হে দেশ তুমি কার? জননেতার, নাকি জনতার? প্রশ্নটা বেশ জটিল, উত্তরটা ততোধিক। তাই এই অস্বস্তিকর প্রশ্নের উত্তরে
সংবিধান আমাদের সামনে এক ব্যক্তিত্বকে খাড়া করেছে, নাম দিয়েছে রাষ্ট্রপতি। সংজ্ঞা দিয়েছে – “দেশের প্রধান এবং প্রথম নাগরিক যিনি ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের শাসন, বিচার এবং সব সাংবিধানিক শাখার অধিকর্তা”(৫৩ ধারা, ভারতীয় সংবিধান)। ভারতের রাষ্ট্রপতি তার অধিকার সর্বত্র সরাসরি প্রয়োগের ক্ষমতা রাখেন কিছু ব্যতিক্রমের সাথে। ব্যতিক্রমের সীমা এক্ষেত্রে নিয়মের পরিধি ছাড়িয়ে!
ঢাকে কাঠি
পড়েছে। আজ্ঞে না, দুগ্গা পুজোর ঢাকে কাঠি পড়তে দেরী আছে। আপাততঃ রাষ্ট্রপতি
নির্বাচনের মোচ্ছব। ব্রিটিশ কায়দায় তৈরি এই সিংহাসনে নতুন পুতুল বসানোর আয়োজন চলছে
জোরকদমে। পদটির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে দু’কথা বললে নিশ্চয় দেশদ্রোহের দায়ে
পড়তে হবে না। আঙুলে নীল কালির ফোঁটা দিয়ে পাঁচ বচ্ছরে একবার দিল্লীর সভাঘর আলো
করতে লোকজন পাঠাই আমরা, তাদের মধ্যে থেকে আবার উঠে আসেন প্রধানমন্ত্রী ও
মন্ত্রীসভা। কারা এই মন্ত্রীরা? কাকেই বা তাঁরা মন্ত্রণা দেন? কেন... সেই আসনে
আসীন ব্যক্তিত্বকে, যাঁর নাম রাষ্ট্রপতি। মনুসংহিতার সপ্তম
অধ্যায়ে (মনুসংহিতা শুনেই নাক সিটকোবেন না, মানবিকতা ও আধুনিক যুগের দৃষ্টিকোণ
থেকে ওই বস্তুটির অকর্মণ্যতা নিয়ে আমি মোটেই দ্বিমত নই।) রাজার সৃষ্টি
সম্পর্কে বলা হচ্ছে যে তিনি দেবতাদের তেজে সৃষ্ট এবং সাধারণের প্রশ্নের ঊর্ধ্বে।
অষ্টম অধ্যায় আবার রাজার এই সর্বময় কর্তৃত্ব খর্ব করে জানাচ্ছে যে তিনি শাসন প্রক্রিয়ায়
অমাত্যবর্গ, মন্ত্রী ও গুপ্তচরের সাহায্য ছাড়া এগোবেন না। কৌটিল্যও
মোটামুটি একই কথা জানাচ্ছেন। তিনি মন্ত্রী, অমাত্য, পুরোহিত ইত্যাদিদের সম্পর্কে আলাদা আলাদা অধ্যায় খরচ করছেন শাসনব্যবস্থায় তাদের গুরুত্ব বোঝাতে। এদের প্রত্যেকের চরিত্র কেমন হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বিবৃত, সেই standard মেনেই রাজা তাদের নিয়োগ করবেন এবং সেই মান থেকে বিচ্যুত হলেই রাজা তাদের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে তদেরই শাস্তিবিধান করবেন। পুরো কাঠামোটি আবার বেদাঙ্গের গৃহ্যসূত্র থেকে অনুপ্রাণিত। নিশ্চয়, প্রাচীন নীতির যুগোপযোগী পরিবর্তন না হলে চলে না। কিন্তু ‘পরিবর্তন’ যে সবসময় সুখের হয় না, সে কথা এখন কে না জানে! ওই প্রাচীন আধা-ধর্মীয় রাজনীতির পরিবর্তন ঘটিয়ে বর্তমানে ব্যবস্থাটি এইরকম- রাজার প্রতীক হলেন রাষ্ট্রপতি (মিথ্যে নয়, ভারতীয় গণতন্ত্রের মূল উৎস- ব্রিটিশসংবিধানে এখনও রাজা/রানীই সেই পদে), তিনি জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত নন। জনগণের ভোটে যাঁরা দেবতুল্য সাংসদ ও বিধায়ক পদে পৌঁছে গেছেন তাঁদের দ্বারা নির্বাচিত। তিনি মন্ত্রীদের পরামর্শ অনুযায়ী দেশ শাসন করেন- মানে দু’বেলা কয়েক গণ্ডা সই-সাবুদ করে থাকেন। মন্ত্রীদের চরিত্র ও গুণাগুণ বিচার করে থাকেন- না না, এখানেই পরিবর্তন। প্রধানমন্ত্রী বা অন্য কোন মন্ত্রীর গুণাগুণ বিচার করা তাঁর এক্তিয়ারের বাইরে। তাঁদেরকে পদচ্যুত করা তো দূরের কথা। সেই অধিকার কেবলমাত্র সংসদের। সাধু প্রস্তাব, সন্দেহ নেই। যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় কোন ব্যক্তিবিশেষের অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা কাম্য নয়। প্রশ্ন হল, তাহলে শুধু শুধু সেই ‘ব্যক্তিবিশেষ’-এর প্রয়োজনটা কী? রাষ্ট্রপতি সংসদের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিয়ে থাকেন- মোটেই না, বলা ভালো উনি সেই ভাষণ পাঠ করেন। বক্তব্য পুরোটাই কেন্দ্রীয় সরকারের। রাষ্ট্রপতি বিশেষ ক্ষেত্রে প্রাণদণ্ড মুকুব করে থাকেন- ডাহা ভুল, সেই কাজও কেন্দ্রীয় সরকারের, উনি শুধু প্রাণভিক্ষার সম্মতিপত্রে সই করে থাকেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারী করার নিয়ম আছে। তবে এই “রাষ্ট্রপতি শাসন” মোটেই রাষ্ট্রপতির শাসন নয়- অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁর নাম ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার একটি উপায় মাত্র। রাষ্ট্রপতি এমনকী চাইলেও কেন্দ্রীয় সরকারের কোন আবদারই একবারের বেশি ফেরত পাঠাতে পারেন না। হুঁ হুঁ বাবা, সংবিধান সেক্ষেত্রে ওনাকে ‘ইম্পিচমেন্ট’ এর মাধ্যমে ঘাড়ধাক্কা দেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছে। তাহলে রাইসিনা হিল্ আলো করে বসে থাকা ছাড়া রাষ্ট্রপতির আর কোন ভূমিকা রইল না। কথা উঠতে পারে কোন দেশের প্রধান কখনো একটি গোটা মন্ত্রীসভা হতে পারে না। একজন অন্তত ‘মুখ’ থাকা দরকার। যে ‘মুখ’কে কথা বলতে দেওয়া হবে না (অর্থাৎ ‘মুখ’ নয়-‘মূক’), যাকে চিন্তা করতে দেওয়া হবে না তাকে রাখা হবে কেন? সাংসদেরা এ যাবৎ ভেবে দেখেননি। দেখবেনও না। তাঁদের আরও অনেক ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কাজ আছে। এই ব্যবস্থার সুচিন্তিত পরিবর্তন ঘটাতে গেলে যে মতৈক্যের দরকার তেমনটা চট করে দেখা যায় না। নিজেদের মাইনে বাড়ানো ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে তাঁরা একমত হন না সহজে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা সাধারণতঃ দেশের বৈচিত্র্যকে প্রতিফলিত করে। কাজেই শাসনব্যবস্থায় সেই ক্যাবিনেট এবং সংসদ- এরাই শেষ কথা। বর্তমানেও তারাই শেষ কথা। শুধুমাত্র ভাবের ঘরে চুরির মত একটা ছায়ার ব্যবস্থা করা আছে।
মোটামুটি একই কথা জানাচ্ছেন। তিনি মন্ত্রী, অমাত্য, পুরোহিত ইত্যাদিদের সম্পর্কে আলাদা আলাদা অধ্যায় খরচ করছেন শাসনব্যবস্থায় তাদের গুরুত্ব বোঝাতে। এদের প্রত্যেকের চরিত্র কেমন হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বিবৃত, সেই standard মেনেই রাজা তাদের নিয়োগ করবেন এবং সেই মান থেকে বিচ্যুত হলেই রাজা তাদের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে তদেরই শাস্তিবিধান করবেন। পুরো কাঠামোটি আবার বেদাঙ্গের গৃহ্যসূত্র থেকে অনুপ্রাণিত। নিশ্চয়, প্রাচীন নীতির যুগোপযোগী পরিবর্তন না হলে চলে না। কিন্তু ‘পরিবর্তন’ যে সবসময় সুখের হয় না, সে কথা এখন কে না জানে! ওই প্রাচীন আধা-ধর্মীয় রাজনীতির পরিবর্তন ঘটিয়ে বর্তমানে ব্যবস্থাটি এইরকম- রাজার প্রতীক হলেন রাষ্ট্রপতি (মিথ্যে নয়, ভারতীয় গণতন্ত্রের মূল উৎস- ব্রিটিশসংবিধানে এখনও রাজা/রানীই সেই পদে), তিনি জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত নন। জনগণের ভোটে যাঁরা দেবতুল্য সাংসদ ও বিধায়ক পদে পৌঁছে গেছেন তাঁদের দ্বারা নির্বাচিত। তিনি মন্ত্রীদের পরামর্শ অনুযায়ী দেশ শাসন করেন- মানে দু’বেলা কয়েক গণ্ডা সই-সাবুদ করে থাকেন। মন্ত্রীদের চরিত্র ও গুণাগুণ বিচার করে থাকেন- না না, এখানেই পরিবর্তন। প্রধানমন্ত্রী বা অন্য কোন মন্ত্রীর গুণাগুণ বিচার করা তাঁর এক্তিয়ারের বাইরে। তাঁদেরকে পদচ্যুত করা তো দূরের কথা। সেই অধিকার কেবলমাত্র সংসদের। সাধু প্রস্তাব, সন্দেহ নেই। যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় কোন ব্যক্তিবিশেষের অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা কাম্য নয়। প্রশ্ন হল, তাহলে শুধু শুধু সেই ‘ব্যক্তিবিশেষ’-এর প্রয়োজনটা কী? রাষ্ট্রপতি সংসদের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিয়ে থাকেন- মোটেই না, বলা ভালো উনি সেই ভাষণ পাঠ করেন। বক্তব্য পুরোটাই কেন্দ্রীয় সরকারের। রাষ্ট্রপতি বিশেষ ক্ষেত্রে প্রাণদণ্ড মুকুব করে থাকেন- ডাহা ভুল, সেই কাজও কেন্দ্রীয় সরকারের, উনি শুধু প্রাণভিক্ষার সম্মতিপত্রে সই করে থাকেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারী করার নিয়ম আছে। তবে এই “রাষ্ট্রপতি শাসন” মোটেই রাষ্ট্রপতির শাসন নয়- অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁর নাম ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার একটি উপায় মাত্র। রাষ্ট্রপতি এমনকী চাইলেও কেন্দ্রীয় সরকারের কোন আবদারই একবারের বেশি ফেরত পাঠাতে পারেন না। হুঁ হুঁ বাবা, সংবিধান সেক্ষেত্রে ওনাকে ‘ইম্পিচমেন্ট’ এর মাধ্যমে ঘাড়ধাক্কা দেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছে। তাহলে রাইসিনা হিল্ আলো করে বসে থাকা ছাড়া রাষ্ট্রপতির আর কোন ভূমিকা রইল না। কথা উঠতে পারে কোন দেশের প্রধান কখনো একটি গোটা মন্ত্রীসভা হতে পারে না। একজন অন্তত ‘মুখ’ থাকা দরকার। যে ‘মুখ’কে কথা বলতে দেওয়া হবে না (অর্থাৎ ‘মুখ’ নয়-‘মূক’), যাকে চিন্তা করতে দেওয়া হবে না তাকে রাখা হবে কেন? সাংসদেরা এ যাবৎ ভেবে দেখেননি। দেখবেনও না। তাঁদের আরও অনেক ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কাজ আছে। এই ব্যবস্থার সুচিন্তিত পরিবর্তন ঘটাতে গেলে যে মতৈক্যের দরকার তেমনটা চট করে দেখা যায় না। নিজেদের মাইনে বাড়ানো ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে তাঁরা একমত হন না সহজে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা সাধারণতঃ দেশের বৈচিত্র্যকে প্রতিফলিত করে। কাজেই শাসনব্যবস্থায় সেই ক্যাবিনেট এবং সংসদ- এরাই শেষ কথা। বর্তমানেও তারাই শেষ কথা। শুধুমাত্র ভাবের ঘরে চুরির মত একটা ছায়ার ব্যবস্থা করা আছে।
এতক্ষণে
অনেকেই বিরক্ত হয়ে উঠেছেন। বলে কি হে ছোকরা? জানিস ব্যাটা, পদটা কতটা সম্মানের?
দাঁড়ান, দাঁড়ান, কি বললেন পদটা সম্মানের? সাম্মানিক? মোটেই না। নেহাত সৌজন্যমূলকও হয়
না নির্বাচন। ১৯৭৭ সালের পর থেকে কখনোই ভারতের রাষ্ট্রপতি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
নির্বাচিত হন নি। রামজেঠমালানী, যাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার বেশ বিতর্কিত, তিনি এই পদেরপ্রার্থী হন ১৯৯২ এ। হারার পর আরও
দীর্ঘদিন রাজনীতিতে থেকেছেন, বিতর্কও কম কুড়োননি। টি এন সেশন- যিনি কড়া
নির্বাচন কমিশনার হিসেবে পরিচিত, তিনি কংগ্রেসের হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন গুজরাটে,
তিনিই আবার কংগ্রেসের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীপদ দাখিল করলেন
১৯৯৭ এ। ২০০২ এ প্রাক্তন স্বাধীনতা সংগ্রামী লক্ষ্মী সহগল কে অবশ্যম্ভাবী হারের
মুখে নির্বাচনে আনল সিপিএম। ২০০৭ এ ডঃ প্রতিভা পাতিলের (Pratibha
Patil) বিরুদ্ধে তারই আত্মীয় ভৈরোঁ সিং শেখাওয়াতকে
দাঁড় করালো বিজেপি। চলল অবিশ্রাম খেয়োখেয়ি। আর এই পর্বে প্রণব মুখার্জী(Pranab
Mukherjee)-র বিরোধী প্রার্থী পি এ সাংমা তো প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে সই জাল করার
অভিযোগ পর্যন্ত এনে ফেললেন। হার অনিবার্য দেখে তিনি রাষ্ট্রপতি ভবনকে ‘অকর্মণ্য
মন্ত্রীদের আঁস্তাকুড়’ বলে আখ্যা দিলেন। বরেণ্য বিজ্ঞানীকে (A.P.J.
Abdul Kalam) নিয়ে চলল হাস্যকর দড়ি টানাটানি- গরিমা? সম্মান? মনে হয়
কি?
সাংবিধানিক এই ‘প্রধান’-এর
জন্য প্রজাবর্গ কতটা ব্যয় বহন করে? না না, সামান্য কটা টাকার জন্য নীচ মানসিকতা আমি
পোষণ করি না। তবে সেই প্রাচীন কায়দায় হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া ইত্যাদি ব্যবস্থা
রাষ্ট্রপতির জন্য আজও বহাল এদেশে, তার ফুলের বাগানে এখনও পেখম তুলে নাচে ময়ূর, সবুজ
ঘাসে দৌড়ে বেড়ায় হরিণছানা। সবই জনসাধারণের অর্থে। রাষ্ট্রপতির পাঁচ বছরের মেয়াদে তার
থাকা-খাওয়া, দৈনিক ভাতা, আঞ্চলিক ভ্রমণ এবং ‘বিবিধ’ খাতে খরচ হচ্ছে ৩৬ কোটি টাকা। বিভিন্ন
বিদেশ ভ্রমণে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে খরচ হচ্ছে ২০০ কোটি টাকার
ওপর। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী বিগত ১০ বছরে রাষ্ট্রপতি
ও তাঁর নিরাপত্তা সংক্রান্ত খরচ বেড়েছে ১৪৯ শতাংশের মত। অবসর জীবনে তাঁর ব্যয়বহন করার
খরচ বেড়েছে প্রায় ১০০ শতাংশ। কেন্দ্রীয় সরকার এই ব্যয় বহন করে চলেছেন মুখ বুজে। কিছুদিন
আগেই মহারানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সিংহাসনে অভিষেকের ষাট বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান দেখল গোটাদুনিয়া। তারও ব্যয় বহন করেছে ব্রিটিশ সরকার। তাহলে আমরাই বা পিছিয়ে থাকি কেন? গৌরী
সেন নাগরিকরা তো আছেনই। না, আমরা পারি না। ওরা বিগত দু’শো বছর ধরে গোটা দুনিয়া লুঠপাট
করে যে পরিমাণ সম্পদ জমা করেছেন, তাতে রানীকে নিয়ে ব্যয়বহুল আদিখ্যেতা তাদের শোভা পায়
বটে। কিন্তু তার অন্ধ অনুকরণের বিলাসিতা লুণ্ঠিত দেশটির শোভা পায় না। রবার স্ট্যাম্পের
দাম বড্ডই বেশি।
রাষ্ট্রপতি
বা সেই ব্যক্তির প্রতি কোনরকম অভিযোগ সাধারণ মানুষের বা আমার নেই। তবে বিশ্লেষণ
করে দেখা যাচ্ছে যে শাসনপ্রণালীতে পদটির নিয়মতান্ত্রিক গুরুত্ব একেবারেই শূন্য।
পদটির সাম্মানিক গরিমাও ক্রমশঃ তলানিতে আসতে চলেছে। আর খরচাপাতির দিকটি দেখলে “এই
মণিহার” আমায় মোটেই নাহি সাজে। সমস্ত যুক্তিই রাজ্যপাল পদটির ক্ষেত্রেও সমান ভাবে
প্রযোজ্য। আমরা কি একবারও ভেবে দেখব না যে এসব আর কতদিন? অন্ততঃ পরীক্ষামূলকভাবেও
যদি কিছুদিনের জন্য যদি এই পদের বিলোপ ঘটানো যায়- খুব কি ক্ষতি হবে? বিশ্বের
বৃহত্তম গণতন্ত্র কি সেটুকু সহ্য করতে পারবে না? দেখাই যাক না একবার।