ছবি : কৃষ্ণেন্দু |
কাটতে পারলো না। অঙ্কে সে বরাবরই কাঁচা, তার পর annual পরীক্ষার কোশ্চেনটাও হয়েছে half-yearly এর চেয়ে অনেক বেশি tough। অবশ্য half-yearly এর স্ট্যান্ডার্ডের হলেও রজনীকান্ত তাতে পাশ করতে পারতো না – কারণ, half-yearly তে অঙ্কে তার নম্বর ছিল মোটে ১২। Annual এ একটা ফাটাফাটি কিছু করে উঠতে না পারলে যে এ বছর তার আর পরের ক্লাসে promotion হবেনা, তা রজনীকান্ত ভালো করেই জানে। আর, তাই পরীক্ষার preparation ও সে বরাবরের চেয়ে অনেক বেশি করেই করেছিলো। কিন্তু অঙ্ক যে তার মাথায় ঢোকে না মোটেই, অগত্যা… কথায় আছে – “আশায় বাঁচে চাষা”। তাই, তেত্রিশ কোটি দেবদেবীকে স্মরণ করে রজনীকান্ত পরীক্ষা হলে ঢুকেছিলো। যদি দেবকৃপায় তার একটা হিল্লে হয়ে যায়। কিন্তু তাঁরা যে এভাবে ভক্তকে ফেলে পিঠটান দেবেন তা কে জানতো?
অনেকের মনে হতে পারে যে রজনীকান্ত
বুঝি মন দিয়ে পড়াশোনা করে না, একই ক্লাসে বার
কয়েক গাড্ডু খায় – কিন্তু এমনটা মোটেই
নয়। ক্লাস সিক্স থেকে সেভেনে সে first হয়ে উঠেছে। তাই যখন
সে half-yearly
exam এ অঙ্কে ১২ এবং অন্যান্য subject এ তথৈবচ নম্বর পেল, তা দেখে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, রজনীকান্তের বাবা-মা, সহপাঠীরা, সকলেই বেশ অবাক। অনেকে ভাবে first হয়ে রজনীকান্ত পড়াশোনাকে হেলাফেলা করছে। আসল কারণটা যে ঠিক কি, তা কেউ বুঝতে পারেনা। রজনীকান্ত নিজের সাফল্যের রহস্য ভালো
করেই জানে, তাই সে কিছুটা shocked হলেও surprised নয় মোটেই।
ক্লাস সিক্সে ওর পরীক্ষা এতো ভালো হবে, যে একেবারে first হয়ে যাবে, তা যদি আগে থেকে জানতে পারতো, তাহলে অত ভালো পরীক্ষা সে কখনোই দিত না। প্রয়োজন মতো ইচ্ছে
করে কিছু উত্তর বা বানান ভুল করে আসতো। শেষ পর্যন্ত first হওয়াটাই রজনীকান্তের কাল হল।
রজনীকান্ত class থ্রি ফোর থেকে বরাবরই ভালো রেজাল্ট করে আসছে। কিন্তু topper সে গতবছর পরীক্ষার আগে কখনোই ছিল না। রজনীকান্ত এককালে
পড়াশোনা করতো বেশ মন দিয়েই, কিন্তু শত চেষ্টাতেও
পড়া কখনোই তার ঠিকমতো তৈরি হতো না। তাই ক্লাস থ্রির annual পরীক্ষায় খানিকটা মরিয়া হয়েই রজনীকান্ত তার সামনে বসে থাকা
অর্ণবের খাতা থেকে টোকা শুরু করে। না, টুকলি করতে রজনীকান্তের বিশেষ একটা অসুবিধা ছিলোনা। বরং ব্যাপারটা তার বেশ সহজ
বলেই মনে হয়। অর্ণব একটু আটকে গেলে, অর্ণবকে ছাড়িয়ে রজনীকান্তের দৃষ্টি চলে যায় অর্ণবের সামনে বসে থাকা সুস্মিতের
খাতার দিকে। সুস্মিতের সামনে বসা রমেশের খাতার সূক্ষ্ম হাতের লেখা পড়তেও বিশেষ বেগ
পেতে হয়না রজনীকান্তের। আগামী পরীক্ষাগুলিতে রজনীকান্ত সহজাত প্রতিভায় অনায়াসেই
দক্ষতা লাভ করে। ক্রমশ সে নিজের কর্মক্ষমতার আরও উন্নতি ঘটায়। এখন আর তাকে খাতায় লেখা
অক্ষরগুলো পড়তে হয়না – সহপাঠীদের পেন ধরা, হাত চালানো দেখেই কে কি লিখছে, রজনীকান্ত নির্ভুল
আন্দাজ করে নিতে পারে। অবশ্য আন্দাজ যদি নির্ভুল হয়, তবে তাকে কি আর আন্দাজ বলা যেতে পারে?
রজনীকান্তের স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের
প্রত্যেক বছর roll number নির্ধারণ করা হয় তার current rank এর ওপর ভিত্তি করে। আর, পরীক্ষার সময় তাদের বসানোও হয় এই roll number অনুযায়ী। তাই আজ রজনীকান্তের এই দশা। প্রত্যেক বছর সে পেছনের সারি থেকে ধাপে
ধাপে সামনে এগিয়ে এসেছে। আর গত বছর first হওয়ার ফলে এবছর প্রথম বেঞ্চটা তার জন্যেই নির্ধারিত। এ মুহূর্তে রজনীকান্তের
সামনে যিনি বসে আছেন, তিনি তাদের class teacher মৃত্যুঞ্জয়বাবু – ভারী গম্ভীর লোক, কোনরকম বেয়াদবি
সহ্য করেন না। ডায়াসের সামনে থেকে তিনি সকলের ওপর কড়া নজর রেখে চলেছেন। half-yearly -র রেজাল্ট তো সবাই জানেই! Annual এর রেজাল্টও যদি অনুরূপ হয়, তাহলে রজনীকান্তের class সেভেনে থেকে যাওয়া ঠেকায় কে? First boy থেকে একেবারে fail boy! ছিঃ ছিঃ, লজ্জার একশেষ। অবশ্য তারই মধ্যে
সান্ত্বনার কথা একটাই যে, নিয়মানুযায়ী
সেক্ষেত্রে রজনীকান্তের স্থান হবে একেবারে last bench এ। মানে, একবারের বেশি দু’বার তাকে আর ফেল করতে হবে না। এইসব ছাইপাঁশ ভাবতে ভাবতে আরও
আধঘণ্টা কেটে গেছে। তবুও একবারই বা fail করতে কে চায়? একটা শেষ চেষ্টা
করলে হয়না?
রজনীকান্ত নিজের ঘাড়টা পিছনদিকে
ঘুরিয়েছে কি ঘুরোয়নি, মৃত্যুঞ্জয়বাবু
হেঁকে উঠলেন – "রজনীকান্ত, খাতা নিয়ে উঠে এসো"। যাঃ, আজ আর তবে নিস্তার নেই, নির্ঘাৎ fail। রজনীকান্ত খাতা পেন নিয়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়।
মৃত্যুঞ্জয়বাবু নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে চেয়ারের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বললেন – এখানে এসে বসো। স্যারের হুকুম অমান্য করেই বা কি করে, তার ঘাড়ে তো আর দু’টো মাথা
নেই। আস্তে আস্তে স্যারের টেবিলে খাতা রেখে, চেয়ারে এসে বসে। রজনীকান্ত লক্ষ্য করে, সহপাঠীরা মিটিমিটি হাসছে। first boy কে হেনস্থা
হতে দেখতে কার না ভালো লাগে? রজনীকান্তের দু’কান লাল হয়ে আসে। অবশ্য বসে থেকে লাভই বা কি? শেষ পর্যন্ত তো সাদা খাতাই জমা দিতে হবে, মনে মনে ভাবে রজনীকান্ত।
কিন্তু একি? এখান থেকে তো সকলের খাতাই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে! মানে, কে কি লিখছে, চেষ্টা করলেই বোঝা যায়! সাধারণতঃ যা দেখতে রজনীকান্ত অভ্যস্ত উল্টোদিক থেকে, যা একটু কষ্টকর; কিন্তু সামনে থেকে? কথাতেই তো আছে – “কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলেনা”। নিজেকে মানিয়ে নিতে মিনিট খানেক সময় লাগে রজনীকান্তের। তারপরই তার হাত চলতে
থাকে দ্রুতগতিতে।