Monday, May 1, 2017

নবরত্ন -- সুস্মিতা



পর্ব (১)

অতঃপর রাজামশাই কহিলেন- "আমারও নবরত্ন চাই"।
উৎস
মন্ত্রীমশাই সবেগে ঊর্ধ্বে-নিম্নে গ্রীবাচালনা করিলেন এবং বলিলেন- "বটেই তো বটেই তো। কিন্তু রাজামশাই, এই গেলো হপ্তাতেই তো রাজজ্যোতিষীমশায়ের কথামতো অতোগুলো টাকা গচ্চা দিয়ে নবরত্নের আংটি ধারণ করলেন, সীমান্তে ওই ন'টা বজ্জাত প্রতিবেশী রাজার অনুপ্রবেশ আটকাতে।"
রাজামশাই রোষকষায়িত দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া পুনরায় বলিলেন- " না রে বাবা! সে পাথুরে নবরত্নের কথা বলছি না রে বাপু। আমি বলছি..."
মন্ত্রী মধ্যপথেই রাজার বাক্যি হরণ করিয়া বলিয়া উঠিলেন- "ও হো হো এবার বুঝেছি! তবে কিনা কাল রাতেই তো বড় রাণীমার সন্তোষী মায়ের শুক্রবারের ব্রত বলে নিরিমিষ্যি নবরত্ন কোর্মা খেয়ে এই আজ সকালেও 'হেউ হেউ' করে চোঁয়া ঢেকুর মারছিলেন সিংহাসনে বসে। তাই বলছিলুম কি আজ হাল্কা করে চিকেন বিরিয়ানী আর চিকেন চাপের ওপরেই রইলেন নাহয়। নিরিমিষ্যিটা তো আপনার আবার... হেঁ হেঁ।"

রাজামশাই স্বগতোক্তি করিলেন- "এ কোন আবোদাগুলোকে নিয়ে দরবার খুলেছি রে ভাই! এই ধম্মের ষাঁড়গুলো শুধু মাস গেলে বসে বসে মোটা মাইনে আর ভুঁড়ি বাগাতেই সিদ্ধহস্ত। অ্যাকে তো কী বলি বোঝে না তায় আবার লম্বা লম্বা বক্তিমে ঝাড়ছে দ্যাখো ঘাটের মড়া বুড়োটা। অবশ্য মাটন ছাড়া বিরিয়ানী যে ভাবতে পারে তার দৌড় আর কদ্দুরই বা হবে!" প্রকাশ্যে বলিলেন- " জ্বালাতন তো! ওইসব বলছি না মন্ত্রী। আমি নবরত্ন সভার কথা বলছি। যেমনটি আকবরের ছিলো, বিক্রমাদিত্যের ছিলো। ইতিহাসের বই হাতে ধরেননি নাকি। পরের দিন নাতির বইটা একটু উল্টে পাল্টে দেখে আসবেন। বলি একটা জ্ঞানীগুণী রত্নখচিত রাজসভা না হলে কি জাতে ওঠা যায় হে?"

পর্ব (২)

বৃদ্ধ মন্ত্রীমহাশয় উহা ভক্ষণ করিব না মস্তকে চটকাইব এই ধন্দে মুখব্যাদানপূর্বক ফ্যালফ্যাল করিয়া চাহিয়া রহিলেন কিয়ৎক্ষণ। তারপর বলিলেন- "কেন মহারাজ? এই তো আমি রইচি, সেনাপতিমশাই রয়েচেন, রাজজ্যোতিষী, রাজবদ্দি সকলেই রয়েচেন। আর কাকে চাই?"
রাজামশাই তৈলে নিক্ষিপ্ত বার্তাকুর ন্যায় জ্বলিয়া হুঙ্কার ছাড়িলেন- "বিরিয়ানী তে চিকেনের ঠ্যাং ধরে টানাটানিতেই মন দিন আপনি বুঝলেন? আগে বলুন তো আকবরের নবরত্ন সভার নয়জনের নাম। নাহলে আপনারই আমিষ কোর্মা বানাবো আজ।"
মন্ত্রীমশাই নিতান্তই নিরুপায় হইয়া বাকি সকলের পানে করুণ দৃষ্টিতে চাহিয়া তিলেকমাত্র উত্তরের আভাস না পাইয়া মনে মনে অশ্রুপাত করিতে লাগিলেন এবং তৎসহিত রাজার কাল্পনিক মুণ্ডপাতের দিবাস্বপ্ন দেখিতে লাগিলেন।
হেনকালে সভাগৃহের এক কোন হইতে ভাঙা চৌপায়াটিতে রজ্জুবন্ধন করিতে করিতে ক্ষীণ কণ্ঠে বিদূষক বলিয়া উঠিল- "আবুল ফজল, আব্দুল রহিম খান, বীরবল, ফইজি, ফকির আজিওদ্দিন, মান সিং, মোল্লা দো পিয়াজা, তানসেন এবং তোডরমল।"

সভাগৃহে পিনপতনের নিস্তব্ধতা, রাজামশায়ের এবং বাকি সকলের মুখগহ্বরের বিস্তৃতি একদিকে আকাশ অপরদিকে পাতাল স্পর্শ করিল। স্বয়ং রাজামশায়ের জ্ঞানভাণ্ডারে তানসেন এবং বীরবল ব্যতীত আর কোনো তথ্য ছিলো কিনা তাহা লইয়া সন্দেহের উদ্রেক ঘটিতেই পারে। রাজামশাই "কে রে?" বলিয়া ডাকিয়া উঠিতে পুনরায় শোনা গেলো "অমরসীমা, ধন্বন্তরি, ঘটকর্পর, কালিদাস, ক্ষপণক, শঙ্কু, বরাহমিহির, বররুচি, বেতালভট্ট।"
শুষ্ক কণ্ঠে রাজামশাই বলিলেন- "ক্ ক্ কে ও? বিদূষক নাকি?"

-"আজ্ঞে সেই অধমই বটে" বলিল সে।
রাজামশাই নতমস্তক মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে আঘাত হানিলেন- "তোমার থেকে তো বিদূষকও বেশি বুদ্ধি ধরে হে।"
মন্ত্রীমশাই স্বগতোক্তি করিলেন- "রাজা, তুমি আমি তো পৈতৃক কোটায় চাকরি পেয়েছি আর এ ব্যাটা যে পড়াশুনো করে একহাজারখান লোকের মধ্যে থেকে এই সরকারি চাকরিটি বাগিয়েছে।"

রাজা বলিলেন- "আমার ঐটে চাই। তানসেনের মতো কেউ গান গেয়ে কাঠফাটা রোদ্দুরের দুপুরে খিচুড়িওয়ালা বৃষ্টি নামাবে। সেই খিচুড়ি খেয়ে যখন দিবানিদ্রায় মগ্ন হব তখন ছোটোরাণী পিঠে সুড়সুড়ি দেবে আর কালিদাস স্বরচিত কাব্যপাঠ করবে।"
সভার সকলে অহো অহো করিয়া উঠিল। রাজা গর্জনপূর্বক বলিলেন- "শুধু ধুয়ো ধরলেই হবে? সব যদি আমিই মাথা খুঁড়ে বার করব তবে তোমাদের গর্দানের ওপরের গোবরের বস্তাগুলো জল্লাদ ডেকে নামিয়ে হাল্কা করে দি?"
সকলে অনতিবিলম্বে মস্তক আঁচড়াইয়া, নখরাগ্র কামড়াইয়া শশব্যস্ত হইয়া পড়িলেন। রাজা পুনরায় বলিলেন- "এক ঘণ্টার জন্য সভা মুলতুবি। তার মধ্যে যদি আমার নবরত্ন সভার জন্য সভ্য জোগাড় না হয়েছে তবে তোমাদের আর দরবারের শোভা বাড়িয়ে কাজ নেই বুঝলে?"

পর্ব (৩)

এই বলিয়া রাজামশাই অন্দরমহলের উদ্দেশ্যে প্রস্থান করিবামাত্র সকলে অভাগা বিদূষকের অভিমুখে ধাইলেন। সর্বাগ্রে সেনাপতি কহিলেন- "এই ব্যাটা ভাঁড়, শিগগীর তোর রত্নকোষের গপ্প ঝেড়ে কাশ দিকিনি।" মন্ত্রী মহাশয়ের পালা চুকিলে মহারাজের কোপ যে তাঁর মস্তকেই পতিত হইবে বিলক্ষণ বুঝিয়াছেন তিনি। রাজজ্যোতিষী, রাজবৈদ্য এবং পরিশেষে বঙ্গভাষার পঞ্চম সংখ্যার ন্যায় বদন লইয়া মন্ত্রীমহাশয়ও ভাঁড়ের পাঠশালায় দাখিলা লইলেন। ভাঁড় তো আকস্মিক এহেন পদোন্নতি তে বাক্যহারা হইয়াছে। সন্তানের ক্ষুধার তাড়নায় এবং গৃহিণীর বাক্যবাণের যন্ত্রণায় শিক্ষা দীক্ষা বিসর্জন দিয়া সেই কবে রাজসভায় বাঁদর নৃত্যে যোগদান করিয়াছিলো। অদ্যবধি কেহ ভাঁড়ামি এবং আদি রসাত্মক রসিকতা ব্যতীত অন্য কিছুতে তাহার নিকট আগ্রহ প্রকাশ করে নাই। আজ তাই যারপরনাই আপ্লুত হইয়া বলিতে লাগিল-
"শুধু কি সম্রাট আকবর বা বিক্রমাদিত্যের নবরত্ন সভা ছিলো? আমাদের বঙ্গদেশের নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভাতেও ছিলো নবরত্ন। ভারতচন্দ্র রায়, রামপ্রসাদ সেন, গোপাল ভাঁড়, বাণেশ্বর বিদ্যালঙ্কার, কৃষ্ণানন্দ বাচস্পতি, রামমোহন গোস্বামী, মধুসূদন, ন্যায়ালঙ্কার, জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন, হরিরাম তর্কসিদ্ধান্ত সভা আলো করে ছিলেন। রাজা লক্ষ্মণ সেনের দরবারেও ছিলো পঞ্চরত্নের ঔজ্জ্বল্য। উমাপতিধর, শরণ, ধোয়ী, গোবর্ধন আচার্য, জয়দেব। আর কত বলবো... পশ্চিমে ছত্রপতি শিবাজীর 'অষ্টপ্রধান'। দাক্ষিণাত্যে বিজয়নগরের রাজা কৃষ্ণদেবা রায়া-র 'অষ্টদিগ্গজ'। তেনালী রামন, ধূর্জ্জটি, নান্দী থিম্মানা, রামারাজাভূষনডু, মাদাইয়াগারি মাল্লানা, পিঙ্গলী সুরানা, অল্লসনি পেড্ডানা, আয়ালারাজু রামামভদ্রডু। তারপর..."

প্রায় হতবাক রাজপারিষদগণের মধ্য হইতে বহু কষ্টে মক্ষিভক্ষণোদ্যত মুখগহ্বর বন্ধ করিয়া রাজবৈদ্য চিৎকার করিয়া উঠিলেন- "ওরে দিগ্‌গজ থাম থাম। বুকটা ধড়ফড় করছে, মাথাটা বোঁ বোঁ করে পাক দিচ্চে। আর রাজ রাজড়া নিয়ে টানাটানি না করে এই বেলা এই বারো গণ্ডা রত্নের গুণপনা একটু বর্ণনা কর দেখি বাপধন।"
সরলমতি বিদূষক পরম উৎসাহে এই গুণী ব্যক্তিসকলের গুণের মণিমাণিক্য সম্মুখস্থ মূর্খদিগের বেনুবনে ছড়াইতে লাগিল।

পর্ব (৪)

অবশেষে রাজামশাই দিবানিদ্রা সারিয়া দরবারে পুনরাবির্ভূত হইলে রাজজ্যোতিষী মহাশয় গলা ঝাড়িয়া শুরু করিলেন- "মহারাজ, কোনো চিন্তা নেই, আমরা সব ব্যবস্থা করে ফেলেছি। আপনার সভায় সজ্ঞীতজ্ঞ তানসেনের জায়গা নেবে আমাদের সেনাপতিমশাই-এর ভায়রাভাই। বড় মিঠে গলা ছোকরার। আজকাল আবার জীবনমুখী গায়। গ্রীষ্মের দুপুরে বর্ষা, কালো মেঘ থেকে স্নিগ্ধ বরফকণা, শীতের সকালে বসন্তের কোকিলের কুহুরব, সব সব সব... পাবেন।
আর কালিদাসের পোস্টে রাজবৈদ্যমশায়ের পুত্র। আহা... গুণী বাপের গুণী ছেলে। একখান কবিতার নমুনা শুনুন শুধু।"
-"কই হে বদ্দিমশাই, বলুন বলুন" উচ্চৈঃস্বরে হাঁকিলেন জ্যোতিষঠাকুর।

রাজবৈদ্য শুরু করিলেন -
"বটবৃক্ষের শাখে,
বসিল কালো বায়স।
ডাকিয়া উঠিল কা কা কা,
খাইয়া সফেদ পায়স॥"

কিংকর্তব্যবিমূঢ় বিদূষক ব্যতীত সকলে বলিয়া উঠিল " অহো, অহো, কী বর্ণময় সুরেলা মিষ্ট কাব্য, অহো।"

সেনাপতিমশাই বলিলেন- "আর রাজ্যের সুরক্ষার ভার আমার ছেলেই নিতে পারবে। কোনো অংশেই রাজা মান সিংয়ের কম নয় (ভাগ্যিস বিদূষক ব্যাটা টিফিন টাইমে পড়া বুঝিয়ে দিয়েছিলো!)। এই বয়সেই যা পেটো বাঁধতে পারে কী বলবো রাজামশাই, চোখে জল আসে। নিজের ছেলে বলে বড়াই করছিনে, নিখাদ প্রতিভা। আর রাজজ্যোতিষী মশাই, আপনার দুই ছেলে তো হীরে আর মাণিক। একজন তো শুনি হস্তরেখাবিশারদ আর অন্যজন গণিতজ্ঞ (স্বগতোক্তি: বাজারে বসে হাত দেখা জ্যোতিষী আর মুদীর দোকানে খাতালেখা কেরানি.. খিঁক খিঁক)। তা এরা ক্ষপণক আর বরাহমিহির এর পদে একদম খাপে খাপ।"

মন্ত্রীমশাই দেখিলেন, নয়টি পদের মধ্যে পাঁচটির শূন্যস্থান পূর্ণ হইয়া গেলো ঝটিতি। তিনিও আর কালক্ষেপ না করিয়া বলিয়া উঠিলেন- "আমি তবে তোডরমল হব।" রাজামশাই গর্জিয়া উঠিলেন - "আঁমি তোঁডরমঁল হঁবওওও। চোপরাও একদম। ঘটে ভুসির দোকান খুলে বসে রয়েছেন। এলেন আমার তোডরমল। ও কাজটার জন্য আমার ছোটোরাণীর খুড়তুতো দাদাই যোগ্য। শুনেছি কিসব চিট্ ফান্ডের ব্যবসায় বুদ্ধি খাটিয়ে ভারী উন্নতি করেছে।"
মন্ত্রীমশায় সমূহ বিপদ প্রত্যক্ষ করিয়া অন্তিম প্রয়াস করিলেন।
"ও রাজবদ্দিমশাই, বলুন না আমার ছেলেটা আপনার কাছে কেমন চিকিৎসাবিদ্যায় হাত পাকিয়েছে। মহারাজ ওকে অন্তত ধন্বন্তরি করে দিন।" রাজবৈদ্য দেখিলেন, নিজের পুত্র সভায় স্থানলাভ করিয়াছে, এক্ষণে মন্ত্রীমশায়ের হইয়া কিঞ্চিৎ ওকালতি না করিলে বড় দৃষ্টিকটু বোধ হইবে। বলিলেন- "হ্যাঁ রাজামশাই, তা মন্দ নয়।" রাজামশাই শশব্যস্ত হইয়া বলিলেন- "না না, চিকিৎসার ব্যাপারে চ্যাংড়া ছোকরাদের আমি মোটেই বিশ্বেস করিনেকো। আপনিই আমার ধাতটা বোঝেন, কাজেই আপনিই বহাল রইলেন।"

পর্ব (৫)

রাজামশাই পুনরায় বলিলেন - "সাতটা রত্ন তো হলো। বলছি কি সভাটা বড্ড বেশি পুরুষতান্ত্রিক হয়ে গেলো না? মানে সবাই ভাববে, আমার রাজ্যে নারীদের সমান অধিকার দেওয়া হয় না বুঝি। ওহে সেনাপতি, সেদিন বলছিলে না নৃত্যকলা পারদর্শী কোন একজন মহীয়সী নারী নাকি আমার রাজ্যে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। তা নৃত্যও তো মহান কলা। এনাকে দেখুন না একটু সভায় যোগদানের প্রস্তাব দিয়ে।" সেনাপতি আকর্ণবিস্তৃত দন্তকৌমুদি বিকশিত করিয়া ঘাড় কাত করিলেন।
ইহার পর অনেক আলোচনা পর্যালোচনা হইল, দিবস অতিবাহিত হইয়া রজনী আসিল কিন্তু নবম রত্ন খনি হইতে উদ্ধার হইল না।
মধ্যমরাণী অন্দরমহল হইতে ভগ্ন-কাংস্য-পাত্র-বিনিন্দিত কণ্ঠে হাঁক পাড়িলেন " রাজামশাই, আর রাত করলে কিন্তু আপনার আলসারের ব্যথা বাড়বে, তখন গাঁদাল পাতা দিয়ে ট্যালট্যালে চারাপোনার ঝোল খেতে হবে।" এবং স্বর খাদে নামাইয়া বলিলেন - "মিনসে কে দেখতে বেতালের মতো, শখ হয়েছে বেক্কমাদিত্য হবার!"

রাজামশাই যারপরনাই বিরস বদনে বলিয়া উঠিলেন- "এক কাজ কর বাপু তোমরা, একটা ভালো দেখে রাঁধুনি বামুনকে দিয়ে ওই নয়নম্বরী শূন্যস্থান পূরণ করে ফেল দেখি!" ক্ষণকাল থমকাইয়া পুনরায় বলিলেন- "এই অ্যাত বেম্মজ্ঞাণী বিদূষকের এই সভায় কাম নেই। ওকে ওর বাকি মাইনে বুঝিয়ে দিয়ে পত্রপাঠ বিদেয় করে এসো। আর ভাঁড়ের জায়গাটা কাল থেকে আমাদের মন্ত্রীমশায়ের।"
বিদূষক এবং মন্ত্রীমশাই একে একে রাজামশাই এবং বাকি সকলের প্রস্থানপথের দিকে নির্নিমেষে চাহিয়া রইলেন। ধীরে ধীরে অধোবদনে তাঁরা দুইজন কক্ষের বাহিরে গমন করিবার উপক্রম করিবামাত্র হঠাৎ কনিষ্ঠারাণীর আহ্বান শুনিয়া ফিরিয়া দাঁড়াইলেন। রাণী দুইজনের উদ্দেশ্যে বলিলেন- " নিজের নিজের চাকরি যদি বহাল রাখতে চান তবে ওই পোড়ারমুখী নর্তকীকে বিদেয় করুন দেশ থেকে। তাহলে আমি রাজামশায়ের কাছে আপনাদের হয়ে দরবার করব। জানেনই তো উনি আমার কথা ফেলতে পারেন না।"

মন্ত্রীমশাই উচ্ছ্বসিত হইয়া বলিলেন- "যথা আজ্ঞা রাণীমা। আমি কালই ওই পোড়ারমুখীকে বিদেয় করার ব্যবস্থা করছি।" বিদূষক নতমস্তকে প্রস্তরবৎ দণ্ডায়মান রহিল।

মন্ত্রীমশাই সহর্ষে ভাবিতে লাগিলেন- "এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম। ভাঁড়টার বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে ওই নাচুনি মেয়েছেলেটাকে বিদেয় করতে পারলেই শান্তি এবার।"

বিদূষক শ্লথগতিতে পদচালনা করিয়া তাহার কুঁড়েঘরে ফিরিবার পথে আপন অন্তঃকরণে দগ্ধ হইতে লাগিল। দীর্ঘশ্বাস ত্যাগপূর্বক ভাবিল- "কী নিষ্ঠুর পরিহাস! নিজের সংসার বাঁচানোর জন্য এক নির্দোষ রমণীকে দেশছাড়া করতে হবে! আজ রসিকতাটা অদৃষ্ট আমার সাথেই করলে বোধ করি। ধন্য আপনি রাজামশাই, ধন্য আপনার রত্নখচিত রাজসভা। এখানে সত্যি আমার স্থান নেই।"


About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই