Monday, January 30, 2017

শীতের কাছাকাছি -- শৌভিক



আমি একটু আধটু জ্বর করি।
ঘুম থেকে দেরি হয়, টেনে নিই পুরনো চাদর।
ক্রমাচ্ছন্ন। বুঁদ হই।
বই পড়া হয় না। চোখে লাগে। আবার ঘুমিয়ে পড়ি। 

পাহাড়, ঝর্ণা, রেন্ট হাউস, পাথুরে সিঁড়ি। বারান্দার সোজাসুজি লম্বা প্যাসেজ। সার দেওয়া তিনটে ঘর। প্রথম ঘরটায় সবাই বসে আছে। গল্প, হাসি, অন্তাক্ষরী, ফল-ফুল-দেশ-পাখি। ফ্রাইং প্যানে টগবগিয়ে ফুটছে জল। পাহাড়ে বন্‌ধ আজ। লাঞ্চে ডিমসেদ্ধ পাউরুটি, মাখন; চাইলে জেলি। বড়মার ব্যাগ থেকে উঁকি দিচ্ছে গোলমরিচের কৌটো। দিদা বিট-নুনের শিশি সামলায়, একটু সুযোগ পেলেই ঢেলে নিয়ে দৌড় দেব, তক্কে তক্কে আছি। বারান্দায় মা, ছোটমাসি দাঁড়িয়ে আছে। সামনে তাকালে নিচে যাওয়ার সিঁড়ি।

এক-পা নামতেই বকুনি। দু’পা নামলে বিচ্ছু বদনাম। তিন পা এগোলে কানমলার হুমকি। চার ধাপ পেরোলে থাপ্পড়ের প্রতিশ্রুতি। পাঁচ পা নামলে ছেলেধরা...

এরপরও সাহস করে আর এক ধাপ এগোলে খুন খারাপি কিছু একটা হয়ে যাবে, মার গলার আওয়াজ জানিয়ে দিচ্ছে।

আর  ভরসা হয় না।

‘উঠে আয়, উঠে আয়, এক্ষুনি উঠে আয়।’

ফিরতি পায়ে এক দুই...সিঁড়ি গুলো খুব খাড়াই। হামাগুড়ি দিয়ে উঠতে হয়। উপর দিকে মুখ তুললেই মার কড়া দৃষ্টি। সেদিকে চোখ রেখে নামতে গিয়েই হঠাৎ পপাত চ। কপালে একটু লাগলো।

উঠছি। এবার দ্রুত। নইলে আর আস্ত থাকবো না।

Monday, January 23, 2017

একটি মৃত্যু সংক্রান্ত কাহিনী -- তপোব্রত

উৎস
ষোলই জানুয়ারি, সোমবার!

সকাল সকাল যমরাজ সভায় গিয়ে দেখলেন সন্তোষপুরের নিবারণ পাল একটা ছেঁড়া গেঞ্জি আর নীল চেক-চেক লুঙ্গি পরে শুকনো মুখে মোবাইলে ক্যান্ডি ক্রাশ খেলছেন। চিত্রগুপ্ত (মানে ঐ জহর রায় লুক-অ্যালাইক) তাক থেকে রোজকার হিসেব নিকেশের খাতাগুলো নামিয়ে ধুলো ঝাড়ছে আর দুটো যমদূত এক কোণে বসে গুলতানি মারছে।

“কি ব্যাপার? এটা কে?”- নিবারণবাবুকে দেখিয়ে প্রশ্ন করলেন যমরাজ। “স্যার, এনার নাম নিবারণ পাল। কাল রাত্তিরে সিগনাল পেয়ে জোড়া-ব্রিজের পাশের গলি থেকে তুলে এনেছি। বাকি ডিটেল চিত্রবাবু জানেন।”- কান চুলকোতে চুলকোতে বললো এক যমদূত, “আমাদের নাম দু’টো মান্থলি পারফর্মেন্সের খাতায় লিখে নিন, তারপর যাই গিয়ে রেস্ট নিই। মেলা পরিশ্রম হয়েছে।”

আজকাল সিন্ডিকেটের বাজারে এইসব পাতি যমদূতরাও যমরাজকে ভয় পায় না। গম্ভীর মুখে মনে মনে ওদের বাপ-বাপান্ত করতে করতে চিত্রগুপ্ত নাম দু’টো লিখে নিয়ে দু’টোকে বিদায় করলেন। এই জানুয়ারি থেকেই শুরু হয়েছে, এবার ডিসেম্বর অবধি কে ক’জনকে নিয়ে এলো তার ভিত্তিতেই বছরের শেষে ‘যমালয়-শ্রী’, ‘মহাযমদূত’ এইসব পুরস্কার দিতে হবে।

নিবারণবাবু পিটপিট করে ব্যাপারটা দেখছিলেন। যমদূত দু’টো কেটে পড়ার পর গুটিগুটি যমরাজের সামনে এসে একটা সেলাম ঠুকলেন।


ইচ্ছে -- ঐকিক


      - খুব ইচ্ছে করে।
- কি?
- সে জানিনা, শুধু জানি ইচ্ছে করে। ক্যাপসুল লিফটে, গাড়ির মধ্যে, ঘরে, জানালার ধারে, সব সময় ইচ্ছে করে।
- অত ইচ্ছের কি আছে আবার? চুপ করে বোস।
- কিন্তু ইচ্ছেপূরণ না হলে মন খারাপ হয় যে ... তোর ইচ্ছে করে না?
- তোর না শরীর খারাপ? জল খা। কাল জানিস, কি হয়েছে? আমার যে ছোট মাসি জামশেদপুরে থাকে, আরে ... যার বরের ক্যান্সার হয়েছিল ...
- একটু চুপ কর। উত্তর দিবি না, তোর ইচ্ছে করে কি না?
- আমার তোর মত অত বাঁধভাঙা ইচ্ছে-টিচ্ছে করে না বাপু। তোর সবেতেই একটু বেশি বেশি।
- বেশ। এই চুপ করলাম।
- আচ্ছা, ঠিক আছে, আর গোসা করতে হবে না। আমারও মাঝেমধ্যে অল্পস্বল্প ইচ্ছে করে। হল এবার?
- লোকজনের মধ্যে? না আড়াল চাই?
- ধুর! লোকজনের মধ্যে! পাগল নাকি? কেউ না থাকলে ভেবে দেখতেও পারি।
- চল না, এই দেখ, ধারেকাছে কেউ কোত্থাও নেই।
- ধুস! যখন-তখন ইচ্ছে হলেই হয় নাকি?
- হয়। দেখবি?
- ................
- কি হল?
- ......... দেখা।



কয়েক সেকেন্ড পরে জনান্তিকে একটি বায়ুনিঃসরণের শব্দ পাওয়া গেল।

Monday, January 16, 2017

যে ছিলো আমার... -- ঊর্মি

উৎস
     একটা চারকোনা উঠোন, তার দু’টো দিক জুড়ে বাথরুম, কলের পাড়সহ চারটে ঘর। উঠোনের আরেক কোণে একটা ঝাঁকড়া মাথা শিউলি ফুলের গাছ। কলের পাড় ঘেঁষে একটা খুব সরু রাস্তা ঢুকে গেছে পাশের বাড়িতে, কোনো দেওয়ালের বালাই নেই। সেই বাড়ি টপকে আরেকটা বাড়ি পেরোলেই অন্য একটা গলি, ধরে ডানদিকে কিছুটা এগিয়ে গেলেই বড় রাস্তা, বড় রাস্তা ধরে দুটো বাড়ির সামনে দিয়ে ফিরলেই মিঠির বাড়ির দোরগোড়া হয়ে সেই চারকোনা উঠোন। 


About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই