি বসে থাকতাম। তখন এত লোকজন নেই রাস্তায় - ফাঁকা ফাঁকা রাস্তা সব - তখন এত লোক কোথায়?
ওইখানে একটা রক ছিল, সেখানে আমি বসে থাকতাম। তখন এত লোকজন নেই রাস্তায় - ফাঁকা ফাঁকা রাস্তা সব - তখন এত লোক কোথায়?
- হ্যাঁ তখন তো ফাঁকাই...
-- আমার বয়সী ছেলেরা সব হয়তো ৫-৬ জন জমায়েত হয়ে খেলাধুলা করতো...
-- আমার বয়সী ছেলেরা সব হয়তো ৫-৬ জন জমায়েত হয়ে খেলাধুলা করতো...
-- তখন কতো হবে... হয়তো... (একটু ভেবে) বছর ১২-১৩ হবে...
- আচ্ছা...
-- ওখানে সব খেলাধুলা করতো। এই এর পেছনে লাগত ওর পেছনে লাগত - এইরকম যা সব হয় আর কি। এই গুলো সব দেখতাম আর মজা লাগতো। তা আমাকে যখন পরে ক্ষীরোদদা ওই কথাটা বললেন, তখন আমার সেই ঘটনা গুলো মনে এলো। তখন আমি ওই ঘটনা গুলোকে মানে গল্পের মতো করে সাজিয়ে ছবিতে গল্প করে দিয়ে দিলাম। ছাপা শুরু হল...
-- ওখানে সব খেলাধুলা করতো। এই এর পেছনে লাগত ওর পেছনে লাগত - এইরকম যা সব হয় আর কি। এই গুলো সব দেখতাম আর মজা লাগতো। তা আমাকে যখন পরে ক্ষীরোদদা ওই কথাটা বললেন, তখন আমার সেই ঘটনা গুলো মনে এলো। তখন আমি ওই ঘটনা গুলোকে মানে গল্পের মতো করে সাজিয়ে ছবিতে গল্প করে দিয়ে দিলাম। ছাপা শুরু হল...
- ইতিহাস তৈরি হয়ে গেল... তাহলে ওইটা হল হাঁদা
ভোঁদা...
-- হ্যাঁ, হাঁদা ভোঁদা। তা ওটা চলতে লাগল...
-- হ্যাঁ, হাঁদা ভোঁদা। তা ওটা চলতে লাগল...
- আচ্ছা
-- ওই ভাবে ওটা বছর খানেক চলার পর আমাকে আবার ওই ক্ষীরোদবাবুই বললেন যে, ওটা তো ভালই চলছে। তা আর একটা যদি করতে পারেন ওই রকম, তাহলে সেটাকে আমরা দুটো রঙে ছাপবো।
-- ওই ভাবে ওটা বছর খানেক চলার পর আমাকে আবার ওই ক্ষীরোদবাবুই বললেন যে, ওটা তো ভালই চলছে। তা আর একটা যদি করতে পারেন ওই রকম, তাহলে সেটাকে আমরা দুটো রঙে ছাপবো।
তা আমি বললাম যে ঠিক আছে
চেষ্টা করবো। তারপর বাড়িতে এসে ভাবতে লাগলাম। তা ভাবতে ভাবতে নামটা এসে
গেল। তারপর ওইটা নিয়েই এটা ওটা করতে করতে যা হোক খাড়া হল একরকম - সেইটেই দিলাম। যথারীতি ছাপতে শুরু করলো...
- দা--রু--ণ হল...
-- পরে যখন আমাদের সাথে পূর্বপাকিস্তানের যুদ্ধ বাঁধল, সেই সময় আমাকে ক্ষীরোদবাবু বললেন নারায়ণ বাবু একটা কাজ করুন - বাঁটুলকে ফিল্ডে নামিয়ে দিন।
-- পরে যখন আমাদের সাথে পূর্বপাকিস্তানের যুদ্ধ বাঁধল, সেই সময় আমাকে ক্ষীরোদবাবু বললেন নারায়ণ বাবু একটা কাজ করুন - বাঁটুলকে ফিল্ডে নামিয়ে দিন।
- হ্যাঁ হ্যাঁ... তারপর
বাঁটুল যেসব অসাধ্য সাধন করে এলো...
-- তা আমি তখন বললাম, তা তো নামাব, তা, এ নিয়ে কোনও গণ্ডগোল হবে না তো - কারণ একটা দেশের বিরুদ্ধে...
-- তা আমি তখন বললাম, তা তো নামাব, তা, এ নিয়ে কোনও গণ্ডগোল হবে না তো - কারণ একটা দেশের বিরুদ্ধে...
উনি বললেন না না - এখন তো যুদ্ধ চলছে - এখন আপনি যা খুশী করতে পারেন। তখন আমি যুদ্ধে বাঁটুলকে
নামিয়ে দিলাম। প্লেন নামানো, ওদের ট্যাঙ্ক নিয়ে ওদেরই তাড়া করা, ফু দিয়ে
গোলা উড়িয়ে দেওয়া - এইসব কাণ্ডকারখানা। তখন আস্তে আস্তে দেখা গেল যে লোকের মনে
ধরেছে...
- হ্যাঁ, মনে ধরেছে তো
বটেই।
-- তারপরে...
-- তারপরে...
- তারপরে ৭১ সালে যখন
বাংলাদেশ পাকিস্তানের লড়াই হল তখন আপনি আবার বাঁটুলকে পাঠিয়ে দিলেন...
-- হ্যাঁ। মানে যখন যা হয়েছে সেইরকম করে আরকি ওই রাজাকারদের সাথে লড়াই... তারপর
-- হ্যাঁ। মানে যখন যা হয়েছে সেইরকম করে আরকি ওই রাজাকারদের সাথে লড়াই... তারপর
- আচ্ছা নণ্টে-ফন্টে বোধহয় বাঁটুলের বেশ কিছু পরে শুরু হল?
-- তারপরে নণ্টে-ফন্টে শুরু হল। নণ্টে-ফন্টে শুরুর একটা ঘটনা আছে। সেটা হচ্ছে যে, পত্রিকা কিশোর ভারতী...
-- তারপরে নণ্টে-ফন্টে শুরু হল। নণ্টে-ফন্টে শুরুর একটা ঘটনা আছে। সেটা হচ্ছে যে, পত্রিকা কিশোর ভারতী...
- দীনেশ চট্টোপাধ্যায়...
-- দীনেশ চট্টোপাধ্যায়। উনি পত্রিকা বার করেছেন - কিশোর ভারতী। মানে বেরিয়েছে এটা আমার জানা ছিল না। আমি জানতাম না আমার কাছে আসেওনি কোনও কপি। তা হঠাৎ একদিন এক ভদ্রলোক - তিনিও শিশু সাহিত্যিক - আমাকে টেলিফোন করে বললেন, 'নারায়ণবাবু, আপনি তো কলেজ স্ট্রীট আসেন?' তখন তো আমি কলেজ স্ট্রীট যাতায়াত করি...
-- দীনেশ চট্টোপাধ্যায়। উনি পত্রিকা বার করেছেন - কিশোর ভারতী। মানে বেরিয়েছে এটা আমার জানা ছিল না। আমি জানতাম না আমার কাছে আসেওনি কোনও কপি। তা হঠাৎ একদিন এক ভদ্রলোক - তিনিও শিশু সাহিত্যিক - আমাকে টেলিফোন করে বললেন, 'নারায়ণবাবু, আপনি তো কলেজ স্ট্রীট আসেন?' তখন তো আমি কলেজ স্ট্রীট যাতায়াত করি...
- আচ্ছা...
-- তিনি বললেন, 'আপনার সঙ্গে দীনেশবাবু কথা বলতে চান। আপনাকে আমি নিয়ে যাব।' তা গেলাম একদিন...
-- তিনি বললেন, 'আপনার সঙ্গে দীনেশবাবু কথা বলতে চান। আপনাকে আমি নিয়ে যাব।' তা গেলাম একদিন...
- তাঁর নামটা মনে আছে
আপনার?
-- যিনি নিয়ে গিয়েছিলেন...?
- হ্যাঁ হ্যাঁ...?
-- হ্যাঁ, রবিদাস সাহারায়।
-- হ্যাঁ, রবিদাস সাহারায়।
- আচ্ছা... রবিদাস
সাহারায়।
-- ওই রবিদাসবাবুই আমাকে নিয়ে গেছিলেন। তা ওখানে গিয়ে ওনাদের একটা প্রেস ছিল। প্রেসটা কি... (একটু ভেবে) কি যেন নামে একটা প্রেস ছিল... যাই হোক তা উনি ভেতরে বসে ছিলেন মানে দীনেশবাবু, আমি যেতেই বললেন 'আসুন, আমি একটু মুশকিলে পড়ে গেছি।'
-- ওই রবিদাসবাবুই আমাকে নিয়ে গেছিলেন। তা ওখানে গিয়ে ওনাদের একটা প্রেস ছিল। প্রেসটা কি... (একটু ভেবে) কি যেন নামে একটা প্রেস ছিল... যাই হোক তা উনি ভেতরে বসে ছিলেন মানে দীনেশবাবু, আমি যেতেই বললেন 'আসুন, আমি একটু মুশকিলে পড়ে গেছি।'
ঠিক এই কথা। তা আমি বললাম, কি ব্যাপার? কিসের মুশকিল?
বললেন, 'দেখুন আমার
ছেলে'... এখন তো ছোট ছেলে ত্রিদিব আছে...
- ত্রিদিব
চট্টোপাধ্যায়...
-- হ্যাঁ, ওর বড়দা ছিল দিলীপ চট্টোপাধ্যায়। তা উনি বললেন দিলীপ তো একটা চিত্র কাহিনী লিখেছে...
-- হ্যাঁ, ওর বড়দা ছিল দিলীপ চট্টোপাধ্যায়। তা উনি বললেন দিলীপ তো একটা চিত্র কাহিনী লিখেছে...
- ব্ল্যাক ডায়মন্ডকে
নিয়ে?
-- আমার সাথে এই সব কথা হচ্ছে
তখন ২য় বর্ষ পুজো সংখ্যা। মানে পুজো সংখ্যা থেকেই শুরু পত্রিকাটা। তখন প্রেমেন
বাবু ওঁদের সঙ্গে ছিলেন। সম্পাদক ছিলেন প্রেমেনবাবু...
- প্রেমেন্দ্র মিত্র।
-- ২য় পুজো সংখ্যার সময় আমার সাথে যোগাযোগ। তা বললেন যে, ‘এই রকম লিখেছে কিন্তু ছবি আঁকবেন কে?’
-- ২য় পুজো সংখ্যার সময় আমার সাথে যোগাযোগ। তা বললেন যে, ‘এই রকম লিখেছে কিন্তু ছবি আঁকবেন কে?’
প্রথম থেকেই ওনাদের সাথে
যুক্ত ছিলেন শৈল বাবু, তারপরে...
- সূর্য রায়...
-- হ্যাঁ, সূর্য রায়। তারপর আরও সব - পরিচয় গুপ্ত - এইরকম আরও অনেক করতেন।
-- হ্যাঁ, সূর্য রায়। তারপর আরও সব - পরিচয় গুপ্ত - এইরকম আরও অনেক করতেন।
সূর্য রায়-এর আঁকা কিশোর ভারতীর
প্রচ্ছদ
|
-- হ্যাঁ বেশির ভাগ কাজটাই উনিই করতেন... তা দীনেশবাবু তখন বললেন, ‘গল্পটা তো বেরবে, এদিকে সময়ও নেই। বই বেরোবে হয়তো কুড়ি-বাইশ দিন বাকি। কি করে কি হবে? সেই জন্যে আমি আপনাকে বলছি- এটা আপনিই করুন।’
তখন আমি একটু অসুবিধাতে
পড়লাম। কারণ তখন তো এদিকে কাজ চলছে...
- পূজাবার্ষিকীর কাজ?
-- বললেন যে, আমার যদি
বিজ্ঞাপন না বেরিয়ে যেত - মানে কি কি থাকবে পূজা সংখ্যায় তার বিজ্ঞাপন বেরিয়ে গেছে - যদি না বেরতো আমার কোনও
অসুবিধা ছিল না। বিজ্ঞাপন বেরিয়ে গেছে এখন যদি না হয় - বদনাম হয়ে যাবে।
তখন গল্পটা দেখে আমি
বললাম ঠিক আছে। তারপর করে ফেললাম আরকি - মানে যতটা করা সম্ভব করে দিলাম।
-- ব্ল্যাক ডায়মন্ড-এর উপরেই
বোধহয় একটা গল্প। ঠিক এটা মনে নেই। বোধহয় ১০/১২ পৃষ্ঠার একটা হয়েছিল। তা ছাপা
হল।
- আচ্ছা...
-- পরে আমাকে আবার একদিন ডেকে বললেন, নারায়ণবাবু ওটা তো উদ্ধার হল, তা এবার যে মাসে মাসে আমাকে দিতে হবে। তা আমি তো (হেসে) তখন খুব ইয়েতে পড়ে গেলাম। মাসে মাসে কি করে দেব - কারণ ওখানে তো তখন মাসে মাসে যাচ্ছে...
-- পরে আমাকে আবার একদিন ডেকে বললেন, নারায়ণবাবু ওটা তো উদ্ধার হল, তা এবার যে মাসে মাসে আমাকে দিতে হবে। তা আমি তো (হেসে) তখন খুব ইয়েতে পড়ে গেলাম। মাসে মাসে কি করে দেব - কারণ ওখানে তো তখন মাসে মাসে যাচ্ছে...
তখন উনি বললেন যে, আমি তো
না শুনতে চাই না। আমাকে আপনি দেবেন এইটেই হচ্ছে কথা।
তখন কিশোর ভারতী
পত্রিকাটা দেখাশোনা করত ওঁর ছেলে মানে দিলীপ চট্টোপাধ্যায়।
তা বললাম ঠিক আছে দেখি...
- আচ্ছা...
-- বলে ওঁদের একটা কমিকস - এখন যেটা বেরোচ্ছে নণ্টে আর ফন্টে সেটা কিন্তু নয়। প্রথম ওঁদের দিয়েছিলাম আমি 'পটলচাঁদ দ্য ম্যাজিশিয়ান' বলে একটা।
-- বলে ওঁদের একটা কমিকস - এখন যেটা বেরোচ্ছে নণ্টে আর ফন্টে সেটা কিন্তু নয়। প্রথম ওঁদের দিয়েছিলাম আমি 'পটলচাঁদ দ্য ম্যাজিশিয়ান' বলে একটা।
- হ্যাঁ...হ্যাঁ পটলচাঁদ
দ্য ম্যাজিশিয়ান
-- তা ওটা কিছুদিন বেরনোর পরে একদিন বললেন যে, মনে হচ্ছে ওটা যেন ছোটদের পক্ষে একটু ভারি হয়ে যাচ্ছে - যদি অন্য রকম কিছু একটা হয়, ভাল হয়।
-- তা ওটা কিছুদিন বেরনোর পরে একদিন বললেন যে, মনে হচ্ছে ওটা যেন ছোটদের পক্ষে একটু ভারি হয়ে যাচ্ছে - যদি অন্য রকম কিছু একটা হয়, ভাল হয়।
তখন আমি বুঝে গেলাম উনি
কি চাইছেন। তখন ওই নণ্টে আর ফন্টে নাম দিয়ে একটা করে দিলাম। উনি বললেন হ্যাঁ এইবার
ঠিক আছে।
- তারপর সুপারিন্টেনডেন্ট
এল... কেল্টুদা এলো...
-- হ্যাঁ হ্যাঁ। তারপর সুপারিন্টেনডেন্ট-টেন্ট সব পরে এলো। এই আরকি... চলছে
-- হ্যাঁ হ্যাঁ। তারপর সুপারিন্টেনডেন্ট-টেন্ট সব পরে এলো। এই আরকি... চলছে
-- হ্যাঁ হ্যাঁ...ওই যে...
- মুটকি আর শুঁটকী এই রকম
কিছু নাম ছিল...
-- হ্যাঁ। ওই ক্ষীরোদবাবু একদিন বললেন ছেলেদের নিয়ে তো হচ্ছে, মেয়েদের নিয়ে একটা করুন না।
-- হ্যাঁ। ওই ক্ষীরোদবাবু একদিন বললেন ছেলেদের নিয়ে তো হচ্ছে, মেয়েদের নিয়ে একটা করুন না।
তখন ওই শুঁটকী আর মুটকি
নাম দিয়ে করলাম। কয়েকটা সংখ্যা বেরোবার পর, আমাকে একদিন ক্ষীরোদবাবু টেলিফোন করে বললেন, নারায়ণবাবু ওটা বোধহয় আর করা যাবে না।
আমি বললাম কেন?
বললেন যে নানা রকম আপত্তি
আসছে...
