"বিরুদ্ধতার চাবুক ওঠাও হাতে
তোমার স্বদেশ লুঠ হয়ে যায় প্রতিদিন প্রতিরাতে" - বিপুল চক্রবর্তী
যে বিষয় নিয়ে এ লেখা তার কোন ভূমিকা হয় না।
হঠাৎ কাউকে কিছু জানতে না দিয়ে, বুঝতে না দিয়ে যে আগুন
জ্বলে উঠল দাউদাউ তার আবার ভূমিকা কীসের হে? ঘটনা-ঘটনার ধারাপাত এসবের ময়নাতদন্ত
সব্বার করা হয়ে গেছে। আমাদের তাই নতুন করে সাজিয়ে গুছিয়ে শব্দের মারপ্যাঁচ সহযোগে কিছু
লেখার নেই...মানে এসব জায়গায় যেমনটা লেখার চল! মোটা চলতি বঙ্গভাষায় পাতি কয়েকটা
লাইন বলার আছে...
১ আমরি আমাদের
কাছে স্রেফ দুঃখ বয়ে আনেনি। আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেছে। অবশ্য, আমাদের মতো
কুলাঙ্গাররা যখন বাবরি, ভুপাল, গোধরা, বিদর্ভ থেকে কিছু শিখতে পারিনি তখন আমরি থেকে
ড্যাশ শিখব!
২ অনেকে বলছেন
ঘটনাটা এত দুঃখজনক কারণ যাদের চিতা জ্বলল তারা বাঁচতে এসেছিলেন! সত্যি এই
প্যারাডক্সিকাল পরিণতি বাড়িয়েছে যন্ত্রণার ভার। কিন্তু ভেবে দেখতে হবে... এটা
শোকের একতম কারণ না হয়ে ওঠে যেন! এই ঘটনা সাউথসিটি-তে বা মানিকতলার সুলভ শৌচালয়ে
ঘটলেও প্রতিক্রিয়া এক হওয়া উচিৎ। উল্লেখ্য... বিষমদ খেয়ে প্রায় ১৫০ জনের মৃত্যুর
ঘটনাকে (সংখ্যাটা নিশ্চিতভাবেই আরও বেশি) বিধানসভায় দাঁড়িয়ে জনৈক মন্ত্রী বলেছেন
“এ মৃত্যুর ভার কম”। মানুষ তার মানবিকতা কতটা হারাতে পারে!
৩ অনেকে বলেন
‘ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনা’! কেন বলেন জানি না। বলা উচিৎ ‘ভূপাল গণহত্যা’।
গোধরা-বিদর্ভ সবই তাই। আমরি এই লিস্টে নতুন সংযোজন।
৪ কেন
ফায়ারব্রিগেড ডাকতে এত দেরী হল, কেন বহুতল নির্মাণ সংক্রান্ত বিধি ও
ফায়ারব্রিগেডের ওয়ার্ণিংকে পাত্তা দেওয়া হয় নি, কেন নিষ্ক্রিয় ছিল স্মোক এলার্ম,
কেন কাজ করে নি আগুন নেভানোর যন্ত্র, কেন একজনও আগুন নেভাতে জানা কর্মচারী ছিল না
অত বড় তীর্থস্থানে ইত্যাদি ইত্যাদি... এসব নিয়ে যাদের ভাবার তাঁরা ভাবুন, তাঁরা ওব্যাপারে যোগ্য মানুষ। আমরা শুধু আমাদের
মহতী সংবিধানের
ওপর এবার একটু বিশ্বাস করতে চাই। যদিও বারেবারে এক্ষেত্রে ঠকেছি আমরা। ইতিহাসের
ট্র্যাজিক উল্লাসে অ্যান্ডারসন আর আগারওয়াল-তোদি এক যেন না হয়!
৫ যাঁরা ছাই হয়ে
গেলেন তাদের যেমন ভুলব না তেমনই মনে থাকে
যেন অকারণে রাতারাতি জীবিকা হারানো
মানুষগুলোর কথা। মারা গেলেন যাঁরা তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষমতা আমাদের না থাকলেও
জীবিকা হারিয়ে জীবনে টিকে থাকা মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াই,আসুন। সময় অপেক্ষা করছে।
৬ তোদি হোক বা
টোডি এবং আগরওয়াল হোক বা অগ্রবাল... আমাদের কিছু ছেড়া যায় না তাতে। আমরা শুধু জানতে
চাই এই লোকগুলো এত বেপরোয়া হওয়ার হিম্মতটা পায় কোত্থেকে? চিদাম্বরম সাহেবের মতে
মাওবাদীরা এদেশের ‘greatest internal threat’! কিন্তু এই মহাপুরুষদের বাপ বলে
কারা?
৭ বাঙালী বড়
দুঃখ পেয়েছে। এই শোক সামলে ওঠা কি কষ্টকর আমরা জানি। এক মাসের মধ্যে... মগরাহাটে
পুলিশের গুলি খেয়ে প্লাস আমরি-তে ধূমপান
করে আর (আপাতত) সর্বশেষ বিষমদ পান করে এই
যে লাশেদের পাহাড় গড়ে উঠল তার দ্বিধাথরথর চূড়ে, শোক নয় শোক নয়, ভর করুক
ক্রোধ। নিন্দুকেরা, অবশ্য, বলছে, মৃতের সংখ্যা ১৪ ছাড়া অন্য কিছু হলে বাঙালীর থলথলে গতর ভাইব্রেট করে না।
অতয়েব এখন কারো ভয় নেই... আমরা তো শান্তিপ্রিয় শান্ত
ছেলে!