এর একটা চোরাটান আমাদের মধ্যে সবসময় আছে! অনেকটা অভিকর্ষ বলের মত। শুধু দরকার একটা ছোট্ট ধাক্কার। আর তাতেই তথাকথিত সভ্য মানুষ রূপান্তরিত হয় জানোয়ারে। লোপ পায় তার ভালো-মন্দ জ্ঞান। নিজের স্বার্থরক্ষার্থে মানুষ তখন ছুরি বসিয়ে দিতে পারে তার সবচেয়ে কাছের লোকটার বুকেও। তারই মাঝে, এই সরীসৃপ সমাজ থেকেই উঠে আসে একজন। মানুষের যা কিছু ভালো, যা কিছু নিবেদিত অন্যের জন্য, তার প্রতিনিধি হয়ে। কে এই ‘নায়ক’?
ধরুন যদি সত্যিই একটা গোটা শহরের লোকজনকে ঐ তথাকথিত পাগলামির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়, তাহলে? মানুষ কী করবে? কতটা সভ্যতা- সহিষ্ণুতার নিদর্শন রাখতে পারব আমরা? আমাদের মধ্যে কতজনের সাহস আছে ঘুরে দাঁড়ানোর? কী মনে হচ্ছে? এটা একটা সামাজিক গবেষণার বিষয় হতে পারে, নাকি শুধুই আর একটা অপরাধী দর্শন! একটু সিনেমাখোর পাঠকেরা কিন্তু অনেকেই এতক্ষণে বুঝে গেছেন কার এবং কিসের কথা বলছি! যাঁরা জানেন না, তাঁদের জন্য বলছি...... যে ভিলেন চরিত্রটির কথা হচ্ছে তার নাম জোকার। ছবির নাম “The Dark Knight”। পরিচালক Christopher Nolan -এর Dark Knight trilogy -র দ্বিতীয় ছবি। না, আমি ফিল্মের কোন সমালোচক নই বা ফিল্মের ভূতভবিষ্যৎ – ব্যাকরণ গুলে খেয়ে ফেলেছি এমনটাও নয়। তবে ফিল্মের পোকা হওয়ার সুবাদে ভালো-মন্দ প্রচুর সিনেমা দেখে ফেলেছি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এরকম ভাবে মনের উপর ছাপ ফেলতে পেরেছে খুব কম সিনেমাই। জোকারের কথাই ধরুন। এমন একজন অপরাধী, যার অর্থের প্রতি কোন আকর্ষণ নেই। কারও উপর ক্ষোভ থেকে সে অপরাধ করে না। কিছু লোক দুনিয়াটাকে শুধু জ্বলতে দেখতে পছন্দ করে। জোকার সেই শ্রেণীরই একজন প্রতিনিধি। আমরা ফাঁদে আটকে পড়া বাঘকে খুঁচিয়ে তাকে উত্যক্ত করে যে আনন্দ পাই, অনেকটা সেই আনন্দই জোকার পায় একদল মানুষকে নিজেদের মধ্যে লড়িয়ে দিয়ে। তার লক্ষ্য, তথাকথিত 'মহান' লোকেদের মুখ থেকে মুখোশ ছিঁড়ে ফেলে তাদের সহ্যের শেষ সীমায় তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া, যেখানে নিজেদের সব আদর্শের কথা ভুলে গিয়ে তারাও নেমে আসবে জোকারের সারিতে। বাধ সাধল একজনই, গল্পের নায়ক- গোথামের 'Dark Knight' …... আমাদের ব্যাটম্যান।
কে এই ব্যাটম্যান? বিশদ জানতে হলে যেতে হবে এই উইকি পেজটিতে। কমিকসের অন্যান্য অনেক মহানায়কদের মত কোন বিশেষ ক্ষমতা ছিল না ব্যাটম্যানের। তার লড়াইয়ের অস্ত্র ছিল বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, নিজের বুদ্ধি আর অসম সাহস। নিন্জা যোদ্ধাদের নিষিদ্ধ এবং হিংসার আদর্শে বিশ্বাসী একটি দলের কাছে লড়াই শিক্ষা সম্পূর্ণ করে গোথামে ফিরে আসে ব্রুস...... অধুনা মূল্যবোধের অবক্ষয়ে জর্জরিত তার শহরের রাশ আবার আইনের হাতে তুলে দিতে। ব্রুসের প্রশিক্ষক, ওই নিন্জা গোষ্ঠীর শিরোমণি Ra's Al-Ghul আবার মনে করেন গোথামের পক্ষে আর ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব। তাই তাঁর গোষ্ঠী চায় গোথামকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে চিরতরে মুছে ফেলতে। ব্রুস কি পারবে চতুর্দিক থেকে ধেয়ে আসা ধ্বংসের হাত থেকে তার প্রিয় শহর আর শহরবাসীকে রক্ষা করতে? ব্যাটম্যান, scarecrow, জোকার, two-face, বেন, cat-woman এবং সর্বোপরি Bruce Wayne.......... এদের নিয়েই জমজমাট ক্রিস্টোফার নোলানের তিনটি ছবি...... 'Batman Begins (2005)', 'The Dark Knight (2010)' আর 'The Dark Knight Rises (2012)'। কি বললেন পরিচালকের ভাই এবং সহকর্মী, জোনাথন নোলান, চলুন তাঁর মুখেই শোনা যাক।
আলোচনার বাকী দুই অংশ পাবেন এখানে - part 2, part3.
আলোচনার বাকী দুই অংশ পাবেন এখানে - part 2, part3.
'Lord of the Rings' বাদ দিলে এত ভালো trilogy হলিউডে আর হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। হ্যাঁ, ব্যাটম্যানকে নিয়ে এর আগেও প্রচুর সিনেমা হয়েছে এবং Jack Nicholson, Michael Keaton, George Clooney, Jim Carrey -র মত নামকরা অভিনেতারা বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয়ও করেছেন। Dark Knight trilogy -র প্রাসঙ্গিকতা তাহলে কোথায়? আরও একটা ব্যাটম্যান সিরিজের কি সত্যিই দরকার ছিল? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চলুন একটু পিছনে তাকাই। এই গল্পের পটভূমিকা......... গোথাম। একটা শহর, যেখানে আইন প্রহসন মাত্র হয়ে থেকে গেছে। শহরের উপরতলার মানুষ শুধুই নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। একটা 'shining' গোথাম দাঁড়িয়ে আছে আর একটা শোষিত, হাড়জিরজিরে, অন্ধকার গোথামের উপর। উপরতলার বাসিন্দারা অর্থের বিনিময়ে অপরাধ কেনে নিচের তলার অপরাধীদের কাছ থেকে। অপরাধ প্রবণতা বাড়তে থাকে নিচের তলায়। শুধু হেলায় তাদের দিকে ছুঁড়ে দেওয়া অর্থের লোভে নয়......... নিজেদের অধিকার বুঝে নেওয়ার বহুদিনের পুঞ্জিভূত দাবী থেকে। হ্যাঁ, এই গোথাম আপনার শহরেরই আর এক নাম। আপনার কাছে এর প্রতিকার কী? পরিপূর্ণ ধ্বংস......... তারপর আবার নতুন করে শুরু? নাকি সমস্যার গোড়া খুঁজে বের করে দুইতলার লোকেদের একসাথে নিয়ে সমাধানের খোঁজ? সেই চিরকালীন বিপ্লব আর গণতান্ত্রিক ধীর পরিবর্তনের দ্বন্দ্ব। এ তো গেল ছা-পোষা মানুষের খুচরো ক্ষোভের গল্প। এবার আসি জোকারে। এমন একজন 'শয়তান' যে 'ভগবান'কে বাঁচিয়ে রাখতে চায়, কারণ 'ভগবান' ছাড়া তার নিজের অস্তিত্বটাই নাকি অসম্পূর্ণ। অশান্তি জিইয়ে রাখাই তার বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য। মিল পাচ্ছেন না......... ধর্মীয় মৌলবাদীদের