Monday, February 11, 2013

দূরদেশী সেই স্বর্ণপদক (৩) -- শুভ

<<আগের কিস্তি

Les Misérables :


'Les Misérables' বা ইংরাজিতে 'The Misérables'.... ১৮৬২ সালে প্রকাশিত ফরাসি ঔপন্যাসিক ভিক্টর হুগো'র লেখা দুনিয়া কাঁপানো উপন্যাস। তা নিয়েই গত বছরের অস্কারজয়ী পরিচালক Tom Hooper -এর নির্মিত ছবি এবারেও অস্কারে মনোনীত ৮-টি বিভাগে। আদতে রিমেক বলতে আমরা যা বুঝি, এই সিনেমাটি আসলে তাই। এর আগে ১৯৩৫, ১৯৫৮ এবং ১৯৯৮ সালে তিন তিনবার এই একই উপন্যাস নিয়ে সিনেমা হয়েছে। এছাড়া অসংখ্যবার ইউরোপের বিভিন্ন থিয়েটারে অভিনীত হয়েছে এই একই গল্পের উপর তৈরি হওয়া চিত্রনাট্য। ২০০০ সালে টেলিভিশনে হয়ে গেছে একটা মিনি সিরিজ। বোঝা গেল, 'Les Misérables' ইউরোপিয়ানদের, বিশেষ করে ব্রিটিশ আর ফরাসিদের কাছে বেশ একটা ব্যাপার! কেন? একটু গল্পটা শুনে নেওয়া যাক তাহলে।


গল্পের প্রধান চরিত্র Jean Valjean একজন সদ্য জেলফেরত অপরাধী। ঈশ্বরের উপর অটল বিশ্বাস আর বহুবছরের কঠোর সাধনার জোরে একদিন সে হয়ে ওঠে ফ্রান্সের কোন এক শহরের মেয়র। তাঁরই অধীনে কর্মরতা Fantine -এর মৃত্যুর পর তাঁর একমাত্র কন্যা Cosette -কে দেখভালের দায়িত্ব এসে বর্তায় Jean Valjean -এর উপর। ইতিমধ্যে নাম বদলে অতীত জীবনের কলঙ্কিত অধ্যায়কে পিছনে ফেলে নতুন জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হলেও ইন্সপেক্টর Javert কিন্তু ভুলে যান নি পুরনো অপরাধীকে। Parole ভাঙ্গার দায়ে অভিযুক্ত Valjean -কে এখনো খুঁজে চলেছেন দৌর্দণ্ডপ্রতাপ Javert। এরই মাঝে দেখানো হয়েছে ফ্রান্সের তদানীন্তন রাজনৈতিক অস্থিরতা। না, ফরাসি বিপ্লব নয়। এই আন্দোলন পরিচিত 'June Rebellion' নামে।

এই আক্ষরিক অর্থেই 'in a nutshell' বর্ণনা শুনে 'Les Misérables' -এর খ্যাতির কারণ বোঝা গেল না তো? বোঝার কথাও নয়। পুরো সিনেমাটা গোগ্রাসে গিলে না ফেললে আমিও বুঝতাম না। মতভেদ আছে
মাঝপথে হল থেকে বেরিয়ে এসেছেন এমনও অনেকে আছে। সেকথায় পরে আসছি। আমারই লেখা যখন, নিজের কথাটা আগে শোনাতে ছাড়ি কেন? এর আগে এই অধমের musical দেখার অভিজ্ঞতা বলতে ঐ “Sound of Music”, যা দেখেননি এমন সিনেমাপ্রেমী বিরল। ও, আগে তো বলাই হয় নি... 'Les Misérables' আদতে একটি musical। সিনেমার শুরুতেই সেটা বুঝতে পেরে একটু সংশয়ে ভুগছিলাম। হল থেকে বেরোলাম সব সংশয় ধুয়ে দিয়ে ঝাড়া আড়াই ঘণ্টার এক অনবদ্য অভিজ্ঞতা নিয়ে। এই আড়াই ঘণ্টায় কখনও যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গেছি, কখনও প্রচণ্ড রাগে হাত মুঠো করেছি, কখনও নিজের অজান্তেই চোখের পাতা জলে ভিজে উঠেছে, কখনও হেসে উঠেছি আবার কখনও বিপ্লবী ছাত্রদের সাথে নিজেকে একাত্ম করে প্যারিসের রাস্তায় হেঁটে বেরিয়েছি। কলাকুশলীদের মধ্যে Fantine -এর চরিত্রে Anne Hathaway -র নামটাই সবার আগে করতে হয়। অত্যন্ত স্বল্পপরিসরে শুধু চরিত্রটির উপর সুবিচার করা নয়, আমার মতে Fantine -এর 'I Dreamed a Dream' -গানটিই পুরো ছবির চরিত্র নির্ধারণ করে দিয়েছে। ভালো লেগেছে Marius -এর চরিত্রে Eddie Redmayne -কে। ইন্সপেক্টর Javert -এর চরিত্রে Russel Crowe যথেষ্ট মানানসই। তবে চরিত্রটিকে মেলে ধরার আর একটু সুযোগ দিলে ভালো হত। আগাগোড়া মন খারাপ করা সিনেমাটিতে কমিক রিলিফ Thenardier দম্পতি। এই দুই চরিত্রে Sacha Baron Cohen এবং Helena Bonham Carter দু’জনেই অনবদ্য। সর্বোপরি একদম নতুন চেহারায় পাওয়া গেছে 'wolverine' Hugh Jackman -কে। তিনিও যে চরিত্রাভিনেতা হতে পারেন তার স্বাক্ষর নিশ্চিতভাবেই রাখতে পেরেছেন এই সিনেমায় Jean Valjean -এর চরিত্রের মাধ্যমে। Wiki -র দৌলতে জানা গেল সিনেমাটিতে মোট গান আছে ৫১ টি। তার মধ্যে কয়েকটি অবশ্য আছে একাধিকবার। আর বিশ্বাস না হলেও সত্যি, প্রত্যেকটা গানই কলাকুশলীদের নিজেদের গাওয়া শুটিং চলাকালীন, অর্থাৎ কিনা studio -তে রেকর্ড করে পরে লিপ দেওয়া নয়। কাজটা শুনতে যতটা শক্ত মনে হচ্ছে, আদতে তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি শক্ত। শুটিং-এর সময় অভিনেতাদের থেকে থেকেই লেবু মেশানো গরম জল খাওয়াতে হয়েছে তাঁদের গলা ঠিক রাখার জন্য। Hugh Jackman জানিয়েছেন, এমন এমন কিছু দিন কেটেছে, যেদিনগুলোতে তাঁকে সারাদিন ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে গাইতে হয়েছে।


এখানে মনে রাখতে হবে, এঁরা কেউই কিন্তু পেশাদার গায়ক নন! জানা গেল, Sacha Baron Cohen -এর এটাই নাকি প্রথমবার Les Misérables -এর জন্য অডিশন দেওয়া নয়। আগেরবার স্রেফ ভালো নাচতে না জানার জন্য বাদ পড়তে হয়েছিল তাঁকে। অবশেষে সেই সুযোগ পেয়ে তিনি আপ্লুত। তবে নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সাবধান করে দিয়েছেন, সিনেমা দেখতে বসার আগে বাথরুম-টাথরুম সেরে রাখতে...... আড়াই ঘণ্টার সিনেমা কিনা!



এবার শোনা যাক নিন্দুকেরা কী বলছেন? সবচেয়ে বেশি করে যে কথাটা উঠে এসেছে তা হলো ঐ কলাকুশলীদের দিয়ে শুটিং -এ লাইভ গান গাওয়ানো। অনেকের মতে নতুন প্রচেষ্টাটি একেবারে মাঠে মারা গেছে। রেগেমেগে অনেকে বলেই ফেলেছেন, প্রত্যেক লাইনের তৃতীয় বা চতুর্থ শব্দটিকে টেনে লম্বা করে দিলেই গান হয় না। তাঁদের আরও অভিযোগ, প্রতি তিন-চার লাইন পর পরই নাকি সুর রিপিট হয়েছে। Russel Crowe -এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি নাকি গাইতেই জানেন না। অনেকে হতাশ পুরনো দিনের প্যারিসের চেহারা দেখে। তাঁদের মতে খরচ কমানোর জন্য এবং ঠিকঠাক সেট বানাতে না পারার দুর্বলতা ঢাকার চেষ্টা হয়েছে প্যারিসের রাস্তার বেশিরভাগ সিনকে ক্লোস-আপ -এ দেখিয়ে। কেউ কেউ একধাপ এগিয়ে বলেছেন, স্টেজ থেকে তুলে এনে 'Les Misérables' -কে স্রেফ হত্যা করেছেন পরিচালক। তিনি নাকি গল্প বলতেই জানেন না। সিনেমার দৈর্ঘ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাঁদের মতে কিছু ডায়লগ যখন কাটা কাটা করাই হয়েছে, তখন আরও কিছু জায়গায় অহেতুক গান না ঢুকিয়ে ঐভাবে সিনেমাটিকে আর একটু ছোট করে ফেলাই যেত। আগেই বলেছিলাম, এ নিয়ে ইংরেজ আর ফরাসীদের নাক ভয়ানক উঁচু। অতএব পরিচালকের নাম Tom Hooper হলেও গালিগালাজ একটু শুনতেই হবে। তাই আর অন্যের মুখের ঝাল না খেয়ে বরং নিজেই সময় করে সিনেমাটি দেখে ফেলুন। বলছি, কারণ বাকি অভিযোগগুলি অধিকাংশই পরস্পরবিরোধী। তবে দেখে ভালো লেগেছে এমন দর্শকের সংখ্যা কম তো নয়ই, বরং বেশিই। তাঁদের অভিজ্ঞতাও অনেকটা আমারই মত। Golden Globe -এর খেতাব জুটেছে...... কিন্তু অস্কার? এখন শুধুই অপেক্ষা!


Argo:




গল্পের সময় ১৯৭৯স্থান ইরান। রাজধানী তেহরানে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে কিছু উগ্রপন্থী হঠাৎই হামলা চালায় আমেরিকান দূতাবাসে সদ্য সিংহাসনচ্যুত শাহ্‌-কে সে দেশে আশ্রয় দেওয়ার প্রতিবাদে। পণ-বন্দি হয়ে পড়েন দূতাবাসের ৫০ -এরও বেশী কর্মী। এদিকে হামলাকারীদের অজান্তে সেখান থেকে পালিয়ে কানাডার দূতাবাসে আশ্রয় নেন আরও ৬ জন কর্মী। এই ৬ জনের পরিচিতি গোপন রেখেই তাঁদের তেহরান থেকে নিরাপদে বের করে আনার জন্য এক অভিনব পন্থার আশ্রয় নেয় C.I.A  এজেন্ট Tony Mendez। বাকিটাও বলে দিলে তো থ্রিলারের আনন্দই মাটি। তবে জানিয়ে রাখি, ঘটনাটি কিন্তু সত্যি এবং সফল চিত্রায়নের ফলে থ্রিলার হিসাবে 'Argo' সফলভাবেই উত্তীর্ণ।


মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই রমরমিয়ে ব্যবসা করার পাশাপাশি সমালোচকদের প্রশংসাও কুড়িয়েছে 'Argo'। পরিচালক Ben Affleck -এর মুকুটে জুড়েছে Golden Globe -এর পালক। অভিনেতা হিসাবেও Tony Mendez -এর চরিত্রে তিনি সাবলীল। নিজেদের ছোট ছোট চরিত্রে আলাদা নজর কেড়েছেন John Goodman আর Alan Arkins। ভালো গল্প, দক্ষ পরিচালনা আর মেদহীন এডিটিং এর জোরে টানা দু'ঘণ্টা 'Argo' আপনাকে বাধ্য করবে সিটের আগায় বসে থাকতে। তবে ইরানের লোকজন কিন্তু বেজায় ক্ষেপে গেছেন। তাঁদের মতে ইরানকে অত্যন্ত খারাপভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে এই সিনেমায় এবং কিছু ক্ষেত্রে তা করা হয়েছে সত্যকে স্রেফ চেপে গিয়ে। ইরানিদের দেখানো হয়েছে বদরাগী, বোকা এবং পিছিয়ে পড়া এক শ্রেণী হিসাবে। তাঁদের মতে এ সমস্তই নাকি ' American capitalism' -এর চক্রান্ত। কানাডিয়ানরাও জানিয়েছেন, তাঁদের কৃতিত্বকে খাটো করে দেখিয়ে পুরো ক্ষীরটা একাই খেয়ে গেছেন Ben Affleck ওরফে Tony Mendez । অর্থাৎ সত্য ঘটনাকে ইচ্ছামত বিকৃত করেছেন পরিচালক। অনেকের মতে সিনেমার শেষ পরিণতি নিয়ে কারও মনে কোন সন্দেহ না থাকায় কোনরকম উত্তেজনাই তৈরি হয় নি। তবে যে যাই বলুন, অস্কারে সাত-সাতটা বিভাগে প্রতিযোগিতায় আছে 'Argo'। কী ভাবছেন অস্কার কমিটি, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।


Zero Dark Thirty:




সময়: রাত ১২ : ৩০
তারিখ: ২ রা মে, ২০১১
স্থান: Abbottabad, পাকিস্তান

বাকিটা আর বলতে হবে না নিশ্চয়। হ্যাঁ, /১১ পরবর্তী বিশ্বের দরবারে সবচেয়ে কুখ্যাত অপরাধী বিন লাদেনের হত্যাই এই সিনেমার বিষয়বস্তু। ঘটনা খুব পুরনো নয়, ভুলে যাওয়ার তো নয়ই। আর যেভাবে C.I.A আর U.S Navy S.E.A.L -এর তৎপরতায় এই ultra-secret অপারেশনটি চালানো হয়েছিল, তা বোধহয় ভবিষ্যতে সমস্ত গোয়েন্দা দপ্তরের কাছে একটা নিদর্শন হয়ে থাকবে। অর্থাৎ একটি জমজমাট গল্প ছিল। তামাম বিশ্বের জনতাকে খাওয়ানো যাবে এমন একটি বিষয়ও ছিল। 'Hurt Locker'-এর দৌলতে পরিচালক Kathryn Bigelow ইতিমধ্যেই সিনেমা-প্রেমীদের কাছে একটি পরিচিত নাম। সর্বোপরি পাকিস্তান বলে যে জায়গাগুলি দেখানো হয়েছে এই সিনেমায়, তার পুরোটাই শ্যুট করা ভারতে। চণ্ডীগড়ের কাছেই Mani Majra নামক ছোট্ট শহরটি Hollywood -এর দাক্ষিণ্যে জায়গা করে নিয়েছে 'Incredible India' -website -এও। সব মিলিয়ে প্রত্যাশা ছিল আর একটা জমজমাট থ্রিলারের। কিন্তু পূরণ হল কই?

খুব তাড়াহুড়ো করে একটা লম্বা সময় ধরে ঘটে যাওয়া অজস্র ঘটনা জুড়ে দিয়ে কিছু একটা বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যেটা সিনেমা বা ডকুমেন্টারি কোন বিভাগেই উত্তীর্ণ হতে পারে নি বলে আমার মনে হয়েছে। ঘটনাপরম্পরা সফল চিত্রায়নের অভাবে এবং হয় তো কিছু ক্ষেত্রে তথ্যের অভাবের কারণে অস্পষ্ট। Maya-র চরিত্রে Jessica Chastian চলনসই। বরং ভালো লেগেছে Dan -এর চরিত্রে Jason Clarke -কে। কিন্তু ঘটনাপরম্পরার মতই এই চরিত্রগুলিও যেন দায়সারা। বন্দীদের উপর C.I.A-এর অকথ্য অত্যাচারের যে দৃষ্টান্ত দেখানো হয়েছে তা বহুদিনের পুরনো বিতর্ক আবার উস্কে দিয়েছে আমেরিকাতে। অনেকের মতে, সিনেমার সংলাপের মধ্যে দিয়ে যেন এই পদ্ধতিকে সমর্থন করার চেষ্টা হয়েছে। খোদ পাকিস্তান বয়কট করেছে সিনেমাটিকে। সে অবশ্য সম্পূর্ণ অন্য কারণে। Distributor -রা নাকি জনরোষের ভয়ে এই সিনেমা নিয়ে বিশেষ আগ্রহী নন। Zero Dark Thirty -র ভবিষ্যৎ কি তবে শুধুই অন্ধকারে? এই দেখুন তবে 'New York Times '-এর critic কি বলছেন:

“...shows the dark side of that war. It shows the unspeakable and lets us decide if the death of Bin Laden was worth the price we paid. There is much else to say about the movie, which ends with the harrowing siege of Bin Laden's hideaway by the Navy SEALs (played by, among others, Joel Edgerton and Chris Pratt), much of it shot to approximate the queasy, weirdly unreal green of night-vision goggles. Ms. Bigelow's direction here is unexpectedly stunning, at once bold and intimate: she has a genius for infusing even large-scale action set pieces with the human element. One of the most significant images is of a pool of blood on a floor. It's pitiful, really, and as the movie heads toward its emphatically non-triumphant finish, it is impossible not to realize with anguish that all that came before – the pain, the suffering and the compromised ideals – has led to this.

অর্থাৎ কিনা আশা আছে। অপেক্ষা আর মাত্র তিন দিনের।

About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই