উৎস |
আর মেয়েটি প্রতি সপ্তাহে দক্ষিণেশ্বর
ওদের কিভাবে যে আলাপ হলো,
গাছেরা অবাক
হাওয়ারা ফিসফিসিয়ে বললো,
শুনেছ খবর?
এমনকি যে নদীটা প্রত্যেক সপ্তাহে দেখতো প্রণাম ভঙ্গি শান্ত সন্ধেতারার
সেও চমকে উঠলো এমন, লোকে ভাবলো
অসময়ে জোয়ার
ও! বলা হয়নি বুঝি! মেয়েটির নাম সন্ধেতারা
আর ছেলেটির?
গল্পে গল্পে রাতের ওপর মায়ার আলো
আলোয় আলোয় শুদ্ধ স্বরে রেওয়াজ
ওদের মাত্র তেইশ দিনের আলাপ
আলাপ গড়িয়ে চলে বন্দিশের দিকে
ছেলে ভাবে এবার বুঝি শুরু হবে স্থায়ী
অন্তরা বেজে উঠবে অন্তরে
তানে তানে সমস্ত বেলা পাগল হয়ে দিগঙ্গনাদের চুল খুলে দেবে
অথচ ছেলেটি গান শেখেনি কখনো
তাই জানতো না,
আলাপের দুটি ভাগ
আরোহের পর অবরোহ পেরলে তবেই বন্দিশ শুরু হয়
তবু, গান না জেনে ছেলেটি সেতার তুলে নেয়
গানের দেবতা ক্রুদ্ধ হন
নেমে আসেন স্বয়ং
মেয়েটি প্রণামে নত
ছেলেটি উদ্ধত পাহাড়
দেবতা বলেন, নাস্তিক আর আস্তিকে মিলন সম্ভবে না!
ছেলেটি ফিচ করে হেসে ফেলে
মেয়েটির চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে জল
সে বলে প্রায়শ্চিত্ত দেব গানে
গানই তো আমার পুজো প্রভু!
ছেলেটিকে বলে, আসি?
তুমি যদি একবার বিশ্বাসে নামতে
তাহলে এই গল্পের শেষ অন্য রকম হতো
ছেলেটি এবার আকাশ ছিঁড়ে হেসে উঠলো
চমকে গেলো মেয়েটি
চমকে গেলেন দেবতা স্বয়ং
ছেলেটি মুখ ফেরালো
ছেলেটি চলে যাওয়ার আগে একবার একবার শুধু
নম্রনীল স্বরে বললো,
শব্দ
শুধু শব্দে বিশ্বাস করি
আমার দেবতা শব্দ
আমার প্রেম শব্দ
আমার সব-কান্না সব-সত্যি শুধু শব্দ
শব্দ ছাড়া আমার আর কোনো দায় নেই
ভালোবাসা নেই সম্পর্ক নেই
দেবতা অপমানে নীল
মেয়েটি ব্যথায়
ছেলে ফিরে যাচ্ছে
একা
এরপর থেকে সব কবি প্রেমহীন
এরপর সব কবির সম্পর্ক শুরুতেই শেষ
এরপর কবিরা একা হন
অপমানে পাথর
দুঃখে মৃত
তবু নম্রনীল স্বর
তবু সেই উন্নত গ্রীবা
পৃথিবীর সমস্ত কবিতায় মৃদু কিন্তু দৃঢ় স্বরে বলছে
শব্দে বিশ্বাস করি শুধু
তবু,
আমাকে কি নাস্তিক বলা যায় ?