Monday, April 3, 2017

খট্‌ -- বাসবেন্দু

উৎস

পুরো ব্যাপারটার শুরুয়াৎ শুক্রবার সন্ধে নাগাদ। মানে গত পরশু। সময়টাও মনে আছে কমলেশের বিলক্ষণ - আটটা পনেরো। সাতটা পঁচিশের আপ কাটোয়াটার ফার্স্ট স্টপেজ চন্দননগর, পরেরটাই কমলেশের। ট্রেন থেকে নেমে, একটা চা খেয়ে, ভাঁড়টা লাইন পার করে ফেলে, “এই নামলাম... কিছু আনতে টানতে হবে?” গোছের কথা অনুপমাকে ফোনে জিজ্ঞেস করতে করতে প্ল্যাটফর্মটা পার করে অটোয় উঠতে খুব বেশি হলে মিনিট বারো সময় নেয় বিয়াল্লিশের কমলেশ সরকার। এর অবশ্য হেরফের হয়। হয়, যেদিন উৎপলরাও একই ট্রেনে ফেরে। সেদিন দু’রাউন্ড চা চলে সিগারেট সমেত (বেশিরভাগ দিন দামও মেটায় কমলেশ, আক্ষেপহীন), তারপর নিরুপমদা আর উৎপল এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে হাঁটা দেয়, যেদিকটা সাইকেল গ্যারেজ। কমলেশ দু’নম্বর বরাবর সোজা হাঁটে, “এই নামলাম... কিছু আনতে টানতে হবে?” বলতে বলতে, স্বাভাবিক। গত পরশুও এর’মই একটা দিন ছিলো। তফাতের মধ্যে, কমলেশের খেয়াল ছিলোনা অটোর জন্য আগলে রাখা খুচরো পাঁচ টাকা কমলেশ বাছাই করা সল্টেড বাদামে খরচ করে ফেলেছিলো এবং চায়ের তিন টাকা দিয়ে, “এই নামলাম... কিছু আনতে টানতে হবে?” বলবার সময়ও কমলেশের ঘুণাক্ষরেও মনে পড়েনি পকেটে সর্বনিম্ন টাকার পরিমাণ একশ’, আর স্টেশন থেকে কমলেশের টু বি এইচ কে ফ্ল্যাটের দূরত্বমূল্য সাত। সাতটাকা মাত্র। অতএব, গলির মুখে নেমে, অটোর শেষ যাত্রী কমলেশ, বুকপকেটে হাত দিয়েই উপলব্ধি করে সল্টেড বাদামের কিছুটা দাঁতের গভীর ফাঁকে আটকে আছে যেখানে জিভ পৌঁছোয় না। সুতরাং কমলেশ, রাদার সল্টেড বাদামের অবশিষ্টাংশ উদ্ধাররত কমলেশ, অটোচালকের সাথে নিম্নলিখিত কথোপকথনে লিপ্ত হয়:

অ: “কি হোলো দাদা কি খুঁজ্জেন?”


ক (বিপন্ন হেসে): “না ভাই, অ্যাকচুয়ালি মানে আরকি, আজ অ্যাকদম খুচরো নেই, মানে...”
অ: “ওটার সোমোয়ই তো বোল্লাম দাদা খুজরো না থাকলে চাব্বেন্না, অ্যাকোন আমি কোদ্দিয়ে খুজরো দোবো?”
ক: “না আসলে...”
অ: “ছাড়ুন, দস্ টাকা দিন, কিন্তু ফেরৎ দিতে পারবোনা, পরে নেবেন...”
ক (ঘেমে, বিপন্ন হেসে): “আমার কাছে এই একটাই একশোর নোট আছে, আর বিশ্বাস করো, একটা ইয়েও...”
অ: “ফাজলামো পেয়েচেন? অ্যাকে মাইরি খুজরো নেই, আবার অ্যাকসো দিয়ে বোলচেন ভাড়া নিতে? আব্দার নাকি মাইরি...”
ক: “ভাই আপনি একশো টাকাটাই রাখুন, আমি তো সেম রুট রোজই, কাল না হয়...”
অ: “ভিকিরি পেয়েচেন বাঁআ? টাকার গরম দ্যাকাচ্চেন!”
অতঃপর “না না ভাই তা ক্যানো, আমার জন্যে তোমার ক্যানো লস্ হবে” বলতে বলতে কমলেশের চালকের সামনের ঝোলানো ব্যাগে টাকাটা গুঁজে হাঁটা দেওয়া এবং প্রায় একইসময় “বাঁআা তোর টাকার মুকে মুতি” বলে একরাশ কাটাতেলের নাকজ্বালানো ধোঁয়া ছেড়ে অটোর প্রস্থানের মাঝে, রিফ্লেক্সের অভাবহেতু, টাকাটা কমলেশের হাতের পরিবর্তে পায়ের সামনে উড়ে এসে পড়ে এবং কমলেশ সেটা দ্রুত তুলেই “ভাই আপনি...” বলতে বলতে সোজা হওয়ার সময়ই ব্যথাটা অনুভব করে। মেরুদণ্ড বরাবর একটা চিড়িক্। এবং কমলেশ দাঁড়িয়ে যায়। এবং কমলেশ পুরোপুরি সোজা হতে পারেনা। এবং কমলেশ ঈষৎ নুয়ে পড়ে, সামনের দিকে। অবশ্য ততক্ষণে চলে যাওয়া অটোর কন্দর থেকে ডপলারিয়ান ফ্রিকোয়েন্সিতে “খানকির ছেলে” ভেসে আসে, যা সম্ভবত কমলেশের কানে পৌঁছোয় না, কারণ তখন ঈষৎ নুয়ে থাকা কমলেশ সন্ধ্যার শেষ অ্যাচিভমেন্ট স্বরূপ দাঁতের ফাঁক থেকে সল্টেড বাদামের অ্যাসিমেট্রিক অংশটি নিপুণ দক্ষতায় উপড়ে ফেলার সেলিব্রেশনে মগ্ন।

অনুপমা ঘাবড়ে যায়। এবং গলায় যথেষ্ট করুণা ও চোখে যথেষ্ট উদ্বেগ এনে কমলেশকে “কি হ’লো হটাত্...” জিজ্ঞেস করতে করতেই “জানোয়ার জা টা বৌটাকে মেরেই ফেলবে...” বলে পাশের বাড়ির প্রায় ফিকে হয়ে আসা ঝগড়ার শেষ অংশে কান পাতে। কমলেশ, নুয়ে থাকা অবস্থায় টুবলুকে আদর করে এবং বিয়েতে পাওয়া ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার হাতড়ে একটা কবেকার সর্বব্যথাহর মলম বের করে, সেটা কোমরে ঘষতে ঘষতে বাথরুমের দিকে পা বাড়ায়। সেই রাতে হটব্যাগ সমেত কমলেশ, সান্ত্বনা পুরস্কার স্বরূপ, অনুপমার বামস্তনে দীর্ঘ দু’বছর পর হাত রেখে ঘুমোবার অনুমতি পায়, যদিও রাতভোর নাগাদ টুবলুর “ও মা কোথায় গেলে” শুনে অনুপমা উঠে যায়। কমলেশ এর পর আরও ঘণ্টাখানেক ঘুমোয়, যার মধ্যে মিনিট পনেরোর একটা ভিভিড স্বপ্ন দ্যাখে, যা কতকটা এরকম:

একটা খরস্রোতা নদীর এপারে কমলেশ। পাথরের ওপর বসে। ও’পারটা অদ্ভুতরকমের নরম, উজ্জ্বল সবুজ ঘাসে ঢাকা। ঘাসের মাঝে একটা চোখ ঝলসানো লাল চাদর এবং সেই চাদরের ওপর প্রবল রমণে ব্যস্ত অনুপমা আর উৎপল। উৎপলের মুখটা কমলেশের দিকে। চোখদু’টো হাসছে। এ’পারে কমলেশ একটার পর একটা বাদামের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে বলছে গতকালকের চায়ের দামটা আমি দিয়েছিলাম, আজকেরটা তুই দে। উৎপল সেই একইরকম হাসি হাসি চোখে একটুও না হাঁপিয়ে ক্রমাগত বলছে তোর পয়সায় মুতি বাঁড়া। এবং বলেই চলেছে। হঠাৎই অনুপমা উঠে দাঁড়ায় এবং তার যোনিপথ বেয়ে বাদাম ঝরে পড়ে। পড়তেই থাকে। আলো কমে আসে ...
কমলেশের চোখ খুলে যায়। সে চিৎ হয়ে শুয়ে বাইরের জেগে ওঠা শোনে।

যেহেতু রোব্বার, অতএব একটু বেশি সময় ধরে বাজার চলে। সোজা হতে গেলেই কোমরে চিড়িক্ লাগছে বলে কমলেশ নুয়েই থাকে ঈষৎ। এবং এ অবস্থায়, প্রত্যেকেই, কি হয়েছে, ঐ ওষুধটা জানো তো খুব ভালো, আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের ভদ্রলোকের মেজো মেয়ের শ্বশুরের এটা থেকেই তো ক্যান্সার ধরা পড়লো ইত্যাদি চালিয়ে যেতে থাকে। একমাত্র পানের দোকানের সুধীর, যার ছোটমেয়েকে কমলেশ প্রায় প্রতি মাসেই নতুন ক্লাসের বই কিনে দেওয়ার সুবাদে দু’চারটাকা কমে নেভিকাটের প্যাকেট পায়, জোড়াঘাটের দিকে এক হোমিওপ্যাথের সন্ধান দেয়, যে নাকি দীর্ঘদিনের আর্থ্রাইটিসের রুগীকে সকাল-বিকেল দু’গুলি ওষুধ খাইয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ করে দিয়েছে। এবং এর’ম নাকি সে করেই থাকে হরদম। যদিও এসব রুগীদের কাউকেই সুধীর দ্যাখেনি, কিন্তু ঘটনাগুলোর একটাও মিথ্যে নয়। স্রেফ শনিবার করে টক খাওয়া বারণ। কমলেশ শোনে ও শোনেনা এবং সামান্য হেসে সুধীরের “আজকেই যান কাকু, ফাস্ট ল্যামপোস্টটা থেকে বাঁদিক…” শেষ হওয়ার আগেই একটা রিক্সায় চড়ে বসে।

বাইরে থেকে যৌথ খিলখিল শুনে ঘরে ঢুকে কমলেশ উৎপলকে দেখতে পায়, যার কোলে টুবলু একটা বিকট মুখোশ পরে বসে। “টিবেট্যান মাস্ক, গত হপ্তায় ফিরেছি, ক্ষি ন্যাচারাল বিউটি! ক্ষি জায়গা ক্ষি বলবো! বাই দ্য ওয়ে তোর নাকি কোমরে ইয়ে বৌদি বললে…” একবারও না থেমে বলা পুরো বাক্যপ্রশ্নের উত্তরে কমলেশ হুঁ বলে এবং মোড়া টেনে বসে। মোড়া এবং নুয়ে থাকা কমলেশের কিউম্যুলেটিভ এফেক্টে কমলেশকে আরও ছোট দ্যাখায় সবকিছুর তুলনায়। সবার তুলনায়। “একটা অর্থোপেডিক দ্যাখা” বলতে বলতে উৎপল উঠে দাঁড়ায় এবং প্রায় সাথে সাথেই “সেকি চল্লেন নাকি! চা টা…” অনুপমার প্রথমে গলা আর তারপর অতিরিক্ত হাসি সমেত সশরীরে আবির্ভাবের মাঝে কমলেশ একটা শব্দও খরচ না করে বেডরুমের দিকে হাঁটা দ্যায়। বেডরুমের দরজাটা পেছনে বন্ধ হওয়ার ফ্র্যাকশন অফ্ সেকেন্ড আগে ও’ঘর থেকে ‘ডিপ্রেশন’ শব্দটা লো পীচে কানে আসে। এবং বেডরুমের ল্যাচের আওয়াজের সাথেই সমবেতভাবে ঘুম আসে কমলেশের।

