শীত
তোমার চুল উড়ছে হাওয়ায়- বাঁ-হাতে তুমি ধরে আছ তোমার টেলিফোনশীতের আলোয় আবার আমি ফিরে এসেছি তোমার ঘরেতোমাদের বিড়াল, দেখি, আগের মতোততটা ক্ষিপ্র নয় আর- তোমার পশমের বলদেখি, গড়িয়ে চলেছে- আরো গড়িয়ে চলেছে ঢালু খাটের নিচে-চুপচাপ বসে আমি- চুপচাপ হাই তুলছে তোমাদের বিড়ালশীতের ঝর্না, ডেকে ডেকে ফিরে যাচ্ছে আমাদের
এমন অসময়ের শীতের কথা বলব বলেই 'শীতকালের কবি' ভাস্কর চক্রবর্তী-র কবিতাটি অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করলাম।
ছেলেবেলা থেকেই ওয়েলিংটন স্কোয়ারের ভুটিয়াদের দেখলেই নিজেকেও ভুটানের কোনও প্রত্যন্ত পাহাড়ের আদিম মেষপালক গোষ্ঠীর লোক বলে মনে করতাম। বাঙালির মজ্জায় ফ্রি-তে জ্ঞান দেওয়ার একটা স্বভাব আছেই, তাই সেই বয়সে আমাকেও অনেকে অনেক রকম জ্ঞান দিত। তাদের কারোর কোন কথাকেই আমি খুব একটা গুরুত্ব দিতাম না। শুধু এদের কলকাতা আগমন দেখলেই মনে কেমন একটা অদ্ভুত ফুর্তি ফুর্তি ভাব জাগত। ভুটিয়ারা শীতের সাথে সমার্থক। ভুটিয়ারা আসছে মানে শীত আসছে। শীত আসছে মানেই চিড়িয়াখানা-পিকনিক-ময়দান- পাতা ঝরার মরশুম। ছাদে বসে রোদ পোহানোর নিশ্চিন্ত অবকাশ– একটা দুটো ঘুড়ির ভো-কাট্টা মন্ত্র। রাত একটু গড়ালেই লেপের গর্ভে নিশ্চিন্ত আশ্রয়।
শীতের ক'টা দিন ওয়েলিংটন স্কোয়ারে ওদের বাস। সেই কয়েকটা দিন ওয়েলিংটন স্কোয়ার যেন লাডেন লা রোডের এক টুকরো হয়ে যায়। মিটিং-মিছিল-জমায়েত-সমাবেশে আমাদের চিরপরিচিত জায়গাটা হঠাৎ করে দার্জিলিং এর ম্যাল এর রূপ পায়। একটা সময় ছিল যখন কলেজ পাড়ায় যাওয়ার পথে শীত পোশাকের বাঁশ বাঁধা দেখে মনে মনে অদ্ভুত এক উত্তেজনা হত আর প্রহর গুনতাম শীত এসে গেল বুঝি। সে বাতাসে হিমের পরশ লাগুক বা নাই লাগুক। তখন শীত আসার মুখে শীত পোশাক কেনার কথা হলেই আমরা প্রথমেই ছুটতাম ওয়েলিংটনের ফুটপাথে। তখন কলকাতা শহরটাকে শপিং মলগুলো এমন ভাবে তার পেটের মধ্যে গিলে ফেলেনি, বাড়ির মা মাসিমা পিসিমারা সামান্য মাসকাবারি বা মুদি বাজার করার জন্য শপিং মলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি। আর স্বতন্ত্রভাবে শীত পোশাক কেনা মানেই দরাদরি করে ওদের থেকে কেনা। কারণ ওরা তো ভালো বাংলা জানেনা, তাই ভাঙ্গা হিন্দীতে দরদাম করে কেনার মজাই আলাদা। তা ছাড়া ওদের জীবনযাপন দেখার অমোঘ আকর্ষণ তো এমনিই কাজ করতো। অনেক বাছাইয়ের পর একখানা পছন্দ করে সস্তায় কিনে বাড়ি ফেরার এমন সুবর্ণ সুযোগ তখনকার কলকাতায় আর কোথাও থাকত না। কারণ তখন বং-বাচ্চা-বুড়োর ঘাড়ে ব্র্যান্ড ভূত এতটাও জাঁকিয়ে বসেনি।
এখনকার অসম প্রতিযোগিতায় ভুটিয়ারা ব্যাকফুটে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তা ছাড়া ফ্যাশন-দুরস্ত সম্ভ্রান্তদের পক্ষে এই ভুটিয়া বাজার একটু কৌলীন্য-হানিকরও বটে। আন্তর্জাতিক বাজারের কথা মাথায় রেখে তাদের জন্য এখন ব্র্যান্ডের রমরমা। কোমরের মাপ অনুযায়ী লিভাইস, পার্কস এর মতো নামী দামী কোম্পানির ছড়াছড়ি। তির-ধনুক হাতে ভুটিয়ারা আর কতই বা লড়বেন?
(#)
প্রস্তুতকারীদের থেকে সরাসরি খরিদ করে দামে সস্তা জিনিস কেনার মধ্যে কোনও ভেজাল নেই। তাই বিহারি লেপওয়ালা, ভুটিয়াদের সোয়েটার আর কাশ্মীরি শালওয়ালা, এই তিনটে যেন এক একই সুতোয় আমাদের জীবনে বাঁধা পড়ে গেছে। নিজের পরনের সোয়েটারটি বন্ধুকে দেখিয়ে এখন যেমন নামী ব্র্যান্ড এর নাম বলে সবাই গর্ববোধ করে, তখন আমরা ভুটিয়াদের থেকে কিনেছি বলে বেশ গর্ব করতাম। পাহাড়ি মানুষগুলোর থেকে কেনার সময় ঠকবার কোন সন্দেহ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতো না। পরে অবশ্য বুঝেছি সবটাই এত নির্ভেজাল মনে হওয়ার কোন কারণ নেই।
যাই হোক, কলকাতা শহরের সেই অন্যতম প্রাচীন শীতবস্ত্র বাজার কিন্তু বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। আর তার সাবেক আকর্ষণ সবটা নিঃশেষ হয়ে গেছে এমনটাও বলব না। ব্যস্ততম ধর্মতলা স্ট্রীটের চাঁদনী মার্কেট থেকে একটু বাঁক নিলেই শহরের চেনা চিত্রটা আজও হঠাৎ কেমন বদলে যায়।
(#)
ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর যে রাস্তার ফুটপাথগুলোতে শূন্যতা খেলা করে, সেখানেই শীতকাল এলেই পাহাড়িরা বিগত চল্লিশ বছর ধরে শীতবস্ত্র বিতরণ করে যাচ্ছে। হিমালয় আর হিমালয়ের পাদদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অসংখ্য নর-নারী এখানে উলের সম্ভার নিয়ে হাজির হন। কেউ একটানা অনেকগুলো বছর ধরে আসছেন, কেউ নতুন। কিন্তু সাবেক ট্র্যাডিশনে কোনও ছেদ পড়েনি। এখনও এদের বাঁধা খরিদ্দারের সংখ্যা অনেক। আগে এই বাজার শুরু হত অক্টোবর মাসে। এখন শুরু হয় নভেম্বর মাসে। চলে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত। এই তিনটে মাস সুদূর উত্তর পূর্ব ভারত থেকে আসা মানুষগুলো থাকেন ভাড়া বাড়িতে। আর তাদের ওই ক'দিনের ‘ধ্যান জ্ঞান প্রেম’ হয়ে ওঠে ওয়েলিংটন স্কোয়ারের ফুটপাথ। আগে যারা আসতেন, মানে আট-এর দশকের দিকে, অধিকাংশ ছিলেন নেপাল-ভুটান-সিকিম থেকে আগত আর এখন লুধিয়ানা-হিমাচল থেকে আসা কারিগররা তাদের পসরা নিয়ে মিশে গেছেন ওদের ভিড়ে।
গত কয়েক দশকে কলকাতা শহরে সারা দেশের শীতবস্ত্র ব্যবসায়ীরা তাদের বাণিজ্যের জায়গা করে ফেলেছেন। কেউ কেউ দ্য ইন্ডিয়ান হোলসেল মার্কেট থেকে সস্তায় মাল কিনে বিক্রি করছেন এই বাজারে। তাই বলছিলাম এখন কতটা নির্ভেজাল তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ তৈরি হচ্ছে।