সাথে? কোথাও জেহাদের নামে, কোথাও যিশুর বাণী প্রচারের নামে বা কোথাও ধর্মীয় আচার-আচরণ পালনের নামে যে লোকগুলো বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত সুসংঘটিত crime-syndicate চালাচ্ছে, তাদের psychopath ছাড়া আর কি বলবেন? এরা রক্তপাত ভালোবাসে। মানুষের স্বজন হারানোর হাহাকার এদের কানে সংগীতের মত বাজে। আমি অন্তত এদের কাজের আর কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পাই না। এ তো মাত্র সংঘটিত ক্ষেত্রের একটা উদাহরণ দিলাম। অসংঘটিত ক্ষেত্রে যে প্রতিদিন এ ঘটনা কতই ঘটে চলেছে তার হিসাব কে রাখে? তবে আমাদের একটা গুণ আছে......... আমরা আশায় বাঁচতে জানি। সর্বহারা হয়েও কিন্তু মানুষ বেঁচে থাকার লড়াইটা চালিয়ে যায় ঠিকই। ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন আমাদের কখনও পুরোপুরি হারিয়ে যায় না। দরকার একজন নেতার যিনি সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিয়ে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আর ব্যাটম্যান আমাদের সেই আশারই প্রতীক। শিশুসুলভ হলেও ব্যাটম্যানের ঐ বিশাল একটা বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে গোথামের উপর নজর রাখার ছবিটা দেখে প্রতিবারই আমার একইরকম রোমাঞ্চ হয়। ব্যাটম্যান তো একটা আদর্শ মাত্র। ব্রুস এটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন বোধহয়, যে সমস্ত ভয় ঝেড়ে এই আদর্শের হয়ে দাঁড়ানো একটা সাধারণ মানুষের পক্ষেও সম্ভব। না, তার জন্য ব্রুসের মত কোটিপতি হতে হয় না, ব্যাটমোবাইল বা ব্যাটম্যানের পোশাকও লাগে না। আর সে উদাহরণ আছেও আমাদের সামনেই। কিছুদিন আগেই খবরের কাগজে পড়লাম বরুণ বিশ্বাস -এর কথা। বা বলা ভালো মৃত্যু সংবাদ। বছর দশেক আগে সুটিয়া গ্রামের এই তরুণ একাই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন একদল অপরাধীর বিরুদ্ধে। এই দলটি গ্রামের মধ্যে প্রশাসনের নাকের ডগায় বিনা বাধায় ডাকাতি, ধর্ষণ এবং প্রয়োজন পড়লে খুন করতেও পিছপা হত না। ভীতসন্ত্রস্ত গ্রামবাসী একে একে এসে দাঁড়াতে থাকেন বরুণের পিছনে। তাঁদের মিলিত আন্দোলনের জেরে অবশেষে টনক নড়ে প্রশাসনের এবং সাজা হয় ঐ গুন্ডা দলটির। শহরে বড় মাইনের চাকরি স্বেচ্ছায় ছেড়ে ঐ গ্রামেই স্কুল শিক্ষকের চাকরি নেন বরুণ। গ্রামের সার্বিক উন্নতিকল্পে গত দশ বছরে তাঁর অবদান এই স্বল্পপরিসরে লিখে ওঠা সম্ভব নয়। গত জুলাই মাসের ৫ তারিখ আততায়ীর গুলিতে নিহত হন বরুণ মাত্র ৩৯ বছর বয়সে। হ্যাঁ, অপরাধীরা বদলা নিয়েছে। কিন্তু সুটিয়া আর কখনই দশ বছর আগের সেই অন্ধকার দিনগুলোতে ফিরে যাবে না। বরুণরা আছেন...... আমাদের মধ্যেই। ঐ ব্যাটম্যানের মতই। প্রয়োজন পড়লে সবার সামনে দাঁড়িয়ে প্রথম গুলিটা বুক পেতে নেওয়ার জন্য।
লেখা শেষ করব এই trilogy-র পরিচালক এবং কলাকুশলীদের নিয়ে কিছু কথা বলে। জোর গলায় বলতে পারি, গত ১৫ বছরে সিনেদর্শকদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি পরিচালক Christopher Nolan -এর উত্থান। আজ অবধি আটটা পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি পরিচালনা করেছেন তিনি এবং তার প্রত্যেকটাই বিভিন্নভাবে অসাধারণ। সেগুলো নিয়ে আরও কোনদিন লেখার ইচ্ছা থাকল। গত ১৫ বছরে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি যদি হয় Nolan -এর উত্থান তবে নিশ্চিতভাবেই সবচেয়ে বড় ক্ষতি Heath 'Joker' Ledger -এর মৃত্যু। জোকারকে মনে রাখবে সিনেমার দর্শকেরা বহু বহুদিন। ব্যাটম্যান Christian Bale তো আছেনই। ক্রমশই তিনি নিজেকে আরও সুপ্রতিষ্ঠিত করে চলেছেন বিভিন্ন ভূমিকায় একজন অত্যন্ত ভালো অভিনেতা হিসাবে। Alfred -এর রোলে Michael Caine আর Lucius Fox এর রোলে Morgan Freeman প্রত্যাশিতভাবেই অসাধারণ। আর একটা কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়......... তা হল background score, যা এক কথায় অনবদ্য। ব্যাস, আমার দৌড় এখানেই শেষ। নির্দেশনা বিষয়ক আলোচনার জন্য যেতে হবে এইখানে। খুঁজতে খুঁজতে এই বাংলা লেখাটা চোখে পড়ল। পড়ে ফেলুন, অতঃপর একটা ছুটির দিন দেখে DVD আনিয়ে বসে পড়ুন। আর কেমন লাগল জানাতে ভুলবেন না!
লেখা শেষ করব এই trilogy-র পরিচালক এবং কলাকুশলীদের নিয়ে কিছু কথা বলে। জোর গলায় বলতে পারি, গত ১৫ বছরে সিনেদর্শকদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি পরিচালক Christopher Nolan -এর উত্থান। আজ অবধি আটটা পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি পরিচালনা করেছেন তিনি এবং তার প্রত্যেকটাই বিভিন্নভাবে অসাধারণ। সেগুলো নিয়ে আরও কোনদিন লেখার ইচ্ছা থাকল। গত ১৫ বছরে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি যদি হয় Nolan -এর উত্থান তবে নিশ্চিতভাবেই সবচেয়ে বড় ক্ষতি Heath 'Joker' Ledger -এর মৃত্যু। জোকারকে মনে রাখবে সিনেমার দর্শকেরা বহু বহুদিন। ব্যাটম্যান Christian Bale তো আছেনই। ক্রমশই তিনি নিজেকে আরও সুপ্রতিষ্ঠিত করে চলেছেন বিভিন্ন ভূমিকায় একজন অত্যন্ত ভালো অভিনেতা হিসাবে। Alfred -এর রোলে Michael Caine আর Lucius Fox এর রোলে Morgan Freeman প্রত্যাশিতভাবেই অসাধারণ। আর একটা কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়......... তা হল background score, যা এক কথায় অনবদ্য। ব্যাস, আমার দৌড় এখানেই শেষ। নির্দেশনা বিষয়ক আলোচনার জন্য যেতে হবে এইখানে। খুঁজতে খুঁজতে এই বাংলা লেখাটা চোখে পড়ল। পড়ে ফেলুন, অতঃপর একটা ছুটির দিন দেখে DVD আনিয়ে বসে পড়ুন। আর কেমন লাগল জানাতে ভুলবেন না!