তা আমি বললাম ঠিক আছে। (
হাসি)
-- ওই ক-টা সংখ্যা
বেরিয়েছিল...ব্যাস্।
- এছাড়া প্রচুর সিরিয়াস
কমিকস আপনি করেছেন... পূজাবার্ষিকীতে মাঝে মাঝে থাকতো...
ওই তো... শুকতারার কভারেই
তো সিরিয়াস কমিকস।
- কৌশিককে নিয়ে...
-- কৌশিককে নিয়ে সর্পরাজের দ্বীপে ড্রাগনের থাবা, এইসব।
-- কৌশিককে নিয়ে সর্পরাজের দ্বীপে ড্রাগনের থাবা, এইসব।
- আচ্ছা, একদম শুরুতে যখন
কাজ করতেন মানে যখন হাঁদা ভোঁদা শুরু করেছেন, বাঁটুল দি গ্রেট শুরু করেছেন, তখন কি
ধরনের আর্ট মেটেরিয়াল ব্যবহার করতেন... মানে আমি বলছি যে রং বা তুলি কি ধরনের
ব্যবহার করতেন? বিদেশী কিনা...
তখন কি পাওয়া যেত মানে ব্র্যান্ডের কথা বলছি।
আমরা যখন মানে এই
স্টুডেন্ট লাইফের কথা বলছি...
আর্ট কলেজে যখন
পড়তেন...
-- তখন কিন্তু আমরা সব
বিদেশী রং বিদেশী তুলি ব্যবহার করেছি...
- পাওয়া যেত তখন?
-- হ্যাঁ... বিদেশী কালি...
- আপনার ব্র্যান্ড নেম
মনে আছে? উইন্সর অ্যান্ড নিউটন?
-- উইন্সর অ্যান্ড নিউটন...
উইন্সর অ্যান্ড নিউটন-এর কালি,
রং এইগুলো তখন পাওয়া যেত।
জি সি লাহা... একটা
দোকানই ছিল তখন ওই সময় জি সি লাহা। ওখান থেকে কিনতাম। কাগজও ঐখান থেকে কিনতাম। পরে
আস্তে আস্তে বিদেশী জিনিস বন্ধ হল। তারপরে এসে গেল ওই ক্যামেল। এখন আমার কাছে
যা কিছু আছে সব ওই ক্যামেল। আর ক্যামেল-এর যা কালি যখন শিশি কিনি তখনই তলায় জমে
গেছে। উপায় নেই কোনও...
- নিব কি ব্যবহার করেন?
ক্রোকুইল ...
-- ক্রোকুইল নিব...
- আর রঙিন কভারের যে
সমস্ত কাজ করতেন মানে প্রচ্ছদ, সেগুলো সব ওয়াটার কালার?
-- হ্যাঁ সব ওয়াটার কালার...
-- হ্যাঁ সব ওয়াটার কালার...
- অসাধারণ সে সমস্ত
কাজ...
-- তখন ওয়াটার কালার। আর এখন সুবিধা হয়েছে কি - তখন তো ওয়াটার কালারে করতে হত - এখন হয়েছে কি - ওই ট্রান্সপারেন্ট কালার...
-- তখন ওয়াটার কালার। আর এখন সুবিধা হয়েছে কি - তখন তো ওয়াটার কালারে করতে হত - এখন হয়েছে কি - ওই ট্রান্সপারেন্ট কালার...
- ফটো কালার...
-- ফটো কালার। আগে ফটো কালার ছিল পাতায়। মানে কাগজের মধ্যে...
-- ফটো কালার। আগে ফটো কালার ছিল পাতায়। মানে কাগজের মধ্যে...
- ফুজি কালার...
-- হ্যাঁ। এখন সেগুলো লিকুইড শিশিতে বিক্রি হয়। এগুলোর একটা সুবিধা কি আমি ইঙ্ক দিয়ে -
-- হ্যাঁ। এখন সেগুলো লিকুইড শিশিতে বিক্রি হয়। এগুলোর একটা সুবিধা কি আমি ইঙ্ক দিয়ে -
ইঙ্ক তো ওয়াটার প্রুফ - ইঙ্ক দিয়ে ড্রয়িংটা করে নিয়ে তখন যদি আমি ওই ট্রান্সপারেন্ট কালারটা চাপাই
ড্রয়িংটা চাপা পড়ে যায় না। ড্রয়িংটা দেখা যায়। কারণ ও তো...
-- ট্রান্সপারেন্ট... কাজে
কাজেই যতটা সম্ভব মানে যেখানে হয়তো ডিটেলে করবো না গাছ পাতা এগুলো কালি দিয়ে ড্র
করে তার ওপরে ওই কালার ফেলে দিই। ড্রয়িংটা দেখা যায়। পোস্টার কালার হলে তো
চাপা পড়ে যাবে। ট্রান্সপারেন্ট কালারে তা হয় না। যেমন এই যে এখন যে গুলো করি...
(ওনার একটা কাজ হাতে নিয়ে)
সবই কিন্তু
ট্রান্সপারেন্ট কালার। শুধু মাঝে মাঝে দরকার হলে একটু পোস্টার কালার, টাচ করবার
যদি দরকার হয় তখন। এই ভাবেই চলছে। যতদিন আছি ওই...
- এখনও আপনাকে প্রতি মাসে
এতগুলো প্লট ভেবে যেতে হয়... এটা তো একটা কঠিন কাজ...
-- হ্যাঁ, এই যে মানে ৫৫/৬০ বছর ধরে কত গল্প কি করেছি... আমার নিজেরই মনে নেই।
-- হ্যাঁ, এই যে মানে ৫৫/৬০ বছর ধরে কত গল্প কি করেছি... আমার নিজেরই মনে নেই।
- খুব স্বাভাবিক, আচ্ছা
আপনি যে এত দিন ধরে কাজ করে চলেছেন মনে হয় আপনি খুব ডিসিপ্লিন্ড ছিলেন...
-- তা ছিলাম...
-- তা ছিলাম...
- কারণ এই বয়সেও আপনি
এতগুলো কমিকস করে চলেছেন...
-- হয়তো ছিলাম... সত্যি বলতে কি আমার কোনও নেশা নেই...
-- হয়তো ছিলাম... সত্যি বলতে কি আমার কোনও নেশা নেই...
- কাজটাই আপনার নেশা...
-- আমাকে একবার (হাসি) ওই এরা একটা মাদক বিরোধী একটা প্রচার কেন্দ্র করেছিল ওই বালিগঞ্জের এক জায়গায়। তা আমাকে সেখানে নিয়ে গেল। তো সেখানে আমাকে বলতে বলল। তা আমি বললাম, আমি যে একজনকে বলব যে এটা তুমি করো না। আমি নিজে যদি না করি, তবেই আমার জোর আসে অধিকার আসে আর একজন কে সেটা বলার। আমি নিজে সিগারেট খাচ্ছি আর একজন কে বলি তুমি খেওনা সেটা কেমনতর হল - সে মানবে কেন?
-- আমাকে একবার (হাসি) ওই এরা একটা মাদক বিরোধী একটা প্রচার কেন্দ্র করেছিল ওই বালিগঞ্জের এক জায়গায়। তা আমাকে সেখানে নিয়ে গেল। তো সেখানে আমাকে বলতে বলল। তা আমি বললাম, আমি যে একজনকে বলব যে এটা তুমি করো না। আমি নিজে যদি না করি, তবেই আমার জোর আসে অধিকার আসে আর একজন কে সেটা বলার। আমি নিজে সিগারেট খাচ্ছি আর একজন কে বলি তুমি খেওনা সেটা কেমনতর হল - সে মানবে কেন?
- ঠিকই...
-- যাই হোক, তা ওখানে আমি এটা বলেছিলাম যে, এইটা বলার অধিকার আমার আছে কারণ আমি কোনদিন কোনও নেশা করিনি। সেই একটা (হাসি) একটা গল্প আছে না, এক কাজীর কাছে একজন গেছে যে, আমার ছেলে ভীষণ গুড় খায় - আপনি ওকে বারণ যদি করেন তো ভালো হয়... আপনি তো কাজী আপনার কথা শুনবে।
-- যাই হোক, তা ওখানে আমি এটা বলেছিলাম যে, এইটা বলার অধিকার আমার আছে কারণ আমি কোনদিন কোনও নেশা করিনি। সেই একটা (হাসি) একটা গল্প আছে না, এক কাজীর কাছে একজন গেছে যে, আমার ছেলে ভীষণ গুড় খায় - আপনি ওকে বারণ যদি করেন তো ভালো হয়... আপনি তো কাজী আপনার কথা শুনবে।
তো সেই কাজী বললেন, ঠিক
আছে তুমি একমাস পরে এসো। তা একমাস পরে (হাসি) যখন সে গেছে তখন কাজী বললেন যে, তুমি
গুড় খেওনা, বেশি গুড় খেলে এই সব হয়... ইত্যাদি।
সে তখন বলেছে যে, এটা তো আপনি একমাস আগেই বলতে পারতেন।
(হাসি) কাজী বললেন একমাস
আগে বললে কাজ হত না, কারণ তখন আমি নিজেই তো গুড় খেতাম।
এই হচ্ছে কথা। তো এখন
হচ্ছে আমি যেটা করি সেটা তুমি করো না আমি যেটা বলি সেটা কর। মানবে কেন লোকে?
কিশোর ভারতীতে প্রকাশিত নারায়ণ
দেবনাথের কিছু অসাধারন অলংকরণ
|
- ঠিকই...আচ্ছা পাঠকের
মুখোমুখি যখন মানে যারা আপনার কমিকস পড়ে চলেছে...
-- অবশ্য সব জায়গায় একই কথা শুনি... যেখানেই যে আসুক বা যেখানেই যাই বলে, আপনার এই পড়েই তো আমরা...
-- অবশ্য সব জায়গায় একই কথা শুনি... যেখানেই যে আসুক বা যেখানেই যাই বলে, আপনার এই পড়েই তো আমরা...
- ছোটবেলা থেকে বড়
হয়েছি...
-- বড় হয়েছি... আমরা পড়েছি... এখন আমাদের ছেলে মেয়েরা পড়ছে।
-- বড় হয়েছি... আমরা পড়েছি... এখন আমাদের ছেলে মেয়েরা পড়ছে।
- নাতি নাতনিরাও পড়ছে...
এটা একটা কম ব্যাপার নয়... তিন প্রজন্মকে আপনি...
-- আমাকে ওই যে শৈলেন ঘোষ একদিন টেলিফোন করে বললেন, আপনি এত প্রজন্ম ধরে মাতিয়ে রেখেছেন কি করে? আমি বললাম কি জানি লোকে ভালবাসে হয়তো তাই...
-- আমাকে ওই যে শৈলেন ঘোষ একদিন টেলিফোন করে বললেন, আপনি এত প্রজন্ম ধরে মাতিয়ে রেখেছেন কি করে? আমি বললাম কি জানি লোকে ভালবাসে হয়তো তাই...
- সেই এটা একটা কম
ব্যাপার নয় ভালবাসাটা আপনি আদায় করেছেন... দিনের পর দিন কাজ করে...
-- লোকের ভালবাসা পাওয়াটা
কিন্তু... মনে হয় বেশ শক্ত ব্যাপার...
কিশোর ভারতীতে প্রকাশিত নারায়ণ
দেবনাথের আরও একটি অলংকরণ
|
- আপনার কাজটাও তো খুব
শক্ত... সহজ নয়
-- হাঃ হাঃ হাঃ... (একটু থেমে) একটা জিনিস অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে, আমি যখন হাসপাতালে ভর্তি হলাম - তখন বেশ বয়স হয়েছে এরকম ডাক্তাররা আমাকে দেখতে এলেন। এসে আমাকে বললেন আপনার একটা ছবি নেবো? (হাসি) আমি বললাম নিন্...
-- হাঃ হাঃ হাঃ... (একটু থেমে) একটা জিনিস অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে, আমি যখন হাসপাতালে ভর্তি হলাম - তখন বেশ বয়স হয়েছে এরকম ডাক্তাররা আমাকে দেখতে এলেন। এসে আমাকে বললেন আপনার একটা ছবি নেবো? (হাসি) আমি বললাম নিন্...
*এই সাক্ষাৎকার আগে লেখকের নিজের ব্লগ 'বই আর কমিকস'-এ প্রকাশিত। এখানে আবার লেখকের অনুমতিক্রমে প্রকাশ করা হল। পুরনো বই আর কমিকস নিয়ে তৈরি এই ব্লগ আমাদের খুব প্রিয়। আপনারাও পড়ে দেখুন।
ক্রমশ...