Monday, December 26, 2011

দশদর্শী -- আগন্তুক


আলু–পটল থেকে ফুলকপি, খুচরো ব্যবসায় দিল্লির সিংহাসন টলমল। দাদারা চোখ রাঙাচ্ছেন, দিদি দু’বেলা নিয়ম করে শাসাচ্ছেন, মুকুট থুড়ি পাগড়ী বাঁচাতে অতএব ব্যাক টু পাস্ট। যাচ্চলে,
একটা বড় নাটক মিস হয়ে গেলো, নয়তো কে বলতে পারে দু’দিন বাদে হয়তো থলি ভরে নিয়ে আসতেন টম্যাটা (টাটার টম্যাটো)। বিড়লার বেগুন বা  গোদরেজের গরম মশলা দিয়ে বউদি হয়তো রাঁধতেন ভালোই। সুধী জনগণের আশীর্বাদ পেলে মিত্তলের মুরগী দিয়ে রোব্বারের ভোজটা সেরে পৈলানের পান মুখে পুরে সুখের দিবানিদ্রা- বাঙ্গালীকে আর পায় কে?
বিষমদ কাণ্ডে বিষম চটেছেন দিদি। আরে বাবা মদ তো এমনিতেই বিষ, তাতে আবার বিষ মিশিয়ে বিষিয়ে দিয়ে লাভটা কি বাপু? কিন্তু সেটি যখন ঘটেই গেছে, অতএব পুরোন নির্বিষ খেলাটি শুরু করা যাক। এসব আসলে বাম-বিষ, মানে বিগত বিশ বছর ধরে একের পর এক ঠেক গড়তে দিয়ে বামের দেওয়া বিষ- সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যুত্তর- ব্যাস্‌, বিষে বিষে বিষক্ষয়।
শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে রাজনীতির অনুপ্রবেশ রুখতে সরকারের নয়া দাওয়াই- ঝট করে সবকটা পরিচালন সমিতি ভেঙ্গে দিল মহাকরণ। নতুন সরকারী সিদ্ধান্তে স্থগিত হল যাবতীয় দরকারি সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক মনোপলির প্রতিষেধক – সরকারী মনোনয়ন। পুরোন প্রতিনিধিদের নির্বাসন ও তারপর নো-নতুন নির্বাচন। স্পষ্ট বোঝা গেল, পড়াশুনোয় দাদাগিরির দিন শেষ-এবার থেকে শুধুই দিদিগিরি।
ওদের গরব মোদের আশা- আ মরণ তামিল ভাষা। কম্পিউটারে সিঁধিয়া – মরমে পশিল গিয়া। উতল করিল প্রাণ-নব্য কালের gun। ‘সলিল’-সমাধি তো বহুদিন হল। পঞ্চমের পঞ্চত্ব-প্রাপ্তিও আজ ইতিহাস। শ্রোতাদের দাবী, বাংলা গানেও হোক ‘ধনুশ’-টঙ্কার। আশাবরীর দিন শেষ, আজ শুধুই কোলাবরী।
ভর্তি সংক্রান্ত নানা অভিযোগে কলকেতার নামকরা মাধ্যমিক স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে ঠ্যাঙালেন অভিভাবকদের স্বঘোষিত প্রতিনিধি কিছু নেতা। বিপদটা সরকার আঁচ করেছিলেন বহুদিন আগেই। বিদ্যালয়ে ছাত্র পেটানো তাই নিষিদ্ধ করেছিলেন। আইনটা সম্পূর্ণ করা হয়নি। বিদ্যালয়ে শিক্ষক পেটানোও বারণ করে দিতে হত। কে বলতে পারে আজকের সেই নেতা একদিন ঐ শিক্ষকের হাতেই মার খাননি? সেদিন চোখের জলে পড়া মুখস্থ করেছিলেন-“ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে”।
বাম জমানা ইঞ্জিরি কে পাশ কাটিয়ে দিয়েছিল, আর ডান রাজত্ব কাটিয়ে দিল ‘পাশ’ ব্যাপারটাই। মার্ক্সবাদ নামক বিজ্ঞানে pass marks পাওয়া বাঙালি আজ ঘাসের ছোট ছোট ফুল হয়ে হাওয়ায় মাথা দোলাচ্ছে। মাধ্যমিকে আর ঐচ্ছিক বিষয় নয় – মাধ্যমিকটাই এখন থেকে ঐচ্ছিক বিষয়। লেখাপড়া শিকেয় তুলে কি ‘সত্য-সাধন’ হয়েছিল না বুঝতে পেরে লেখাপড়াটাই আজ ‘ব্রাত্য’ হতে বসেছে।
গণেশের অবাক দুগ্ধপান, মাতা মেরীর সাশ্রু রোদনে অভ্যস্ত বাঙালি আজও দশমীর সন্ধ্যায় উমার চোখে জল দেখে। নবতম সংযোজন বালীগঞ্জে পুকুরপাড়ে শীতলাঠাকরুণের পায়ের ছাপ। হোক না ঘোর কলি। ভাব গদগদ বঙ্গবাসীর বিনম্র ভক্তিগীতি- “তোমার পায়ের পাতা- সবখানে পাতা, কোনখানে রাখিব প্রণাম?”
নবনির্বাচিত অর্থমন্ত্রী শপথ নেওয়ার পরেই সটান হাসপাতালে গেলেন। শোনা যাচ্ছে রাজকোষাগারের তালাটি খুলে দেখেই তার এই অবস্থা। নতুন বিধায়কদল তাই ‘গেল-গেল’ রবের সাথে ‘নেই-নেই’ চিৎকারও জুড়ে দিল। বিদায়ী কাণ্ডারিদের তাতে ‘অসীম’ আনন্দ। ঘাটতি শূন্য বাজেটের পর আরও একবার তারা সানন্দে বললেন “কেমন দিলুম?”
আমরি কর্তারা বিচারের ভয়ে এখন নিজেদেরকে রুগী বলে দাবী করছেন। স্কুল যাওয়ার সময় হলে পেটব্যথা করাটা কারও কাছেই নতুন নয়। আদালত নিরুপায়। তাই এক আমরি কর্তাকে ভর্তি করা হল এস এস কে এম এ। কেন এই ধনী ব্যক্তির সরকারী হাসপাতালে গমন? শোনা যাচ্ছে এরপর থেকে এমন দাবী এলেই উকিলেরা সেই ব্যক্তিকে আমরির অবশিষ্ট আরেকটি শাখা (সল্টলেক) তে পাঠাতে চাইবেন। আশা করা যায় এতে করে যাবতীয় মনগড়া রোগ বালাই মুহূর্তে সেরে উঠবে।
১০
সিংহাসনটি গেলে রাজার অবস্থা যে ঠিক কি রকম হয়, সেটি টের পাওয়া যাচ্ছে হাড়ে হাড়ে। সত্যিই হাড়ে হাড়ে ভরা কঙ্কালের স্তূপ খুঁচিয়ে বার করা হয়েছে। কাজেই মিঃ ঘোষের পক্ষে আর সুশান্ত থাকা সম্ভব হচ্ছে না। তার অবস্থা প্রকৃত অর্থেই ‘কঙ্কালসার’। সব মিলিয়ে বিগত সরকার এখন সব দৃষ্টিকোণ থেকেই কোণঠাসা এবং সত্যিই ‘সর্ব’-হারা।       

About Us | Site Map | Privacy Policy | Contact Us | Blog Design | কথা তো বলার জন্যেই