বয়স? এই ২৫ কি ২৬। আচ্ছা, আচ্ছা, ২৬। মাইরি বলছি এখনও ২৭ হয় নি। বিয়ে-থা হয় নি। চাকরি-বাকরি ও
করি না। ঘরে বসে বসেই কথার বাণে বাঘ মেরে মেরে সুন্দরবন উজাড় করে দিলাম। এক কথায় নির্ঝঞ্ঝাট জীবন, বুঝলেন! তা হয়েছে কি, মানে, এত সুখ অন্য লোকের সয় না আর কি...... তারা আমার খুঁত ধরতেই ব্যস্ত! হঠাৎ বন্ধু আর আত্মীয় মহলে সবাই পোঁ ধরল, ‘কি রে, মাথার চুলগুলো তো সব পেকেই গেল!’ সব সময় এদের এই বাড়িয়ে বলা স্বভাব জানেন তো? যেই মাথায় কয়েকটা সাদা চুল দেখেছে অমনি...... যাক গে! কিন্তু ভিতরে ভিতরে কেমন একটা যেন খুঁতখুঁত....... পরের দিন আয়নায় চুল আঁচড়াতে গিয়ে সত্যিই যেন কয়েকটা সাদা চুল বেশিই মনে হল। তা কি আর করা? যে আয়নার সামনে দিনে একবারও দাঁড়াতাম কিনা সন্দেহ (এই শ্রীমুখ যত কম দর্শন করা যায়, ততই মঙ্গল!) তার সাথেই শুরু হল রঁদেভু...... সবার অলক্ষ্যে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে
পটাপট ‘সাদা কলঙ্কমোচন’। আজ্ঞে না, যত সোজা ভাবছেন, মোটেও তা নয়। সে এক অতি ধৈর্যের কাজ। আর একটু অন্যমনস্ক হয়েছেন কি গেল। একটি সুস্থ, সাবলীল, পুরুষ্টু কালো চুল সমূলে উৎপাটিত। দুত্তোর, নিকুচি করেছে। পাকার ইচ্ছে হলে পাক, থাকার ইচ্ছে হলে থাক...... আমার তো আর পাঁচটা কাজ আছে নাকি! গরম মেজাজ ঠাণ্ডা করতে বাড়ি গেলুম। সেখানেও কি শান্তি আছে? গুষ্টিতে গাদাখানেক ভাই। সবকটা তিলে খচ্চর। খেপিয়ে লাল করে দিল। আমার দিকে শুধু মাতৃদেবী, ‘কই আর চুল পেকেছে? অমন দুটো চারটে সবার পাকে...... জলের দোষ। বাছার আমার কেমন মাথাভর্তি কুচকুচে কালো চুল। অমুকের ছেলে তো ওরই বয়সী...... দেখ গিয়ে মাথার অর্ধেক সাদা।’ পিতৃদেবের মুখের ভাবখানা, ‘চুল নিয়ে চুলোচুলি না করে একটু কাজকর্মের দিকে মন দিলে......’। এই হল আর এক ঝামেলা। কিছুতেই বোঝাতে পারি না, আরে মশাই হেঁজিপেঁজি কাজ করার জন্য কি একা আমিই আছি নাকি? তার জন্যে ভূভারতে লোকের অভাব? দেখছেন না, চারিদিকে কিলবিল করছে! ওরা আছে কি করতে? আমি তো করব সেই কাজ। তা ‘সেই কাজ’ কি আর রোজ রোজ হয়! তার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। যাক গে, আমার সেই মহান আদর্শের গল্প না হয় আর একদিন হবে। যা বলছিলাম, বাড়ি থেকে একটা বেশ ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব নিয়ে মেসে ফিরলাম। দে কত আওয়াজ দিবি! তারই মধ্যে কমবয়সী কারও মাথায় একটা-দুটো সাদা চুল দেখলে কি যে আনন্দ হত! কিন্তু গোল পাকাল অন্য দিকে...... এবার একেবারে হেড আপিস থেকে বার্তা। বুঝলেন না? মানে ঐ আমার বান্ধবী আর কি...... এতদিন দিব্বি মাঝে মাঝে পাকা চুল নিয়ে ঠাট্টা ইয়ার্কি চলছিল, হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্রপাত, ‘ঐ তো ক্যাবলার মতো হাঁড়িপানা মুখ, তার মধ্যে আবার একগাদা পাকা পাকা চুল। তোমার সাথে তো রাস্তায় বেরনো যায় না। আমার বন্ধুরা আড়ালে তোমাকে ‘কাকু’ বলে। আর আমাকে ‘কাকিমা’। আমি, আমি ......’ এই সেরেছে, আবার কান্না কেন? তা ঠিক আছে, কিন্তু আমার করনীয় (ঐ ‘ভাইঝি’-দের সামনে পেলে দেখে নিতাম) কি? আচ্ছা, চুলের জন্য আমি, না আমার জন্য চুল? ঘরে ফিরে এই নিয়ে মনে মনে হাত-পা নেড়ে বিস্তর লেক্চার দিলাম। সে এক মর্মভেদী লেক্চার! যার মূল উপজীব্য বিষয় হল, আমার পরিচয় আমি নিজে। চুল তো অলঙ্কার মাত্র! বন্ধুরাও বলল, ‘মর্দ বন্!’ এই প্রথম মনে হল, তারাও বুঝি আমার সাদা চুলের প্রতি সহানুভূতিশীল। তাও জানেন, পরেরদিন গার্লফ্রেন্ডের সামনে একটা বুলিও কপচাতে পারলুম না! প্রচণ্ড কঠিন মুখে ব্যাগ থেকে সে একটা ‘সুপার ভ্যাসমল ৩৩’-র প্যাকেট বের করে আমার হাতে দিল। চোখে নিশ্চুপ আদেশ...... ঐ অ্যাডটার মতো, ‘হার সফেদ বাল কালা বানা লো।’ অ্যাডের লোকটার সাথেও এরকমই কি একটা হয়েছিল না? কি যে ভাবছি ছাইপাঁশ! এদিকে ততক্ষণে দেবী কানে আইপড গুঁজে উল্টো মুখে হাঁটা লাগিয়েছেন। আমিও মনে মনে বললুম, ‘ভাঁড়মে যাও’। হুঁ হুঁ, বিদ্রোহ এখনও জারি আছে। ‘সুপার ভ্যাসমল ৩৩’ আমার খাটের পাশের জানালায় বিরাজমান....... অস্পৃশ্যের মতো। গার্লফ্রেন্ডের সাথে ‘স্পিকটি নট্’। তাতে কি? অমর কবি নচিকেতা বলেছেন, ‘রেললাইনে বডি দেব, মাথা দেব না।’ বন্ধুরাও সাহস জুগিয়ে চলেছে। বান্ধবীর সাথে গড়ের মাঠে বসে বিকেলবেলা বাদামভাজা খাওয়ার সময়টা বেঁচে গেছে। ঐ সময়টা এখন আমার মাথায় বিভিন্ন ধরনের বৈপ্লবিক চিন্তা-ভাবনা আসছে। দুনিয়া উল্টে দিয়ে পাল্টে ফেলতে হবে! আর চুল? ছোঃ। ও তো পাকার জন্যেই!!http://www.cartoons4fun.com/cool_htm/white-hares.htm