“কাউকে বলবি
না তো?”- এই ছোট্ট কথাটা থেকেই শুরু হয়েছিল। শেষটা যেকোনো বিজ্ঞাপনী সংস্থার পক্ষে
ঈর্ষণীয়। বহু ব্যয়
করে পণ্যের বক্তব্য ও গুণাগুণ হাজার হাজার শ্রোতার কাছে পৌঁছে দেওয়া যতটা কষ্টসাধ্য, তার চেয়ে বরং চেপে যাওয়ার চেষ্টা করাটা হয় অনেক সহজ। ব্যাস্-- ---কাজ হবে ম্যাজিকের মতো। দিন দু’য়েকের মধ্যেই নন্টের সাথে ফুচকীর ফষ্টিনষ্টির ইতিহাস থেকে আপনার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সে মা ভবানীর ব্যালে ডান্স- সবই পাবলিক প্রপার্টি। আগাগোড়া – “না না, পাগল নাকি? আমি কাউকে বলি!”- এই প্রতিশ্রুতি ল্যাজে বেঁধে আপনার রহস্য সার্বজনীন।
করে পণ্যের বক্তব্য ও গুণাগুণ হাজার হাজার শ্রোতার কাছে পৌঁছে দেওয়া যতটা কষ্টসাধ্য, তার চেয়ে বরং চেপে যাওয়ার চেষ্টা করাটা হয় অনেক সহজ। ব্যাস্-- ---কাজ হবে ম্যাজিকের মতো। দিন দু’য়েকের মধ্যেই নন্টের সাথে ফুচকীর ফষ্টিনষ্টির ইতিহাস থেকে আপনার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সে মা ভবানীর ব্যালে ডান্স- সবই পাবলিক প্রপার্টি। আগাগোড়া – “না না, পাগল নাকি? আমি কাউকে বলি!”- এই প্রতিশ্রুতি ল্যাজে বেঁধে আপনার রহস্য সার্বজনীন।
যেকোনো কথার নিয়তি একরকম হয় না।
স্থান-কাল-পাত্র (এবং অবশ্যই পাত্রী) বিবেচনা করেই সেটি উন্মুক্ত হয়। মানে, যেখানে
না হওয়াই ভালো, সেখানেই ঝুলি থেকে ম্যাও শব্দে......
সরকারী
তথ্যের কথাই প্রথমে ধরা যাক। ঘটা করে বিশৃঙ্খল সংসদে পাশ হল তথ্যের অধিকার
সংক্রান্ত আইন। খুবই স্বল্প ব্যয়ে দেশের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত খবর ছাড়া আর যেকোনো
তথ্যের ভাণ্ডার দেশবাসীর সামনে উজাড় করে দিলেন সরকার বাহাদুর। কিন্তু কিমাশ্চর্যম্,
তার আগে থেকে আজ অবধি সবচেয়ে আকর্ষণীয় হারে ‘লিক’ হয়েছে প্রতিরক্ষা তথ্যই। প্রয়াত
প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী নাকি পরমাণু শক্তি সংক্রান্ত পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ
ঘটানোর চেষ্টা করেছিলেন তিন বার। কিন্তু হায়, মায়ের কাছ থেকে জন্মটিই একমাত্র
পেয়েছিলেন তিনি। ক্ষুরধার বুদ্ধির কণামাত্রও নয়। কাজেই এই নিয়ে মন্ত্রীসভার
রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পরেই হোয়াইট হাউসের ধমকটি পেয়ে যান
তিনি এবং পিছিয়ে আসেন। রাজসভার সহকর্মীদের মন্ত্রগুপ্তির আশ্চর্য ক্ষমতার ওপর পরবর্তী আরেক প্রধানমন্ত্রীর আস্থা ছিল সম্পূর্ণ। কাজেই বাজপেয়ী খানিকটা অসাংবিধানিক ভাবেই এই কাজটি সেরেছিলেন। সম্পূর্ণ মন্ত্রীসভাকে অন্ধকারে রেখে গুটিকতক সেনাপ্রধান ও উচ্চপদস্থ বিজ্ঞানীদের নিয়ে টুক করে পোখরাণে.........
তিনি এবং পিছিয়ে আসেন। রাজসভার সহকর্মীদের মন্ত্রগুপ্তির আশ্চর্য ক্ষমতার ওপর পরবর্তী আরেক প্রধানমন্ত্রীর আস্থা ছিল সম্পূর্ণ। কাজেই বাজপেয়ী খানিকটা অসাংবিধানিক ভাবেই এই কাজটি সেরেছিলেন। সম্পূর্ণ মন্ত্রীসভাকে অন্ধকারে রেখে গুটিকতক সেনাপ্রধান ও উচ্চপদস্থ বিজ্ঞানীদের নিয়ে টুক করে পোখরাণে.........
পারমাণবিক
পরীক্ষা-নিরীক্ষার লাভ ক্ষতি আমার বিচার্য নয়। তবে গোপন করতে না পারার রোগটি
সমাজের অভিজাততম স্তর থেকেই প্রচলিত- এটি বোঝাতেই এই রামকাহিনী।
যাকগে, এতো গেলো ‘পলিটিশিয়ান’দের কথা। তারা
খুব মন্দ লোক, সে কথা কে না জানে! আমরা মোটেই ওর্রম না, তবে আমরা ঠিক কিরম?
এই তো আজই
অমুকবাবুর মেয়েকে দেখলুম ঐ বখাটে ছোঁড়াটার সাথে সিনেমা হলের সামনে। অমুকবাবু আমাকে
অভিভাবকত্বের জন্য আলাদা মাসোহারা দেন না বটে, তবে আমি মোটেও স্বার্থপর নই।
মেয়েটির ইহকাল পরকাল ঝরঝরে হয়ে যাওয়া আটকাতে সাত-তাড়াতাড়ি কথাটা চেলে দিলুম
প্রতিবেশীর রান্নাঘরে। যথাসময়ে সেটি উপযুক্ত মশলাপাতি ও ড্রেসিং সহযোগে পরিবেশিত
হয়ে গেলো শেষ পাতে।
তথ্যপ্রযুক্তির বাড়াবাড়ি রকমের উন্নতির পর
‘গোপন’ শব্দটিই অভিধান থেকে গুপ্ত হতে বসেছে। আপনার ব্যবসা ও পকেটের সমৃদ্ধি
সুরক্ষিত রাখার জন্য ব্যাঙ্ক আপনাকে হাজারটা পাসওয়ার্ড ও সিকিউরিটি প্রশ্নে ঘেরা
একটা ডেবিট কার্ড দিল। মুহূর্তে সেটির গোপনীয়তা ভাঙতে আসতে থাকলো হাজারো প্রলোভন।
-“হ্যালো স্যার, আমি ময়ূরাক্ষী, আপনার সাথে দু’মিনিট কথা বলতে পারি?” ময়ূরাক্ষীর
মিষ্টি জলে যখন আপনি হাবুডুবু খাচ্ছেন, ততক্ষণে তার বস্ জেনে নিয়েছেন আপনার
সুরক্ষা চক্রের ফাঁকফোকর। কালক্রমে একদিন হঠাৎ আপনার শিক্ষে হবে যে ময়ূরাক্ষী এবং
তার দলবল- কেউই অর্ধশিক্ষিত অভিমন্যু নয়।
প্রাসাদোপম শপিং মলের ট্রায়াল রুমে যখন
এদিক ওদিক ঘুরে একান্ত আয়নায় নিজেকে বাঁকিয়ে-ফুলিয়ে-চুপসে সবরকম ভাবে সদ্য কেনা
পোশাকটি পরীক্ষা করে নিচ্ছেন নিশ্চিন্তে। গোপন উপকক্ষে আয়নার পেছনে রাখা ক্যামেরা
মুচকি হেসে আপনাকে সটান পৌঁছে দিল সানি লিওনের সাথে গরমাগরম খ্যাতির চূড়ায়।
এই নিয়ে পরদিন হাজারটা স্ট্যাটাস আপডেট
বেরিয়ে গেল সমাজ-জালে (আচ্ছা, নাহয় সোশ্যাল নেটওয়ার্কই বললুম)। সবাই সাবধান হল
গোপনীয়তার স্বার্থে। একটু খেয়াল করতেই দেখা গেল এই সতর্কতাবার্তার ঠিক নীচেই
জ্বলজ্বল করছে ভাস্করের সাথে নস্করের সদ্যস্থাপিত সখ্যতার উপাখ্যান। এই নিয়ে আবার
বিকেলে ভাস্করের উড-বী একচোট ঝগড়ার পর could be তে updated হল। ধন্য নেটওয়ার্ক!
কথার গোপনীয়তার বিষয়ে আবার সবার সুনাম সমান
নয়। মাস্কারা আঁকা ভ্রুকুটি উপেক্ষা করলে share করতে পারি পাণ্ডবদের বড়দার কথা। কুমারী কুন্তী ও সূর্যদেবের প্রেমের ফসল
কুন্তী চেপে গিয়েছিলেন সযত্নে। কথাটা ভাঙল যুদ্ধের শেষে। নিজের অজ্ঞাতে
ভ্রাতৃহত্যার খবরটি ধর্মপুত্র পেয়েছেন খানিক আগেই। উত্তেজনায় বিড়ি ফুঁকছেন
অস্থিরভাবে। হেনকালে তার মাতাঠাকুরাণী ঘ্যান ঘ্যান করে জানাতে এলেন তার
বাধ্যবাধকতার কথা। মেজাজটা খিঁচড়ে ছিল এমনিতেই। দুম করে মাকে লক্ষ্য করে সমগ্র ললনাকুল
কে অভিশাপ দিয়ে বসলেন। কোন কথাটি গোপনীয় আর কোনটি নয়- এই বিচারবোধ না থাকার কারণে
নারীজাতি নাকি তথ্য গোপনে অসমর্থ হবে। একদম বাজে ও নিতান্ত লিঙ্গবিদ্বেষী অভিযোগ
জানি। তবে এই চটুল প্রবাদটি আজও বেশ জনপ্রিয়। হুঁ হুঁ বাবা, দেখলে হবে,
ধর্মপুত্তুর বলে কথা, জীবনে একটা মাত্র semi-মিথ্যে বলেচে,
ওর কতা না ফলে যাবে কোথায়?
যাকগে ওসব ছেঁদো কথা। ‘গোপন’ ব্যাপারটি
গুপ্তযুগের মতই অতীত হয়েছে জানি। কাজেই নিজের ঘরটি গুছিয়ে মহানন্দে যত পারবেন ফাঁস
করুন। আপনি না করলেও অন্যরা করবে বৈকি। আর হ্যাঁ, এতক্ষণ ধরে যে কথাগুলো বলে গেলুম- প্লিজ, কাউকে বলবেন না যেন।