Link |
স্ট্রবেরী ওয়াইল্ড অর্থাৎ বুনো হলে তার স্বাদ বেড়ে যায় কে জানতো? বিশেষ করে তা যখন পাওয়া যায় এমন এক রাস্তার ধারে, যা বরাবর চলতে চলতে
মাঝে মধ্যেই মনে নিকো পার্কের বাচ্চা রোলার-কোস্টারের কথা উঁকি দিয়ে যায়? হলুদ রঙের এবড়ো খেবড়ো ওই ফলগুলোকে স্ট্রবেরী বলে মানতে বেজায় আপত্তি থাকলেও মুশকো জোয়ান ড্রাইভার (যার হাতে প্রাণের জিম্মা দিয়ে চলেছি পাঁচ ভেতো বাঙালি) জোর দিয়ে বললো যখন- আপত্তি করে কার বাপের সাধ্যি? পরে দেশে ফিরে দেখি ওগুলোকে সত্যিই ভারতীয় স্ট্রবেরী (Mock Strawberry) বলে- এই দেখুন। তবে গল্পটায় অনেক এগিয়ে গেছি, তার আগের কিছু ঘটনা না বলে নিলে আপনারা থই পাবেন না।
আমরা ঘুরে বেড়ালাম অন্ধকার নামা অবধি- চড়াই-উতরাই বেয়ে, জোঁকের ভয় এড়িয়ে, বিজাতীয় গরু আর ফুলো ফুলো কুকুরের পালের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। খাওয়ার পরের সিগারেটের মতো করে টান দিলাম অক্সিজেনের ভাগ কম পড়া বাতাসে, ন্যাড়া টিলায় দাঁড়িয়ে গলা খুলে চিৎকার করলাম পাহাড়ি টারজানের মতো, ঝাউবনের canopy দেখে আহ্লাদ করলাম আর মনকে বারে বারে ধমকে ভুলিয়ে রাখলাম যে দুদিন পরেই এখান থেকে চলে যেতে হবে।
রমেশ |
মাত্র মিনিটখানেকের মধ্যে
আমাদের জিভ বেরিয়ে বুকে। কি রাস্তা! খাড়া উঠে গেছে শোঁ শোঁ করে। তার ওপরে আমাদের
জানা নেই আর ঠিক কতক্ষণ চলবে এই চড়াই, তাই মুখে কিছু না বললেও আমি তো বেশ ঘাবড়েই
গেলাম- এই ঘটোৎকচের মতো চেহারায় চলতে চলতে ফুসফুস আবার হাপর না হয়ে যায়। কখনো
জঙ্গুলে সিঁড়ি ভেঙ্গে, কখনো ছাগল-চরা পথে হাঁটতে গিয়ে একবারও
যে উল্টোদিকে যাওয়ার কথা ভাবিনি তার কারণ- অসাধারণ সৌন্দর্য! দু’পাশে নেমে গেছে খাদ, একদিকে অনেক নিচে পিচের রাস্তা,
অন্যদিকে অতল বুনো গহ্বর। কিছুক্ষণ পরে অবশ্য রমেশের অভয়বাণী সত্য
প্রমাণ করে আমরা বেশ কিছুটা ভালো রাস্তায় উঠে এলাম। সে রাস্তার সৌন্দর্য বর্ণনা
করার মতো শব্দ বা বাক্য আমার শহুরে কি-বোর্ডে নেই। অরুণ নম্বর ১ এর কথা ধার করে
বলতে হয়- “বিভূতি পাতার পর পাতা কেন যে লিখেছিল বুঝতে পারছি
মাইরি...”। দু’জন পাতলা সদস্য আর দলের
মেয়েটি জোর কদমে হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা এগিয়ে চলে গেছে- পিছনে পড়ে আছি দুই
ক্যামেরা-বাহক অপোগণ্ড। এদিক ওদিক তাক করে করা shutterbug এর খচর খচর মিশে যাচ্ছে অজস্র পোকা আর পাখির
ডাকের সাথে।
কখনো ওই রাস্তা দিয়ে উঠে আসছে একপাল গরু নিয়ে সুন্দরী দু’টি মেয়ে (যাই বলুন, অমন জায়গায় সক্কলকে সুন্দর দেখায়), কখনো রিশপে বেড়াতে আসা, গামবুট পরিহিত স্বামী-স্ত্রী, যাদের দেখে মনে আশা জাগে, এরা যখন পারছে, আমিও পারবো পুরো রাস্তা যেতে-আসতে।
রিশপে পৌঁছে আমরা গিয়ে বসলাম নেওড়া ভ্যালী রিসোর্টের ক্যাম্পাসে। ঢালু পাহাড়ের গায়ে ফুটে আছে যত্নে সাজানো ফুল আর ততোধিক যত্নে সাজানো ছোট্ট ছোট্ট কটেজ। চারপাশে নানা বয়সের, নানা চেহারার কুকুর- কেউ ঘুমোচ্ছে, কেউ পাশে এসে বসে আছে- ভাবটি যেন মোটেই পাত্তা দেয়না আমাদের, কিন্তু বিস্কিটের প্যাকেট বের করতেই ঘাড় ঘুরিয়ে চলে আসবে কাছে। একটা কালো আর দুটো তামাটে কুকুর এর পর সারা রাস্তা (রিশপ থেকে লাভা) এসেছিলো আমাদের সাথে।
ফিরতি পথে এক মজার কাণ্ড। যখন প্রায় লাভা পৌঁছে গেছি, বেশ কয়েকবার জিরিয়ে নেওয়ার পরে- মানে সেই সরু ছাগল-চরা বুনো রাস্তাটা বেয়ে এখন নামার পালা, তখন আমাদের পায়ে পায়ে চলা কুকুরগুলো হঠাৎ করে বেদম ডাকতে শুরু করলো। তখন আমরা নামছি এমন একটা সিঁড়ি বেয়ে, যার ধাপগুলো তৈরি হয়েছে কোন এক গাছের শিকড় মাটি ঘিরে ধরার ফলে। দু’পাশে একটুও জায়গা নেই সরে যাওয়ার। এমতাবস্থায় পিছন থেকে ধুপধুপ শব্দ আর টুং টুং ঘণ্টির আওয়াজ। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি একপাল ছাগল সেই ঢাল বেয়ে বিপজ্জনক গতিতে নেমে আসছে আমাদের দিকে। আমরা যখন প্রমাদ গোনায় ব্যস্ত, তখন আমাদের পিছন থেকে কালো রঙের দলের পাণ্ডা কুকুরটা, যেটা প্রচুর ভাব দেখিয়ে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলো, ডাকতে ডাকতে চলে এলো আমাদের সামনে। এমন ভাবে ঘিরে ধরলো রাস্তাটা, যে ছাগলগুলোর আর এগনোর পথ রইলো না সামনে। ওরা কতকটা বাধ্য হয়েই নেমে গেলো পাশের ঢাল বেয়ে, যেখান দিয়ে মানুষের পক্ষে নামা অসম্ভব না হলেও বেদম কঠিন কাজ। এরপর সেই সারমেয়-প্রধান আবার একই র্যালা নিয়ে এগোতে শুরু করলেন আমাদের সামনে সামনে। লাভা পৌঁছে আমরা যখন বিশ্রাম নিচ্ছি, তখন ও আমাদের পাশেই বসে ঝিমোচ্ছিলো। বিস্কিট খেতে দিলাম, একবার শুঁকেই মাথা ঘুরিয়ে নিলো। আমার ব্যাখ্যা ছিলো, ও বলতে চাইছে, ‘এসেছি লোক পছন্দ হয়েছে বলে, এর মধ্যে আবার দেনা-পাওনা কিসের বাপু?’ আমার গিন্নির বক্তব্য, ‘বিস্কিটে ক্রিম ছিলো, তাই খায়নি, জানে লোম পড়ে যাবে’। কে জানে, আমার কিন্তু নিজের ধারণাটাই ঠিক মনে হচ্ছে।
চলবে...
ছবি: সুনন্দ
কখনো ওই রাস্তা দিয়ে উঠে আসছে একপাল গরু নিয়ে সুন্দরী দু’টি মেয়ে (যাই বলুন, অমন জায়গায় সক্কলকে সুন্দর দেখায়), কখনো রিশপে বেড়াতে আসা, গামবুট পরিহিত স্বামী-স্ত্রী, যাদের দেখে মনে আশা জাগে, এরা যখন পারছে, আমিও পারবো পুরো রাস্তা যেতে-আসতে।
রিশপে পৌঁছে আমরা গিয়ে বসলাম নেওড়া ভ্যালী রিসোর্টের ক্যাম্পাসে। ঢালু পাহাড়ের গায়ে ফুটে আছে যত্নে সাজানো ফুল আর ততোধিক যত্নে সাজানো ছোট্ট ছোট্ট কটেজ। চারপাশে নানা বয়সের, নানা চেহারার কুকুর- কেউ ঘুমোচ্ছে, কেউ পাশে এসে বসে আছে- ভাবটি যেন মোটেই পাত্তা দেয়না আমাদের, কিন্তু বিস্কিটের প্যাকেট বের করতেই ঘাড় ঘুরিয়ে চলে আসবে কাছে। একটা কালো আর দুটো তামাটে কুকুর এর পর সারা রাস্তা (রিশপ থেকে লাভা) এসেছিলো আমাদের সাথে।
ফিরতি পথে এক মজার কাণ্ড। যখন প্রায় লাভা পৌঁছে গেছি, বেশ কয়েকবার জিরিয়ে নেওয়ার পরে- মানে সেই সরু ছাগল-চরা বুনো রাস্তাটা বেয়ে এখন নামার পালা, তখন আমাদের পায়ে পায়ে চলা কুকুরগুলো হঠাৎ করে বেদম ডাকতে শুরু করলো। তখন আমরা নামছি এমন একটা সিঁড়ি বেয়ে, যার ধাপগুলো তৈরি হয়েছে কোন এক গাছের শিকড় মাটি ঘিরে ধরার ফলে। দু’পাশে একটুও জায়গা নেই সরে যাওয়ার। এমতাবস্থায় পিছন থেকে ধুপধুপ শব্দ আর টুং টুং ঘণ্টির আওয়াজ। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি একপাল ছাগল সেই ঢাল বেয়ে বিপজ্জনক গতিতে নেমে আসছে আমাদের দিকে। আমরা যখন প্রমাদ গোনায় ব্যস্ত, তখন আমাদের পিছন থেকে কালো রঙের দলের পাণ্ডা কুকুরটা, যেটা প্রচুর ভাব দেখিয়ে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলো, ডাকতে ডাকতে চলে এলো আমাদের সামনে। এমন ভাবে ঘিরে ধরলো রাস্তাটা, যে ছাগলগুলোর আর এগনোর পথ রইলো না সামনে। ওরা কতকটা বাধ্য হয়েই নেমে গেলো পাশের ঢাল বেয়ে, যেখান দিয়ে মানুষের পক্ষে নামা অসম্ভব না হলেও বেদম কঠিন কাজ। এরপর সেই সারমেয়-প্রধান আবার একই র্যালা নিয়ে এগোতে শুরু করলেন আমাদের সামনে সামনে। লাভা পৌঁছে আমরা যখন বিশ্রাম নিচ্ছি, তখন ও আমাদের পাশেই বসে ঝিমোচ্ছিলো। বিস্কিট খেতে দিলাম, একবার শুঁকেই মাথা ঘুরিয়ে নিলো। আমার ব্যাখ্যা ছিলো, ও বলতে চাইছে, ‘এসেছি লোক পছন্দ হয়েছে বলে, এর মধ্যে আবার দেনা-পাওনা কিসের বাপু?’ আমার গিন্নির বক্তব্য, ‘বিস্কিটে ক্রিম ছিলো, তাই খায়নি, জানে লোম পড়ে যাবে’। কে জানে, আমার কিন্তু নিজের ধারণাটাই ঠিক মনে হচ্ছে।
চলবে...
ছবি: সুনন্দ