আজকের পুরনো কথা: 'জোর করে নাক গলাবেন না প্লিজ!! -- ধানসিঁড়ি' (১৩/৮/২০১১, সকাল ১০:৩৭), আহা... ভয় নেই, চলুন সক্কলে মিলে একটু গন্ধবিচার করে আসি খন।
ছবির উৎস: লিঙ্ক |
হ্যাঁ, আমার বড্ড
গন্ধ বাতিক। বাতিক আমি বলছি না, লোকে বলে তাই বললাম। তা বাতিক হলে বাতিক। হলফ করে বলতে পারি
কমবেশি সবারই এই বাতিক আছে। কি বললাম? হ্যাঁ
ঠিকই বললাম। যা শুনছেন ঠিকই শুনছেন। আছে কিনা নিজেই ভেবে দেখুন না। যদি নাই থাকত
তাহলে সবেতেই আমরা গন্ধ পাই কেন? বৃষ্টির গন্ধ , পুজোর গন্ধ , নলেন গুড়ের
গন্ধ থেকে শুরু করে এমনকি বিপদের গন্ধ, রহস্যের গন্ধ পর্যন্ত, স--স--সবেতেই
আমরা গন্ধ পাই। অথচ এটাকেই আবার বাতিক বলা হয়। তাজ্জব !
বাতিক তো বেশ। আমি জোর গলায় স্বীকার করছি আবোল তাবোলের কাঠবুড়োর মতো আমি একেকটা ফাটলে একেক রকমের গন্ধ পাই। এমনকি সীতানাথ বন্দ্যোর মতো মাঝে মাঝে আকাশের গায়ে টকটক গন্ধও পাই। কি? না, ইয়ার্কি মারছি না। বয়েই গেছে আমার এরকম একটা সেন্সিটিভ ইস্যু নিয়ে ইয়ার্কি মারতে। কখনো কখনো কি জ্বালা জানেন এইসব গন্ধ পাওয়ার! তাই, আর যাই হোক, এই জ্বালা যন্ত্রণা নিয়ে মশকরা করতে অন্তত পারছি না। যাদের কাছে এসব কথা ভাট মনে হচ্ছে , আঁতলামো মনে হচ্ছে তারা দয়া করে এসব কথা শুনবেন না কিন্তু বিনীত অনুরোধ দয়া করে আমাদের মতো মুষ্টিমেয় কিছু বাতিকগ্রস্তদের নিয়ে খোরাক করবেন না, চোখ টেপাটেপি করে হাসবেন না।
বাতিক তো বেশ। আমি জোর গলায় স্বীকার করছি আবোল তাবোলের কাঠবুড়োর মতো আমি একেকটা ফাটলে একেক রকমের গন্ধ পাই। এমনকি সীতানাথ বন্দ্যোর মতো মাঝে মাঝে আকাশের গায়ে টকটক গন্ধও পাই। কি? না, ইয়ার্কি মারছি না। বয়েই গেছে আমার এরকম একটা সেন্সিটিভ ইস্যু নিয়ে ইয়ার্কি মারতে। কখনো কখনো কি জ্বালা জানেন এইসব গন্ধ পাওয়ার! তাই, আর যাই হোক, এই জ্বালা যন্ত্রণা নিয়ে মশকরা করতে অন্তত পারছি না। যাদের কাছে এসব কথা ভাট মনে হচ্ছে , আঁতলামো মনে হচ্ছে তারা দয়া করে এসব কথা শুনবেন না কিন্তু বিনীত অনুরোধ দয়া করে আমাদের মতো মুষ্টিমেয় কিছু বাতিকগ্রস্তদের নিয়ে খোরাক করবেন না, চোখ টেপাটেপি করে হাসবেন না।
গন্ধ আমার একটা বিশেষ সময় বা
অতীতের কোন স্মৃতিকে উসকে দেয়। প্রুস্তের ভাষায় বললে 'ওলফ্যাক্টরি
ফ্ল্যাশব্যাক'। একেক গন্ধ নিয়ে আসে একেক রকম স্মৃতি। এই স্মৃতি সততই যে সুখের তা নয়, কখনো সেই
স্মৃতির সঙ্গে গলার কাছে একটা দলার মত ব্যথাও উঠে আসে।
রথের দিনটায় বেশিরভাগ সময়েই
বৃষ্টি হয়। মনে পড়ে এই দিনটায় বুড়ো (আমার বড় পিসেমশাই, খুব
ভালোবাসতাম) বৃষ্টির মধ্যে ভিজে ভিজে গরম জিলিপি নিয়ে ঢুকত "ধলাবুড়ি কই? ধলাবুড়ি কই?" ডাকতে ডাকতে (আমায় ওই নামেই ডাকত বুড়ো)। আমি সেই গরম ধোঁয়ার গন্ধ মাখা জিলিপি খেতাম বুড়োর পাশে
ঘুরে ঘুরে বকবক করতে করতে। এখন কখনো বৃষ্টির দিনে যেই জিলিপিতে কামড় দিই অমনি কি
অদ্ভুত ভাবে বুড়ো ফিরে আসে আমার মনের মধ্যে। বুড়োর সাদা জামা ,ওল্ড
স্পাইসের গন্ধ আর তার সঙ্গে সেই ধোঁয়া মাখা জিলিপির গন্ধ। চিবোতে চিবোতে চোখে জল
আসে। বুড়ো এসে যাচ্ছে যে বারবার! না পারি গিলতে, না পারি ফেলতে। চলে যাই গন্ধের হাত
ধরে সেই দিন গুলোয়। আবার ছোটবেলায় পুজোর আগে ট্রাঙ্কের পুরোনো সব জামাকাপড় রোদে
দেওয়ার গন্ধটা বেশ মনে পড়ে। আমি আর ছোড়দা মিলে সেগুলো সব নাড়াঘাঁটা করতাম, নিজেদের
পুঁচকে পুঁচকে জামা দেখে খুব মজা লাগত আর মায়ের গোছাতে দেরি হয়ে যেত বলে মা
চেঁচাতো। এখন পুজোর আগে কখনো বাড়ি গেলে রোদে দেওয়া কাপড় তুলে আনতে আনতে গন্ধের মধ্যে দিয়ে সেই দিনগুলোকে খুব হাতড়ানোর চেষ্টা
করি । কিন্তু ...
এসব তো গেল পুরোনো কথা মনে
পড়ে যাওয়ার জ্বালা...
ছবির উৎস : লিঙ্ক |
কিন্তু এই জ্বালাই আবার
যন্ত্রণায় পরিণত হয় যখন সেটা আর অতীতের স্মৃতি তে আটকে না থেকে বর্তমানে এসে হাজির
হয়। রোজকার ব্যস্ততায়,
চলাফেরার মাঝে হঠাৎ যদি খুব প্রিয় মানুষটার সঙ্গে মেখে থাকা গন্ধটা এসে গিলে
খেতে চায় তখন বড় গোল বাধে। পাশের একটা অচেনা অজানা শরীর থেকে উঠে আসছে আষ্টেপৃষ্ঠে
জড়িয়ে থাকা খুব চেনা মানুষটার গন্ধ। সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে জড়িয়ে ধরছে সেই প্রিয়জন ।
যাকে সে- মুহূর্তে কোনভাবেই পাওয়া সম্ভব নয়। অগত্যা একরাশ লোকের ভিড়ে সেই রাক্ষুসে
ঘ্রাণের ঠেলায় নিজের মনের মধ্যে ঢুকে গিয়ে তার কাছে পৌঁছনোর আপ্রাণ অথচ বৃথা
চেষ্টা শুরু করি। বুঝতে পারছেন! কেন বলছিলাম একে যন্ত্রণা? (একটু গুনগুন
করে গেয়ে নিন আমার সঙ্গে,
'এ ব্যথা কি যে ব্যথা বোঝে কি আনজনে...সজনী আমি বুঝি, মরেছি মনে
মনে!)
শুধু অতীত আর বর্তমানকে গ্রাস
করেই এ থেমে থাকে না। এই গন্ধের বিস্তার কখনো আবার ভবিষ্যতের পথেও। তখন তা জ্বালা
যন্ত্রণা থেকে আরেক ধাপ এগিয়ে যায়। আমাকে নিয়ে চলে ভয়ের সাম্রাজ্যে। এরকম এক গন্ধ
হাসপাতালের গন্ধ। ও.টি তে শুয়ে থাকা অবস্থায় জ্ঞান চলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত এই গন্ধ
পেয়েছি। এই গন্ধটা এমন ভাবে নাকে ঢুকে গেছে যখন পরে কাউকে হাসপাতাল নার্সিংহোমে
দেখতেও গেছি তখনও এটা পিছু ছাড়ে না। একটা অদ্ভুত ভয় মেশানো নিরাপত্তাহীনতার
অনুভূতি।
গন্ধ আমার কাছে এভাবেই
ত্রি-কালের আবর্তে জ্বালা-যন্ত্রণা ভয় আনন্দের বিভিন্ন মোড়কে বারেবারে চলে আসে।
গন্ধ থাকবার জন্য আসে না।
মিলিয়ে যায়। কিন্তু যে অল্প সময়ের জন্য আসে তখন সঙ্গে নিয়ে আসে অতীতকে, যে অতীত আর
কোনোভাবেই পাওয়া সম্ভব নয়;
নিয়ে আসে কোন বিশেষ মুহূর্তকে; কোন খুব চেনা মানুষকে আর তার সঙ্গে
ভুরভুর করে আসতে থাকে ভাবনার নানান অনুষঙ্গ। আমাকে তছনছ করে সে হুস করে পালিয়ে
যায়...
তবু এই অস্থিরতার মধ্যে একটা
আনন্দ আছে। এই অস্থিরতা বা বাতিক যাই হোক না কেন এটাকে আমার জারণ করতে ভালো লাগে।
এটা করতে করতে কাশ আমিও যদি জীবনানন্দের মতো 'রৌদ্রের গন্ধ', 'নরম জলের
গন্ধ' পেতে
শুরু করি...