কোলকাতা লীগ আবার ইস্টবেঙ্গলের। এবারো ট্রফি হীন মোহনবাগান। কি বলছেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা?
১৯১১ সালে
সাহেবদের হারিয়ে যখন মোহনবাগান প্রথমবার আই.এফ.এ শিল্ড জিতেছিল তখন সেই দলের প্রায় অর্ধেক খেলোয়াড় ছিল আজকের ওপার বাংলার মানুষ। অবশ্য তখন দুই বাংলা ভাগ হয়নি। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রতিষ্ঠা হয়নি। উদ্বাস্তু শব্দটা বাংলা অভিধানে ছিল অপরিচিত। তথাপি শিল্ড জয়ের কৃতিত্বটা ঘটিরা শুধুমাত্র নিজেদের কৃতিত্ব বলেই জেনে ও মেনে এসেছে। তাই নিয়ে আপত্তিও নেই। দেশের সম্মানের প্রশ্ন বলে কথা। তারপর গঙ্গা-পদ্মা নদী দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে। জল শুকিয়ে বাষ্পও হয়ে গেছে। সেসব ঘটনা সকলেরই কম বেশি জানা। কিন্তু আজকেও যখন মোহনবাগান আর ইস্টবেঙ্গল দুটো দল যখন মুখোমুখি হয়, সেই বাষ্প থেকে আবার বৃষ্টি ঝরে পড়ে আমাদের ভিজিয়ে দেয়। আমরা ঘটি-বাঙাল বুঝিনা, ইলিশ-চিংড়ি দুটোই খেতে ভালবাসি, ফুটবলের থেকে ক্রিকেটে বেশি আগ্রহী এই জাতীয় কথা গুলো সাময়িকভাবে আমাদের মন থেকে মুছে যায়।
সাহেবদের হারিয়ে যখন মোহনবাগান প্রথমবার আই.এফ.এ শিল্ড জিতেছিল তখন সেই দলের প্রায় অর্ধেক খেলোয়াড় ছিল আজকের ওপার বাংলার মানুষ। অবশ্য তখন দুই বাংলা ভাগ হয়নি। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রতিষ্ঠা হয়নি। উদ্বাস্তু শব্দটা বাংলা অভিধানে ছিল অপরিচিত। তথাপি শিল্ড জয়ের কৃতিত্বটা ঘটিরা শুধুমাত্র নিজেদের কৃতিত্ব বলেই জেনে ও মেনে এসেছে। তাই নিয়ে আপত্তিও নেই। দেশের সম্মানের প্রশ্ন বলে কথা। তারপর গঙ্গা-পদ্মা নদী দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে। জল শুকিয়ে বাষ্পও হয়ে গেছে। সেসব ঘটনা সকলেরই কম বেশি জানা। কিন্তু আজকেও যখন মোহনবাগান আর ইস্টবেঙ্গল দুটো দল যখন মুখোমুখি হয়, সেই বাষ্প থেকে আবার বৃষ্টি ঝরে পড়ে আমাদের ভিজিয়ে দেয়। আমরা ঘটি-বাঙাল বুঝিনা, ইলিশ-চিংড়ি দুটোই খেতে ভালবাসি, ফুটবলের থেকে ক্রিকেটে বেশি আগ্রহী এই জাতীয় কথা গুলো সাময়িকভাবে আমাদের মন থেকে মুছে যায়।
এবছরও এর অন্যথা হয়নি। কোলকাতা লীগ ও জাতীয় লীগ মিলিয়ে দুটি দলের
তিন বার সাক্ষাতে মোহনবাগানের
পাল্লাই ভারী ছিল। কিন্তু তা হলে তো চলবেনা। সময় পাল্টেছে। এবছর দুবার হেরে গেছে বলে কি আর ইস্ট
সমর্থকদের কিছুই বলার নেই? নিশ্চয়ই আছে। উত্তরটা পাওয়া গেলো কর্পোরেট কর্মী বিজয় বোসের কাছে -
“মোহনবাগান আমাদের দু’বার হারিয়ে কোন মহাভারতটা উলটেছে? এ বছর আমরা তিনটে ট্রফি জিতেছি। তার মধ্যে দুটোর নাম হল আই.এফ.এ শিল্ড ও কোলকাতা লীগ। ওরা তো হেরে
যাওয়ার ভয়ে শিল্ড খেললোইনা। ওরা যে এত বড় বড়
কথা বলে, লাস্ট দু’বছরে কটা ট্রফি জিতেছে ওরা?” সত্যি কথা। গতবছর আর এবছর মিলিয়ে এখন পর্যন্ত
একটা ট্রফিও মোহনবাগান তাদের ঘরে তুলতে পারেনি। আরও এককাঠি ওপরে গিয়ে বললেন নরওয়েতে
গবেষণারত নলিনাভ সেনগুপ্ত। “মোহনবাগানের সমর্থকদের জন্য মায়া হয়। ৭৫ সালে ৫ গোলে হারিয়েছিলাম।
তার দায় শোধ করতে ওদের ৩৫ বছর লেগে গেছিল। তাও ওটা ছিল ৫-০ আর ওরা হারিয়েছে ৫-৩-এ।
দু’টোর মধ্যে তো তফাত আছে! সেটাতো বুঝতে হবে নাকি। ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে আর কতদিন থাকবে? বেশি কথা বললে আবার
৫-৬ গোল দিয়ে ৩০-৩৫ বছরের জন্য মুখ বন্ধ করিয়ে দেবো”। কথায় আছেনা যে, বাঙালকে চটানো উচিত
না? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত স্পন্দনা ভৌমিক অবশ্য এতোটা
আক্রমণাত্মক নয়। “খেলা এখন আর বিশেষ দেখা হয়না। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল জিতেছে শুনলে মনটা
খুশিতে ভরে ওঠে। আর হার সবসময়েই মনকে ভারী করে। দু’দিন আগে একজনের কাছে শুনলাম ইস্টবেঙ্গল কোলকাতা লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আর মোহনবাগান শেষ ম্যাচেও হেরেছে। বেশ মজা পাচ্ছি”। “মোহনবাগান যতদিন কোন ট্রফি
না জিতে বসে আছে সেটা একটা রেকর্ড। আমরা চাইলেও এই রেকর্ড ভাঙতে পারবো না”- একটু মজা
করেই বললেন শুভম রায় চৌধুরী। ময়দানের এখন এইটাই সবথেকে
বড় খিল্লি। কান পাতলে চারিদিকে শুধু এই একটা কথাই শোনা যাচ্ছে। “কিরে মাচা (মোহনবাগান
সমর্থকদের আদরের নাম। আর ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা হল ‘লোটা’) কটা ট্রফি জিতলি?”। “মোহনবাগান
টোলগেকে নিয়ে নিয়েছে। ওডাফাকে নিয়েই বা কি করলো? ওরা ১৩ কোটির টিম, ওরা মাঠে পাড়ে ডিম। নিকনা টোলগেকে। আমরা নতুন
বিদেশি প্লেয়ার নিয়ে আসবো। ওদের আনা নতুন বিদেশিরা তো বড় খনি। ডায়মন্ড স্টার, জিলানি স্টোরে কিসব জালি
প্লেয়ার এনেছিলো না ওরা" বক্তব্য স্কুল স্টুডেন্ট শুভময় রুদ্রর। সত্যিই ব্যকফুটে চলে গেছে মোহন সমর্থকরা।
সময় কত তাড়াতাড়ি পাল্টায়। আবার তোমাদের সময় আসবে। পরের সিজনে আবার যদি ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের কাছে হেরে যায় তখন আবার তোমরা বলার সুযোগ পাবে। “দেখলি যাই কর না কেন- যতবার ডার্বি, ততবার হারবি।” কিন্তু ততদিন পর্যন্ত
এডভান্টেজ ইস্টবেঙ্গল। “ততদিন পর্যন্ত আবার কি? বরাবরই এডভান্টেজ ইস্টবেঙ্গল।” তীব্র প্রতিবাদ করে
উঠলেন অনিমেষ বৈদ্য। “ফেডারেশন কাপ,
কোলকাতা লিগ, আই.এফ.এ শিল্ড, জাতীয় লিগ মিলিয়ে মোট কটা ট্রফি জিতেছে ওরা? আর আমরা কটা জিতেছি?
হেড টু হেডেই বা কারা এগিয়ে? দেখে নিতে বলুন ওদের। এখনো আমাদের থেকে অনেক পিছিয়ে। আমরা
ভাই ট্রফি জেতার জন্য ফুটবল খেলি। ২টো ম্যাচ হারিয়ে ওরা এমন শুরু করেছিল যেন UEFFA
কাপ জিতে গেছে। আর দেখুন দাদা বার্সেলোনাও দু’একটা ম্যাচ বাজে হেরেছে। তাই বলে ওদের
শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কি কেউ প্রশ্ন তুলবে?” সত্যি কথা। বার্সেলোনা ভারত সফরে এসে ইস্টবেঙ্গলের সাথেই খেলবে
বলে শোনা যাচ্ছে। যেখানে মোহনবাগান দেশের জাতীয় ক্লাবের শিরোপায় ভূষিত।
এই ছিল ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। যাদের পিঠে
এখনো কাটা তারের দাগ। বুকে দেশভাগের আগুন আর সব হারানোর বেদনা ধিকিধিকি জ্বলছে। সেই
দাগ আজকে অনেকটা আবছা হয়ে গেলেও তা পুরোপুরি মুছে যায়না। আর যন্ত্রণার আগুন এভাবেই
বারবার আছড়ে পড়ে বিপক্ষের জালে।
এই ডুয়েল চলতেই থাকবে। বাঙালির চিরন্তন ডুয়েল। এবার না হয় ইস্টবেঙ্গলের পাল্লা ভারী। দুঃখ কী? দম রাখো খেলা ঘুরবে।
পরের বার না হয় তোমাদের হবে।