Monday, January 9, 2012

আজ তোমার পরীক্ষা -- দিদিমণি


পরীক্ষার মরসুম শেষ হলো। আমাদের আর ছাত্রকুলের হাই-টাইম। তোমার জীবনে যত crisis-ই থাকুক, তোমার শরীর যত খারাপ-ই
হোক, তোমাকে থাকতেই হবে attentive। ছাত্রদের পয়েন্ট থেকে বলছি- তুমি সারা বছর কি অন্যায় করিয়া, পড়ায় কতটা ফাঁকি মারিয়া, বা উল্টোটা- সবই তোমার পরীক্ষার খাতায় বিচার হবে ঠিক যেমন মৃত্যুর পর যমালয়ে তোমার পাপপুণ্যের শুনানি হয় বলে শুনেছি। শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা, কিন্তু চিত্রটা ভিন্ন। তোমার ঘাড়ে স্পন্ডেলাইটিস হেতু যতই যন্ত্রণা হোক, তোমার জীবনের প্রথম এবং সম্ভবত একমাত্র বিয়ের পর হানিমুনে তুমি যে জাহান্নামেই যাও, তোমার বাপ মা আই. সি. ইউ. তে যত কষ্টই পান না কেন, কৌরবের বংশের (পড়ুন বিশাল সংখ্যক ছাত্রকুলের) কয়েক বান্ডিল পরীক্ষার খাতা নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে মূল্যায়ন করে সেই নম্বর স্কুলে জমা না দেওয়া পর্যন্ত মরেও তোমার নিস্তার নেই। যদি তোমার কোমর ভাঙে, খাতা receive করতে যদি তুমি স্কুলে আসতে অপারগ হও, তাহলে তোমার কোন শুভাকাঙ্ক্ষী সহকর্মী তোমার বাড়ি গিয়ে খাতা দিয়ে আসবে (বিশ্বাস করুন, সত্যি ঘটনা)। যদি পরীক্ষার সময় তোমার পরিবারের কারুর কোন দুর্ঘটনার জন্য তুমি পরীক্ষার হলে ডিউটি না দিতে পেরে থাকো, তবে পরের পরীক্ষা চলাকালীন সেই ঘটনায় তোমার ওপর করা করা অসামান্য অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তোমাকে বেশি ডিউটি দেওয়া হবে (এটাও সত্যি)। তাই স্কুলে পরীক্ষা শুরু হলে গুরুপাক খাবার খেতেও ভয় পাই, পেট খারাপ হয়ে হল থেকে যদি দুবার বেশি বেরোতে হয়- তার পাপের ফল কতদিন ভোগ করতে হবে তার ঠিক নেই।
পরীক্ষা-ভীতিটা তাই ছাত্রদের মতো শিক্ষকদেরও থাকে। তারপর যদি সেটা বোর্ড বা কাউন্সিলের পরীক্ষা হয় তাহলে তো আর কথাই নেই। তুমি দুমিনিট পরীক্ষার হলে ঢুকতে লেট করেছো কি মরেছো। হেড (মাস্টার/মিস্ট্রেস)-এর ঝাড়, বহিরাগত ছাত্রদের কপচানি, তাদের গার্জেনদের চোখ রাঙানি, এমনকি মিডিয়ার জলজ্যান্ত শিকারও তুমি হয়ে যেতে পারো। দুমিনিট লেটের কারণটা যত ভয়াবহই হোক সেটা লোকে পরে শুনবে। আর যদি কেউ কিছু নাও বলে, তোমার conscience তোমাকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেই, কারণ স্কুলের পরিস্থিতিটা তোমার ভাল করেই জানা। যতগুলো ঘরে পরীক্ষা হচ্ছে ঠিক ততজন শিক্ষকই স্কুলে আছেন। একজন absent হয়ে গেলে বা দেরি করলে তাঁর জন্য নির্দিষ্ট ঘর ফাঁকা পড়ে থাকবে, সেখানে পরীক্ষা নির্দিষ্ট সময়ে শুরু করা যাবে না। কোন কোন স্কুলে তাই পরীক্ষার আগে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে নোটিশ আসে—“পরীক্ষা চলাকালীন কোনপ্রকার ছুটি মানা হইবে না” ঐদিকে সেই শিক্ষকের লোকজন তাদের প্রয়োজনে তাকে হয়তো পাশে চান। নোটিশটা তো আর তাদের উদ্দেশ্যে আসেনি যে স্কুলে পরীক্ষা চলার কারণে শিক্ষকের বাড়ির কোন সদস্যের কোন প্রয়োজন এইসময় থাকিতে পারিবে না!
 ছাত্রদের সুদিন আসছে, ওদের ওপর থেকে সমস্ত চাপ তুলে নিতে সরকার বদ্ধ পরিকর – একটি ছাত্রও যাতে চাপের শিকার না হয়। এ তো নয় বুঝলাম, সাধু পরিকল্পনা। কিন্তু শিক্ষকদের চাপ কমানোর কথা কি কেউ ভেবেছেন? ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতটা 1 : 40 থেকে বাড়তে বাড়তে 1 : 100-এ গিয়ে পৌঁছেছে এ হেন চাপে শিক্ষকরা সত্যি ছাত্রদের চাপমুক্ত রাখতে সাহায্য করতে পারবেন, নাকি কিলিয়ে, গুঁতিয়ে, সেধে ভেড়ার পালের মত চালনা করতে বাধ্য হবেন? জাতির মেরুদণ্ড বলে যাদের বার খাওয়ানো হয় তাদের নিজেদের মেরুদণ্ডে যদি অকালে ব্যথা শুরু হয় তাহলে তাঁরা আর যাই করুন জাতির মেরুদণ্ড হওয়ার মহান কাজটা করতে পারবেন না

About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই