মাঠে ঢোকার আগে একমুঠো ধুলো নিয়ে সারা গায়ে হাত পায়ে মেখে
নিল ছেলেটা। চুলগুলো আরও এলোমেলো করে গায়ের
জামাটা টেনে আরেকটু ছিঁড়ে নিল। ভাবছেন এ কোন পাগলের কথা বলছি? হ্যাঁ, পাগলই বটে! তবে এ পাগল, পাগল সেজে অভিনয় করার জন্য পাগল। আর তারপর তার প্রবেশ এক রঙ্গমঞ্চে। পাড়ার ক্লাবের স্পোর্টস্ চলছে। সেখানেই অংশগ্রহণ করতে আসা আর কী। এখানে বিবেকানন্দ, মাদার টেরেজা থেকে শুরু করে ডাক্তার, নার্স, উকিল, মাষ্টার থেকে বাসনওয়ালী, কাগজ-কুড়ানি, ভিখিরি থেকে কলির কেষ্ট পর্যন্ত সবাই হাজির। আর হবে নাই বা কেন, থিমটাই যে ‘যেমন খুশি সাজো’। এখানে একদিকে যেমন শাড়ী পরে চোখে চশমা এঁটে হাতে খাতা আর স্কেল নিয়ে মাষ্টারনি তার ছাত্রদের পড়াচ্ছে অন্যদিকে আবার ডাক্তার তার কাজে লেগে পড়ার জন্য রুগী খুঁজে বেড়াচ্ছে। বাড়ির পুরনো বাসনে ভিখিরি যেমন পয়সা জোগাড় করছে আবার তারই পাশাপাশি পকেটমারও তৈরি হাত সাফাই করবার জন্য। বিবেকানন্দর আবার
একই পোজ, সেই যে দুটো হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা। ওদিকে পুলিশ বেচারা আবার চোরকে ধরার জন্য ব্যাকুল। তবে এই ‘কুসুমকুঞ্জ মাঝে’ কেষ্টঠাকুর কিন্তু হাতে ‘বংশি’ নিয়ে তার পোস্ দিয়ে দিয়েছেন। এ এক অদ্ভুত মঞ্চ, এখানে সব চরিত্ররই একই সাথে প্রবেশ আবার একই সাথে প্রস্থান। এখানে পকেটমার পকেট কাটলে লোকে মজা পায়, ভিখিরি দেখে কেউ বিরক্ত হয় না, পুলিশকে কেউ গাল দেয় না, সব ছাত্ররাই মন দিয়ে পড়াশোনা করে, বাসনওয়ালীর হাঁকডাকে কারুর ঘুম ভাঙ্গে না, রুগী না হয়েও লোকে ডাক্তারের কাছে যায়, পাগলকে কেউ ভয় পায় না বা এড়িয়ে যায় না। এখানে বিমান নেই তবে বিমানসেবিকা হাজির, বিচারক নেই আসামী নেই অথচ উকিল হাজির, আর কাগজ-কুড়ানি, সে তো নিজেই কাগজ ছড়ায় আবার নিজেই কুড়ায়, মাষ্টারও একই পড়া বারবার পড়াতে বিরক্তি বোধ করে না, আবার ‘রানার’ও দিনের বেলাতেই ‘খবরের বোঝা হাতে’ নিয়ে ছুটছে, এখানে আবার ই-মেল এর কদর কম কিনা! তবে সকলেরই উদ্দেশ্য এক, লোকজনদের আনন্দ দেওয়া। দেখুন কেমন করে জীবনের এই বিরাট ক্ষেত্রটিকে ছোট্ট এইটুকু জায়গায় তুলে ধরার এক অদ্ভুত প্রচেষ্টা করে চলেছে এরা। তবে শুধু বাস্তব নয়, তার পাশাপাশি আমাদের কল্পনা, ধর্মীয় বিশ্বাস সবই সমানভাবে মর্যাদা পেয়েছে। তাই তো সুন্দর সাদা পোশাকে মাথায় মুকুট দিয়ে হাতে জাদুকাঠি নিয়ে ছোট্ট পরী কেমন সুন্দর সেজে এসেছে। শুধু পরী নয়, চোখে গোল চশমা এঁটে হ্যারিও এসেছে। তবে রণ আর হারমাইনি যে কোথায় গেল……? তবে এত আওয়াজের মাঝে কেষ্টঠাকুর কিন্তু তার বাঁশির শব্দটা কেমন মিউট করে রেখেছে দেখুন, অসাধারণ এদের সংযম! আর তা দেখে কিন্তু বেজায় খুশি ভিড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এদের বাবা-মা রা। নিজের ছেলেমেয়েদের সম্পূর্ণ অন্য একটা ভূমিকায় দেখার আনন্দই আলাদা যে! তবে দাদুর চোখে কিন্তু আনন্দাশ্রু। চোখের চশমা খুলে ধুতির খোঁটে জল মুছে চেয়ারে বসে পড়লেন। হয়তো ভাবছেন, যদি আমরাও এভাবে আমাদের জীবনগুলি নিজের হাতে সাজাতে পারতাম! কিংবা হয়তো সেই দুনিয়ার কথা ভাবছেন যেখানে প্রত্যেকে তার নিজের কর্তব্য পালন করার জন্য মরিয়া, যেখানে বিপরীত চরিত্রের মানুষরা পাশাপাশি থাকা সত্ত্বেও কোনও বিবাদ নেই, দ্বন্দ্ব নেই, দ্বিধা নেই, যেখানে প্রতিযোগিতা আছে অথচ হিংসা নেই। সবাই নিজের কাজে ব্যস্ত অথচ কোনও স্বার্থপরতা নেই, আবার রাজনীতির নোংরামোও নেই। ছোট্ট এই মাঠের ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের এই ভূমিকাগুলিই বোধহয় তিরস্কার স্বরূপ আমাদের কাছে ফিরে আসে। প্রতিদিনকার ব্যস্ত জীবনের মাঝে হারিয়ে যাওয়া মূল্যবোধগুলির দিকেই বোধহয় আঙুল তোলে, ভাবতে বাধ্য করে আমাদের, বিশেষত প্রবীণ মানুষদের। সবই আমাদের চেনা চরিত্র, তবু ভিড়ে ঠেলাঠেলি করে সবাই দাঁড়িয়ে থাকে, উপভোগ করে ছোট্ট এই দুনিয়াটাকে। এখানে সব কাজই সমান মর্যাদাপ্রাপ্ত, সব চরিত্রই সমান গুরুত্বপূর্ণ। যদিও পকেটমার হাজির একই সঙ্গে। তবে সে যাই বলুন না কেন, কোনও কিশোরী যখন কাঁখে কলসি নিয়ে পায়ে নূপুর পরে ‘কোনও এক গাঁয়ের বধূ’ সাজে তখন কিন্তু কেউ ‘গেঁয়ো’ বলে তাকে তিরস্কার করে না যখন কিনা একই সাথে পাশাপাশি হাঁটছে আধুনিকা মডেল!
জামাটা টেনে আরেকটু ছিঁড়ে নিল। ভাবছেন এ কোন পাগলের কথা বলছি? হ্যাঁ, পাগলই বটে! তবে এ পাগল, পাগল সেজে অভিনয় করার জন্য পাগল। আর তারপর তার প্রবেশ এক রঙ্গমঞ্চে। পাড়ার ক্লাবের স্পোর্টস্ চলছে। সেখানেই অংশগ্রহণ করতে আসা আর কী। এখানে বিবেকানন্দ, মাদার টেরেজা থেকে শুরু করে ডাক্তার, নার্স, উকিল, মাষ্টার থেকে বাসনওয়ালী, কাগজ-কুড়ানি, ভিখিরি থেকে কলির কেষ্ট পর্যন্ত সবাই হাজির। আর হবে নাই বা কেন, থিমটাই যে ‘যেমন খুশি সাজো’। এখানে একদিকে যেমন শাড়ী পরে চোখে চশমা এঁটে হাতে খাতা আর স্কেল নিয়ে মাষ্টারনি তার ছাত্রদের পড়াচ্ছে অন্যদিকে আবার ডাক্তার তার কাজে লেগে পড়ার জন্য রুগী খুঁজে বেড়াচ্ছে। বাড়ির পুরনো বাসনে ভিখিরি যেমন পয়সা জোগাড় করছে আবার তারই পাশাপাশি পকেটমারও তৈরি হাত সাফাই করবার জন্য। বিবেকানন্দর আবার
একই পোজ, সেই যে দুটো হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা। ওদিকে পুলিশ বেচারা আবার চোরকে ধরার জন্য ব্যাকুল। তবে এই ‘কুসুমকুঞ্জ মাঝে’ কেষ্টঠাকুর কিন্তু হাতে ‘বংশি’ নিয়ে তার পোস্ দিয়ে দিয়েছেন। এ এক অদ্ভুত মঞ্চ, এখানে সব চরিত্ররই একই সাথে প্রবেশ আবার একই সাথে প্রস্থান। এখানে পকেটমার পকেট কাটলে লোকে মজা পায়, ভিখিরি দেখে কেউ বিরক্ত হয় না, পুলিশকে কেউ গাল