Wednesday, August 22, 2012

পুরনো কথা (৫) -- ভীমরুল

বিষাক্ত হুল নিয়ে
কিছু 'কথা চেপে' গিয়ে
উড়ে এসে জুড়ে ব'সে 'ভীমরুল'।

ব্লগ নিয়ে বকাবকি
দরকারি খুব নাকি?
সোমবারে বোঝা যাবে বিলকুল।।
(২৯/৮/২০১১, সকাল: ১০:৩০)



একটা পুরনো হুজুগ থেকে একটা নতুন ব্লগ শুরু হয়েছে। আমাদের এই ব্লগটার কথা বলছি না, সেটা আর একটা ব্লগ-কথা তো চেপে যাওয়ার জন্যই। সেই ব্লগে সবাই ছদ্মনামে লিখছে। রোজই সব লেখা পড়ি, পড়ে বেশ ভালও লাগে, কিন্তু যখন বুঝতে পারি না কে লিখেছে, তখন হেব্বি জ্বলে। কি কি সব অদ্ভুত নাম লেখকদের- যান্ত্রিক, ইচ্ছে-করেনা, বেচারাম, মাঝিমাল্লার, কাতুকুতু ছানা, ভাগন্তুক, উড়ুক্কু, ফ্রিকিক, নেইমুণ্ডু, ছাত্রী, ভাঙ্গাসিঁড়ি, নাটবল্টু, হরেদা পালোয়ান, গিজিগিজিগিজ। যখন দেখি কেউ ঠিকঠাক নাম নিয়ে লিখেছে, সন্দেহ হয় যে সেগুলোও ছদ্মনাম কিনা। তখন মনে হয় বুঝি অমিতের নাম নিয়ে লিখে দিল অমূল্য, কেউ বাজে লেখা বললে সেটা অমিতের ঘাড়েই যাবে। তা বলি, নিজের বাপ মা এর দেওয়া নাম গুলো কি দোষ করেছিল শুনি? দিব্বি তো নিজের নামে লিখে ফেলতে পারতিস, সবাই জানত অমুক ছেলেটা বা মেয়েটা তমুক লেখা লিখেছে, বাজারে একটু নাম ডাক হত, তা নয়, এই সব ভোজবাজি মার্কা নাম। শুধু এইখানে শেষ হলে তবু কথা ছিল, তা নয়, যারা যারা সেই সব লেখায় কমেন্ট করে, তারা অবধি বিলকুল নিজের নাম চেপে গিয়ে আলপটকা নানা মন্তব্য করে দেয়। নিজের নাম নিয়ে মন্তব্য করলে সব কথা বলা যায় না, দে শালা মনের সাধ মিটিয়ে যার তার খুশী নাম নিয়ে। সেই নামগুলোও লেখকদের নামের থেকে কিছু কম যায় না কোনও অংশে- জামরুল, দড়ি আরও কত কি। আবার দেখি Anonymous নামের কে একজন আছে, সে সব জায়গা কমেন্ট করে বেড়ায়, কি জানি সেটা কে।



সেই ব্লগের সম্পাদকের নাম জুজু, সে সবাইকে ভয় দেখিয়ে লেখা আদায় করে বেড়ায়, ঠিক সময়ে লেখা না দিলে আবার শাইলকের মত গায়ের মাংস কেটে নেওয়ার ভয় দেখায়। আরও দুজন সহকারী সম্পাদকও আছে শুনেছি, তাদেরও জুজু রীতিমতো ভয় দেখায়। তারা ভয়ে এখন ফেসবুকে অনলাইন হয়না, হলেই জুজু যদি ধরে জিজ্ঞেস করে সম্পাদনা কদ্দুর এগোল। মুদির দোকানে ফর্দ দিয়ে যেন বলে দেয়-দাদা, সামনের সপ্তাহের বুধবারের মধ্যে ৩ পিস কবিতা, ২ পিস ভ্রমণ কাহিনী আর ১ পিস বিবিধ কলামের লেখা পাঠিয়ে দেবেন, তাহলেই পরের সোমবারের মধ্যে সব ছেপে দেবো, কিচ্ছু ভাববেন না। একদিকে লেখা আদায়ের চাপ দেওয়া তো আছেই (অনেকটা কালীপূজোয় তোলাবাজদের চাঁদা আদায়ের মত, না দিয়েছ কি একেবারে ঘ্যাচাং ফুঃ), এছাড়াও জুজুর মাথায় এই ব্লগ নিয়ে সারাদিন কতো কি চলে, সাধারণ মানুষ তার থই পাবে না।
সেই ব্লগের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে, কিছুটা জনপ্রিয়তা পেলেও, খুব একটা বাড়ছে না। ফেসবুকের বুকে নতুন পাতাতৈরি করা হয়েছে, সেই পাতাটি শদেড়েক লোকের পছন্দ’-এর তালিকাভুক্তও হয়েছে। জুজুগণ এই লাইক-কাউন্ট বাড়ানোর জন্য ফেসবুকে ফেক প্রোফাইল খুলে তাই দিয়ে এন্তার লাইক করাচ্ছে। জনপ্রিয়তা তো বাড়াতে হবে, যে কোনও ভাবেই।
সেই ব্লগের পেজ-হিট সংখ্যা পাঁচ হাজার পূর্তি উপলক্ষ্যে আবার বড়সড় সমবেত ফুর্তি হয়। আনন্দে ডগমগ হয়ে দেদার মদ্যপান করে ব্লগারুদিগ মনে করে-আরি তারা! কি হেব্বি achievement আমাদের। এরা নিজেরাই লেখে আর নিজেরাই পরস্পরের লেখা পড়ে বলে-আহা কি লেখা। নিজেরাই দিনের মধ্যে ছত্রিশবার একই ব্লগ ওপেন করে পেজ-হিট বাড়ায়, আর সেটা পড়ে সাঁইত্রিশবার। এখন আবার এই পেজ-হিট এর সংখ্যাটা দশ হাজার ছুঁইছুঁই। এর পরে না জানি কতো বড় দিবা-রাত্রিব্যাপী মোচ্ছবের পরিকল্পনা হতে চলেছে।

আরে বাবা, বানিয়েছিস তো একটা ব্লগ, সেটা নিয়ে এত বগল বাজাবার কি আছে? “উঠল বাই তো ব্লগ বানাইবলে নেমে পড়লেই হল? মনের কথাটি ছিল যে মনে, সেটা রটিয়া দিতে হবে ব্লগের কোণে? বোলোনা, বোলো না। বন্ধু কথা বোলো না, চুপ করে থেকো। কথা তো চেপে যাওয়ার জন্যেই..."

About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই