অবধূতের মতো আমার কিছু গুরু আছে। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই, বিশেষতঃ সাহিত্যের
জন্য রয়েছেন একাধিক সাহিত্য-গুরু। অবধূত না বলে একলব্যও বলতে পারেন। এঁদের একজন বাদে
কারোর সাথে আমার কোনোদিন মোলাকাত হয় নি। তাঁরা সব্বাই যে প্রচণ্ড জনপ্রিয় তা কিন্তু
নয়। কিন্তু তারা আমার প্রিয়।
হুমায়ুন আহমেদ তাদের মধ্যে একজন। বাংলাদেশে প্রবল জনপ্রিয়, পশ্চিমবঙ্গে
নন। জনপ্রিয়তা না পাওয়ার কারণ খুব সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গের পাঠকের সঙ্কীর্ণতা। চাচা-খালু-জনাব-পানি-বুয়া
এসব শব্দ বোধহয় আমরা খোলা মনে নিতে পারি নি।
সেসব আলাদা প্রসঙ্গ। ভক্ত হিসেবে তাঁর লেখা প্রতিটি প্রকাশিত
শব্দ (হ্যাঁ, লেখা
নয়, শব্দ)
আমি পড়েছি। সবই দারুণ ভালো লাগে নি। কিন্তু ট্রিপ্ল সেঞ্চুরির ইনিংসে মিস-টাইম্ড
বাউন্ডারির মতোই সেগুলি সহজে এড়িয়ে যাওয়া যায়। মনে মনে বা লিখে লিখে তাঁর স্টাইলের
নকল করার চেষ্টা করেছি।
গুরুচণ্ডালীতে একজন লিখেছিলেন হুমায়ুন আহমেদ মৃদু মানুষের ঈশ্বর।
উপযুক্ত বিশেষণ।
নারায়ণ সান্যালের অবশ্য সেরকম কোনো বিশেষণ নেই। ইনি হুমায়ুনের
তুলনায় বেশ খানিকটা কম জনপ্রিয়। সম্ভবতঃ একটি বিশেষ প্রকাশনা গোষ্ঠীর কাছে মাথা নত
না করতে পারায় তাঁর লেখার প্রাপ্য প্রচারে অনেকটা খামতি থেকে গেছে। ‘বিশ্বাসঘাতক’ এখনও প্রচুর
বিক্রি হয়। কিন্তু ‘আনন্দে’ না থাকতে পারলে
‘টপ টেনে’ টিকে থাকা বড়োই
মুশকিল।
নারায়ণ সান্যালের অনেকগুলো স্টাইলের মধ্যে একটি অনবদ্য স্টাইল
ছিল - যেটা কিছুটা ইতিহাস,
কিছুটা কল্পনা। এই স্টাইলটাকে সঠিকভাবে ভাষায় বর্ণনা করা মুশকিল। চেষ্টা করছি।
এককথায় বলতে পারেন ইতিহাসের শূন্যস্থান পূরণ। ইতিহাসের বিকৃতি
বলবেন না, প্রেম
আর যুদ্ধের থেকেও সাহিত্যে গণ্ডি বেঁধে দেয়া আরো বেশি কষ্টকর। এবারের লেখা নারায়ণ সান্যালের
সেই স্টাইলে। স্টাইলের নাম?
– ওই যে বললাম 'ইতিহাসের শূন্যস্থান পূরণ'।
বিশ্বাসঘাতকের দোহাই, পড়লে লাইন বাদ দিয়ে পড়বেন না। বিশ্বাসঘাতক
যারা পড়েছেন, তাঁরা
বুঝতে পারবেন, ধরতে
পারবেন এই নকলনবিশি। এমনকি,
‘লাইন বাদ দিয়ে পড়বেন না’ শব্দবন্ধটাও ‘বিশ্বাসঘাতক’ থেকে টোকা। আর
হ্যাঁ, পারলে
গল্পের মাঝখানে গুগল উইকি না ঘেঁটে গল্পটা শেষ করে ফেলুন।
বিশ্বাসঘাতকের প্রথম সংস্করণে, গল্পের সাঙ্ঘাতিক
নাটকীয় স্থানে এরকম ধরনের একটা বাক্য ছিল – সেই বিজ্ঞানী হয়তো এখন কবরে শুয়ে আপসোস
করছেন। পরের কোনো একটা সংস্করণে স্টার দিয়ে নিচে ফুটনোট দেয়া ছিল। সরি, উনি বেঁচে আছেন।
সে বছরের নোবেল প্রাপকদের তালিকায় তাঁর নাম দেখা গেছে। তাই আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি, কল্পনা আছে, বাস্তব থেকে
বিচ্যুতি আছে। কিন্তু একটা গল্পও আছে।
আসুন, শুরু করা যাক। গল্পের নাম 'অসূর্যম্পশ্যা'।