<<আগের সংখ্যা
অসূর্যম্পশ্যা – ঘ
অসূর্যম্পশ্যা – ঘ
অনেকদিন আপনাদের সাথে কথা হয় নি। ১৯২৮, আমার জন্মদিনে আমি ফিরে এসেছি। না বম্বের দিনশ পেতি বাংলোটায় নয়। তাজ হোটেলে। জের ব্যস্ততা বেড়েছে। আমার সাথে
এই নিয়ে বিস্তর কথা কাটাকাটি মনোমালিন্য হয়েছে। এপ্রিল মাস এসে গেল। ডাক্তার
বলেছেন, শরীর ভাল করতে ফের পশ্চিমে ঘুরে আসতে।
আমি তাই প্যারিস এলাম। জে সি-অফ করতে আসেন নি।
কাঞ্জি দ্বারকাদাস, এখন ওই আমার খবর রাখে। ও একটা
গোলাপের বোকে পাঠিয়েছে।
প্যারিসে গিয়ে লোকমুখে খবর পেলাম, জে’ও ভারত ছেড়ে ইওরোপে এসেছেন।
আয়ারল্যান্ডে। প্যারিসে আমার খুব শরীর খারাপ হলো, জে খবর
পেলেন।
রীতিমত যোগাড়যন্ত্র করে এসেও পড়লেন। এসেই জে’সুলভ কাণ্ড।
তড়িঘড়ি আমার চিকিৎসক পাল্টানো হলো। অবাক
ব্যাপার, কাজও দিলো। শরীরে একটু হলেও বল ফিরে পেলাম।
যদিও শরীর খুবই দুর্বল, প্রদীপে দু’ফোঁটা
তেল পড়লো, আগুনের তেজ একটু বাড়লো। সম্পর্ক একটু নরম হলো।
কিন্তু সুতো একবার ছিঁড়ে গেলে, সে কি আর গিঁট দিয়ে লাগালে আগের মত হয়ে যায়। একটা দাগ তো
থেকেই যায়, তাই না? জে আর আমার মধ্যে
দূরত্ব বেড়েই যাচ্ছে। আজ থেকে নয়, প্রায় পাঁচ বছর হলো,
জে আর আমায় সেরকম সময় দিতে পারেন না। ওঁর নাকি প্রচুর কাজ। আমাকে এই
বিশাল বাড়িটায় দিনা আর একটা কুকুর নিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে হবে। দুঃখের
স্মৃতি তো, একটু হাত চালিয়ে লিখে দিই। ফাঁকি দিচ্ছি ভাববেন
না যেন।
প্রথম প্রথম আমি সব জায়গায় সাথে যেতাম। সেই তো
১৯২০ তে কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনে গেলাম। গান্ধীপন্থীরা সবাই মিলে জে’কে চূড়ান্ত অপমান করলেন। ১৯২২ এর মাঝামাঝি নাগাদ তো কংগ্রেসের
সাথে ওঁর সব সম্পর্কই বলতে গেলে শেষ হয়ে গেল। তখন শুধু নতুন দলের কাজ, মিটিং আর ভ্রমণ। দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত অবিশ্রাম ছুটে
বেড়াচ্ছেন। সেপ্টেম্বর ১৯২২, আমি বিরক্ত হয়ে দিনাকে নিয়ে
লন্ডন চলে গেলাম। কাঞ্জিকে বলে গেলাম জে’কে একটু দেখতে। দেশে
ফিরে চেষ্টা করলাম জে’কে নিয়ে সময় কাটাতে, কিন্তু ব্যস্ততা বেড়েই চললো।
১৯২৫, বোম্বে
হাইকোর্টে বাওলা মার্ডার কেসে আমি জে’র আর্গুমেন্ট শুনলাম।
ওই বছরেই একটা কমিটি তৈরি করা হলো। বার্কশয়রের স্যান্ডহার্স্ট মিলিটারি অ্যাকাডেমির আদলে ভারতে মিলিটারি কলেজ
খোলা হবে। এর জন্য পাঁচ মাস ইওরোপ আর নর্থ আমেরিকা গিয়ে থাকতে হবে। আমরা একটা শেষ
চেষ্টা করলাম। একসাথে সমুদ্রপাড়ি দিলাম। সেকেন্ড হানিমুন। কিন্তু জীবনে কিছু কিছু
ঘটনা দুবার হয় না। এটাও হলো না।
১৯২৭ সালে জে’র
রাজনৈতিক অফিস যখন বোম্বে থেকে দিল্লীতে ট্রান্সফার হলো, তখনই বুঝলাম, গেম ওভার, থুড়ি, প্রেম ওভার।
মার মুখে শুনেছিলাম মানুষ বুড়ো হলে তার মধ্যে
নাকি ছেলেমানুষি ফিরে আসে। ছেলেবেলার মতো সে আবার আবদার শুরু করে, অবুঝ হয়ে যায়। আমি তো বুড়ো হই নি। শরীরটা একটু খারাপ হয়েছে
শুধু। আমারও কি তবে সময় ফুরিয়ে এলো? জে’র সাথে এই দূরত্বটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।
অনেক ভেবে দেখলাম, ছোটবেলার কি কি আমি আবার ফেরত পেয়েছি? বোম্বের
যে বাড়িতে বড়ো হয়েছি, সেখানে যেতে ইচ্ছে করছে কি?
নাহ্, যে
বাড়িতে জে’র প্রবেশ নিষিদ্ধ সেখানে আমিও যেতে চাই না। বাবা
ডাকলেও না। অনেক দিন পরে বাবার কথা মনে পড়ল। বাবার সাথে ভারতবর্ষের, গোটা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে, আমি ঘুরে বেড়িয়েছি। আমি ভালো ঘোড়ায় চড়তে পারতাম, ইওরোপের কত গ্রামে
পর্দানশিন ভারতীয় মহিলাকে অবলীলায় ঘোড়া চালাতে ওরা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেছে।
এ রোগশয্যায় সেসব শুধুই সুদূর কল্পনা।
তাহলে কি বাবার সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করছে? নাহ্, বাবা তো কোনোদিন আমার মুখ দেখবেন
না বলে দিয়েছেন।
কিন্তু ছোটবেলার কি যেন একটা ফেরত এসেছে? কি জানেন? একটা খুব অপ্রিয় বস্তু,
যেটা ছোটবেলায় ছিল। বুঝতে পারছেন কি? আপনাদের
কিন্তু এটারও ক্লু দিয়েছি। আমি অনেক ভেবে বার করেছি, আপনারাও
ভাবুন দেখিনি। আগের ধাঁধাটা না পেরে থাকলে একটু বেশি চেষ্টা করুন, প্লিজ। না পারলে সামনের পাতায় বলে দেব।
দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেল। বোম্বের তাজ
হোটেলটাতেই। আজ ২০শে ফেব্রুয়ারি, ১৯২৯। আমার কত বয়েস
হলো বলুন দিকি? উনত্রিশ।
আজকে অবশ্য কেউ আমার জন্মদিন পালন করছে না। এটা অন্য ধরণের জন্মদিন। কেক নেই,
জে’র সাথে অভিসারে যাওয়া নেই।
জে, তুমি কি
দেখতে পাচ্ছো? তুমি কই জে?
ওহো তুমি তো আমাকে একা ফেলে রেখে পালিয়ে গেছো।
এখন তুমি কলকাতায়। কংগ্রেসকে বোঝাতে গেছো যাতে ওরা তোমার দিল্লী প্রোপোসাল মেনে
নেয়। আচ্ছা জে, ওখানে তোমার কি একবারও মনে
পড়ছে আমার কথা?
“Darling I love you – I love you – and had I
loved you just a little less I might have remained with you”
দিনাকে রেখে গেলাম।
দিনা বরাবরই জে’র
খুব প্রিয়। অনেক পরে, একদিন এই দিনা জে’র চোখে চোখ রেখে বলবে সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করতে চায়।
দিনাকে জে তাঁর বোনের হাতে সঁপে দিয়েছিলেন, সে সম্পূর্ণ মুসলিম ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত। কিন্তু তার
পছন্দের মানুষটি ধর্মে পার্সি, নাম নেভিল ওয়াদিয়া। জে
ক্ষুব্ধ হবেন, আর ইতিহাস ঘরের ইজিচেয়ারে বসে দোল খাবে আর
মুচকি হাসবে।
দিনার মা কে? সেটা
কি সত্যিই ভুলে গেলেন নাকি জে? বার্ধক্যের ভ্রম না নিয়তি
এড়িয়ে যাওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা?
নেভিলদের জাহাজ তৈরির ব্যবসা। ব্রিটিশ নেভির
জাহাজ তৈরি করে ওরা। বেশ সচ্ছল অবস্থা। নেভিল লিভারপুলে জন্মেছে আর
কেম্ব্রিজ-শিক্ষিত। এমনিতে পছন্দ না হওয়ার কোন কারণ নেই। বিস্মিত আহত দিনা জানতে
চাইবে জে’র অমতের কারণ কি? জেও
পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়বেন, ভারতে এতো ধনী অভিজাত মুসলিম পরিবার
থাকা সত্ত্বেও দিনা কেন একটি পার্সি পরিবারে বিয়ে করতে চাইছে? ইতিহাস চেয়ার থেকে দিনাকে প্রম্পট করে যাবে আর দিনা জে’কে মনে করিয়ে দেবে সেই ১৯১৮ সালের দিনগুলোর কথা।
যখন আপাদমস্তক সফল একজন প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম
পুরুষ ধর্মের বাঁধন অবজ্ঞা করে, সমাজের রক্তচক্ষুকে
কাঁচকলা দেখিয়ে এক পার্সি টিনএজারকে বেছে নিয়েছিলেন নিজের স্ত্রী হিসেবে।
দিনা জানতে চাইবে, সেদিনের সেই সফল ল’ইয়ারের কাছে, কেন করেছিলেন তিনি এরকম? প্রেমের কি কোন ধর্ম থাকে
নাকি?
ইতিহাস এবার স্ক্রিপ্টের খাতা বন্ধ করে নাটক
দেখতে থাকবে।
ভালো নাটকে কিছু কিছু ডায়ালগ স্ক্রিপ্টে লেখা
থাকে না। অভিজ্ঞ অভিনেতা মঞ্চে ইম্প্রোভাইজ করেন। সেখানেই তাঁর ক্যারিশ্মা।
সেদিনের সেই অভিনয় মঞ্চে জে’র মুখোশ খুলে পড়বে –
সেই জে যিনি স্যার দিনশকে বোঝাতে গিয়েছিলেন ধর্মের মিলনের মাহাত্ম্য,
সেই জে যিনি তাঁর থেকে বয়সে চব্বিশ বছরের ছোটো একটি মেয়ের প্রেমকে
বিবাহে রূপান্তরিত করার সাহস জুগিয়েছিলেন। সেই একই জে তার পরমপ্রিয় সন্তান দিনাকে
বলবেন, জানতে চাও, কেন আমি তোমার মাকে
বিয়ে করেছিলাম? কারণ সে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হতে রাজী
হয়েছিল।
মানুষ কি অদ্ভুত, তাই
না?
এতেই শেষ নয়। জানুয়ারি ২৫, ১৯৪৮। জে আমাকে আবার অবাক করবেন। করাচী বার অ্যাসোসিয়েসনের
প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ভাষণে জে বলবেন, কেন তিনি
লন্ডনের লিঙ্কন্স্ ইনে ব্যারিস্টারি পড়েছেন। স্বদেশে তখনও ব্যারিস্টারি পড়ার
সুযোগ ছিল না। তিনি লিঙ্কন্স্ ইনকে বেছে নিয়েছিলেন, তার একমাত্র
কারণ ওই প্রথম তিনি পাশ্চাত্যের কোনো ল’কলেজকে মুসলিম ধর্মের
প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে দেখেন। ওই কলেজে পৃথিবীর সর্বপ্রথম আইনপ্রণেতাদের একটা
তালিকা টাঙ্গানো ছিল। ধরিত্রীর আদি আইনরচয়িতাদের সেই লিস্টে টাঙ্গানো প্রফেট
মহম্মদের নামোল্লেখই নাকি তাঁকে চরম আলোড়িত করে।
ধর্ম তাঁর স্ত্রী বেছে দিয়েছে। ঠিক করে দিয়েছে
মহাবিদ্যালয়। শুধু রুট্ঠিই ধর্মের পরিবর্তে জে’কে
বেছে নিয়েছিল। রুট্ঠি কি ভুল করেছিল?
জানেন, লন্ডনে
ব্যারিস্টারি পড়ার সময় জে খুব থিয়েটার দেখতেন। ঘুরে ঘুরে সস্তায় টিকিট জোগাড়
করতেন। শেক্সপীয়ারের যে কোনো নাটক হলেই চলবে। প্রথমবার রোমিও এন্ড জুলিয়েট দেখে তো
ঠিকই করে ফেললেন, আর যাই হোক না কেন, ওয়াটারলু
রোডের ‘ওল্ড ভিক’ থিয়েটারে রোমিও
চরিত্রে অভিনয় না করতে পারলে নাকি জীবন বৃথা।
এমনকি, হুজুগে
মেতে বন্ধুদের সাথে লন্ডনের থিয়েটার পাড়ায় একবার অডিশন দিতে চলে গেছিলেন।
থিয়েটারের মালিকের তো আক্কেল গুড়ুম। এশীয় ছেলের ওরকম নিখুঁত উচ্চারণ আর ড্রামাটিক
স্বরক্ষেপণ হয় নাকি? সঙ্গে সঙ্গে কাজে বহাল, কন্ট্রাক্ট সই করলেন। নেহাত বাবা চিঠিতে বারণ করলেন তাই, নইলে জে ওই থিয়েটার পাড়াতেই থেকে যেতেন।
পরে আমি কতবার দেখেছি, সাউথ কোর্টের বাড়িতে মেঘমন্দ্র কণ্ঠস্বরে জে রিহার্সাল করে
যাচ্ছেন। বোম্বে হাইকোর্টই ছিল জে’র ওল্ড ভিক। ঠিক যেন কালো
প্রপ্স্ পরে একজন অভিনেতা দর্শকের সামনে নিপুণ অভিনয় করে যাচ্ছেন।
আমার সাথেও কি তাহলে ওটা অভিনয়ই ছিল?
তাঁর অভিনয় জীবনের সেরা শিরোপা? জে’র দ্বিতীয় সন্তান। ১৪ই আগস্ট,
১৯৪৭। দিনার আঠাশতম জন্মদিনে জন্ম নেবে জে’র
দ্বিতীয় সন্তান, তাঁর সাধের পাকিস্তান।
যাক অনেক গপ্পো হল। ভেবে পেলেন কি? ধাঁধার উত্তরটা কি? ছোটবেলার কোন
জিনিসটা আমার জীবনে আবার ফেরত এসেছে? সেদিন অনেকটা ভেবে বার
করলাম।
রুট্ঠি আজ ফের অসূর্যম্পশ্যা হয়েছে।
এই তাজ হোটেলের কুঠুরিতেই রুট্ঠি আজ
শয্যাশায়ী। বাবার তীক্ষ্ণ শাসন নেই, সমাজের
চোখ রাঙ্গানি নেই, জে’র অবহেলা নেই।
কিন্তু তাও সে আর মুক্ত পৃথিবীতে বেরিয়ে যেতে পারে না, সূর্যের
দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারে না। তার শারীরিক ক্ষমতায় কুলোয় না। এই তো পাশেই আরবসাগর,
আহ্ কদ্দিন সমুদ্রের ধারে গিয়ে হাওয়া খাওয়া হয় না।
ওই যে বলছিলাম না, আজ সত্যিই আমার অন্য রকমের জন্মদিন। আজকে আমার উনত্রিশতম
জন্মদিনে আমি ছেড়ে চলে যাচ্ছি আমার বোম্বেকে, আমার দিনাকে,
আমার জে’কে।
রুট্ঠির বয়স আর বাড়বে না।
শি উইল অলওয়েজ বি অন দ্য রাইট সাইড অফ থার্টি।
অলওয়েজ।
অসূর্যম্পশ্যা - ঙ
এবার কথা রাখার পালা। কথা দিয়েছিলাম, আপনাদের আমার নাম বলে যাবো। আপনারাও অবিশ্যি কিছু কথা
দিয়েছিলেন, অন্যভাবে আমার নাম জানার চেষ্টা করবেন না। তবে
শুনুন, আমার পোশাকি নাম জন্মের সময় ছিল রত্তনবাঈ রুট্ঠি
পেতি।
বিয়ের পরে, মরিয়ম
রুট্ঠি জিন্না। জে’র পুরো নামটা নিশ্চয়ই আর বলে দিতে হবে
না। অ্যাতোক্ষণেও সেটা বুঝতে না পারলে বলতেই হচ্ছে, আপনি
ছোটোবেলায় ইতিহাস ক্লাসে বেবাক ফাঁকি মেরেছিলেন।
কিন্তু ব্যাপার কি জানেন, রুট্ঠি, পেতি, জিন্না
সব অস্তিত্বই আজ বিদায় নিয়েছে।
আমায় বরং আপনারা মনে রাখুন সারা বোম্বে আমায় যে
নামে জানতো – ‘দ্য ফ্লাওয়ার অফ বোম্বে’।
জে বলতেন, ব্লু
লিলি অফ বোম্বে।
সরোজিনী, বয়েসে
বড়ো হলেও আমার খুব একজন খুব কাছের ভালো বন্ধু। সরোজিনী নাইডু। তিনি আমার বিয়ের দিন
মজা করে বলেছিলেন, “জিন্না কিন্তু বোম্বের নীল ফুলটাকে ছিঁড়ে
নিলেন।”
So Jinnah has at last plucked the Blue Flower of his desire. It was all very sudden and caused terrible agitation and anger among the Parsis; but I think the child has made far bigger sacrifices than she yet realises.
So Jinnah has at last plucked the Blue Flower of his desire. It was all very sudden and caused terrible agitation and anger among the Parsis; but I think the child has made far bigger sacrifices than she yet realises.
সরোজিনীর কথাটাই শেষমেশ সত্যি হল। ফুল আসলে
গাছেই ভালো লাগে, তাই না?
জে’কে
প্যারিসে বসে একটা চিঠি লিখেছিলাম। আমার শেষ চিঠি। কিন্তু তারপর মার্সেইতে এসে মনে
হলো আবার নতুন করে লিখি। অক্টোবর ৮, ১৯২৮।
“When one has been as near to the reality of Life (which after all is Death) as I have been dearest, one only remembers the beautiful and tender moments and all the rest becomes a half veiled mist of unrealities.Try and remember me beloved as the flower you plucked and not the flower you tread upon.”
পুনশ্চ:
পনেরো বছর কেটে গেছে, রুট্ঠির ক্যান্সার-ক্লান্ত রুগ্ন শরীর মিশে গেছে বোম্বের তাজ
হোটেলের মখমলি বিছানায়।
জে এখন সাতষট্টি, সালটা
১৯৪৪। রুট্ঠি চলে যাওয়ার পরে রুট্ঠির সমস্ত জামাকাপড়, বইপত্র,
গয়না, একটা বিশাল সবুজ কাঠের চেস্টে ঢোকানো
হয়েছে।
জে’র
নির্দেশে।
জে চান নি কোনো ভাবে তাঁর মন দুর্বল হোক।
ভারতের ইতিহাস খুব দ্রুত পরিবর্তিত হতে চলেছে।
ব্রিটিশের হাত থেকে মুক্তি পাবে আসমুদ্রহিমাচল ভারতবাসী। ব্রিটিশ সূর্য অস্তমিত
হওয়ার আগে তার শেষ কামড় বসিয়ে যাবে শিকারের ঘাড়ে। বিকলাঙ্গ হবে অবিভক্ত ভারতবর্ষ।
কাটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো নিয়ে জন্ম নেবে নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তান।
আর এই বিভাজনের মাস্টারমাইন্ড হবেন জে। ভারতের
মুসলিমদের জন্য নতুন ভূখণ্ডের দাবি পূর্ণ করবেন তিনি। যে কংগ্রেস পার্টি তাঁকে
প্রাপ্য মর্যাদা দেয় নি, তাঁদেরকে তিনি দেখিয়ে দেবেন কি
করে নিজের দাবি আদায় করতে হয়। সেই ঋজু দৃপ্ত শরীরটা অনেকটাই ভেঙ্গে গেছে, চোয়াল ভেঙ্গে মুখের ভেতরে ঢুকে এসেছে। মিটিং-আলোচনা-সভা এসব আরোই বেড়েছে।
ব্যস্ততা ঊর্ধ্বসীমায়।
ঘরে থাকলে জে এখন একদম চুপচাপই থাকেন।
জীবনীশক্তি দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। জে নিজেও টের পান সেটা। জে তো শুধু ভবিষ্যতদ্রষ্টা
নন, ভবিষ্যতস্রষ্টা তিনি। হয়তো আন্দাজ করতে
পারেন তাঁর স্বপ্নের পাকিস্তান একদিন তৈরি হবে, কিন্তু তার
এক বছরের মধ্যেই এই ধরাধাম ছেড়ে চলে যেতে হবে তাঁকে। আজাদ এখন আর গাড়ি চালাতে পারে
না। তারও বয়েস বেড়ে গেছে, দৃষ্টিশক্তি কমে এসেছে। সে এখন
বাড়িতেই থাকে। জে’র দেখাশোনা করে।
রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনার জন্য জে’কে প্রায়শই বাইরে যেতে হয়। বাড়িতে থাকলে মাঝেমধ্যে হঠাৎ ডাকেন
আজাদকে, “আজাদ, সবুজ চেস্টটা একবার
খোলো তো।” আজাদ বহুদিনের বিশ্বস্ত অনুগামী, সে জে’র চোখের ভাষা পড়তে পারে। এর চেয়ে বেশি কিছু
বলতে হয় না। আরো কয়েকজন ভৃত্যকে ডেকে আজাদ ড্রয়িং রুমের টেবিল-চেয়ার-আরামকেদারা
সরিয়ে দেয়। সবুজ চেস্টটা খোলে।
তারপর কাশ্মীরি কার্পেটটার ওপর একে একে বিছিয়ে
রাখে রুট্ঠির পরনের কাপড়, কয়েকটা শুকিয়ে যাওয়া ফুল,
গোটা কয়েক চিঠি, গয়না, আর
প্রচুর বই।
তারপর? সারা
ঘরে একটামাত্র চেয়ার রেখে আজাদ সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
সাথে সাথে জে ওই ঘরটায় ঢুকতে পারেন না। অনেকটা
সাহস সঞ্চয় করেন। অনেকক্ষণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। তারপর দরজাটা সন্তর্পণে
খুলে, খুব ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকে আসেন। আজাদকে
নির্দেশ দেওয়া আছে, শত প্রয়োজনেও যেন এখন তাঁকে বিরক্ত না
করা হয়। আজাদ ঘরে ঢুকলে দেখতে পেত, জে চেয়ারে বসে এক দৃষ্টে
তাকিয়ে থাকেন প্রাণহীন জিনিসগুলোর দিকে। চোখ ভিজে আসে।
মনে পড়ে যায় একটা ষোলো বছরের মেয়ের কথা।
হাতে চা-পাতা, চোখে
অপার বিস্ময়, মুগ্ধতা। আর প্রায় শোনা যায় না, এরকম নিচু শব্দে গ্রামাফোনের পিনে ঘুরে যায় So Deep is the Night
In my dream our lips are blending,
Will my dream be never ending?
Will your memory haunt me till I die?
Alone am I,
Deep into the night,
Waiting for the light,
Alone am I,
I wonder why?
Deep is the night.
References:
[১] “Eight Lives: A
Study of the Hindu-Muslim Encounter” By Rajmohan Gandhi
[২] http://www.outlookindia.com/article.aspx?277928
[৩] “Jinnah of Pakistan”
By Stanley Wolpert
[৪] "Roses In
December, an autobiography" M.C. Chagla
[৫] India, wheat &
rice, 1861-1921 (Jacks) “
http://gpih.ucdavis.edu/files/India,wheat%20&%20rice,1861-1921(Jacks).xls”
[৬] India prices and
wages 1595-1930 (Allen and Studer)
http://gpih.ucdavis.edu/files/India_Allen-Studer_v2,pl.xls
[৭] “Jinnah of Pakistan”
By Stanley Wolpert
[৮] http://pakistaniat.com/2009/03/21/ruttie-pettit-jinnah/
[৯] http://www.flickr.com/photos/pimu/886400838/in/set-72157600711943677/
[১০] http://www.flickr.com/photos/pimu/886400852/in/set-72157600711943677/
[১১] http://bombayhighcourt.nic.in/libweb/historicalcases/cases/BAWLA_MURDER_CASE-1925.html