পিকনিক করতে গিয়েছিলাম সেবার, নদীর ধারে। শুধু আমরা নয়, প্রচুর লোকজন জমেছিল সেদিন। শুকনো মরা নদী, তাই নিয়ে লোকের আদিখ্যেতার
শেষ নেই। কেউ সাঁতারের শ্যাডো করছে, কেউ বা ভক্তির ভেক ধরে কাক-স্নান সারছে...... এসব দেখেই বোকা-বোকা মজা পাচ্ছি। এখানে তো আর কিছুই করার নেই, খাওয়ার সময় জুটে গেলেই হল। এদিক-ওদিক চরে বেড়াচ্ছি, আশেপাশে কাউকেই চিনি না, নির্ভয়ে সিগারেট টানছি। ঘাটের ধারে কয়েকটা হনুমান এসে জুটেছে। বছরে দু-একবার বোধহয় ওরা মানুষ দেখতে পায়,
লোকজনের থেকে ওরাই ভয় পাচ্ছে বেশি। ধুর্, এভাবে পিকনিক করতে আসার কোনো মানে হয় নাকি...।
শেষ নেই। কেউ সাঁতারের শ্যাডো করছে, কেউ বা ভক্তির ভেক ধরে কাক-স্নান সারছে...... এসব দেখেই বোকা-বোকা মজা পাচ্ছি। এখানে তো আর কিছুই করার নেই, খাওয়ার সময় জুটে গেলেই হল। এদিক-ওদিক চরে বেড়াচ্ছি, আশেপাশে কাউকেই চিনি না, নির্ভয়ে সিগারেট টানছি। ঘাটের ধারে কয়েকটা হনুমান এসে জুটেছে। বছরে দু-একবার বোধহয় ওরা মানুষ দেখতে পায়,
লোকজনের থেকে ওরাই ভয় পাচ্ছে বেশি। ধুর্, এভাবে পিকনিক করতে আসার কোনো মানে হয় নাকি...।
এই......
এই...... আরেঃ ...... পরিচিত মনে হচ্ছে...... খুব চেনা সেই দুটো চোখ...... চশমা
কবে থেকে.......
যাঃ, হারিয়ে গেল...... আবার! এই নিয়ে জানি না কতবার। পা
ধরে এলো আমার।
২
গরমে আর হাঁটতে পারছি না, একটু বসতে পেলে ভালো হত। ব্রিজটা
তাড়াতাড়ি শেষ করে একটা গাছ তলায় এসে দাঁড়িয়েছি। পাশ দিয়ে হুস করে একটা বাইক পেরিয়ে
গেল। পিছনের সিট থেকে খুব চেনা গলা একটা, “আরে তুই... কেমন আছিস... কবে এলি......
যাস কিন্তু আমাদের বাড়িতে.........
গলাটা মিলিয়ে গেল। কথাটা শেষ হল না... কখনোই হয় নি...
৩
বিজয়ার প্রণাম করতে করতে কোমর ধরে গেল, বাড়িতে ছোট হওয়ার
এই এক সমস্যা। কি করছি, কোথায় আছি, কি করব...... সে অনেক কথা। জবাব দিতে দিতে আমিও
অবাক, এত প্রশ্নের উত্তর জানি আমি! নাঃ, নাড়ু-মিষ্টির পর্ব শেষ, অনেকক্ষণ হল, এবার
যেতে হবে। উঠে পড়লাম, পথ আটকে দাঁড়াল একজন। খুব চেনা দুটো চোখে সম্পূর্ণ অচেনা বিস্ময়,
“চলে যাবি? এখনই?” চোখে চোখ রাখতে গিয়েও নামিয়ে নিলাম...... জানি না কেন।
৪
আচ্ছা সুখে থাকা বলতে কি বুঝিস তুই? বাড়ির লোকের
হাসিমুখ, তাদের তৃপ্তি...... কালকের চিলি চিকেনটা দারুণ হয়েছিল...... কয়েকটা প্রশংসা,
ব্যস্। রোজ দুপুরে নিজেকে ঘুম পাড়িয়ে দিস কেন বলতো? গল্পগুচ্ছ-র পাতাগুলো আর তোর
অপেক্ষায় থাকে না, না? কি করে পারিস বলতো? তোর না নজরুলগীতি বেশি ভালো লাগে, জানে সে? তানপুরাটার
সুর সেই কবে নড়ে গেছে, মনে আছে? বাঁধবার কথা মনে আসে না একবারও? এত ব্যস্ত, বলতে
পারিস কার জন্য? নিজেকে ভালোবাসিস তুই? এতকিছুর পর নিজের জন্য ভালোবাসা আসে?
চার দেওয়ালের মধ্যে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাওয়া তোকে আর স্পষ্ট মনে
পড়ে না আমাদের। তোর সুখে থাকার অভিনয় অতি কুৎসিত ঠেকে আমাদের চোখে, তাই আর তোদের
বাড়ি যাই না। তবে এখনো আর্তনাদ শুনি বারবার, ‘আমি ভালো আছি...’।
৫
এবারও আমরা পিকনিক করতে গেছিলাম সেই নদীটার ধারে। নদীতে
এবার অনেক জল, দিব্যি সাঁতার কাটা যাচ্ছে। গলা জলে দাঁড়িয়ে তর্পণ এখানে আগে কখনো দেখিনি।
ঘাটের বটগাছে হনুমানগুলো কোথা থেকে এক কাঁদি কলা চুরি করে এনেছে। মহানন্দে ভোজ চলছে তাদের, আর খোসাগুলো
ছুঁড়ে ফেলছে নিচের দিকে।
এবারও আমার কিছু করার নেই। জায়গাটা প্রায় জনশূন্য। হাঁটতে
হাঁটতে এগিয়ে গেলাম সেই ব্রিজটার দিকে। আজ আর রোদ নেই, ছায়া খুঁজছি না তাই। হঠাৎ সামনে থেকে
একটা বাইক এসে থামল। ঝাপসা হয়ে যাওয়া পরিচিতির একটুকরো হাসি চোখে একজন সামনে এসে
দাঁড়ালো। হয়ত কিছু বলার ছিল। সুযোগ না দিয়ে বললাম,
‘যদি কোনোদিন ঘুড়ি-লাটাই কম পড়ে, সেইদিন এসো...
সংকোচ করো না।’
আমি এগিয়ে গেলাম।