Thursday, August 30, 2012

বাংলা টুইটস্‌ -- অনির্বাণ

বাংলা টুইটস্‌ - মানে, মেপে মেপে, শব্দ গুনে লিখবো না, তবে কথা দিচ্ছি একটা টপিকে বেশি ভাটাবোও না।

প্রিয় হবিঃ বমি পরিষ্কার
যাদবপুরের মাঠ, বার্সেলোনার রাম-সস্তা ইয়ুথ হোস্টেল, ইউনিভার্সিটি ফেয়ারওয়েলে মেন হোস্টেলের কালচে-সবুজ শেওলা-ছাদ, বন্ধুর পাশের ফ্ল্যাটের কোলাপ্‌সেবেল দরজা ইত্যাদি থেকে, অলরেডি-কোলাপ্সড্‌ মাতাল ও মাতালি অদ্বিতীয় দক্ষতায় ক্যাপচার করা এবং সুতীব্র ক্ষিপ্রতায় নিরাপদ স্থানে প্রেরণ করায় বিপুল অভিজ্ঞতা। পরীক্ষা মোটেই প্রার্থনীয় নয়। বমি মোছার/পাচার করার জিনিস হিসেবে যথাক্রমে ঘাস ও রুমাল, বার্সেলোনা পিকাসো মিউজিয়ামের কালেক্টেব্‌ল এডিশন ব্যাগ, তড়িঘড়ি শেষ করা পটেটো চিপ্‌সের প্যাকেট ও রাজার ফতুয়া ব্যবহৃত হয়েছে। প্রায়র আর্ট করে রাখলুম, কেউ পেটেন্ট নেওয়ার চেষ্টা করবেন না।

প্রিয় দাড়িঃ চে
ভালো গোঁফ না থাকলেও যে শুধু ঘন দাড়ি নিয়ে সারা বিশ্বের ক্যাপিটালমডেল হওয়া যায়, চেই প্রথম দেখিয়েছেন।

প্রিয় বডি-পার্টঃ টাক
পোচ্চুর ফ্লেভারে পাওয়া যায়। মেঘে ঢাকা তারা’ - পাহাড়ি স্যান্যাল, ‘ওরা থাকে এধারে’ – তরমুজ সুব্রত, ‘আশা ছিলো’ – তুলসী চক্কোত্তি, ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে’ – চন্দ্রিল ভটচাজ্‌। তবে সবার সেরা স্টাইলটি নিঃসন্দেহে অবাক পৃথিবী’ – ঋতুপর্ণ। প্রমাণ করেছেন, শুধু বিদেশিরা নয়, বাঙালিও বেবাক ফাঁকা মাথা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে। ঋতুপ্রেমীদের উদ্দেশ্যে বিধিসম্মত সতর্কীকরণঃ খাওয়া-দাওয়া সবে শুরু, এখনই পানের খোঁজ করবেন না।

প্রিয় ড্রেসঃ কমল মিত্রের ড্রেসিং গাউন
এই মালটির ওপর আমার হেব্বি লোভ। টপ ফর্মের উত্তমকুমারকে কাজল-সুচিত্রা আর গাউন-কমল ছাড়া আর কেউ তুমুল ঝাড়তে পারে নি। এই ভাবে টানা পঞ্চাশ বছরের ওপর বাঙালি মেয়েদের কুক্ষিগত করে রাখা ওনার মোটেই ঠিক হয় নি। কাজল-সুচিত্রা তো হতে চাইছি না, অগত্যা। তবে একটা ক্যাচ আছে অনেকগুলো গাউন কিনতে হবে, ড্রেসিং গাউন খানা কি রঙের তার কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ আজ অব্দি পাওয়া যায় নি। কমল মিত্রের গাউন পরা এবং ফোটোশপ ছাড়া রঙ্গিন ছবি পেলে প্লিজ জানাবেন।

প্রিয় অভিনেতাঃ ডন
রবি ঠাকুরের সাথে এনার একটু মিল আছে - ইনি নাইট পেয়ে গেছেন। কিন্তু কিছুতেই ত্যাগ করছেন না। অস্কার পেলেই নাকি নাইট ছেড়ে দেবেন। বাজারে জোর গুজব সিনেমাপ্রেমী ও ক্রিকেটপ্রেমীরা একজোট হয়ে জালিয়ানওয়ালাবাগে মাস-সুইসাইডের ছক করছেন। অঙ্ক কষে দেখা গেছে পরের ঘটনাটির সম্ভাবনাই কিঞ্চিৎ হলেও বেশি।

প্রিয় রসিকঃ তারাপদ রায়
গদ্য লিখতেন, পদ্যও। তুলনা করে একবার বলেছিলেন, ‘যে তারাপদ পদ্য লেখে/ সে তারাপদ অন্য/ এ তারাপদ গদ্য লেখে/ মদ্য খাওয়ার জন্য’। তুমুল মাতাল ও পুলিশপ্রেমী। নিজের ভাষায় টুকছি গেরস্তের ঘরে, দুজন মধ্য-বয়স্ক, সম্ভ্রান্ত অতিথি এসেছেন। উইক ডের সন্ধেবেলা, তাই যে যার আপিস থেকে সরাসরি এসেছেন। কলিং বেল বাজলো। আট বছরের বাচ্চাটি দরজা খুলে চেঁচিয়ে, ‘মা, একজন ভদ্রলোক এসেছেন, সাথে একটা পুলিশ’।

প্রিয় উৎসবঃ জয়েন্ট এন্ট্রান্স
এই উৎসবটি অদ্বিতীয়। এটি মাসাধিক কাল ধরে চলে, জনপ্রিয়তার নিরিখে বহুদিন হলো দুর্গাপূজাকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। বিশুদ্ধ-আমেরিকান-পুজো-মতে এই উৎসবটি শুরু হয় সপ্তাহান্তে আর শেষ হয় মায়ের ভোগের লিস্টি বেরোনো নিয়ে। আগে ছাপা কাগজে বেরোত, আজকাল ইন্টারনেটে বেরোয়। প্রকাশ্যে কচি পাঁঠা বলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাঙালির জীবনে যে ক্রাইসিস, থুড়ি, সাময়িক শূন্যতা দেখা দিয়েছিল, নিভৃতে কচি মানুষ বলি করে এই উৎসবে সেই অপূর্ণতা মেটানো হয়ে থাকে।

প্রিয় পদবিঃ বোস
সুভাষ তো আছেনই। জগদীশ আছেন, এস এন আছেন। জ্যোতি তো অমর রহে। কিন্তু আসল অমর বোসকে কজন চেনেন? ব্রিটিশ শাসনের সুফল আলোচনা করতে গেলে আজও নীরবে উপেক্ষা করা হয় অমর গোপাল বোসকে। ১৯২০ তে ননী গোপাল বোস বাংলা থেকে ব্রিটিশের উৎপাতে কেটে না পড়লে, উনিশের নামতা পড়েই হয়তো অমর বোসের বাকি জীবনটা কেটে যেত। এ মধুর শব্দ পৃথিবীর কানে পৌঁছত না।


প্রিয় পিৎজাঃ সুগার এন্ড স্পাইস
এ পিৎজা না খেলে আপনি কোনোদিন জানতেই পারবেন না যে টপিং ব্যাপারটা সার্ভ করা পিৎজা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করা সম্ভব। আপনার কোনো ইতালীয় বন্ধুকে চরম বাঁশ দিতে চাইলে হাইলি রেকমেন্ডেড।

প্রিয় ইস্কুলঃ বাংলা
বাংলা ইস্কুল ব্যাপারটা যাকে বলে কিনা খুব টাচি ব্যাপার! আশপাশে আমার বয়েসী নতুন বাবা-মারা নতুন প্রজন্মকে ইংরেজি ইস্কুলে ভর্তি করতে প্রচণ্ড ফাইট দিচ্ছেন, ফাটিয়ে দিচ্ছেন। বেশি বয়স হয়নি আমার, কিন্তু এখনই গলায় একটা বিষণ্ণ সুর এনে বলা যায়, আমাদের ছোটবেলায়, থুড়ি স্কুল-বেলায়, মফস্বলে ইংরিজী স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী বেশ কম ছিলো। ফিকে লাল পার্টির কড়া হুকুম ছিলো যে - "All animals are equal, but some animals are more equal than others"। এম এল এ, নিদেনপক্ষে লোকাল কমিটির হর্ত্তা-কর্তা, ফিকে-লাল-পার্টির বিদ্বজ্জনেরা, হাত-পা-নাক-মুখ-কাটা-সম্প্রদায় এবং হট্‌কে-চলনেওয়ালারা ছাড়া বাকি আর সক্কলের জন্য মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ। ইংরিজী স্কুলের কিছু কিছু গার্ডিয়ানরা আবার বড়ো গর্ব করে বলতেন, আমার ছেলে আবার বাংলাটা মোটামুটি বলতে পারে, কিন্তু কিছুতেই ভালো লিখতে পারে না। শুনতাম আর লুচির মত ফুলতাম। রাগ হতো - ক্যানো আমি টানা ১০ লাইন বাংলায় লিখতে পারি? হায়, সে সোনালি দিন গত হয়েছে, এখন শুধুই সোনালি গুহ। ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে, বাংলা ইস্কুল হাতে গোনা, শহরে বসবাস করেও বাংলা ইস্কুলে পড়াই বর্তমানে হট্‌কে-সম্প্রদায়ের স্ট্যাটাস সিম্বল। একমাত্র আশার ব্যাপার - কিছু কিছু ইংরিজী ইস্কুলের সেইব্যাপারটা আজো বজায় আছে। কলকাতার একটি ইংরিজী ইস্কুলের ওয়েবসাইট থেকে ২টো ইন্সট্রাকশন ওনাদের ভাষাতেই তুলে দিলামঃ It is compulsory for all students to speak only in English within the school campus. Only transparent water bottles to be allowed in campus for Classes III onwards.ফাইন প্রিন্টটা পড়লেন কি? যেটা সরাসরি বলা নেই অথচ আছে, সেটা হলো ক্লাস থ্রি থেকে ইস্কুলের জলের বোতলে মদ খাওয়া শুরু করার কথা ভাবতে পারে এবং বন্ধুদের সাথে বাংলায় কথা বলতে চায় না, এরকম পরিবারই ভর্তির জন্য অগ্রগণ্য। আমার বাংলা ইস্কুলে কবে এরকম লেখা হবে?

আপনার কি প্রিয়? প্লিজ, বাংলায় লিখবেন, ওটাই প্রিয় ভাষা।


পুনশ্চঃ

প্রিয় বিরিয়ানিঃ রয়্যাল
শিয়ালদা থেকে হাওড়ার বাসে উঠে পড়ুন, ২টো স্টপ পরে লালবাজারের কাছে নেমে পড়ুন। তাপ্পর গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে চলে যান। অনেক দিন আগে বাবা প্রথম বার খাইয়ে বলেছিলেন, এখানেই কলেজ-জীবনে প্রেম করতে আসতেন। ওই বিরিয়ানির প্রতিটি দানা, সেই প্রেমকে দানা বাঁধতে সাহায্য করেছিল বলেই আমার বিশ্বাস। ভূমিষ্ঠ হওয়ার জন্য রয়্যালের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। আমি নিশ্চিত, আমার পরবর্ত্তী প্রজন্মকেও রয়্যাল এ ভাবেই দরাজ প্লেটে সাহায্য করবে।



পুনশ্চের পুনশ্চঃ আমার স্ত্রীকে, তখন সদ্য-প্রোপোজ-করা-প্রেমিকাকে, রয়্যালে খাওয়াতে নিয়ে গেসলাম। কড়া বামুন-বাড়ির মেয়ে, দোকানে ঢুকে প্রথম প্রশ্নটাই ছিল, যেটা খেতে নেই, সেটা কি এখানে পাওয়া যায়? উত্তরঃ না। খাওয়া শুরু করে আমি, ক্যামন লাগছে? উত্তর নেই, কি করে থাকবে? মুখ তো ভর্তি। কিন্তু চোখজোড়া উজ্জ্বল। সেই আগন্তুকের উৎপল দত্তের মত। বাঙালিকে কি আর থ্যাংক য়ু ওয়েল কামবলে ভালো লাগা জানাতে হয়?



About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই