Thursday, July 19, 2012

পার্টি তো হচ্ছে, কিন্তু কোথায়? -- সুনন্দ

অ্যানাহাইম, ক্যালিফোর্নিয়া, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। জুলাই মাসের অসহ্য গরমের দুপুর। তা সত্ত্বেও নতুন তৈরি হওয়া প্রমোদ নগরী Disneyland এর ঠাণ্ডা হলঘরে বসেছে বিরাট জমাটি আসর। Intel Corporation তাদের কোম্পানির প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে পার্টি দিয়েছে। তবে আজকের আকর্ষণ শুধু তা-ই নয়। অনেকগুলো অনুষ্ঠানের মধ্যে
এখন চলছে একটি আত্মজীবনী প্রকাশ। জার্মানীর গোলমেলে চরিত্রের নেতা হিটলারের Mein Kampfলেখকের হয়ে বইয়ের প্রকাশ করছেন বিখ্যাত ইংরেজ ঔপন্যাসিক উইলিয়াম মেকপিস থ্যাকারে। সভাপতি হয়েছেন আমেরিকান প্রকাশক-ধনী স্টিভ ফোর্বস। বিশেষ অতিথি স্থানীয় অভিনেতা ভিন ডিজেল। তিনি ঘুম তাড়াতে ঘনঘন বুকের পেশি সঞ্চালন করছিলেন আর সভার পিছন দিকে বসে থাকা ইন্টেলের মহিলা কর্মীদের মধ্যে থেকে সমবেত দীর্ঘশ্বাস ভেসে আসছিল।
থ্যাকারে বক্তৃতা দিতে দিতে হঠাৎ গলা খাঁকরালেন বার দুয়েক। তাঁর চোখ তখন একদম সামনের সারিতে বসা নোবেলজয়ী বৃদ্ধ বিজ্ঞানী লোরেঞ্জের দিকে। বিজ্ঞানী আয়েস করে টাক মাথাটি পিছন দিকে এলিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন। তাতে অসুবিধে ছিলো না। অনুষ্ঠানের শেষে প্রদর্শনী ম্যাচের আয়োজন করা হয়েছে, ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে, তার প্রধান দুই আকর্ষণ- ডব্লিউ. জি. গ্রেস আর ডেনিস লিলি- যাঁদের দ্বৈরথ দেখার জন্যেই প্রধানত হিল্লি-দিল্লি থেকে লোকজন জড়ো হয়েছে, তাঁরা একে অন্যের কাঁধে মাথা রেখে অনেকক্ষণ আগে থেকেই ঘুমোচ্ছিলেন। গোলমাল বাধলো, লোরেঞ্জ ঘড়ঘড় শব্দে নাক ডাকতে শুরু করায়। ডানদিকে বসে থাকা নেলসন ম্যান্ডেলা কনুইয়ের এক গুঁতো দেওয়ায় ভদ্রলোক ধড়ফড় করে উঠে বসলেন। ম্যান্ডেলা ছদ্ম তিরস্কারের ভঙ্গিতে বললেন, “কি হচ্ছে কি? এত বছর ধরে সেমিনার অ্যাটেন্ড করার পরেও সামনের সারিতে বসে ঘুমোচ্ছ?”
প্রতিবাদে বুড়ো কিছু বলার আগেই তাঁর সমর্থনে ঝাঁঝিয়ে উঠলেন বাঁদিকে বসে থাকা রঙিন ইংরেজ ধনকুবের রিচার্ড ব্র্যান্সন, “আরে! ঘুমোবেন না তো কি? এখানে কি আত্মজীবনী শুনতে এয়েচি নাকি? ইন্টেলের লোকগুলো বললো আজ নাকি প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জীবনের সেরা পারফরম্যান্স দেবে, তাই এলাম। এখন শুনছি, এর পরে নাকি কোন এক নাম-না-জানা ব্লগের জন্মদিন পালন হবে, তারপর প্রিয়াঙ্কা। ডিজনির লোকেরা এই সব উটকো কাজ করতে অনুমতি দেয় কেন? কি ব্লগ বলুন তো? কোথাকার?...”
বিরক্ত হয়ে পাশের সিট থেকে আরেক তোম্বামুখো বৈজ্ঞানিক রবার্ট হুক চাপা গলায় ধমক দিলেন, "এই! তোমরা এত কথা বলছো কেন হে?..."

পিছনের সারি থেকে এক মায়াবী গলা ভেসে এলো, “বাবুমশা-ই, কথা তো বলার জন্যেই...”
**************************************

আরে!! ঘাবড়ে গেলেন নাকি? নিখাদ আমোদ করলাম মশাই! এ সব কিচ্ছু হয়নি। সঙ্গের ছবির কারিকুরি আমাদের শিল্পী নির্মাল্যর। J
মজা হলো, উপরের গল্পে যতজন অমৃতের পুত্র-কন্যা আর সংস্থার নাম আছে, তেনারা স-ব-বা-ই আমাদের এই ‘কথা’র সঙ্গে জন্মদিন শেয়ার করেন। ভাবুন তো? কি ভয়ানক ব্যাপার!
আজ্ঞে হ্যাঁ, গতকাল আমাদের ব্লগের বয়স হলো মোটে এক। জন্মদিনে আমরা কি করলাম? কিচ্ছু করিনি, শুধু একটু কেক খেয়েছি। এই নিন, আপনিও খান-
ছবি: সুনন্দ
ছবিটা বড় করে পেতে এইখানে ক্লিক করুন
এই কেকখানা আমাদের বন্ধু, বান্ধবী, পাঠিকা, পাঠক, লেখিকা, লেখক, সমালোচক, নিন্দুক, ভালবাসার জন, ঘরের লোক, বাইরের লোক... সবার জন্য। দেখতে ছোট হলে কি হবে, ওতেই সবার পেট ভরবে। আপনাদের শুধু শুধু ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। এমন কিছু আমরা এখনো করতে পারিনি, যাতে আপনাদের সময়, মনোযোগ আর সর্বোপরি ভালবাসার যোগ্য সমাদর করা যায়। সেটা করা খুবই কঠিন।
তবে এইবার কিছু চেষ্টা অন্তত করবো। সামনের গোটা এক মাস ধরে বিভিন্ন সময় আমরা ঘোষণা করবো আমাদের অনেকগুলো প্ল্যানের কথা। খবরদার! মিস করবেন না কিন্তু!

আমাদের জমাটি আনন্দের সঙ্গে মিশে আছে এক ছটাক খারাপ লাগা। কি করি বলুন তো, ওই যে ওই ভদ্রলোক, যাঁর নাম নেই উপরের গল্পে, তাঁর 'বাবুমশাই' ডাকটা এখনো ভোলা যাচ্ছে না যে...


এ সব তো গেলো আমার কথা। বাকি লোকজন কি বলছে জন্মদিনে?

সংহিতা রীতিমতো চাপে রয়েছে,
"প্রেশার ভাই প্রেশার। ব্যাটা বড় হচ্ছে, তাই আমাদের-ও দায়িত্ব বাড়ছে। সাথে ওই ‘আশা’ নামের মেয়েটার involvement যবে থেকে হয়েছে আমরা আরো conscious হয়ে গেছি। হেসে লাভ নেই- প্রতিদিন খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো, ইস্কুলের পড়া তৈরি করা, এমনকি লোক দেখাতে ভালো ভালো পোশাকও পরাতে হয়েছে ভাই। দেখলে হবে? দায়িত্ব আছে। নাহ্‌, এ অভিজ্ঞতা মোটেই সুখের নয়... আমার ধারণা যে কোন অভিভাবক-ই এটা বুঝবেন। অনেক বিনিদ্র রজনী-ই তো কাটিয়েছি, আরও নিশ্চয় কাটাবো। গত একবছরে অনভিজ্ঞতার কাঁটা চচ্চড়ি রেঁধে রেঁধে এখন অন্তত মাংসের উপাদান গুলো জোগাড় করতে শিখে গেছি। J"
নির্মাল্য এমনিতে মোটেই গম্ভীর না হলেও, কয়েকটা খুব দামী কথা বললো,
"ভেবেছিলাম এও এক কথার কথা। আমার নিজের কথা, মতামত অন্য অনেকের থেকেই একদম আলাদা। গুটিয়ে ছিলাম তাই নিজের মধ্যেই। তারপর একদিন জানতে পারলাম অনেকের সাথে কথা বলতে পাব এই উঠোনে। কথা- আর তার কাটাকুটি, এই ভয়ে অন্তরালে থাকার দিন শেষ করে নেমে পড়েছিলাম অন্য অনেকের মাঝে। তারপর কথায় কথায় কেটে গেল পুরো একটা বছর। না, না, মতের মিল আজও হয়নি সবার সাথে। জানতে পেরেছি- হওয়াটা জরুরীও নয়। আমার মত আরও অনেকেই আছে- এক্কেবারে অন্য রকমের কথা নিয়ে। তাই সেই পরিবারে থাকতে ভালোবেসেছি। বাসনকোসনের একসাথে থাকার মতোই। মাঝে মাঝেই ঠোকাঠুকি তে ঝনঝন করে তাদের কথা। পরিবারের বাকি সকলের সাথে- একগাদা অমিলের রঙধনুর মত।"

সুমিত তার আঁ-তেল-জবজবে ভাবুক চরিত্রের সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্য রেখে বললো,
"ফ্রি-তে মাস্টারি করার বদ-অভ্যেসটা বোধহয় পেটে বিদ্যের অভাবের দ্বিঘাতের সঙ্গে সমানুপাতিক। বিশ্বাস হল না? তাহলে আমার উদাহরণটাই চলুক। সাহিত্যের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ঐ অনেকটা দূর সম্পর্কের অনাত্মীয়র মতো। তাও মাস্টারিটা দিব্যি করে চলেছি। তাবড়-তাবড় লেখকের লেখার উপর কলম ধরি, তাও কিনা লাল-কালির! মতামত তৈরি করি (অবশ্য পরমুহূর্তেই সেটা গিলে ফেলি, বাকি মাস্টাররা তো আর আমার মতো না!)
যদিও সবকিছুই করি ফ্রি তে, তবে একটা লাভের কথা বলতেই হয়। সমস্ত লেখাই সবার প্রথমে আসে আমাদের কাছে। আর ভালো লেখাগুলো বাকিদের বহু আগে পড়তে পারা যে কতটা সৌভাগ্যের, সেটা আর বোঝা কি করে? আর এটাই আমার মাইনে...... তাই তো! প্রথম লাইনে ভুল বলেছিলাম তাহলে?"
শুভদীপ এর কিছু একটা হয়েছে, বেজায় নস্টালজিক,
"একতলার দু’কামরার ঘুপচি মেস বাড়িটায় কথা ফুরিয়ে যায় নি কখনও... সারাদিন কলেজে বকক করে ঘরে ফিরে সান্ধ্যকালীন আড্ডা শেষে রাত্রের খাবারের পর আবার বসতো নতুন আড্ডার আসর। প্রায়দিনই কাকের ডাক শুনে ঘুমোতে যেতাম ভোরবেলায়। সেই দিন-কাল ভুলে গল্প করার দিন কবেই শেষ... কাজের চাপ কেড়ে নিয়েছে সময়ের স্বাধীনতা। কিন্তু তাতেই বা কি? ‘কথা’ তো ফুরিয়ে যায় নি এখনও! এদিকে আরও অনেকে জুটে গেছে আড্ডার আসরে, ব্যস্ততার ফাঁকে একচিলতে আকাশ খুঁজতে এসে আটকে গেছে ‘কথা’র জানালায়। কথা আছে, থাকবেও। কারণ ‘কথা তো বলার জন্যেই’..."
সুরশ্রীর-ও পুরনো কথা মনে পড়ছে দেখছি-
"দেখতে দেখতে এক বছর! একটু রিওয়াইন্ড করতে গিয়ে স্ক্রিনে পর পর কয়েকটা সিন ভেসে উঠছে। গতবছর এরকমই ঘাম-পচা এক ছদ্ম-বর্ষার সকালে দুম করে জানলাম একজনের 'অল্প কিছু বিরক্তি'র কথা। কানে কানে নয়, ফেসবুক মারফৎ। তখন আমার কাছে ফেসবুক মানে দিনে তিন বার সময় করে 'ফার্ম ভিল' খেলা আর কিছু বন্ধুবান্ধবের নতুন নতুন ফটো দেখে 'লাইক' করা। তাই ওই প্রথম হুজুগটা অতটা টের পাইনি। পেলাম ক’দিনের মধ্যে, যখন একে একে আমাদের খান কয়েক বন্ধুকে নিয়ে একটা ব্লগ তৈরির প্ল্যান হল। তৈরি হল “আমাদের” ব্লগ। সেই থেকে অনেক অনেক বন্ধুর ভালোবাসা আর লেখায় ব্লগটা রোজই একটু করে বড় হচ্ছে। আরো বড় হোক- শুভ জন্মদিন, কথা!"

About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই