১
‘সুভাষিতাণী’ কি এই দেশেই লেখা? তুই তো দেখছি হদ্দ বোকা! এ তো খুবই সোজা। আলো না থাকলে আর আঁধার কি যায় বোঝা? আমরা ঘাসের ছোট ছোট ফুল-বুঝেছি সারসত্য। তর’তাজা’ সব নেতারা থাকতে শিক্ষিতরা ‘ব্রাত্য’। কাউকে বলব ‘হেরো মাল’, ‘হলুদ কার্ড’ও আছে। মঞ্চ থেকেই ‘এমন দেবো না... কানের গোড়ার কাছে’। কাস্তেরই বা ধার কি কম? বড়ই মিষ্টি ভাষা- ‘রাজনৈতিক বেশ্যা’ বলেই চওড়া গালে হাসা। “Sorry” বলার অসুখ ছিল রাজা ছিলেন যবে। রানীর দেশে ওসব বালাই মিটেই গেছে কবে। খুব শিগগির এসব নিয়েও পেটেন্ট দরকার। আমার গালি চুরি করেছে- সটান F.I.R.
ভোটের সময় দেওয়া অনেক প্রতিশ্রুতিই রাখা সম্ভব হয় না রাজনেতাদের। কিন্তু নেত্রীর দেওয়া কথা রাখলো প্রকৃতি-এমন ঘটনা বিরল। যাহোক বাঙালি দেখেছে সেটা। কলকাতাকে লন্ডন বানানোর প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়েছে। এই মরসুমের শীতলতম দিনে কলকাতার তাপমাত্রা হারিয়ে দিয়েছে সেদিনের লন্ডনের সর্ব্বোচ্চ তাপমাত্রাকে। বছরে মাত্র দুটি ঋতু- অতিগ্রীষ্ম ও কম গ্রীষ্ম- এই সত্যে অভ্যস্ত বাঙালি শীতের আনন্দ লুটে পুটে নিয়ে চিড়িয়াখানা ও ভিক্টোরিয়া চত্বর নোংরা করেছে যথেচ্ছ। হবে না’ই বা কেন? কলকাতা লন্ডন হয়েছে- থুড়ি, হারিয়ে দিয়েছে লন্ডনকেও! কম আনন্দের কথা?
২
হরতালের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আরও একটি হরতাল।
এমনটাই ঘটতে চলেছে এই পোড়া দেশে। ভাষা দিবস নিয়ে চিন্তিত বঙ্গবামেরা দিল্লির
বামদাদাকে এই নিয়ে আর্জি জানিয়েছেন, এবং আরও অনেক ঐতিহাসিক তথা প্রাগৈতিহাসিক
ভুলের মতই এখানেও মুখঝামটা খেয়ে ফিরে এসেছেন। অবশিষ্ট ভারতে এই হরতালের প্রভাব
কতটুকু হবে তা ভালই জানা আছে। তবে বাঙালির
চিন্তা নেই। বিশ্বময় সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নের ধ্বংসাবশেষটি এখনও পড়ে
রয়েছে
এখানেই। কাজেই ছোট্ট একটা ইতিউতি ট্যুর বা নিদেনপক্ষে ফ্যামিলি পিকনিকের আয়োজন শুরু হয়ে গেছে জোরকদমেই।
এখানেই। কাজেই ছোট্ট একটা ইতিউতি ট্যুর বা নিদেনপক্ষে ফ্যামিলি পিকনিকের আয়োজন শুরু হয়ে গেছে জোরকদমেই।
বিশেষ সংযোজনঃ দ্বিবর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে এবার বন্ধ
দুদিনের (আগামী সপ্তম বর্ষের জন্য আশা ও শুভেচ্ছা রইল)।
৩
মনমোহিনী নাকি জনমোহিনী? দিল্লির দিল নিয়েছে হাতের বরাভয়। আর গুজরাটে জোর গুজব, দেশ নাকি এবার পদ্মময়। ভোট এগিয়ে আসতেই জোটের ঘোঁট। চলন্ত ‘রেল’ থেকে নেমে পড়লেন দিদি। আবার মোলায়েম নিন্দে করেই হাত বাড়ালেন মুলায়ম। জনমত সমীক্ষা বলছে মোদীর আমোদ নাকি অকারণ নয়। কিন্তু শতাব্দীপ্রাচীন শাসকদলের লোক Ra-হুল ফোটাতে তৈরি। এদিকে চৌত্রিশ বছরের চেনা আস্তানা গুটিয়ে যাওয়ায় বামেরা তৃতীয়-চতুর্থ কোনরকম জোটের কথাই তুলতে লজ্জাবোধ করছেন। ফলে লড়াই প্রায় দ্বিমুখী। অবশ্য অন্যান্য লুকোনো মুখও আছে। সেগুলি নির্বাচনোত্তর কালে প্রকাশ পাবে বলেই আশা দেশবাসীর।
৪
আমার রাজ্যে ধর্ষণ হলে সে প্রেক্ষিত অন্য। আমি
দিল্লি কাণ্ডে মোমবাতি হাতে ছুটতে পেরেই ধন্য। মাথার ওপর Her Highness, সকাল বিকেল
শান্তি। বারাসাত থেকে পার্কস্ট্রীট সব মুখ্যু লোকের ভ্রান্তি। খদ্দেরদের গোলমাল সব
চিন্তা নেইকো বিলকুল। পুলিশ ফুলিশ লাগবে না মোটে- ঐ তো রয়েছে আরাবুল। জজবাবুরা
দুষ্টু এমন শুনতে চায় না কথা। অমন শক্ত পুলিশ রিপোর্ট, বলছে কিনা যা-তা! বাড়
বেড়েছে জজসাহেবের বদলি করতে হবে। এই দাওয়াইয়ে কাত করেছি দময়ন্তীকে কবে! বলেইছি তো
‘সাজানো ঘটনা’- তদন্ত নিষ্প্রয়োজন। দেখছেন না, ব্যস্ত আমি, হরেক মেলার আয়োজন!
৫
দক্ষিণী দ্রাবিড়, পূবের সৌরভের পর এবার পশ্চিমের
সচিনও জানিয়ে দিলেন I Shall Never Come ONE DAY. আগের দু’জনার মতো তাকেও
তিতিবিরক্ত করে মারছিল মিডিয়া, বোর্ড এবং প্রাক্তন ভক্তকুল। পূর্বসূরিদের থেকে
শিক্ষা নিয়েই সম্মান থাকতে সরে এলেন। তরুণ তুর্কীরা আড়ালে হাসলেন কেউ কেউ। বেশ
কয়েকটি উপর্যুপরি জয়ের পর ভারত আবার জগতসভায় শ্রেষ্ঠ আসনে আসীন। তবে মাঝখানে
জন্মশত্রু প্রতিবেশীর কাছে পরাজয়ে ক্ষিপ্ত ভক্তদল। বাহিনীর তারুণ্য এবং তার
অকার্যকারিতা নিয়ে খোঁটা দিতে ছাড়লেন না তারা। কথায় আছে বটে ঘুঁটে পুড়লে কারা
যেন......
৬
যুব মেলা, শিল্প মেলা, সরস মেলা, মাটি মেলা
ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের মেলার পর কলকাতায় চলছে বইমেলা। সুখের কথা এটি বাকী
মেলাগুলির মত ভুইফোঁড় নয়, একটি ধারাবাহিক এবং আন্তর্জাতিক মেলা। ময়দানের শোকে
কান্নাকাটি করে লাভ নেই বুঝতে পেরে লাল-সবুজ বোদ্ধা-অবুঝ সবাই মিলন মেলা প্রাঙ্গণে
হাজির হচ্ছেন নিয়মিত। মেলার ঠিক কেন্দ্রস্থলে একটি বিশেষ পত্রিকার স্টলের সরব
উপস্থিতি বোধহয় নিরপেক্ষতা এবং মাটির-মানুষের জয়গান গাইছে। এসব নিয়েও বইমেলা
প্রত্যাশা মতই হিট। তাল কেটেছিল রুশদির আগমন নিয়ে। যাহোক এসবে উনি(রুশদি) এবং আমরা
সবাই অভ্যস্ত। অতএব-“বই পড়ুন,পড়ান......”
৭
বিভিন্ন রকমের বৃথা জল্পনা কাটিয়ে ছাদনাতলায় গেলেন কোয়েল। অনেক হৃদয় ভাঙ্গার শব্দ ঢাকা পড়ল মল্লিকবাড়ির উলুধ্বনিতে। শাড়ীর কোন ভাঁজে
কোন নকশা আর বরের শেরওয়ানীর সুতো কতটা মোটা এই খবর বিগত ছ’মাস ধরে হাঁ করে গিলেছে
বাঙালি- হয়ে গেল তার উদ্যাপন। টলিউডের প্রতিষ্ঠিত, উঠতি, পড়তি সব অভিনেতা ও
নায়িকাদের উপস্থিতিতে সত্যিই ‘সাত পাকে বাঁধা’ পড়লেন নায়িকা। অভ্যাগত পরিচালকেরা
ভুরিভোজের সাথে একটি নীরব বার্তাও পেলেন- এরপর থেকে মিসেস মল্লিক রানেকে কাস্ট
করলেই প্রোডিউস করার জন্য থাকছে পাঞ্জাবী স্পনসর। সাধু, সাধু।
৮
আই পি এল এ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেও সময়টা বিশেষভালো যাচ্ছে না বাদশার। সুযোগ পেতেই তাকে পাকিস্তানে আসার আদুরে আমন্ত্রণ জানিয়েছে
মুম্বই হামলার অভিযুক্ত নেতা। রিমোট কন্ট্রোলে যদি দাঙ্গা ছড়ানো যায়, তবে আর
মন্দ কি। এমনকি প্রতিবেশী রাষ্ট্রটির সংস্কৃতি মন্ত্রীও এই ভারতীয় নাগরিক এবং
অভিনেতা সম্পর্কে খোঁচা দিয়েছে দিল্লিকে। পাক মন্ত্রীদের দায়িত্ববোধ এবং স্থায়িত্ব
দুইই অত্যন্ত স্বল্প।কাজেই এ দিয়েই যতটা সম্ভব উত্যক্ত করা যায় প্রতিবেশীকে,
সেটুকু তারা যথাসাধ্য করেন। কিন্তু এসবে জল ঢেলেছেন বাদশা নিজেই। জানিয়ে দিয়েছেন
ভারতই তাঁর দেশ-Jab Tak Hai Jaan.
৯
সেন্সর বোর্ড হ্যাঁ করেছে, দর্শকরাও রাজী। জলঘোলা
হোক চাননি মোটেই চশমা আঁটা কাজী। কিন্তু বিধি বাম- একটুখানি থাম। ওই সিনটায় দুঃখ
পাবে অশিক্ষিত ধার্মিক। কাজেই ওসব দেখানো যাবে না- রাগ করবে Public। সরকার আমি, চলবে সেটাই বলব যখন যা। এই না বলেই হলের মুখে No Entry দরজা। হলের দোরে পড়ল খিল।
বুঝছি না তো কি মুশকিল। যদি বলি আমি প্রভু বলেছেন লেখাপড়াটাও ভুল। নো চিন্তা,
সেইদিনেতেই ছুটি দেব ইস্কুল। মৃত্যুও তো তেনারই দান, জানেন তো ভাই স্পষ্ট?
হাসপাতালটা বন্ধ করুন-প্রভুর পয়সা নষ্ট!
১০