দেয় না, সব ছাত্ররাই মন দিয়ে পড়াশোনা করে, বাসনওয়ালীর হাঁকডাকে কারুর ঘুম ভাঙ্গে না, রুগী না হয়েও লোকে ডাক্তারের কাছে যায়, পাগলকে কেউ ভয় পায় না বা এড়িয়ে যায় না। এখানে বিমান নেই তবে বিমানসেবিকা হাজির, বিচারক নেই আসামী নেই অথচ উকিল হাজির, আর কাগজ-কুড়ানি, সে তো নিজেই কাগজ ছড়ায় আবার নিজেই কুড়ায়, মাষ্টারও একই পড়া বারবার পড়াতে বিরক্তি বোধ করে না, আবার ‘রানার’ও দিনের বেলাতেই ‘খবরের বোঝা হাতে’ নিয়ে ছুটছে, এখানে আবার ই-মেল এর কদর কম কিনা! তবে সকলেরই উদ্দেশ্য এক, লোকজনদের আনন্দ দেওয়া। দেখুন কেমন করে জীবনের এই বিরাট ক্ষেত্রটিকে ছোট্ট এইটুকু জায়গায় তুলে ধরার এক অদ্ভুত প্রচেষ্টা করে চলেছে এরা। তবে শুধু বাস্তব নয়, তার পাশাপাশি আমাদের কল্পনা, ধর্মীয় বিশ্বাস সবই সমানভাবে মর্যাদা পেয়েছে। তাই তো সুন্দর সাদা পোশাকে মাথায় মুকুট দিয়ে হাতে জাদুকাঠি নিয়ে ছোট্ট পরী কেমন সুন্দর সেজে এসেছে। শুধু পরী নয়, চোখে গোল চশমা এঁটে হ্যারিও এসেছে। তবে রণ আর হারমাইনি যে কোথায় গেল……? তবে এত আওয়াজের মাঝে কেষ্টঠাকুর কিন্তু তার বাঁশির শব্দটা কেমন মিউট করে রেখেছে দেখুন, অসাধারণ এদের সংযম! আর তা দেখে কিন্তু বেজায় খুশি ভিড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এদের বাবা-মা রা। নিজের ছেলেমেয়েদের সম্পূর্ণ অন্য একটা ভূমিকায় দেখার আনন্দই আলাদা যে! তবে দাদুর চোখে কিন্তু আনন্দাশ্রু। চোখের চশমা খুলে ধুতির খোঁটে জল মুছে চেয়ারে বসে পড়লেন। হয়তো ভাবছেন, যদি আমরাও এভাবে আমাদের জীবনগুলি নিজের হাতে সাজাতে পারতাম! কিংবা হয়তো সেই দুনিয়ার কথা ভাবছেন যেখানে প্রত্যেকে তার নিজের কর্তব্য পালন করার জন্য মরিয়া, যেখানে বিপরীত চরিত্রের মানুষরা পাশাপাশি থাকা সত্ত্বেও কোনও বিবাদ নেই, দ্বন্দ্ব নেই, দ্বিধা নেই, যেখানে প্রতিযোগিতা আছে অথচ হিংসা নেই। সবাই নিজের কাজে ব্যস্ত অথচ কোনও স্বার্থপরতা নেই, আবার রাজনীতির নোংরামোও নেই। ছোট্ট এই মাঠের ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের এই ভূমিকাগুলিই বোধহয় তিরস্কার স্বরূপ আমাদের কাছে ফিরে আসে। প্রতিদিনকার ব্যস্ত জীবনের মাঝে হারিয়ে যাওয়া মূল্যবোধগুলির দিকেই বোধহয় আঙুল তোলে, ভাবতে বাধ্য করে আমাদের, বিশেষত প্রবীণ মানুষদের। সবই আমাদের চেনা চরিত্র, তবু ভিড়ে ঠেলাঠেলি করে সবাই দাঁড়িয়ে থাকে, উপভোগ করে ছোট্ট এই দুনিয়াটাকে। এখানে সব কাজই সমান মর্যাদাপ্রাপ্ত, সব চরিত্রই সমান গুরুত্বপূর্ণ। যদিও পকেটমার হাজির একই সঙ্গে। তবে সে যাই বলুন না কেন, কোনও কিশোরী যখন কাঁখে কলসি নিয়ে পায়ে নূপুর পরে ‘কোনও এক গাঁয়ের বধূ’ সাজে তখন কিন্তু কেউ ‘গেঁয়ো’ বলে তাকে তিরস্কার করে না যখন কিনা একই সাথে পাশাপাশি হাঁটছে আধুনিকা মডেল!