প্রায় গোটা দিনটা কমলেশ ঘরেই কাটায়। সন্ধের দিকে একবার রুটি আনতে বেরিয়েও সে তাড়াতাড়ি ফিরে আসে এবং যথাসম্ভব কম শব্দ ব্যবহার করে, অনুপমার “কিগো শরীরটা কি খুব খারাপ” থেকে “এই লোকটা সারাটা জীবন আমার জ্বালিয়ে দিলো” ইত্যাদি ছুঁচে সুতো পরাবার নৈপুণ্যে সামলে, যাবতীয় হ-ব-চ-ল টপকে ঘুমিয়ে পড়ে। এবং এদিনও কমলেশ একটি স্বপ্ন দ্যাখে যা পরে [হা হতোস্মি!] সে বিস্মৃত হয়:

একটা এ’পার-ও’পার দ্যাখা যায়না ব্রিজের এ’ মাথায় কমলেশ। গায়ে সুতোটি নেই এবং হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে। বেশকিছু লোক কথা বলছে চারদিকে, যারা দৃশ্যমান নয় এবং তাদের বক্তব্যও অশ্রাব্য, সম্ভবত হাওয়ার কারণে। ব্রিজের নীচে তাকালে কিছু দ্যাখা যায়না। হয় ব্রিজটা শূন্যে ভাসমান, নয়তো নীচটা এতটাই গভীর যে কোনকিছুই দৃষ্টিগোচর হয়না। ব্রিজের অন্য প্রান্তে যাওয়াই কমলেশের উদ্দেশ্য; ঠিক উদ্দেশ্যও না, তাগিদ। অথচ কিসের তাগিদ কমলেশ তা জানেনা। হয়তো ব্রিজের ও মাথায় জামাকাপড় পাওয়া যেতে পারে, অথবা নাও পাওয়া যেতে পারে। কমলেশ প্রাপ্তি সম্পর্কে অজ্ঞাত, কিন্তু গন্তব্য সম্পর্কে দ্বিধাহীন। বহুক্ষণ দোলাচলের পর কমলেশ যে মুহূর্তে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেয়, হঠাতই কোথ্থেকে সুধীরের মেয়ে ছুটে আসে ও কমলেশকে ‘বাবা’ সম্বোধন করে তার পুরুষাঙ্গটি হাতে নিয়ে বিকৃতভাবে বিলাপ করতে থাকে। একরাশ কাক উড়ে যায় মাথার ওপর দিয়ে …
বিয়াল্লিশের নুয়ে পড়া কমলেশের উত্থিত শিশ্নসমেত ঘুম ভাঙে পৌনে আটটা নাগাদ।

“এক কাজ করুন, আপনি বরং একটা ইয়ার্লি ছুটির অ্যাপ্লিকেশন করুন অ্যান্ড ইউ নো মিস্টার সারকার, উই উইল গ্ল্যাডলি এক্সেপ্ট ইট…” এবং ছুটির দরখাস্তটা খানিক হাওয়ায় গা ভাসিয়ে কমলেশের পায়ে গোঁত্তা খেয়ে পড়ে। সোমবার দুপুর তিনটের সময় এ নাটক যখন জি.এম. অসীম হাজরার ঘরে চলছিলো, তার আধঘণ্টা আগে কমলেশ অফিস ক্যান্টিনে পোনা মাছের লাল টকটকে ঝোল দিয়ে ভাত খেয়ে অলোক দাস, মানে অলোকদাকে তার নুয়ে পড়ার সম্ভাব্য কারণ ব্যক্ত করছিলো। অলোক দাস কিছু একটা সলিউশন সাজেস্ট করতে যাবে, এই সময় বেয়ারা এসে কমলেশকে ডেকে নিয়ে যায়। এ মাসে এটা তৃতীয় সি.এলের আবেদন কমলেশের। প্রথম কারণটা ছিলো জেনুইন, টুবলুর জ্বর, সাথে বমি। পরের কারণটা স্রেফ অফিস যেতে ইচ্ছে করছিলো না তাই। আর আজকেরটা, কমলেশ ভেবেছিল, একবার হোমিওপ্যাথি ট্রাই করে আসবে। জি.এম হাজরার লাল নাকের পাটা, কানের চুলগুলোর ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো দেখা যাচ্ছে, ঘরময় বাবা লোকনাথের ফটো। ঘরের মাঝে কমলেশ, নুয়ে আছে যথারীতি। “লুক হিয়ার মিস্টার সারকার,” আবার সেই ফ্যারেঞ্জাইটিস-আক্রান্ত দুর্বোধ্য গলা, “আপনি পুরনো স্টাফ, আপনাকে এসব বলতে মোটেই ভালো লাগেনা, বাট ইয়োর অ্যাকশানস্ আর এক্সট্রিমলি আনপ্রফেশনাল...” কমলেশ দাঁড়িয়ে থাকে, মাথা নিচু। ছুটির দরখাস্তটা পায়ের কাছে ছটফট করছে। কমলেশ তুলতে উদ্যত হয়, এবং দ্বিতীয়বার চিড়িক্। অতিকষ্টে “আহ্”টা দাঁতে পিষে বেরিয়ে আসে কমলেশ। কমলেশ নুয়ে পড়ে। আরও একটু।

সাতটা পঁচিশের কাটোয়া বিফোর টাইমে পৌঁছে যাওয়াটা কমলেশের চোখে লাগার মতো নুয়ে পড়া শরীরে সামান্য আনন্দ দেয়। তার ওপর হাল্কা বৃষ্টিও শুরু হয়। অটোর ভাড়া দিয়ে গলিতে ঢোকার মুখটায় কমলেশ আলোর অভাব বোধ করে রোজকার মতোই। বহুবার বলা সত্ত্বেও এ ল্যাম্পপোস্টায় আজ অবধি আলো জোটেনি। কমলেশ বাড়ির দিকে পা বাড়ায়। রাস্তাটার শেষ প্রান্তে বাঁদিকে, যেখানে এক্কালে হালদারদের বাড়ি ছিলো আর এখন পোড়ো জমি, সেখানে কয়েকটা সিল্যুয়েট দেখতে পায় কমলেশ। সম্ভবত চার, না, পাঁচজন। এবং তাদের মধ্যে একটি মেয়ে। আলোর অভাব সত্ত্বেও স্পষ্ট বোঝা যায় একটা স্ট্রাগল চলছে। কিছুটা এগিয়ে আসে কমলেশ। মেয়েটাকে সে চেনে, সুধীরের মেয়ে, সামনে উচ্চ-মাধ্যমিক। চারটে ছেলে ইচ্ছেমতো যেখানে-সেখানে হাত দিচ্ছে, মেয়েটা তারস্বরে চেঁচাচ্ছে। এদিক-ওদিককার সমস্ত জানলা বন্ধ। বৃষ্টিটা সম্ভবত বাড়ে। কমলেশ ব্যাগটা আরও চেপে ধরে, মাথাটা নিচু করে দ্রুত জায়গাটা পেরনোর চেষ্টা করে। মেয়েটা কাঁদছে। ডান কাঁধের জামাটা ছিঁড়েছে। হঠাৎ ধপ্ করে একটা আওয়াজের সাথে “ওরে বাঁআ মেরে ফেল্লো” শুনে তিনটি ছেলেই মেয়েটাকে ছেড়ে ঘুরে দাঁড়ায়। মেয়েটা এই সুযোগে কোনক্রমে ছুটে পালায়। কমলেশ, নুয়ে পড়া শরীরটাকে সামান্য সোজা করে, ডানহাতের থান ইটটা ছুঁড়ে ফ্যালে। সামনের ছেলেটার মাথাটা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। একটা ধাতব কিছু ঝলসায় অন্ধকারে আর তার সাথেই কমলেশ তলপেটে তীব্র যন্ত্রণা টের পায়। “খানকির ছেলে! মেরে ফেল্লি নাকি…” শুনতে শুনতে অবাধে পতনশীল কমলেশ ‘খট্’ করে একটা শব্দ পায়। কোমরটা হঠাৎ মুক্তি পায় যেন। মেরুদাঁড়া টান করে মাটি ছোঁয় বিয়াল্লিশের কমলেশ সরকার।

About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই