না না, মাফ করবেন,
আমি নারীবাদী-টারীবাদী কিছু নই। এই আপনি যা, আমিও তাই— ‘ছা-পোষা
মধ্যবিত্ত’। কলকাতার ‘শহুরে’ মানুষ। সকাল সকাল আপনি অফিসে যান বা দোকান খোলেন, সারাদিনের পরিশ্রমের পর ছেলেমেয়ের জন্য একটা চকোলেট বা পুতুল কিনে ঘরে ফেরেন, খাবার টেবিলে বউয়ের সঙ্গে দুটো মিষ্টি কথা বলেন, তারপর ঘুমিয়ে পড়েন। আপনার বউ— বাড়িতে থাকে। আজকাল যাকে ‘House Maker’ বলে, ঠিক তাই। বউকে আপনি সম্মান দেন (!)- সত্যিই তো, মেয়েরা এখন ছেলেদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অফিসে যাচ্ছে। আপনারই কত মহিলা কলিগ্ আছেন, অফিসে কিংবা ঝাঁ-চকচকে স্মার্ট সুন্দরী কত মেয়ে আপনার দোকানে আসে জিনিস কিনতে। আপনারও একটি মেয়ে আছে তাকেও আপনি মানুষ করতে চান ‘ছেলের মতো করেই’। মেয়ে শিক্ষিত না হলে, স্মার্ট না হলে ইঞ্জিনিয়ার জামাই কোথায় পাওয়া যাবে বলুন? বোঝেনই তো চারপাশের অবস্থাটা।
মধ্যবিত্ত’। কলকাতার ‘শহুরে’ মানুষ। সকাল সকাল আপনি অফিসে যান বা দোকান খোলেন, সারাদিনের পরিশ্রমের পর ছেলেমেয়ের জন্য একটা চকোলেট বা পুতুল কিনে ঘরে ফেরেন, খাবার টেবিলে বউয়ের সঙ্গে দুটো মিষ্টি কথা বলেন, তারপর ঘুমিয়ে পড়েন। আপনার বউ— বাড়িতে থাকে। আজকাল যাকে ‘House Maker’ বলে, ঠিক তাই। বউকে আপনি সম্মান দেন (!)- সত্যিই তো, মেয়েরা এখন ছেলেদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অফিসে যাচ্ছে। আপনারই কত মহিলা কলিগ্ আছেন, অফিসে কিংবা ঝাঁ-চকচকে স্মার্ট সুন্দরী কত মেয়ে আপনার দোকানে আসে জিনিস কিনতে। আপনারও একটি মেয়ে আছে তাকেও আপনি মানুষ করতে চান ‘ছেলের মতো করেই’। মেয়ে শিক্ষিত না হলে, স্মার্ট না হলে ইঞ্জিনিয়ার জামাই কোথায় পাওয়া যাবে বলুন? বোঝেনই তো চারপাশের অবস্থাটা।
ধরুন, এই আপনার পাড়াতেই, আপনার বাড়ির উল্টোদিকে কিংবা ধরুন পাশের
ফ্ল্যাটে একটি মেয়ে ভাড়াটে এসেছে। একাই থাকে। রোজ আপনারই পাশ দিয়ে গটগট করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যায়। ঝকঝকে আধুনিক পোশাকে। আপনি
জানেন, মেয়েটি কাজ করে কল্-সেন্টারে। আপনি তাকে মাঝে মাঝেই আড়চোখে দেখে নেন।
দু-একবার রাস্তার মোড়ে তাকে কথাও বলতে দেখেছেন একটি ছেলের সঙ্গে। আপনার ‘স্কার্ট-পরা’
বউ মাঝে মাঝেই আপনার কাছে অভিযোগ অনুযোগ করেন। কারণ মেয়েটির ঘরে তার ছেলেবন্ধুরা
আসে। মেয়েবন্ধুরাও আসে- কিন্তু সেটা
বলবার কথা নয়, বলবার কথা হল ছেলেরা আসে। না, তাতে আপনার অসুবিধা হয় না, তাদের
আড্ডা-চিৎকার কোনকিছুই আপনার ফ্ল্যাটের দেওয়ালও ভেদ করে না। কিন্তু আপনার ঘরে একটি
ছেলে আছে। এই এবার মাধ্যমিক দেবে। তাকে নিয়েই চিন্তা। তার মন যদি ভেদ করে এইসব
খারাপ জিনিস! ছি! একলা মেয়ের ঘরে কিনা ছেলে ঢোকে! কী শিক্ষা পাবে ছেলেটা! আপনারও
মনটা খচখচ করে, কিন্তু কিছু বলেন না।
মাঝে একদিন পাড়ায় বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের
হোমরা চোমরা দাদারা মাইক চালিয়ে রাস্তা আটকে DJ Night করছিল। পার্টির দাদাদের ঘাঁটাবেন না বলে, আপনি ও আপনার ফ্ল্যাটের সবাই সেদিন ঘরে তালা দিয়ে বেরিয়ে পড়লেন বাইরে কোথাও একটা। সিঁড়ি দিয়ে নামার
সময় দেখলেন, মেয়েটি জোরে মাইক চালানোর প্রতিবাদ করায়, পাড়ার ছেলেরা নেশায় চুর হয়ে তাকে
অশ্রাব্য গালিগালাজ করছে। পাড়া থেকে তুলে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। অ্যাসিড ছুঁড়ে
মারার হুমকি দিচ্ছে। আপনি শুনলেন। কিছু বললেন না। নীরবে পাশ কাটিয়ে গেলেন। কী
দরকার! আপনারও তো একটা মেয়ে আছে। বড় হচ্ছে। পাড়ার ছেলেদের খেপিয়ে লাভ?
এরও কিছুদিন পর আপনি অফিস থেকে বাড়ি ফিরে
দেখলেন হুলস্থুল ব্যাপার। ঐ
মেয়েটিকে নিয়েই। না, এবার ঘরে ছেলেবন্ধু ঢোকার জন্য নয়। মেয়েটি এবার আর ঘরেই ঢুকতে
পারছে না। তালার মধ্যে কেউ বা কারা এমন কিছু ভরে সিল করে দিয়ে গেছে যে তালা না
ভেঙে, ঘরে ঢোকার উপায় নেই। মেয়েটি অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে আছে, আপনার দিকে তাকিয়ে
সাহায্য চাইছে। উলটোদিকে আপনার বউয়ের উজ্জ্বল মুখ দেখে বুঝলেন কাজটি কার।
গৃহযুদ্ধের আশঙ্কায় আপনি আজও নীরবে ঘরে ঢুকে গেলেন।
এই মেয়েটির নাম কী, আমার জানা নেই। সুনেত্রা সিং কিংবা সুনেত্রা পাল। তবে
ঠিকানা কলকাতা শহর। ঘটনাগুলোও এই সেদিনের। না না, আমি নারীবাদী-টারীবাদী কিছু নই।
এসব কথা লেখবার দক্ষতা বা কল্পনারও কিছু প্রয়োজন হয় না। এ তো আমার-আপনার ঘরের
গল্প। ভাগ করে নিলাম। কাল থেকে আবার আমি আপনার সঙ্গে আমাদের রাজ্যে মহিলা
মুখ্যমন্ত্রী হলে উচ্ছ্বসিত হব, আর খবরের কাগজে ‘নারী নিগ্রহ’-এর খবর পড়ে বিরক্তও
হব। বলবো, “ধুস্! দেশটার কিছু হবে না!”