বিশ্ববিদ্যালয়ে
পড়াকালীন প্রথম হাতে খড়ি হয় অর্কুটে। নতুন বন্ধু পাতানো, পুরনো বন্ধু খুঁজে বার
করা, ছবি-ভিডিও শেয়ার করা- এই সব ব্যাপারগুলোতে খুব তাড়াতাড়িই সড়গড় হয়ে যাই। অস্বীকার করব না social network আমার জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়ে। এরপর আসে ফেসবুকের পালা- আরো অনেক মন ভোলানো নতুন চমক নিয়ে। তারমধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ছিল গেম খেলা। নিজের অথবা বন্ধুর ফার্মে জমি চাষ করতে অনেক বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছি, এমন কি সময় মতো তা না করতে পারলে চোখের জলও ফেলেছি। হ্যাঁ, কিছুটা বাড়াবাড়ি যদি মনে হয়– তো তা-ই বটে। সেই মোহ-ও কেটে গেছে অনেক দিন হল। তবে ফেসবুক প্রীতি এখনো কাটেনি। ফেসবুক পেজ-এ নিত্যদিন নিত্যনতুন জিনিস না দেখলে কেমন যেন পিছিয়ে গেছি বলে মনে হয়। আর তার-ই একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে বন্ধুদের স্ট্যাটাস আপডেট। কোনো একটা মজার মন্তব্য আর তাকে ঘিরে কুড়ি-তিরিশটা কমেন্ট। কিন্তু কয়েকদিন যাবৎ খেয়াল করছি লোকজনের স্ট্যাটাস ভারী অদ্ভুত অদ্ভুত। এই যেমন বউ বাপের বাড়ি গেছে তাতে বরের ফেসবুক স্ট্যাটাস ‘আজ তোমাকে খুব মিস করছি!’ একটা কথা কিছুতেই মাথায় ঢোকে না
মোবাইল জমানায় স্পাউসকে মিস্ করার কথা ঠিক ফেসবুকে কেন জানাতে হয়? এমনকি প্রেমিক-প্রেমিকার ঝগড়া হলেও তার আপডেটও স্ব-মহিমায় বিরাজ করে ফেসবুকে। বাবা অপারেশন থিয়েটারে (O.T.), তাতে উদ্বিগ্ন সন্তানের স্ট্যাটাস- ‘ফ্রেন্ডস প্রে ফর মাই ফাদার।’ বাবা কেন, যেকোনো পরিচিতই O.T. তে থাকাকালীন কেন যে ফেসবুকে এইর’ম ধারার স্ট্যাটাস আপডেট দেওয়ার কথা মনে পড়ে তাও আমি বুঝিনে। সত্যি যদি দুশ্চিন্তা হয় তাহলে কি সেটা এভাবে জানান দেওয়া সম্ভব? আর তাতে কমেন্টও করে এমন সব বন্ধুরা যাদের কাছে হয়তো আপনার লাস্ট নেম-টাও অজানা। আমি দুঃখে আছি ... আমার মনে ভারী কষ্ট... এই ধরণের ঘ্যানঘ্যানানি বক্তব্য শুনলে সত্যি বড্ড বিরক্ত লাগে। মনে হয় মানুষজন দিন দিন attention seeker হয়ে পড়ছে। প্রেম নিবেদন থেকে পরিবারের মঙ্গল কামনা- জানি সবই পারসোনাল ব্যাপার... আপনি বলবেন আমার ঘরের দেওয়াল (wall) আমি যেকোন শো-পিস দিয়ে সাজাতে পারি। কিন্তু আমার আপত্তি তো সেখানেই। যদি ব্যাপারটা পারসোনাল-ই হয় তো ঘরের দরজাটা একটু বন্ধ করতেই বা ক্ষতি কি? বিরক্তিটা চরমে উঠল কয়েক হপ্তা আগে। গোটা উত্তরবঙ্গ যখন ভূমিকম্পের পর ভীত-সন্ত্রস্ত ঠিক তখনি আমার এক উত্তর-বঙ্গবাসী বন্ধু স্ট্যাটাস-এ লিখে বসল – ‘প্লিজ গড সেভ মাই ফ্যামিলি’- কিন্তু মহাশয়, তা তোমার পরিবার যদি সুস্থ না থাকতো, তুমি কি ৬.৯ রিখটার স্কেলের ভূ-কম্পনের পর এই আদিখ্যেতা করতে পারতে? শুধু তাই নয়, সেই পোস্ট এ আবার কিছু লোকের কমেন্ট – ‘হ্যাঁ-রে সাউথ সিটি-র ওপরটাও বেশ কেঁপে উঠেছিলো’, আর তারপর তা নিয়ে চললো একরাশ খিল্লি। কিছুদিন আগে দিল্লি যখন একদিকে ব্লাস্ট আর ভূমিকম্পের ধাক্কা সামলাচ্ছে তখন এক প্রাপ্তবয়স্ক ভারতবাসী বলে বসলেন-‘দিল্লির তো আজ থরথর কাঁপে হিয়া :D’। এই ঘটনায় আনন্দের উদ্রেক কি করে হয় বলতে পারবেন? জাপানের সুনামি থেকে অণ্ণা হাজারে যেকোনো বিষয়েই ‘I am with….’ ঘরে বসে এটুকু না করলেও চলে। কিন্তু কিছু একটা প্রমাণের আশায় অনেকেই এটা প্রায়শই করে থাকে। শুধু তাই কেন ‘চাইল্ড লেবার’ থেকে ‘সেভ দা উইমেন চাইল্ড’- যেকোনো issue-তেই ফেসবুকে একটা লাইক করাতো রীতিমত গ্ল্যামারাস একটা ব্যাপার। আর তা নিয়ে বিন্দুমাত্র প্রশ্ন করলেই তৎক্ষণাৎ উত্তর আসে ‘কেন social awareness!’ ১.২ বিলিয়ন জনসংখ্যার দেশে যেখানে পনেরো শতাংশ ছেলেমেয়ে উচ্চবিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগটুকুও পায়না, সেখানে এই মাধ্যমে ‘social awareness’! উত্তরটা খাটে কি? হলফ করে বলতে পারি এদের অধিকাংশের বাড়িতে গেলেই অনূর্ধ্ব ষোল গৃহকর্মী দেখতে পাবেন। আর সেই গৃহকর্মীদের শিক্ষার বিষয়ে এরা মাথা ব্যথা না করলেও বিয়ের পণ দেওয়ার সময় অবশ্যই অর্থ সাহায্য করে থাকেন। ভারী ভারী কথা না হয় অনেক হল- এবার আর একখানা হাস্যকর স্ট্যাটাসের গপ্পো বলি। মাঝরাতে একদিন দেখি সুদূর আমেরিকা থেকে এক বন্ধু স্ট্যাটাসে লিখেছে- ‘ohhh suddenly my elder son is having 103 fever- plz bless him’। আর তাতে সুচিন্তিত যে সক্কোল বন্ধুগণ blessings জানিয়েছেন তাতে মাতৃদেবীর ‘like’। এই ঘটনার ঠিক ২৪ ঘণ্টা বাদের স্ট্যাটাস ... জানতে ইচ্ছে করছে না? ‘he is now fine , his temp reduced ....... Thankx to all of u for your kind blessings’।
করা, ছবি-ভিডিও শেয়ার করা- এই সব ব্যাপারগুলোতে খুব তাড়াতাড়িই সড়গড় হয়ে যাই। অস্বীকার করব না social network আমার জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়ে। এরপর আসে ফেসবুকের পালা- আরো অনেক মন ভোলানো নতুন চমক নিয়ে। তারমধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ছিল গেম খেলা। নিজের অথবা বন্ধুর ফার্মে জমি চাষ করতে অনেক বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছি, এমন কি সময় মতো তা না করতে পারলে চোখের জলও ফেলেছি। হ্যাঁ, কিছুটা বাড়াবাড়ি যদি মনে হয়– তো তা-ই বটে। সেই মোহ-ও কেটে গেছে অনেক দিন হল। তবে ফেসবুক প্রীতি এখনো কাটেনি। ফেসবুক পেজ-এ নিত্যদিন নিত্যনতুন জিনিস না দেখলে কেমন যেন পিছিয়ে গেছি বলে মনে হয়। আর তার-ই একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে বন্ধুদের স্ট্যাটাস আপডেট। কোনো একটা মজার মন্তব্য আর তাকে ঘিরে কুড়ি-তিরিশটা কমেন্ট। কিন্তু কয়েকদিন যাবৎ খেয়াল করছি লোকজনের স্ট্যাটাস ভারী অদ্ভুত অদ্ভুত। এই যেমন বউ বাপের বাড়ি গেছে তাতে বরের ফেসবুক স্ট্যাটাস ‘আজ তোমাকে খুব মিস করছি!’ একটা কথা কিছুতেই মাথায় ঢোকে না
মোবাইল জমানায় স্পাউসকে মিস্ করার কথা ঠিক ফেসবুকে কেন জানাতে হয়? এমনকি প্রেমিক-প্রেমিকার ঝগড়া হলেও তার আপডেটও স্ব-মহিমায় বিরাজ করে ফেসবুকে। বাবা অপারেশন থিয়েটারে (O.T.), তাতে উদ্বিগ্ন সন্তানের স্ট্যাটাস- ‘ফ্রেন্ডস প্রে ফর মাই ফাদার।’ বাবা কেন, যেকোনো পরিচিতই O.T. তে থাকাকালীন কেন যে ফেসবুকে এইর’ম ধারার স্ট্যাটাস আপডেট দেওয়ার কথা মনে পড়ে তাও আমি বুঝিনে। সত্যি যদি দুশ্চিন্তা হয় তাহলে কি সেটা এভাবে জানান দেওয়া সম্ভব? আর তাতে কমেন্টও করে এমন সব বন্ধুরা যাদের কাছে হয়তো আপনার লাস্ট নেম-টাও অজানা। আমি দুঃখে আছি ... আমার মনে ভারী কষ্ট... এই ধরণের ঘ্যানঘ্যানানি বক্তব্য শুনলে সত্যি বড্ড বিরক্ত লাগে। মনে হয় মানুষজন দিন দিন attention seeker হয়ে পড়ছে। প্রেম নিবেদন থেকে পরিবারের মঙ্গল কামনা- জানি সবই পারসোনাল ব্যাপার... আপনি বলবেন আমার ঘরের দেওয়াল (wall) আমি যেকোন শো-পিস দিয়ে সাজাতে পারি। কিন্তু আমার আপত্তি তো সেখানেই। যদি ব্যাপারটা পারসোনাল-ই হয় তো ঘরের দরজাটা একটু বন্ধ করতেই বা ক্ষতি কি? বিরক্তিটা চরমে উঠল কয়েক হপ্তা আগে। গোটা উত্তরবঙ্গ যখন ভূমিকম্পের পর ভীত-সন্ত্রস্ত ঠিক তখনি আমার এক উত্তর-বঙ্গবাসী বন্ধু স্ট্যাটাস-এ লিখে বসল – ‘প্লিজ গড সেভ মাই ফ্যামিলি’- কিন্তু মহাশয়, তা তোমার পরিবার যদি সুস্থ না থাকতো, তুমি কি ৬.৯ রিখটার স্কেলের ভূ-কম্পনের পর এই আদিখ্যেতা করতে পারতে? শুধু তাই নয়, সেই পোস্ট এ আবার কিছু লোকের কমেন্ট – ‘হ্যাঁ-রে সাউথ সিটি-র ওপরটাও বেশ কেঁপে উঠেছিলো’, আর তারপর তা নিয়ে চললো একরাশ খিল্লি। কিছুদিন আগে দিল্লি যখন একদিকে ব্লাস্ট আর ভূমিকম্পের ধাক্কা সামলাচ্ছে তখন এক প্রাপ্তবয়স্ক ভারতবাসী বলে বসলেন-‘দিল্লির তো আজ থরথর কাঁপে হিয়া :D’। এই ঘটনায় আনন্দের উদ্রেক কি করে হয় বলতে পারবেন? জাপানের সুনামি থেকে অণ্ণা হাজারে যেকোনো বিষয়েই ‘I am with….’ ঘরে বসে এটুকু না করলেও চলে। কিন্তু কিছু একটা প্রমাণের আশায় অনেকেই এটা প্রায়শই করে থাকে। শুধু তাই কেন ‘চাইল্ড লেবার’ থেকে ‘সেভ দা উইমেন চাইল্ড’- যেকোনো issue-তেই ফেসবুকে একটা লাইক করাতো রীতিমত গ্ল্যামারাস একটা ব্যাপার। আর তা নিয়ে বিন্দুমাত্র প্রশ্ন করলেই তৎক্ষণাৎ উত্তর আসে ‘কেন social awareness!’ ১.২ বিলিয়ন জনসংখ্যার দেশে যেখানে পনেরো শতাংশ ছেলেমেয়ে উচ্চবিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগটুকুও পায়না, সেখানে এই মাধ্যমে ‘social awareness’! উত্তরটা খাটে কি? হলফ করে বলতে পারি এদের অধিকাংশের বাড়িতে গেলেই অনূর্ধ্ব ষোল গৃহকর্মী দেখতে পাবেন। আর সেই গৃহকর্মীদের শিক্ষার বিষয়ে এরা মাথা ব্যথা না করলেও বিয়ের পণ দেওয়ার সময় অবশ্যই অর্থ সাহায্য করে থাকেন। ভারী ভারী কথা না হয় অনেক হল- এবার আর একখানা হাস্যকর স্ট্যাটাসের গপ্পো বলি। মাঝরাতে একদিন দেখি সুদূর আমেরিকা থেকে এক বন্ধু স্ট্যাটাসে লিখেছে- ‘ohhh suddenly my elder son is having 103 fever- plz bless him’। আর তাতে সুচিন্তিত যে সক্কোল বন্ধুগণ blessings জানিয়েছেন তাতে মাতৃদেবীর ‘like’। এই ঘটনার ঠিক ২৪ ঘণ্টা বাদের স্ট্যাটাস ... জানতে ইচ্ছে করছে না? ‘he is now fine , his temp reduced ....... Thankx to all of u for your kind blessings’।
নাহ্, এই স্ট্যাটাস বৃত্তান্ত
চলতে থাকলে চলতেই থাকবে, তাই আজ এখানেই ইতি টানি... তবে যাওয়ার আগে অবশ্যই মনে
করিয়ে দিতে চাই – “pay attention while walking, your
facebook status update can wait”।