সেই সঙ্গে, কম্পিউটার থেকে খেলনা যাদের একচেটিয়া আধিপত্য, সেই চীনেরাও ঢুকে পড়েছে এই বাজারে। স্বাভাবিকভাবেই হাতে বোনা পোশাক ছাপিয়ে ক্রমশই ভরে উঠছে মেশিনে বানানো প্রিন্টেড দ্রব্য। তবে দামের দিক থেকে এখনও অনেকটা একই রকম। মধ্যবিত্তের কাছে এই বাজারের আকর্ষণ তো সেটাই।সাধারণ সোয়েটার, কার্ডিগান এখনও পাওয়া যায় দু'শ, তিনশ'তে, শাল বিকোয় ছয়-সাতশ' টাকায়। সন্ধ্যেবেলা গুলো তাই অধিকাংশ স্টলের সামনে ভিড়। অবশ্য সব দোকানের এক ছবি নয়। কোথাও কোথাও সুবেশী পাহাড়ি তরুণী বসে বসে মোবাইলে রাগী পাখির সঙ্গে সোহাগ করছে- পথচলতি খদ্দেরদের ডাকাডাকিতে তেমন আগ্রহ নেই।
ফুটপাথের একেবারে গায়ে ‘তিব্বতি রিফিউজি সোয়েটার সেলার এসোসিয়েশন’-এর স্পষ্ট লেখা আছে - কোনও দরাদরি নেই। একেবারে ‘ফিক্সড প্রাইস’।
হ্যাঁ, এই বাজারের উদ্যোক্তা এরাই। ‘তিব্বতি রিফিউজি সোয়েটার সেলার এসোসিয়েশন’ বোর্ড-এর তলায় তাদের কলকাতার ঠিকানাটা বড় বড় করে লেখা। আর তার পাশেই লেখা আছে ‘সেভ তিব্বত ফর ওয়ার্ল্ড পিস’।
কি ভাবছেন বলুন তো! হঠাৎ ‘হ য ব র ল’ হয়ে গেলাম নাকি! কথা হচ্ছিলো সোয়েটার নিয়ে, এক ধাক্কায় একেবারে তিব্বত চলে গেলুম!? না, ‘তিব্বত বাঁচাও’ নিয়ে অন্য কথা বলার আছে। যদিও এই প্রসঙ্গে অনেক কথাই শুনেছেন কিন্তু এটা একটু অন্যরকম।
সোয়েটার কেনা-বেচার সঙ্গে তিব্বত বাঁচানোর দাবী সেই ১৯৫৯ সাল থেকে চলছে। ধর্মগুরু দলাই লামা-র পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রায় আশি হাজার তিব্বতি চৈনিক এসেছিলেন ভারতের মাটিতে, শরণার্থী হয়ে। তৎকালীন সরকারের বদান্যতায় বাসা গড়ে তুলেছিলেন এই দেশে, সেই থেকে জ্বলন্ত এই দাবী। তিব্বতি শরণার্থীদের সন্তানদের জন্য পড়াশোনার ব্যবস্থা হয়েছে, চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল বানানো হয়েছে। ১৯৬০ সালে মাইসোর সরকারের উদ্যোগে তিন হাজার একর জায়গার ওপর গড়ে উঠেছে শরণার্থীদের সুবিশাল সেটলমেন্ট। বিগত পঞ্চাশ বছরে শরণার্থী তিব্বতি নারী-পুরুষের সংখ্যা দেড় লক্ষের বেশী। প্রস্তাব আসতেই পারে, তিব্বতি শরণার্থীরা তাহলে পাকাপাকি ভাবে এদেশেই বাস করবেন- তাহলেই তো তিব্বত নিয়ে এত হৈ- চৈ মিটে যায়।
শরণার্থীদের মনস্তত্ত্ব যারা বোঝেন, তাঁরা উপলব্ধি করবেন কেন এই মানুষগুলো এখনও তাদের বর্তমান অবস্থাকে নিছক সাময়িক বন্দোবস্ত বলে মনে করেন। তাঁরা আশায় আশায় আছেন যে একদিন তাদের বাসভূমি স্বাধীন হবে এবং তাঁরা আবার সেখানে ফিরে যাবেন। যদিও নতুন প্রজন্মের অনেকেই পূর্বপুরুষের পার্বত্য ভিটে কোনোদিন চোখে দেখেননি। হৃদয়ে তবুও আশা নামে এক উজ্জ্বল আলো রয়েছে, দেখা হবে। তা না হলে শীত পোশাকের বাজারে এই কথাগুলো কেনই বা লিখে রেখেছেন তারা !
(#)
আসলে আমরা যাকে ভুটিয়া মার্কেট বলি তার নেপথ্যেও একটা অকথিত ইতিহাস আছে। এই বাজারে যারা অংশগ্রহণ করতেন তাদের কারো নিবাস জম্মু-কাশ্মীর, কারোর নিবাস হিমাচল, কেউ বা থাকেন উত্তরাখণ্ড, অন্ধ্রপ্রদেশ বা সিকিমে, প্রত্যেকেই আসলে তিব্বতের শরণার্থী। এখন ব্যবসা করছেন ‘তিব্বতি রিফিউজি সোয়েটার সেলার এসোসিয়েশনে’-র ছত্রছায়ায়।
এ কথা ঠিক, যে সিকিম, তিব্বত সীমান্তের চোরাপথ দিয়ে এর আগেও ১৯৫১ সাল থেকে তিব্বতিরা কলকাতার পথে-ঘাটে পশমের পসরা নিয়ে আত্মীয়তা করে গেছেন। তবে সেটা ছিল কতকটা আফগানিস্তান থেকে আসা কাবুলিদের শহরের অলি গলিতে শুকনো ফল আর মশলা সওদার মত।
এই প্রসঙ্গে আরও একটা কথা বলি- ‘সেন্ট্রাল টিবেটান এসোসিয়েশন’-এর উদ্যোগে ‘টিবেট ফান্ড’-এর অর্থানুকূল্যে ২০০৯-১০ সালে একটা সমীক্ষা চালিয়ে মোট ২৮টি সেটলমেন্ট-এ বসবাসকারী মানুষের সম্ভাব্য অন্যান্য জীবিকার পাশাপাশি স্বাভাবিকভাবেই উল ব্যবসাটির কথা উঠে এসেছে। এদেশে বাহান্ন শতাংশ তিব্বতি পরিবারে ন্যূনতম একজন সদস্য এখনও উল ব্যবসা করেন এবং ব্যবসাটি তাদের চালাতে হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে।
গোটা ব্যবসাটি শুধু যে আবহাওয়া নির্ভর তা নয়, শীতের ক'টা মাস ছাড়া বাকি বছর এদের কোনও কাজ থাকেনা। এছাড়াও স্থায়ী বিক্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা জীবিকার সুরক্ষার জন্য একান্ত জরুরী।
সমস্যাগুলো কতটা জ্বলন্ত তা একাধিক বিক্রেতার সঙ্গে কথা বললেই বোঝা যায়- বোঝা যায় কীভাবে কাশ্মীর থেকে ওয়েলিংটন এক হয়ে গেছে।
(#)
(#)
বছর তিরিশের যুবক সাদাব। কথায় যা ইঙ্গিত পেলাম ব্যবসা-পত্র সুবিধের নয়। শীত জাঁকিয়ে নামলেও আপাতত ব্যবসা বেপাত্তা। ফিরবে এমন আশাও করছেননা। সাদাব ওয়েলিংটনে এবার প্রথম এসেছেন, উঠেছেন বড়বাজারের এক ভাড়া বাড়িতে। এই ব্যবসার সঙ্গে তার পরিবারের সম্পর্ক কয়েক দশক পুরনো। আগে কলকাতায় এসে লোকের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিক্রি করতেন।
কলকাতার শীতের জামার দরকার সাকুল্যে কুড়ি দিন থেকে এক মাস (তাও যদি জাঁকিয়ে শীত পড়ে তবেই)। শীত টিকে থাকলে দু পয়সা পকেটে পড়ে নয়তো নয়। আক্ষেপ শুধু সাদাবের একার নয়- এই বাজার-কাম-মেলায় আসা অনেকের গলাতেই সেই একই সুর।
হিমাচল থেকে আসা হরজিত সিং, দোকানে থরে থরে রাখা শাল, সোয়েটার, কার্ডিগানের দিকে চোখ রেখে স্বীকার করলেন এই সব লুধিয়ানা থেকে পাইকিরি দরে কেনা। তারপর এখানে এসে বিক্রি। না হলে লাভ বলে কিছু থাকেনা। ফি বছর এসে কলকাতাকে বেশ চেনা হয়ে গেছে, চেনা হয়েছে কলকাতার মানুষজনকেও। দিব্যি বাংলা বলতে পারেন।
শুধু এই দুজন নয়। প্রেমা, সোনাম, গরিমা আরও অনেকের কাছেই এই শহর নতুন নয়। কলকাতা ওদের কাছেও একরাশ স্বপ্ন ফেরি করে। ওদের কাছে পুরনো বাড়ি বিস্ময়ের মত। অনেকেই আসেন ছোট ছোট ছেলেমেয়ে বা নাতি নাতনী-দের সঙ্গে নিয়ে। শহরটাকে দেখানোও হল, বিক্রি-বাটাও হল। শীতের কলকাতায় এঁরা পরিযায়ী পাখির মত। আসেন, কাজ মিটিয়ে আবার ফিরেও যান। সারা বছর অন্য মানুষরা সেই স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে বসে থাকে।
শুধু এই দুজন নয়। প্রেমা, সোনাম, গরিমা আরও অনেকের কাছেই এই শহর নতুন নয়। কলকাতা ওদের কাছেও একরাশ স্বপ্ন ফেরি করে। ওদের কাছে পুরনো বাড়ি বিস্ময়ের মত। অনেকেই আসেন ছোট ছোট ছেলেমেয়ে বা নাতি নাতনী-দের সঙ্গে নিয়ে। শহরটাকে দেখানোও হল, বিক্রি-বাটাও হল। শীতের কলকাতায় এঁরা পরিযায়ী পাখির মত। আসেন, কাজ মিটিয়ে আবার ফিরেও যান। সারা বছর অন্য মানুষরা সেই স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে বসে থাকে।
(#)
তবু একটা বিষয়ে ধন্দ আজও কাটেনা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আশা তিব্বতি-দের আমাদের শহরের মানুষ শুধু ভুটিয়া বলেন কেন? এটা ঠিক, যে হস্তশিল্প হিসেবে ভুটানের বস্ত্রশিল্পের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। হিমালয়ের কোলে ছোট্ট এই অঞ্চলের হাতে বোনা পশমের কাজ জনপ্রিয় ও লোকপ্রসিদ্ধ। গোটা মধ্য ও পূর্ব ভুটান জুড়েই শিল্পের আধিপত্য। যারা থিম্পু গিয়েছেন তাঁরা স্থানীয় হস্তশিল্পের আধিপত্য ও অসাধারণ বৈচিত্র্য দেখে এসেছেন। এই কারণেই এখানকার তৈরি পশম, কম্বল, শাল এ সব শীতবস্ত্রে ভুটানি শিল্পের ট্রেডমার্ক হয়ে উঠেছে।
শীত শেষে চলে যায় ওরা। খুশী বা মন খারাপের মেঘ নিয়ে। বছরের পর বছর এমনই চলবে। একলা ফুটপাথ পড়ে থাকবে, দিন গুনবে প্রতীক্ষায়, ওদের দিনযাপনের ঘ্রাণ আর স্মৃতি সম্বল করে।
আমরা পক্ষপাতদুষ্ট- প্রবল আত্মশ্লাঘায় ভোগা সচেতন বাঙালী জাতি। যারা নিজেদের শহর ও নিজেদের নিয়ে যথেষ্ট ভাবি বলে দাবী করি। সেই আমরাই তিব্বতি উদ্বাস্তুদের এক বন্ধনীতে ভুটিয়া বানিয়ে দিয়েছি।
সব্বাই ভুটিয়া! তার মানে তিব্বতের শরণার্থী বলে কেউ নেই?