সাত-পাঁচ না ভেবেই ওটা হস্তগত করেছিলাম। তা হয়েছে কি...... এই গত সপ্তাহান্তে টি-শার্ট টা পরে জুজু'র (ব্লগের commander in chief) বাড়ি গেছি আড্ডা মারতে। হঠাৎ এ-কথা সে-কথার মাঝে ব্লগের কথা উঠতেই জুজু ঝাঁঝিয়ে উঠল। পরবর্তী কয়েক মিনিটে বাছা বাছা শব্দচয়নে আমাকে যা শুনতে হল তার সারমর্ম এই যে, আমি এই বয়সে এখনও কারও একটা আসার অলীক কল্পনায় দিন গুজরান করছি দেখে সে অত্যন্ত হতাশ হলেও তাতে তার কোন আপত্তি নেই। বরং সেই অলীক কল্পনাসুন্দরী না আসা অবধি আমার কলম না ছাড়ার অঙ্গীকারে সে অত্যন্ত প্রীত। কিন্তু সে অঙ্গীকার শুধুমাত্র ঘোষণায় পর্যবসিত হতে দেখে সে যারপরনাই ক্রুদ্ধ। অর্থাৎ, এই যে গত একবছর (প্রায় আমার টি-শার্টের বয়সের সমসাময়িক) অনন্তকাল ধরে চলতে থাকা ph.d -র কাজের চাপ দেখিয়ে ব্লগের কোনরকম কাজে কুটোটি ভেঙ্গে দু'টোটি না করে এবং দিনের পর দিন post -এর খরা চলাকালীন একটাও লেখা দিয়ে ব্লগকে ধন্য না করে 'আমাদের কথা' পাতায়
সহসম্পাদকদের পাশে সমান কেত নিয়ে আমার দাঁত কেলানো তার একেবারেই পছন্দ নয়। আমি মিনমিন করে হালকা একটা প্রতিবাদ করার চেষ্টা অবশ্য করেছিলাম এই বলে যে, আমি তো একটি যথাসাধ্য দাঁত-না-কেলানো ছবিই দিয়েছিলাম বলে মনে পড়ছে এবং এই তো কিছুদিন আগেই গত পুজোয় ব্লগের বিশেষ সংখ্যায় একটি গল্পও তো লিখেছিলাম। 'কিছুদিন আগে' কথাটা বলা একেবারেই ঠিক হয় নি।
একথা শুনেই জুজু যেভাবে দাঁত কিড়মিড় করে ঐ দুটো শব্দ আওড়াতে আওড়াতে আমার দিকে নিজের বিশাল শরীরটা নিয়ে ধেয়ে এসেছিল, তাতে বাকীরা না আটকালে এতক্ষণে হয়তো আপনাদের ব্লগের পাতায় আমার 'স্মৃতির উদ্দেশ্যে' পড়তে হত। অবশ্য সে লেখা এটার থেকেও সংক্ষিপ্ত হত সন্দেহ নেই। এই সাড়ে আঠাশ বছরের জীবনে যৎকিঞ্চিৎ লেখাপড়া করা, কয়েকটা গল্পের বই পড়া, অজস্র সিনেমা দেখা, ঘুরে বেড়ানো আর ঘরে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা... দিনের পর দিন...... মাসের পর মাস আড্ডা মেরে কাটিয়ে দেওয়া ছাড়া কিছুই তো করে উঠতে পারলাম না! তা সে যাক গে... কি নিয়ে যেন কথা হচ্ছিল? হ্যাঁ, টি-শার্ট। আপনিই বলুন না, এই টি-শার্টে যা সব লেখা থাকে তার সব কি ধরতে আছে? এই যেমন কিছু ছেলে বুক ফুলিয়ে একটা টি-শার্ট পরে ঘুরে বেড়ায়...... তাতে লেখা, তাদের কোনো চাকরি নেই এবং গার্লফ্রেন্ডও নেই। তাই তাদের জীবনে কোনো সমস্যাও নেই। তা আপনি কি মনে করেন, ঐ টি-শার্টের লেখাটি যদি ঐ ছেলেটির ক্ষেত্রে সত্যি হয়, তাহলে সে খুব আনন্দে আছে? মোটেই না। সে অত্যন্ত দুঃখে আছে। এবং সে হন্যে হয়ে তার 'সমস্যাহীন' জীবনে কিছু 'সমস্যা' আমদানি করার চেষ্টায় আছে। তারপর ধরুন আমার এক বন্ধুর কথা। সে আবার আমার এককালীন রুমমেট (এখন অবশ্য বড় চাকুরে...... আর আমি সেই 'রুম'-এরই বাসিন্দা)। একটা সফল প্রেম এবং অতঃপর একটি জম্পেশ বিয়ে নামিয়ে ফেলার অজুহাতে মাঝে মাঝেই সে আমার প্রেমহীন জীবনের অসারতা প্রসঙ্গে অতিদীর্ঘ বক্তৃতা রেখে থাকে। এই সেদিন ছুটির দিন বিকেলে হঠাৎ সে এসে হাজির। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, অতিরিক্ত বকুনির চোটে তিতিবিরক্ত হয়ে বউ বাড়ি থেকে বের করে দিলে তখনই সে আমার ঠেকে আসে। মুখে একগাল শয়তানি হাসি, গলাকাটা টি-শার্টে বিয়ার ভর্তি গ্লাসের ছবি। গ্লাসের উপরে-নিচে লেখা- 'do something with your life....get me a beer'। রবিবার বিকেলবেলা... আমি তখন দু'হাত তোলা গৌরাঙ্গ পোজে কাউকে ধরে উপুড় করে শুইয়ে দিলে যেমন হয় - ঠিক সেইভাবে আমার বিছানার উপর পড়ে। আওয়াজ শুনে চোখ খুলে ঐ লেখা দেখে আধো-তন্দ্রায় ভাবলুম আমাকেই বলছে বোধহয়। প্রতিবাদ করতে যাওয়ার আগেই তার গালাগালির চোটে পুরো ঘুম কেটে যাওয়ার পর বুঝলাম ঐ বিশেষ কাজটি সে নিজেই সম্পন্ন করে এসেছে। অর্থাৎ আমার কাজ শুধু নিজের ভাগটুকু গ্রহণ করে তাকে বাধিত করা। এরকম আরও দশটা উদাহরণ আমি এখনই দিতে পারি। তাহলে আপনিই বলুন ঐ টি-শার্টের লেখা ধরে আমাকে এমন বকাঝকা করা কি আদপে ঠিক হয়েছে? আর কলম কি আমি ইচ্ছা করে ধরে রেখেছি? কলম নিজেই তো আমাকে ছাড়তে চায় না... মাস্টার্স হল, ph.d টাও গড়িয়ে গড়িয়ে হতে চলল প্রায়। চাকরির গতিক এখনও তো সুবিধের নয়। কলম ছাড়ার উপায় কই?
সঙ্গে থাকবে আরও অনেক ছবি, আরও অনেক গান, অনেক সুর। শুরু হোক তাহলে সবাইকে নিয়ে পরের বছরের পথ চলা।