--- Charlie Chaplin
জানি না এই
লেখাটা কোন পাঠক মঙ্গলবার পড়বেন কিনা, বা
এই লেখা তাঁদের আদৌ কোন মঙ্গল সাধন করবে কিনা, কিন্তু লেখাটার নাম ঠিক করার সময় বর্ষামঙ্গল নামটার ওপরেই ভরসা করা গেল। বর্ষাকাল চলছে, ব্যাঙ্গালোরে এ বছর তেমন বৃষ্টি এখনো হয়নি, তবে গত তিন দিন যাবৎ বেশ ভালই বৃষ্টি হচ্ছে আর তার থেকেই এই লেখার ইচ্ছেটা মাথায় এল। যদিও চার্লি চ্যাপলিনের একটা গুরু-গম্ভীর কিন্তু মনকে ছুঁয়ে যাওয়া উক্তি দিয়ে শুরু করলাম, পুরো লেখাটা কিন্তু মোটেই গম্ভীর নয়, বরং অনেকটাই হালকা ছোট্ট রচনা এটা।
এই লেখা তাঁদের আদৌ কোন মঙ্গল সাধন করবে কিনা, কিন্তু লেখাটার নাম ঠিক করার সময় বর্ষামঙ্গল নামটার ওপরেই ভরসা করা গেল। বর্ষাকাল চলছে, ব্যাঙ্গালোরে এ বছর তেমন বৃষ্টি এখনো হয়নি, তবে গত তিন দিন যাবৎ বেশ ভালই বৃষ্টি হচ্ছে আর তার থেকেই এই লেখার ইচ্ছেটা মাথায় এল। যদিও চার্লি চ্যাপলিনের একটা গুরু-গম্ভীর কিন্তু মনকে ছুঁয়ে যাওয়া উক্তি দিয়ে শুরু করলাম, পুরো লেখাটা কিন্তু মোটেই গম্ভীর নয়, বরং অনেকটাই হালকা ছোট্ট রচনা এটা।
ওড়িশি নাচের
শুরুতেই যেমন নর্তক-নর্তকীরা জগন্নাথ প্রণাম করে নেন, আমিও সেরকম লেখাটা শুরু করি আমার
প্রিয় রম্য-রচনাকার তারাপদ রায়কে শ্রদ্ধা জানিয়ে, ওনারই একটা গল্প দিয়ে (গঙ্গাজলে
গঙ্গা পুজো আর কাকে বলে!)। তারাপদবাবুর ‘কান্ডজ্ঞান’-এ এক ক্রেতা
দোকানে হরিণের চামড়ার চটি কিনতে গিয়ে জিজ্ঞ্যেস করেছিলেন, “বৃষ্টিতে ভিজলে এটার
কোন ক্ষতি হবে না তো?” বিজ্ঞ দোকানী উত্তর
দিয়েছিলেন, “কোন ক্ষতি হবে না। কোনদিন শুনেছেন কি, যে কোন হরিণ ছাতা ব্যবহার করছে!”
ছাতার কথা
উঠলেই অবশ্য আমার অন্য একটি উক্তি মনে পড়ে যায়। আমি নিজেও
এটা বহুবার ব্যবহার করেছি, তবে এর উৎস আমার কলেজের বন্ধু ভিক্টর। ভিক্টর আমার খুব ভাল বন্ধু এবং অসাধারণ ‘Sense of Humour’ এর অধিকারী। আমি, অনুরাধা, দেবলীনা আর ভিক্টর কলেজে প্রচুর পাগলামি করে বেড়িয়েছি। এরকমই এক দিন কলেজে, মাঝারী রকমের বৃষ্টি পড়ছে, চারদিকে সবাই ছাতা নিয়ে, কিন্তু আমাদের চারজনের মাথায় ছাতা নেই, তখনই কোন একজনের, “ছাতা বের করছিস না কেন?” প্রশ্নের উত্তরে ভিক্টর বলেছিল, “আসলে আমার ছাতার গায়ে লেখা আছে ‘Keep in a cool & dry place’ , তাই আমি গরমকাল আর বর্ষাকালে ছাতা ব্যবহার করি না!”
এটা বহুবার ব্যবহার করেছি, তবে এর উৎস আমার কলেজের বন্ধু ভিক্টর। ভিক্টর আমার খুব ভাল বন্ধু এবং অসাধারণ ‘Sense of Humour’ এর অধিকারী। আমি, অনুরাধা, দেবলীনা আর ভিক্টর কলেজে প্রচুর পাগলামি করে বেড়িয়েছি। এরকমই এক দিন কলেজে, মাঝারী রকমের বৃষ্টি পড়ছে, চারদিকে সবাই ছাতা নিয়ে, কিন্তু আমাদের চারজনের মাথায় ছাতা নেই, তখনই কোন একজনের, “ছাতা বের করছিস না কেন?” প্রশ্নের উত্তরে ভিক্টর বলেছিল, “আসলে আমার ছাতার গায়ে লেখা আছে ‘Keep in a cool & dry place’ , তাই আমি গরমকাল আর বর্ষাকালে ছাতা ব্যবহার করি না!”
বর্ষাকালে
ছাতা হারায়নি এরকম লোক পাওয়া দুষ্কর, আমিও হারিয়েছি। তবে সবচেয়ে ভুলো লোক হল আমার
ছোটবেলার গল্পের সেই লোকটা যে ছাতা তো হারাতই। একবার রাতে বাড়ি ফিরে ছাতাকে
বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজে দেওয়ালের গায়ে ছাতা রাখার জায়গায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে
ঘুমিয়ে পড়েছিল।
ছোটবেলায়
বর্ষাকাল মানেই ‘Rainy Day’, খিচুড়ি, ঘরের মধ্যে দড়ি টাঙ্গিয়ে জামা-কাপড় শুকতে দেওয়া, পাশের মাঠে
ক্রিকেট খেলা যাবে না বলে মন খারাপ করা আর জমা জলে কাগজের নৌকো ভাসানো, বাড়ির
বারান্দায় ‘ভিজে কাকের’ জল ঝেড়ে পালক শুকনো করার প্রচেষ্টা আর সময় বিশেষে বৃষ্টিতে
ভিজে ঠাণ্ডা লাগান। আর এখন অফিসে Rainy Day-এর বালাই নেই, এমনকি ২০০৭-এর সেই কলকাতায় যখন প্রায় বন্যা
পরিস্থিতি বা ২০০৮-এর আয়লার দিনের অফিস করার অভিজ্ঞতাও আছে আমার।
তবে অফিস
ছাড়াও বৃষ্টি পেয়েছি বাইরে ঘুরতে গেলেই। শান্তিনিকেতনে তো একাধিকবার বৃষ্টির মধ্যে
গেছি। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে কোপাই নদীতে বন্ধুদের সঙ্গে স্নান বা মধ্যরাত্রি
পেরিয়ে যাওয়ার পর কিঞ্চিৎ বেসামাল বন্ধুদের সঙ্গে বৃষ্টিতে ভেজার অভিজ্ঞতাটাই
অসাধারণ। এছাড়া বৃষ্টি পেয়েছি বকখালি, বালুরঘাট বা মন্দারমনিতে, এমনকি সিডনি গিয়ে
কাটিয়েছি বৃষ্টি ভেজা ক্রিসমাস।
বাংলা
সাহিত্যে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে বৃষ্টি আর বর্ষাকাল নিয়ে, রবি ঠাকুর থেকে শ্রীজাত
বাদ যাননি কোন বাঙালী কবি-সাহিত্যিকই। আমি নিজেও হয়েতো লিখে থাকব দু-একটা কবিতা
বর্ষা নিয়ে, ঠিক নিশ্চিত নই (তবে বর্ষা উসগাঁওকারকে নিয়ে যে কোনদিন লিখিনি সেটা
আমি দিব্যি করে বলতে পারি)। তবে বাঙালী কবিদের নিয়ে সার কথা বলে গেছেন ভজহরি মুখুজ্জ্যে ওরফে
টেনিদা। চৈত্র বা বৈশাখ মাসের কাঠফাটা গরমে সবাই যখন হাঁসফাঁস করে তখন বাঙালী কবিরা ঘরের
দরজা-জানালা বন্ধ করে লিখতে বসেন, ‘বর্ষা রাণীর নূপুর বাজে...’। কারণটা আর কিছুই না। চৈত্রমাসে
না লিখলে আষাঢ় মাসের পত্রিকায় কবিতাটা বেরোবে কি করে!
লেখাটা শুরু করেছিলাম
তারাপদ রায়ের লেখা স্মরণ করে এবার শেষ করি ওনার মহাগুরু সৈয়দ মুজতবা আলীর একটা
গল্প দিয়ে। ইহুদীদের কার্পণ্য প্রসঙ্গে মুজতবা আলী বলেছিলেন যে, ইহুদীরা এতোটাই
হিসেবী জাত যে বর্ষাকালে ওরা ছাতা কেনে না, বরং হিসেব করে বৃষ্টির ফোঁটার ফাঁক
দিয়ে এমনভাবে চলাফেরা করে যে বৃষ্টির একটা ফোঁটাও ওদের গায়ে পড়ে না! আজও যখনই ভরা
বৃষ্টির মধ্যে ছাতা ছাড়া বেরোতে হয় তখনই মুজতবা আলীর এই গল্পটা মনে পড়ে যায়।