Wednesday, August 7, 2013

নারায়ণ দেবনাথের সঙ্গে কিছুক্ষণ* (শেষ পর্ব) -- মহাস্থবির

<< আগের পর্ব
এই যে নানা বয়সের নানা পেশার মানুষকে মাতিয়ে রেখেছেন এত বছর ধরে এমনকি নন-বেঙ্গলিরাও এখন পড়ছে। এখন তো পত্র ভারতী ইংরেজিতে অনুবাদ করছে।
-- ওঁরা ওটাকে প্রায় ১০ টার মতো ইংরেজিতে অনুবাদ করছে।
- নন-বেঙ্গলিরাও পড়ে এবার মজাটা পাচ্ছে।  
-- তবে একটা ব্যাপার কি, বাংলায় যে মজাটা পাওয়া যাবে সেটা কিন্তু ইংরেজিতে আসবে না। টেলিগ্রাফ এক সময় আমার কাছে এলো তখন শুধু হাওড়া নিয়ে একটা আলাদা টেলিগ্রাফ বের হতো, তো ওনারা বললেন টেলিগ্রাফের জন্যে একটা কমিকস দিন।
আমি বললাম দেখুন আমি তো বড় কিছু করতে পারব না ছোট স্ট্রিপ দেবার চেষ্টা করবো। আর রাজনৈতিক কার্টুন কিন্তু আমি করবো না। তা ঠিক হল প্রত্যেক সোমবার দিতে হবে কারণ ওটা বেরত মনে হয় শুক্রবার। সোমবার দিতে হবে, আর যদি দেরি হয় তো বুধবারের মধ্যে চাইই।
আমি শুরু করলাম, ওটাতো ইংরেজি কাগজ, আমি প্রথমে বাংলায় লিখে তারপর ইংরেজি অনুবাদ করে দিতাম।
- আচ্ছা...
-- তো যে মেয়েটি নিতে আসতো, সে আমাকে বলল, আপনি এক কাজ করুন না আপনি বাংলায় লিখে দিন আমি ওটাকে ইংরেজিতে করে নেব। তারপরে আপনি ইংরেজিতে লিখে দেবেন।
তা ভালোই হল আমারও ঝামেলা কমলো। ও এখানে বসে বসে ইংরেজিতে লিখত, আর আমি সেটাকে কমিকসে লিখে দিতাম। তো আমি একদিন বললাম, আচ্ছা এই যে বাংলায় সব শব্দ গুলো রয়েছে, মজার মজার এগুলো তুমি ইংরেজিতে কি করবে? তখন বলছে যে, হ্যাঁ এটা একটা সমস্যা বটে।

- হ্যাঁ, ইয়াপ্পি গুল্লুস্‌... এই গুলো কি করে হবে।
-- যারা ইংরেজিতে পড়ে তাদের টা অন্য তারা ওই গুলোতে অভ্যস্ত, কিন্তু এইগুলো তো...
- সত্যি আপনার কিছু কিছু শব্দ আছে না গ্লুবহ্‌ , আল্‌প্‌‌.., ইঁয়োক
-- হা: হা: হা: ...
- সত্যি...
-- হ্যাঁ, এখনও অনেকেই জিজ্ঞাসা করে আপনার এই মজার মজার শব্দ গুলো কোত্থেকে পান আপনি?

- তো সব মিলিয়ে আপনি একেবারে মাতিয়ে রেখেছেন ছোট বড় সকলকে। হাতে পেলেই আপনারটা সবার আগে পড়ি। তা এর পেছনের রহস্যটা কি?
-- রহস্য কিছু না আসল কথা হচ্ছে ছোটদের জন্য কিন্তু বিশেষ কেউ ভাবনা চিন্তা করে না। একটা জিনিস দেখবে যে ছোটদের জন্যে কোনও ভালো ছবি হয় না একটা দুটো যা হয় খুবই কম। তা একজন পরিচালক বেশ কয়েক বছর আগে হাঁদা-ভোঁদা নিয়ে একটা সিরিয়াল করেছিল।
- আচ্ছা...
-- হ্যাঁ। হাঁদা-ভোঁদা নিয়ে দূরদর্শনে তখন দেখানো হতো। তখন তো এখন যেমন ব্যাঙের ছাতার মতো চ্যানেল গজাচ্ছে তা ছিল না। দূরদর্শন আর দুএকটা। দূরদর্শনই তখন সব... এখন তো মনে হয় দূরদর্শন ধুঁকছে। যাই হোক, ওই সময়ে সেই ভদ্রলোক মানে পরিচালক আমাকে বললেন যে আপনার এইটা নিয়ে আমি একটা সিরিয়াল করবো।
তা পরে একসময় আমাকে বললেন জানেন প্রডিউসার পেতে আমি হিমসিম খেয়ে যাচ্ছি। যেই শুনছে ছোটদের অমনি পিছিয়ে যাচ্ছে। তবুও একজনকে পেয়েছিলেন ওই নটা না দশটা এপিসোড করেছিলেন। সে সময়ে কাস্টিং করেছিলেন খারাপ নয়, মনোজ মিত্র তারপরে গীতা দে, মনু মুখার্জী এই রকম কয়েকজনকে নিয়ে করেছিলেন।
- আচ্ছা।
-- এবং সেটা কাগজে পড়েছিলাম এক জন সমালোচক লিখেছিলেন- যে সমস্ত সিরিয়াল গুলো বসে দেখা যায় তার মধ্যে এটা একটা।
- হাঁদা-ভোঁদা...
-- কিন্তু ওই পর্যন্তই তার পরে আর করতে পারেন নি। টাকার অভাবে (হাসি) কি আর করা যাবে।
- ঠিকই...
-- এখন তো ওই হচ্ছে কিছুদিন আগে একটা চ্যানেলে হাঁদা-ভোঁদা নাম দিয়ে একটা সিরিয়াল বানিয়েছে দেখায় মাঝে মাঝে। সেখানে আছে মিঠুন, নামটা দিয়েছে হাঁদা-ভোঁদা।
- হ্যাঁ...
-- কাগজে একজন লিখেছিল যে আমরা ভেবেছিলাম হাঁদা-ভোঁদা নাম দেখে সেই সব মজার কাণ্ডকারখানা, ছন্দ মিলিয়ে কথা এই গুলো সব দেখানো হবে... পরে দেখলাম সে অন্য জিনিস। নাম হাঁদা-ভোঁদা, গল্প হচ্ছে ইচ্ছা মতো।   
- ইচ্ছা মতো...
-- তাই তো হচ্ছে। প্রফুল্ল রায়ের বিখ্যাত লেখা কেয়া পাতার নৌকা সেই নাম দিয়ে যা দেখানো হচ্ছে তা হল অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে।
- হ্যাঁ, এটা কাগজে দিয়েছিল।
-- ওই নিয়ে একটু হই চই হল লেখা লিখি হল ব্যাস।
এখন যে সব সিরিয়াল যা হচ্ছে তার কে লেখক কে জানে... একটা জিনিস চিন্তা করো (হাসি) যে একটা সিরিয়াল কত বছর চলতে পারে।
- হ্যাঁ,  হা: হা: হা:
-- আগে ছিল কি যেন ওই জিতেন্দ্র-র মেয়ের সেই...
- ও হিন্দি
-- হ্যাঁ হিন্দি 'শাস কভি বহু থি', ওইটা ওর আর শেষ নেই তারপর বোধ হয় বিরূপ সমালোচনা হওয়াতে বন্ধ করে দেয়।
আর এখন একটা চলছে 'মা' শুরুটা হয়েছিল ভালোই। কিন্তু কোথায় যে শেষ হবে কেউ জানে না...
- নিজেরাই মনে হয় জানে না।
-- এরা খালি দেখে, কতদূর টেনে নেওয়া যায়। তখন কিন্তু মূল গল্পের সঙ্গে কোনোরকম মিল থাকে না। হিন্দি এখন কি হয় বলতে পারবনা। এখন হিন্দি আমি দেখিনা। বাংলা আগে দু একটা দেখতাম এখন তাও দেখিনা। বাড়ির মেয়েরা দেখে। মেয়েদের জন্যেই করা ওগুলো, ওরা দ্যাখে। বলে যে, একটা সিরিয়াল ও দেখবার মতো নয় কিন্তু কি দেখবে? আর তো কিছু ভালো কিছু নেই।  
- সেই...

-- আগে তো এতো চ্যানেলও ছিল না কিছু কিছু নাম করা চ্যানেল ছিল। ই টিভি তার পরে জি বাংলা এইরকম আর কি, তবে সব চ্যানেলই আমি ঘুরেছি, গেছি। একবার আমাকে নিয়ে গেল জি টিভিতে, ওঁদের ড্যান্স বাংলা ড্যান্স বলে সেই নাচের প্রোগ্রামটা হচ্ছে, সেটা শেষ হবার পরে মিঠুন এসে আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো। বললে, আপনি এই যে এত দিন ধরে কমিকস করে চলেছেন, তো কি পেয়েছেন?
আমি বললাম, কি পেয়েছি কি পাইনি আমি সে দিকে যাচ্ছি না, তবে লোকের ভালবাসাটা খুব  পেয়েছি, এখনও পেয়ে চলেছি।
- নিশ্চয়...
-- আর একদিন ওই নচিকেতা, গায়ক আমাদের এই সামনে একটা লাইব্রেরী আছে, ওখানে নানা রকম সব অনুষ্ঠান হয়। তো ওদের একটা অনুষ্ঠানে নচিকেতাকে নিয়ে এসেছিল। এসে নচিকেতা কথায় কথায় আমি শিবপুরে থাকি এটা বোধহয় জানত, ওদের জিজ্ঞাসা করেছে যে নারায়ণবাবু এদিকে কোথায় থাকেন। ওরা বলেছে, এই তো সামনে।  
 ‘তাহলে আমাকে নিয়ে চল...’
আমি এদিকে দেখছি অনেক লোক আসছে। স্বাভাবিক, ওইরকম একজন লোক এলে তা পেছনে অনেকে থাকবেই...
- হ্যাঁ হ্যাঁ।
-- তো এসেই নমস্কার করলো। বলল শুনলাম আপনি সামনে থাকেন তাই দেখা করতে এলাম। আমি আপনার খুব অনুরাগী। এদিকে আমার নাতনি তো একটা খাতা নিয়ে এসেছে অটোগ্রাফ নেবার জন্যে (হাসি)। তখন  নাতনিকে বলছে, আরে তুমি আমার কাছে কি অটোগ্রাফ চাইছ, আমিই এসেছি ওনার কাছে অটোগ্রাফ-এর জন্যে। 
- হা: হা: হা:
-- ভূমির সুরজিৎ, ভূমি ব্যান্ড, সেই যে বারান্দায় রোদ্দুর... একদিন টেলিফোন করে বলল, আপনাকে ই-টিভিতে একদিন আসতে হবে। আমি বললাম ই-টিভিতে কি হয়? ওখানে তো বারান্দায় রোদ্দুর হয় আমি গিয়ে কি করবো...
- হা: হা: হা: 
-- বলে, না আসতে হবে। গেলাম... তখন বেশ ঠাণ্ডা ভাব রয়েছে। চাদর গায় দিয়ে গেছি। আদ্দির পাঞ্জাবি পরে। যেখানেই যাই ওই ধুতি, আদ্দির পাঞ্জাবি পরি আর আর শীতকাল হলে একটা শাল লাগে।
গিয়ে তো বসেছি, তখন উৎপলেন্দু চৌধুরীর একটা প্রোগ্রাম হচ্ছিল। বসে আছি... তারপর যখন ওটা শেষ হল আমার ডাক পড়ল, গেলাম। ঢুকতেই সুরজিৎ একটা হাঁদা-ভোঁদার বই, তখন তো আরও পাতলা ছিল, নিয়ে এসে বললে, আপনি এইটা অটোগ্রাফ করে দিন। মেয়ের জন্যে... দিলাম। আরও একটা বই বার করে বলল, এটা আমাদের দুজনের নামে। ওঁর স্ত্রীও সাথে ছিল। অটোগ্রাফ করে দিন। আমরা আপনার খুবই ভক্ত।  
তারপর অনুষ্ঠান শেষ করে ওঁদের ওখানে একটা ব্ল্যাক বোর্ড ছিল বলল  যে এখানে আপনি একটা বাঁটুলের ছবি এঁকে দিন, আমরা এটা টাঙ্গিয়ে রাখব।  
এখন আমি ফ্লোরে ঢুকেছি চাদর ছেড়ে, পাঞ্জাবি শুধু... আর ওখানে এয়ারকন্ডিশান চলছে, এদিকে বাইরে শীত, আমি যখন আঁকছি  ঠাণ্ডায় শরীর কাঁপছে।
- আচ্ছা...
-- ফলে হাতও কাঁপছে। তারমধ্যেই করে দিলাম তারপর বাড়ি এলাম। তখন বাড়ি থেকে বলছে, তুমি ওই রকম করছিলে কেন? তো আমি বললাম, করছিলাম কেন? (হাসি) একে শীত, তার ওপরে এয়ারকন্ডিশান, তারপর আবার চাদর ছাড়া... আমি যে দাঁড়িয়েছি ওখানে সেইটেই তো অনেক। 
- হা: হা: হা:
-- ওই সুরজিতের সাথে আর একবার দেখা হয়েছিল একটা অনুষ্ঠানে বাংলা লাইভ ডট কম, তখন ওখানে আমার কমিকসগুলো ওরা দেখাচ্ছে।
সেই নিয়ে তখন হই চই সবাই ইন্টারনেটে পড়ে ফেললে কি করে চলবে এই সব আর কি... তো আমি বললাম ক'জন পড়বে তখন তো কম্পিউটারের এতো দাপাদাপি ছিল না আর কমিকস পড়বে কজন? কমিকস তো অপাঙতেয়...
এই বছর বই মেলার সময় একটা সেমিনার ছিল, তো ৩০ তারিখে আমাকে যেতে বলেছিল। গেলাম, আমাকে যখন বলতে বলল, আমি আর কি বলবো, বললাম যে একটা কথা বলি, কমিকস হচ্ছে আমাদের এখানে অপাঙতেয়, কমিকসকে কেউ জাতে তোলে না, আমি একেবারে ভুক্ত-ভুগি। এটা অপাঙতেয়, এটা যাঁরা ভাবেন তাঁরা কিন্তু একটা জিনিস ভুলে যান যে, কমিকস করতে গেলে কিন্তু একটা গল্প দরকার, যেমন এখন প্রেমেন মিত্রের গল্প নিয়ে হচ্ছে।
- সত্যজিতের গল্প নিয়ে হচ্ছে...
-- হ্যাঁ, গল্প না হলে কিন্তু কমিকস হবে না। তাহলে কি যেই কমিকস হল আর গল্পটা অপাঙতেয় হয়ে গেল?
- না না এখন অবস্থা বদলাচ্ছে...
-- তবে এখন একটা জিনিস দেখছি (হাসি) আগে কোনও আমন্ত্রণ পত্র এলে নামের পাশে লেখা থাকতো কার্টুনিস্ট বলে এখন লেখে শিশু সাহিত্যিক নারায়ণ দেবনাথ বলে। তবে এখন  আর কোনও কে কি বলল না বলল আমার কোনও কিছুই যায় আসে না... কিচ্ছু না। আমি আমার মতো আছি ব্যাস। 

- আচ্ছা একটা ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করি, এখন তো আপনার সব কমিকস গুলো কালার হচ্ছে... কালার গুলো কি আপনি করে দিচ্ছেন? 
-- কালার আমি এদের বা ওদের কারোরটাই করছি না...
- ওনারা করে নিচ্ছেন, শুধু শুকতারার কভারটা কালারে করে দিচ্ছেন...
-- হ্যাঁ কভারটা কালারে এঁকে দিচ্ছি। একটা কথা হচ্ছে, যারা কিছু জানে না তাদের যদি রঙ করতে বলা হয় এই অবস্থাই হয়। একবার একটা সংখ্যায় একটু রঙ লাগিয়ে বলেছিলাম যে, ক্যারেকটারের গায়ে এই রঙটা লাগাতে বলো, তো লাগিয়েছিল। তা প্রতি সংখ্যাতেই তো আর ওভাবে বলা যায় না।
- সম্ভব নয়।
-- সম্ভব নয়। আগে ওপরে একটা ট্রেসিং পেপার লাগিয়ে রঙ লাগিয়ে দিতাম।
- যখন বাই কালারে হতো...
-- হ্যাঁ তখন ব্লক তৈরি হতো ওরা সেই ভাবে করতো আর এখন তো কম্পিউটারে। আমাদের সময়ে তো এসব ছিল না।

- আচ্ছা আপনার সমসাময়িক শিল্পীদের সম্পর্কে কিছু বলুন না, যেমন ময়ূখ চৌধুরী।
-- ময়ূখ চৌধুরী সম্পর্কে...
নারায়ণ দেবনাথের তুলিতে ময়ূখ চৌধুরী
- ওনার সাথে আপনার আলাপ ছিল নিশ্চয়?
-- আলাপ ছিল বলতে ওঁর সাথে ঝামাপুকুরে (শুকতারা অফিস) দেখা হয়নি। ঝামাপুকুরে গেছেন উনি পরে। আগে উনি ছিলেন পত্র ভারতীতে মানে কিশোর ভারতী।
- আচ্ছা, আপনার সাথে ওনার ব্যক্তিগত আলাপ ছিল?
-- আমার সাথে যে খুব একটা হৃদ্যতা ছিল তা নয়। দেখা হতো এই... 
- কিন্তু আপনি ওনার ছবি এঁকেছেন।
-- হ্যাঁ, ঘটনা হচ্ছে ওঁকে নিয়ে একটা কাহিনী লিখেছিল দিলীপ মানে...
- দিলীপ চট্টোপাধ্যায় ?
-- হ্যাঁ কমিকসের একটা চরিত্র হিসাবে লিখেছিল...
- ময়ূখ চৌধুরীকে নিয়ে লিখেছিলেন?
-- হ্যাঁ। ব্যাপার হচ্ছে কি ওখানে (পত্র ভারতী) দিলীপের সাথে ময়ূখ-এর খুব খাতির ছিল। প্রথম যখন উনি ওখানে গিয়েছিলেন তার আগে মনে হয় সন্দেশ পত্রিকায় করতেন...
তো ওইখানে ওঁকে আমি প্রথম দেখি। 
সিগারেট খেতেন খুব আর কথাও বলতেন খুব। উনি কি কি করছেন সেগুলোও খুব বলতেন। তা পরে আস্তে আস্তে যে কারণেই হোক, দিলীপের সাথে ওঁর একটু খানি মনোমালিন্য হয়েছিল। সেই তখন ওনাকে নিয়ে মজা করে একটা লেখা লিখেছিল দিলীপ... তার ছবি আমি করেছিলাম। যেহেতু ওনাকে কমিকসের মধ্যে রেখেছে ওনার ছবিটা আমাকে আঁকতে হবে সেই আর কি।  
- আ-চ্ছা।

স্টেশান মুকুটমনিপুর  কমিকসটির একটি অংশ
-- আমাকে দিলীপ বলতো, জানেন, ওঁর আসল নাম কি জানেন? আমি বলতাম, আমি জানবো কি করে? বলতো, আসল নাম হচ্ছে শনিপ্রসাদ।
 - শক্তিপ্রসাদ?
-- শনিপ্রসাদ আর ওঁর পকেটে সব সময় একটা হাতুড়ি থাকতো।
- কি?
-- হাতুড়ি... ছোট একটা হাতুড়ি ওঁর পকেটে থাকতো সবসময়।  
- কি কাণ্ড কেন?
-- আমি কি করে জানবো। তবে ওনার একটা জিনিস ওঁর বেশির ভাগ লেখাই কিন্তু শিকার নিয়ে লেখা।
- হ্যাঁ হ্যাঁ...
-- শিকার কাহিনীর ওপর ওনার লেখা ড্রাগন নিয়ে তুষার একবার একটা কমিকস করেছিল। ড্রাগন মানে যেগুলো গোসাপের মতো বড় বড় হয়।
- হ্যাঁ হ্যাঁ। কোমোডো...  
-- ড্রাগন নিয়ে শুকতারায় ছবি আঁকতো একটি ছেলে তুষার চ্যাটার্জী বলে। শুকতারার কভারে এঁকেছিল তাতে ময়ূখ সমালোচনা করেছিলেন যে তুষারবাবু এমন ড্রাগনের ছবি এঁকেছেন যে ড্রাগন নিজেই দেখলে নিজেই ভিরমি খেতো।  
- আচ্ছা।
-- তার মানে তুষারের ড্রইং টা খুব ভালো ছিল না। তা ওনারও ড্রাগন নিয়ে আছে কিছু তো বিদেশী প্রভাব। এতো অনেকেই করে থাকে কারণ সবাই তো সব জানে না। যেমন আমার কথাই বলি, শিকার কাহিনী বলে একটা বই বেরিয়েছিল, সেখানে একজন লিখেছিলেন কুডু হরিণ। নাম উল্লেখ করেছেন কুডু হরিণ। আমি তো জীবনে কুডু হরিণ কি তা জানিনা। তা শুধু হরিণ বললে না হয় একটা হরিণ আঁকা যেত। তা তো না, নাম উল্লেখ করে দিয়েছেন। আমি তো ভাবতে লাগলাম কি করা যায় আমার আবার ওইগুলো খুব ছিল। গোঁজামিল দিয়ে করে ফেলা এ আমার ছিল না। তখন আমি ভাবলাম যে কোথায় পাই? তখন তো সব এনসাইক্লোপিডিয়া বিক্রি হতো। আমি সেই রেডিও স্টেশনের ওইখানে খুঁজে খুঁজে দেখলাম একটা এনসাইক্লোপিডিয়ায়, অ্যানিম্যাল নিয়ে... ওটার মধ্যে দেখলাম কুডু হরিণ রয়েছে। বইটা কিনে নিয়ে এসে ওই দেখে ছবিটা এঁকে দিলাম।

- বাহ্‌। শিকার কাহিনীর ওপরে আপনার ও তো অনেক ছবি আছে?
-- হ্যাঁ তা আছে।
- দেব সাহিত্যের বার্ষিকী গুলোতে ধীরেন্দ্রনারায়ণ রায়ের লেখা শিকার কাহিনী থাকতো তার ছবি গুলো তো আপনি আঁকতেন?
-- হ্যাঁ। দেব সাহিত্যে কুটির থেকে শুধু শিকারের ওপরে বই বেরিয়েছে তাতেও এঁকেছি। 
- হ্যাঁ প্রচুর অ্যানিম্যাল ড্রয়িং আছে আপনারও।
-- একটা কথা কি, যে ছবি আঁকতে জানে সে সব ছবিই আঁকতে পারবে। 
- সেই, সেটাই হচ্ছে কথা। 
-- আমাদের সময়ে, আমরা যে পত্রিকায় ছবি আঁকতাম পত্রিকার সম্পাদক বলতেন যে, অ্যাকশন আছে এই রকম ছবি আঁকবেন।
- যেহেতু ছোটদের পত্রিকা।
-- বলেই দিতেন আমরা চেষ্টা করতাম ওই রকম নানা রকম শেড-ফেড দিয়ে।
- দুর্দান্ত হতো কি ভাবে যে করতেন?
-- আসলে আমাদের সময়ে নিষ্ঠার একটা ব্যাপার ছিল। আমি ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজে যখন পড়তাম...


- ফাইন আর্টস?
-- হ্যাঁ, ফাইন আর্টস নিয়ে। আমাকে ওনারা বলতেন, তুমি যদি হিউম্যান ফিগার ড্রইং ভালো করতে চাও তার যে অ্যানাটমি ভালো করে জানতে হবে। অ্যানাটমি একেবারে গুলে খেতে হবে। তা চেষ্টা করেছি জানিনা কতটা কি করতে পেরেছি।
- কি পেরেছেন আমরা জানি।

-- আনন্দবাজার একসময় আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিল, যে আপনি আপনার সব কিছু নিয়ে আমাদের হাউসে চলে আসুন। আপনি যে দিন বলবেন  আমরা কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে দিচ্ছি যে, এবার থেকে এখান থেকেই সব হবে। যেই এটা ওনারা শুনলেন তখন সুবোধবাবু মারা গেছেন ওনারা আমাকে বললেন, আপনি  নাকি আমাদের ছেড়ে দেবেন। তখন ষষ্ঠীবাবু চলে গেছেন।
- ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়?
-- হ্যাঁ, ষষ্ঠীবাবু একদিন এসেছিলেন আমার কাছে আনন্দবাজারে যাওয়ার পর। এসে বললেন, জানেন তো আমি আনন্দবাজারে চলে গেছি।
- আনন্দমেলাতে অনেক লেখাও লিখেছিলেন পাণ্ডব গোয়েন্দা নিয়ে।
-- পাণ্ডব গোয়েন্দা শুরু হয়েছিল শুকতারায় সেটাই আনন্দমেলায় চলে গেল। আমাকেও ওঁরা বলেছিলেন, যে আপনি চলে আসুন কিন্তু আমি তো সেটা পারলাম না।

- কেন?
-- আমার শুরুটা কিন্তু শুকতারায় সেটা আমি অস্বীকার করি কি করে? তারপরে ওনারা নানা ভাবে বললেন আমি আর পারলাম না। এত দিনের সম্পর্ক জড়িয়ে আছি এই আর কি।
প্রতিষ্ঠানটা একটা সময় তো বেশ বড়োই ছিল সব লেখকেরই লেখা বেরিয়েছে ওখান থেকে, রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে প্রত্যেকে লিখেছেন।
ওঁদের বার্ষিকী যখন বের হতো সেখানে সব নাম করা সাহিত্যিকের লেখা থাকতো।
তখন কলেজ স্ট্রীটে মানে বই পাড়ায় বলতো যে দেব সাহিত্য কুটিরের সুবোধ বাবু হচ্ছে বই পাড়ার বড় বাবু।
কোনও বইয়ের দোকানদার গেলে সুবোধ বাবু বলতেন যে, আপনি শুধু ঘর একটা ঠিক করুন, বই যা সাজাবার আমি সাজিয়ে দেবো। তার মানে কত বই...
- নানা রকমের বই ছিল... 
-- কি বই ছিল না লতাপাতার গুন থেকে সবরকমের। হ্যাঁ ওঁদের প্রধানটা ছিল ডিকশনারি। এ টি দেবের অভিধানটাই হচ্ছে মূল। এটাকে দাঁড় করিয়েছিলেন সুবোধ বাবু। এই যে বার্ষিকী বেরত ওঁর আমল থেকে...

- শুকতারা, বার্ষিকী নব কল্লোল... আচ্ছা নব কল্লোল শুকতারার পরে বের হল?  
-- হ্যাঁ পরে। নব কল্লোল তো আমার হাত দিয়ে বেরলো... ডামি তৈরি করে ক্ষীরোদ বাবু আমাকে বললেন, কোথায় কি থাকবে তার একটা লে-আউট করে দিন তো। ওই পত্রিকার সাইজে একটা ডামি তৈরি করে স্কেচ করে করে সব করে দিলাম। আমার হাত দিয়েই তো হল...
- মানে আপনার অনেকটা জড়িয়ে আছে...
-- অনেকটা মানে বহুদিন সেই কবে ৫০-র দশকে এসে জুটেছিলাম আর এখনও ওঁদের সাথে যুক্ত।
- আচ্ছা একটা সময় লস্‌ন উডের ছবি থাকতো বার্ষিকীতে পরে আপনি আঁকতেন...
-- কে?
লস্‌ন উডের আঁকা ছবি
- বিমল চন্দ্র ঘোষ লিখতেন শিম্পু খুড়োকে নিয়ে ছড়া তার সাথে লস্‌ন উডের ছবি থাকতো।
-- হ্যাঁ হ্যাঁ, ওঁদের স্টক ছিল ওই ছবির সেই ছবি ছাপা হতে হতে স্টক যখন শেষ হয়ে গেল আমাকে একদিন (হাসি) বার্ষিকী বেরনোর আগে, সুবোধ বাবু  বললেন যে, নারায়ণ বাবু আপনি ওই লস্‌ন উডের মতো ছবি আঁকতে পারবেন? আমি বললাম যে, হয়তো পারব দেখব চেষ্টা করে। আমি তখন বাড়িতে এসে একটা করলাম। লস্‌ন উডের ছবিতো বেরতো বার্ষিকীতে, সেই ছবি আমি দেখাতাম, একটা ছবি দেখে আর একটা ছবি আঁকবার তো কোনও অসুবিধা নেই। তা যখন সুবোধ বাবু কে দিলাম উনি বললেন আরে, এতো বুঝতেই পারা যাচ্ছে না।

- অসাধারণ সে সব ছবি। আচ্ছা লস্‌ন উডের ছবি দেখে ছড়াটা লেখা হতো? নাকি আগে ছড়া লেখা হতো?
-- না, ছবির ওপরে ছড়া হতো... লস্‌ন উডের ছবিটা দেখে ছড়াটা লেখা হতো।
- হ্যাঁ ওইটাই জিজ্ঞাসা করছিলাম।
নারায়ণ দেবনাথের আঁকা শিম্পু খুড়ো
-- ছবি দেখে ছড়া হতো, আমারও তাই, ছবিটা এঁকে দিতাম সেটা নিয়ে ছড়া লেখা হতো। ওই শুরু তারপর প্রতি বছর একটা করে ছবি আঁকতাম।
- সেই ক্রিকেট খেলা কি দারুণ সব আঁকা। মাথায় তাল পড়ছে। আবার একটা দুটো তুষার চ্যাটার্জী এঁকেছিলেন।
-- তুষার চ্যাটার্জী এঁকেছিল শিম্পু নয় সেটা।
- হ্যাঁ হ্যাঁ, অন্য একটা ছড়া সেটা মনে হয় উনিই লিখতেন।
-- ওই রেড ইন্ডিয়ান...

- লালমুখো না কি নাম ছিল?
-- সেই পূজাবার্ষিকী তো বন্ধ হয়ে গেছে ওঁরা বলেন এখন যা খরচ বইয়ের দাম বেড়ে যাবে টাকা উঠবেনা। তখন তো অসংখ্য ছবি এক রঙা দু রঙা।
- পাতায় পাতায় ছবি...
-- তিনরঙা ছবিও থাকত কত।

- আপনি ফোর কালার কমিকস করেছেন?
-- তখন কিন্তু চার রঙা ছাপা হতো না।
- হ্যাঁ হ্যাঁ, ট্রাই কালার হতো।
-- তার কারণ হচ্ছে চার কালার ছাপতে গেলে অনেক খরচ পড়ত, তখন তো ব্লক...
- তিন কালার ব্লক হতো।
২ রঙা ছবি, নারায়ণ দেবনাথের আঁকা। ডাক্তারের মুখটি চিনতে পারছেন?
-- হ্যাঁ লাল, হলুদ আর নীল। এই তিনটে কালার দিয়ে ওরা ব্ল্যাকের এফেক্টটা আনতো। কাজে কাজেই যে আঁকত তাকে ওইটা মাথায় রেখে আঁকতে হতো।
- ব্যাপারটা বেশ শক্ত ছিল...
-- কিন্তু ছাপা হতো সুন্দর।
- হ্যাঁ, দারুণ ছাপা হতো। মনে হয় কপার ব্লক হতো তখন।
-- কপার ব্লক তো হতোই শেষকালে আর কপার নয়, আগে হতো কপার ব্লক, পরে হতে লাগলো সব জিঙ্কের ব্লক। এই ব্লকগুলো করতো সীতারাম ঘোষ স্ট্রীটের একটা কোম্পানি দেব সাহিত্য কুটিরের সমস্ত ব্লকই ওখান থেকে হতো। কোম্পানির মালিকের সাথে সুবোধবাবুর খুব খাতির ছিল। তারপরে আমাদের প্রতুলবাবুর সাথেও খাতির ছিল। প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়।

- উনি কোথায় থাকতেন?
-- তখন প্রতুলবাবু থাকতেন ওই হিন্দ সিনেমা, হিন্দ সিনেমার পাশের রাস্তাটা ওয়েলিংটন ঠিক ট্রাম
প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়
লাইন পেরিয়ে হিন্দ সিনেমার কোনাকুনি একটা গলি আছে। ওই গলির মধ্যে ঢুকে ওনার বাড়ি ছিল। 
প্রতুলবাবুর ছেলে প্রহ্লাদ সে কিন্তু ছবি আঁকার লাইনে আসেনি আমি তো ওনাদের বাড়ি যেতাম সময় পেলেই যেতাম, ভালবাসতেন আমাকে।
ওনার বাড়িতে দেখে ছিলাম এই মোটা প্রায় পাঁচ-সাতটা বই ওনার টেবিলের ওপর রাখা, বইগুলোর নাম হচ্ছে, 'ওল্ড স্টোরিজ রিটোল্ড'। ওই একটা বই বার করে ছবি দেখে আমি একেবারে তাজ্জব যে ওই রকম ছবি হয়? মানে একেবারে জীবন্ত ছবি। রিয়ালিস্টিক ছবি। একেবারে সেই রোম্যান পিরিয়ডের ছবি। তাদের পোশাক-আসাক, সবকিছু একেবারে জীবন্ত।
আমাকে প্রতুলবাবু বলেছিলেন, জানো, এই যে দেখছ, আমি এই গুলো নিয়ে দশ বছর স্টাডি করেছি।
- উনিও তো ভারি সুন্দর কাজ করতেন।
-- তখন এনারা তো সব বাঘা বাঘা- প্রতুলবাবু, শৈল বাবু, বলাই বন্ধু রায়, তারপর সমর দে, তখন তো এনারাই।
- হ্যাঁ এনারাই কিন্তু কমিকসে তো আপনি...
-- সে তো অনেক পরে কিন্তু প্রথম তো ওঁরা।
- কমিকস তো আপনিই শুরু করলেন এখন তো কতরকম কমিকস হচ্ছে। 
-- হ্যাঁ অনেক কমিকস হচ্ছে কিন্তু এটা ঠিক যত এর প্রচার হবে, তত ভালো। একটা সময় এটা সম্পর্কে তো কোনও ধারনাই ছিল না।
- তবে এখন অনেকটাই বদলেছে।
-- কিছুটা বদলেছে। তবুও এখনও এটা অপাঙতেয়। সাহিত্যিক-রা এটাকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনেন না। বিদেশে বিভিন্ন রকমের কমিকস আছে। ওখানে ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হয়েছে। যেমন কিং ফিচার। তারপর আর একটা হল ওই যে সিনেমা গুলো হয় তার আগে দেখায় কি নামটা...
- ডিজনি?
-- না, ডিজনি না ওটা তো আলাদা ওই যে ওটাকে কি বলে?
- মারভেল?
-- মারভেল। হ্যাঁ মারভেল কমিকস।
- ওদের তো বিরাট ব্যাপার।
-- সিনেমা শুরুর আগেই দেখায় মারভেল। কত রকম কমিকস হয় ওখানে।
- বিশাল ব্যাপার।
-- আমি আগে আনন্দবাজার নিতাম। আনন্দবাজারে বের হতো রিপ কারবি। আর জাদুকর ম্যানড্রেক...
- অরণ্যদেব...
-- বের হতো তো আমি ওখান থেকে, রিপ কারবির ছবি এতো ভালো লাগতো, কাগজ থেকে কেটে
কেটে খাতায় আটকে রাখতাম। এখনও বোধহয় কোথাও থাকবে সেগুলো। রিপ কারবির ছবি কেটে আমি লাগিয়ে রাখতাম ড্রইং গুলোর জন্যে, এতো ভালো লাগতো। কথা হচ্ছে বিদেশে এই গুলো নিয়ে সিরিয়াল হয়, সিনেমা হয় প্রচারটা পায়। অ্যানিমেশন হয়।
- ঠিক।
-- আর এখন তো ওদেশে যে অ্যানিমেশন হচ্ছে সে গুলো তো মনে হয় রিয়েল লাইফের থেকে কোনও অংশে কম নয়।
- মনে হয় একদম রিয়েল।
-- এক্কেবারে রিয়েল তার চলা বলা একদম স্বাভাবিক। সব চেয়ে বড় কথা এই যে, শেষ ছবিটা ওই পরিচালকের অভতার, অভতার-এর যে ত্রিমাত্রিক থ্রিডিঅ্যানিমেশন কেউ বলবে যে ওগুলো সত্যি নয় তার মানে কতো উঁচুতে পৌঁছে গেছে ওঁদের প্রযুক্তি। আমাদের এখানে কেউ ভাবতেই পারে না। আমরা সেই যুগেই পরে আছি এখনও এই সব চলছে আর কি।

- অনেকক্ষণ গল্প হল আপনার সাথে আপনি নিশ্চয় এবার বিশ্রাম নেবেন...
-- আমার সময়টা ভালো কাটল...
- আমার তো দারুণ দা-রু-ণ কাটল সময়টা। আপনার অনেকটা সময় নিয়ে নিলাম আজকে।
-- আরে আমারও তো ভালো লাগলো...
- আজকে আসি, আবার আসব একদিন আপনার সাথে গল্প করতে। অনেক নতুন কিছু জেনে যাব।
-- নিশ্চয়...

 ******
নারায়ণ দেবনাথ বিস্ময়কর প্রাণশক্তি নিয়ে এখনও প্রতিমাসে একাধিক কমিকস করে চলেছেন। আধুনিক কালের সমস্ত বিষয়েই এই নব্বই স্পর্শ করা মানুষটির প্রবল উৎসাহ সত্যিই বিস্মিত করে।
আলোচনা শেষ করার পর মনে হচ্ছিল এই কথাবার্তা স্বচ্ছন্দে আরও ৩ ঘণ্টা চলতে পারত। একটানা ৩ ঘণ্টার ওপর কথা বলার পরেও উনি ততটাই প্রাণবন্ত ছিলেন। কিন্তু সময়ের  খাতিরে আলোচনা এক সময় শেষ তো করতেই হয়।  

*এই সাক্ষাৎকার আগে লেখকের নিজের ব্লগ 'বই আর কমিকস'-এ প্রকাশিত। এখানে আবার লেখকের অনুমতিক্রমে প্রকাশ করা হল। পুরনো বই আর কমিকস নিয়ে তৈরি এই ব্লগ আমাদের খুব প্রিয়। আপনারাও পড়ে দেখুন।


About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই