রবি ঠাকুর কে নিয়ে ভারি বিপদ! আজকাল আবার সব কিছু “শর্টে”র জমানা! সেদিন
দেখি, একটা টেক্সট মেসেজ এলো আমার
সেল ফোনে! “Dada, whn iz rnts db in dis eng yr 12” -ভেবেই চলেছি। এই আর.এন.টি. আবার কে? কুলকিনারা পাচ্ছি না। আমার পুরোনো স্যার নয় তো? কিন্তু, যে পাঠিয়েছে, সে তো সেদিনের ছোকরা! আমার স্যারের নাম জানবে কি করে? তারপর, হঠাৎ চাচা চৌধুরীর মত মগজে বিদ্যুৎ খেলে গেল! আর.এন.টি মানে তো- রাভিন্দর নাথ টেগোরে!! আজকাল নাকি এরকমই ‘উরুশ্চারণ’।
বড় বড় স্কুলে নাকি শেখানো হচ্ছে। জোব্বা পরা ভদ্রলোকের একটা আস্ত কমিক স্ট্রিপ বেরুবে বলে আশা করছে সবাই। ছেলে- মেয়েগুলো বাংলাটা পড়তে পারে না, তাই ইংরেজী আর হিন্দিতে বেরুবে। একটা ফার্স্ট ল্যাঙ্গুয়েজ আর পরেরটা সেকেণ্ড। বাংলা? কোনোরকমে থার্ড। ক্লাস এইটের পর আর থাকবে না। বাঁচা যায়! রাভিন্দর নাথ টেগোরে- কে আর মনে রেখেছে!! তাঁর আসল নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। “আমসত্ত্ব দুধে ফেলি, তাহাতে কদলী দলি, সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে। হাপুস হুপুস শব্দ, চারিদিক নিস্তব্ধ, পিঁপিড়া কাঁদিয়া যায় পাতে...” এইটা যখন প্রথম পড়ি, তখন মনে হয়েছিল, মনের কথা- পেটের কথা। পেটের কথা মানে- পেটের প্রেম। অমৃত কাকে বলি জানি না! তবে মালদার গোপালভোগের আমসত্ত্ব দুধে ফেলে ১ ঘন্টা পর দেখেছি, সেই দুধ পুরো আমের ঘন সরবত হয়ে গেছে। তারপর সেটা ফ্রীজে রেখে ঠাণ্ডা করে, আস্তে আস্তে চুমুক মেরে মনে হয়েছে- ‘ওরে দুধ গোলা রে! তুঁহু মম শ্যাম সমান!’ রবি ঠাকুর ধর্মে বেম্মো ছিলেন। তবে আদতে তো বাউন। খাবারের কথা তিনি লিখবেন না তো, কি আমি লিখবো? যত্তসব! বাউনের কথায় মনে পড়ল- তাঁদের পরিবারের আসল পদবী ছিল, কুশারী। পঞ্চানন কুশারী ছিলেন তাঁদের আদি পুরুষ। গোঁড়া বাউন। পীর আলি বলে এক নবাব তাঁকে গরুর মাংস রান্নার গন্ধ শুঁকিয়েছিলেন। সংস্কৃতের খ্যাঁচাকলে পড়ে, মানে একটা শ্লোক ছিল- “ঘ্রাণেণ অর্দ্ধভোজনম্” মানে গন্ধ শুঁকলেই আদ্ধেক খাওয়া! তিনি পতিত বাউন হলেন। তকমা পেয়েছিলেন, পিরেলী বাউন। সে অনেক দুঃখের কথা- থাকগে। আমার অনুমান, তিনি প্রথম যে কবিতাটা লিখেছিলেন, সেটা ছিল- ‘লুচি পড়ে পাতানড়ে’... পরে সেটা হয়েছিল ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’!
যাক, এবার একজন রবি-ভক্তের কথা শোনাই! আমার সঙ্গে তাঁর কিছু কথোপকথন হয়েছিল।
সেল ফোনে! “Dada, whn iz rnts db in dis eng yr 12” -ভেবেই চলেছি। এই আর.এন.টি. আবার কে? কুলকিনারা পাচ্ছি না। আমার পুরোনো স্যার নয় তো? কিন্তু, যে পাঠিয়েছে, সে তো সেদিনের ছোকরা! আমার স্যারের নাম জানবে কি করে? তারপর, হঠাৎ চাচা চৌধুরীর মত মগজে বিদ্যুৎ খেলে গেল! আর.এন.টি মানে তো- রাভিন্দর নাথ টেগোরে!! আজকাল নাকি এরকমই ‘উরুশ্চারণ’।
বড় বড় স্কুলে নাকি শেখানো হচ্ছে। জোব্বা পরা ভদ্রলোকের একটা আস্ত কমিক স্ট্রিপ বেরুবে বলে আশা করছে সবাই। ছেলে- মেয়েগুলো বাংলাটা পড়তে পারে না, তাই ইংরেজী আর হিন্দিতে বেরুবে। একটা ফার্স্ট ল্যাঙ্গুয়েজ আর পরেরটা সেকেণ্ড। বাংলা? কোনোরকমে থার্ড। ক্লাস এইটের পর আর থাকবে না। বাঁচা যায়! রাভিন্দর নাথ টেগোরে- কে আর মনে রেখেছে!! তাঁর আসল নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। “আমসত্ত্ব দুধে ফেলি, তাহাতে কদলী দলি, সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে। হাপুস হুপুস শব্দ, চারিদিক নিস্তব্ধ, পিঁপিড়া কাঁদিয়া যায় পাতে...” এইটা যখন প্রথম পড়ি, তখন মনে হয়েছিল, মনের কথা- পেটের কথা। পেটের কথা মানে- পেটের প্রেম। অমৃত কাকে বলি জানি না! তবে মালদার গোপালভোগের আমসত্ত্ব দুধে ফেলে ১ ঘন্টা পর দেখেছি, সেই দুধ পুরো আমের ঘন সরবত হয়ে গেছে। তারপর সেটা ফ্রীজে রেখে ঠাণ্ডা করে, আস্তে আস্তে চুমুক মেরে মনে হয়েছে- ‘ওরে দুধ গোলা রে! তুঁহু মম শ্যাম সমান!’ রবি ঠাকুর ধর্মে বেম্মো ছিলেন। তবে আদতে তো বাউন। খাবারের কথা তিনি লিখবেন না তো, কি আমি লিখবো? যত্তসব! বাউনের কথায় মনে পড়ল- তাঁদের পরিবারের আসল পদবী ছিল, কুশারী। পঞ্চানন কুশারী ছিলেন তাঁদের আদি পুরুষ। গোঁড়া বাউন। পীর আলি বলে এক নবাব তাঁকে গরুর মাংস রান্নার গন্ধ শুঁকিয়েছিলেন। সংস্কৃতের খ্যাঁচাকলে পড়ে, মানে একটা শ্লোক ছিল- “ঘ্রাণেণ অর্দ্ধভোজনম্” মানে গন্ধ শুঁকলেই আদ্ধেক খাওয়া! তিনি পতিত বাউন হলেন। তকমা পেয়েছিলেন, পিরেলী বাউন। সে অনেক দুঃখের কথা- থাকগে। আমার অনুমান, তিনি প্রথম যে কবিতাটা লিখেছিলেন, সেটা ছিল- ‘লুচি পড়ে পাতানড়ে’... পরে সেটা হয়েছিল ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’!
যাক, এবার একজন রবি-ভক্তের কথা শোনাই! আমার সঙ্গে তাঁর কিছু কথোপকথন হয়েছিল।
‘Good Morning, Sir.’
- সুপ্রভাত।
- In fact, কাল আপনার acting দেখলাম।
- ও!!!! তাই নাকি?
- Yes, Sir. It was wonderful.
- ধন্যবাদ।
- ওটা, Tagore drama ছিল তো?
- হ্যাঁ, রক্তকরবী।
- That’s great!
- আপনি দেখেছেন, এটা আমার সৌভাগ্য।
- No no. It’s my pleasure!
- বাঃ! আপনি তো বেশ রবীন্দ্র অনুরাগী!
- In fact, আমি যখন লান্ডনে , তখন আমি ওখানকার বাংলা আ্যসোসিয়েশনের Secretary ছিলাম। বাংলা সাহিত্য গুলে খেয়েছি। পরে মুম্বাই এসেও বাংলা সাহিত্যের গুরু হিসেবে সবাই মানত। In fact, আমি Conversation এ, বাঙ্গালী পেলে, English word use ই করি না। বাড়ীতেও strict instruction ই দেওয়া আছে। আমরা pure Bengali তে কথা বলি। By the way, আপনার সাথে আমার formal introduction ই হয় নি। (হাত বাড়িয়ে) আমি জ্যাজি বোস! আসলে জয়ন্ত বোস। ওই short এ জ্যাজি বোস!
- ও! আমি, রামকেষ্ট ভশ্চাজ!
- Pleased to meet you, Sir!
- আমিও।
- Thanks. আচ্ছা গতকাল কি occasion এ আপনারদের drama staged হলো?
- রবীন্দ্রনাথের সার্দ্ধ জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে আমাদের নাট্যসংস্থা “রবিচ্ছটা” র সশ্রদ্ধ নিবেদন। - What? Tagore এর শ্রাদ্ধ!!!!!!
- না না, শ্রাদ্ধ নয়! সার্দ্ধ
- What’s that?
- সার্দ্ধ মানে হাফ অর্থাৎ অর্দ্ধেক। শত মানে একশ। তাহলে সার্দ্ধ জন্ম শতবর্ষ মানে ১৫০ তম জন্মদিন। আপনাকে কি আর বোঝাব,মি. বোস! আপনি তো বাংলা সাহিত্য গুলে খেয়েছেন!
-থ্যাংক ইউ! থ্যাংক ইউ! কাল আমাদের Complex এ একবার আসবেন?
- কে...কে...কেন?
- আরে, আমরাও আমাদের Complex এ Tagore centenary করছি। আমার মেয়ে ওখানে Tagore এর সেই বিখ্যত কবিতাটা recite করবে।
- কোনটা?
- ওই যে, হারুদের ডালকুকুরে etc etc.
- আমার শরীর খারাপ করছে।
- My God! Should I give a tinkle to my family doc?
- আরে না না! বাড়িতে শুয়ে এট্টু রেষ্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।
- Are you sure?
- হ্যাঁ, Sir!
- OK, as you please! Take care! Bye!
- আসুন স্যার! **********
কথোপকথন শুনে কি বুঝলেন? রাভির এখন শ্রাদ্ধ হচ্ছে, কিনা! মাইণ্ড ব্লোয়িং ব্যাপার স্যাপার সব! প্রথম প্রেম যখন করি, তখন আমার হবু বৌ একটা ছবি দিয়েছিল আমার পার্সে রাখতে। মন খারাপ হলেই, ছবিটা বের করে গুণগুণিয়ে গাইতাম- “তুমি কি কেবলই ছবি?” আর দেখা হলেই- “সখী, ভালবাসা কারে কয়” রবিদাদু যেন জীবনে ঢুকে গিয়েছিলেন অজান্তে। তাঁর ভাষা- আমাদের মুখে। আজ বৃদ্ধ হয়েছি। ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ মনে সোডার মত ভসভসিয়ে ওঠে। ভাল মন্দের কথাটাও তাঁর কাছ থেকে শেখা। “আমার মতে জগৎটাতে ভালোটারই প্রাধান্য— মন্দ যদি তিন-চল্লিশ, ভালোর সংখ্যা সাতান্ন।” (শিলঙের চিঠি) পড়ে, মনে জোর পাই। যাক, তালে- ভালটাই বেশী! তখন ওনার ভাষাটাই একটু অদল- বদল করে বলি- “তাই বসেছি কম্পুতে আমার, ডাক দিয়েছি গিন্নিকে, ‘চা লে আও, লুচি লে আও, মণ্ডা লে আও, ধাঁ কর্কে।” ( অরিজিনালটা হলো:- তাই বসেছি ডেস্কে আমার, ডাক দিয়েছি চাকরকে, ‘কলম লে আও, কাগজ লে আও, কালি লে আও, ধাঁ কর্কে।’-শিলঙের চিঠি) যাঁরা লেখালেখি করেন, তাঁদর জন্য সেখানেও রবিদাদু। নিয্যস লেখকদের মনের কথা বলছেন- “এখন শুধু গদ্য লিখি, তাও আবার কদাচিৎ/ আসল ভালো লাগে খাটে থাকতে পড়ে সদা চিৎ।/ যা হোক একটা খ্যাতি আছে অনেক দিনের তৈরি সে,/ শক্তি এখন কম পড়েছে তাই হয়েছে বৈরী সে;” জীবনের পরতে পরতে দাদু... কমলি নেহী ছোড়তি! হুঁ হুঁ বাওয়া, যাবে কোথায়? সকালে উঠেই- আজি এ প্রভাতে রবির কর কেমনে পশিল প্রাণের 'পর, তারপরেই চা চা করে ওঠে প্রাণটা- আমারো পরান যাহা চায় চা খেয়েই- তারপর চল বাজারে চুকিয়ে দেব বেচা-কেনা মিটিয়ে দেব গো, মিটিয়ে দেব লেনা-দেনা বন্ধ হবে আনা গোনা এই হাটে। গিন্নির হাতের ভালো রান্না খেয়ে- আমি তোমারে পেয়েছি, হৃদয় মাঝে আর কিছু নাহি চাই গো। বেলা গড়িয়ে গেলে, গিন্নির আবদার মেটাতে- আমার বেলা যে যায় সাঁঝবেলাতে তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে। রাতে বিছানায়- জাগরণে যায় বিভাবরী। জেগে রাত কাটানর পর- কেন যামিনী না যেতে জাগালে না, বেলা হল মরি লাজে... মানে জীবনের প্রতিপদে রবীন্দ্রনাথ। ২৫ শে বৈশাখ তো শুধু একটা দিন! এরকম দিন শুধু বছরে একবারই আসে। দাদু ৩৬৫ দিন, জীবন জুড়ে। সনাতন ধর্মে গরমকালে, শিবঠাকুর আর নারায়ণ ঠাকুরের মাথার ওপর জলের ঝোড়া টাঙ্গানো থাকে। টুপ, টুপ করে ঝরে, গরমের থেকে রেহাই পান ঠাকুরেরা! রবিঠাকুর, আমাদের বাঙ্গলীর জীবনে ঋতু বিচার. ধর্ম বিচার না করে, করুণাধারায় অবিরত সিঞ্চন করে চলেছেন আমাদের। অবিরাম ঝরছে সেই শান্তিজল। আমাদের দুই হাতের মুঠোতে ধরছে না সেই বারি! ভারতের সরকার আজও ২৫ শে বৈশাখ নিয়ে উদাসীন! রাভিন্দ্রনাথ তো আর জ্বালাতে আসবেন না! আজি হতে শতবর্ষ পরে কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি কৌতূহলভরে—পড়ার আর বাঙালী থাকবে কিনা সন্দেহ! রবিঠাকুর আজ নেই- তাঁর সৌভাগ্য! রবিঠাকুর আজ নেই- বাঙালীর দুর্ভাগ্য!!
- সুপ্রভাত।
- In fact, কাল আপনার acting দেখলাম।
- ও!!!! তাই নাকি?
- Yes, Sir. It was wonderful.
- ধন্যবাদ।
- ওটা, Tagore drama ছিল তো?
- হ্যাঁ, রক্তকরবী।
- That’s great!
- আপনি দেখেছেন, এটা আমার সৌভাগ্য।
- No no. It’s my pleasure!
- বাঃ! আপনি তো বেশ রবীন্দ্র অনুরাগী!
- In fact, আমি যখন লান্ডনে , তখন আমি ওখানকার বাংলা আ্যসোসিয়েশনের Secretary ছিলাম। বাংলা সাহিত্য গুলে খেয়েছি। পরে মুম্বাই এসেও বাংলা সাহিত্যের গুরু হিসেবে সবাই মানত। In fact, আমি Conversation এ, বাঙ্গালী পেলে, English word use ই করি না। বাড়ীতেও strict instruction ই দেওয়া আছে। আমরা pure Bengali তে কথা বলি। By the way, আপনার সাথে আমার formal introduction ই হয় নি। (হাত বাড়িয়ে) আমি জ্যাজি বোস! আসলে জয়ন্ত বোস। ওই short এ জ্যাজি বোস!
- ও! আমি, রামকেষ্ট ভশ্চাজ!
- Pleased to meet you, Sir!
- আমিও।
- Thanks. আচ্ছা গতকাল কি occasion এ আপনারদের drama staged হলো?
- রবীন্দ্রনাথের সার্দ্ধ জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষে আমাদের নাট্যসংস্থা “রবিচ্ছটা” র সশ্রদ্ধ নিবেদন। - What? Tagore এর শ্রাদ্ধ!!!!!!
- না না, শ্রাদ্ধ নয়! সার্দ্ধ
- What’s that?
- সার্দ্ধ মানে হাফ অর্থাৎ অর্দ্ধেক। শত মানে একশ। তাহলে সার্দ্ধ জন্ম শতবর্ষ মানে ১৫০ তম জন্মদিন। আপনাকে কি আর বোঝাব,মি. বোস! আপনি তো বাংলা সাহিত্য গুলে খেয়েছেন!
-থ্যাংক ইউ! থ্যাংক ইউ! কাল আমাদের Complex এ একবার আসবেন?
- কে...কে...কেন?
- আরে, আমরাও আমাদের Complex এ Tagore centenary করছি। আমার মেয়ে ওখানে Tagore এর সেই বিখ্যত কবিতাটা recite করবে।
- কোনটা?
- ওই যে, হারুদের ডালকুকুরে etc etc.
- আমার শরীর খারাপ করছে।
- My God! Should I give a tinkle to my family doc?
- আরে না না! বাড়িতে শুয়ে এট্টু রেষ্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।
- Are you sure?
- হ্যাঁ, Sir!
- OK, as you please! Take care! Bye!
- আসুন স্যার! **********
কথোপকথন শুনে কি বুঝলেন? রাভির এখন শ্রাদ্ধ হচ্ছে, কিনা! মাইণ্ড ব্লোয়িং ব্যাপার স্যাপার সব! প্রথম প্রেম যখন করি, তখন আমার হবু বৌ একটা ছবি দিয়েছিল আমার পার্সে রাখতে। মন খারাপ হলেই, ছবিটা বের করে গুণগুণিয়ে গাইতাম- “তুমি কি কেবলই ছবি?” আর দেখা হলেই- “সখী, ভালবাসা কারে কয়” রবিদাদু যেন জীবনে ঢুকে গিয়েছিলেন অজান্তে। তাঁর ভাষা- আমাদের মুখে। আজ বৃদ্ধ হয়েছি। ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ মনে সোডার মত ভসভসিয়ে ওঠে। ভাল মন্দের কথাটাও তাঁর কাছ থেকে শেখা। “আমার মতে জগৎটাতে ভালোটারই প্রাধান্য— মন্দ যদি তিন-চল্লিশ, ভালোর সংখ্যা সাতান্ন।” (শিলঙের চিঠি) পড়ে, মনে জোর পাই। যাক, তালে- ভালটাই বেশী! তখন ওনার ভাষাটাই একটু অদল- বদল করে বলি- “তাই বসেছি কম্পুতে আমার, ডাক দিয়েছি গিন্নিকে, ‘চা লে আও, লুচি লে আও, মণ্ডা লে আও, ধাঁ কর্কে।” ( অরিজিনালটা হলো:- তাই বসেছি ডেস্কে আমার, ডাক দিয়েছি চাকরকে, ‘কলম লে আও, কাগজ লে আও, কালি লে আও, ধাঁ কর্কে।’-শিলঙের চিঠি) যাঁরা লেখালেখি করেন, তাঁদর জন্য সেখানেও রবিদাদু। নিয্যস লেখকদের মনের কথা বলছেন- “এখন শুধু গদ্য লিখি, তাও আবার কদাচিৎ/ আসল ভালো লাগে খাটে থাকতে পড়ে সদা চিৎ।/ যা হোক একটা খ্যাতি আছে অনেক দিনের তৈরি সে,/ শক্তি এখন কম পড়েছে তাই হয়েছে বৈরী সে;” জীবনের পরতে পরতে দাদু... কমলি নেহী ছোড়তি! হুঁ হুঁ বাওয়া, যাবে কোথায়? সকালে উঠেই- আজি এ প্রভাতে রবির কর কেমনে পশিল প্রাণের 'পর, তারপরেই চা চা করে ওঠে প্রাণটা- আমারো পরান যাহা চায় চা খেয়েই- তারপর চল বাজারে চুকিয়ে দেব বেচা-কেনা মিটিয়ে দেব গো, মিটিয়ে দেব লেনা-দেনা বন্ধ হবে আনা গোনা এই হাটে। গিন্নির হাতের ভালো রান্না খেয়ে- আমি তোমারে পেয়েছি, হৃদয় মাঝে আর কিছু নাহি চাই গো। বেলা গড়িয়ে গেলে, গিন্নির আবদার মেটাতে- আমার বেলা যে যায় সাঁঝবেলাতে তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে। রাতে বিছানায়- জাগরণে যায় বিভাবরী। জেগে রাত কাটানর পর- কেন যামিনী না যেতে জাগালে না, বেলা হল মরি লাজে... মানে জীবনের প্রতিপদে রবীন্দ্রনাথ। ২৫ শে বৈশাখ তো শুধু একটা দিন! এরকম দিন শুধু বছরে একবারই আসে। দাদু ৩৬৫ দিন, জীবন জুড়ে। সনাতন ধর্মে গরমকালে, শিবঠাকুর আর নারায়ণ ঠাকুরের মাথার ওপর জলের ঝোড়া টাঙ্গানো থাকে। টুপ, টুপ করে ঝরে, গরমের থেকে রেহাই পান ঠাকুরেরা! রবিঠাকুর, আমাদের বাঙ্গলীর জীবনে ঋতু বিচার. ধর্ম বিচার না করে, করুণাধারায় অবিরত সিঞ্চন করে চলেছেন আমাদের। অবিরাম ঝরছে সেই শান্তিজল। আমাদের দুই হাতের মুঠোতে ধরছে না সেই বারি! ভারতের সরকার আজও ২৫ শে বৈশাখ নিয়ে উদাসীন! রাভিন্দ্রনাথ তো আর জ্বালাতে আসবেন না! আজি হতে শতবর্ষ পরে কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি কৌতূহলভরে—পড়ার আর বাঙালী থাকবে কিনা সন্দেহ! রবিঠাকুর আজ নেই- তাঁর সৌভাগ্য! রবিঠাকুর আজ নেই- বাঙালীর দুর্ভাগ্য!!